এপিজি সম্মেলন ও বাংলাদেশ
এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অব মানি লন্ডারিংয়ের (এপিজি) বার্ষিক সম্মেলনটি হওয়ার কথা ছিল গত ২৩ থেকে ২৮ জুলাই, ঢাকায়। কিন্তু ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে সম্মেলনটি সরিয়ে নেওয়া হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যা ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর হতে যাচ্ছে। এপিজি বার্ষিক সম্মেলনে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ এবং সন্ত্রাসে অর্থায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি কতটুকু তা অগ্রাধিকার পাবে বলে মনে হচ্ছে, বার্ষিক প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের রেটিং (অবস্থান)। ২০১৫ সালের অক্টোবরে এপিজির একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের কার্যক্রম দেখার জন্য ঢাকা সফর করে। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠকও করে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে দুটি বৈঠকেই আইনজীবী হিসেবে আমি উপস্থিত ছিলাম। তাদের প্রশ্নের ধরন এবং জিজ্ঞাসার বিভিন্ন বিবরণ শোনার এবং তাদের সঙ্গে সরাসরি আমার আলোচনার সুযোগ হয়েছে। মানি লন্ডারিংয়ের ধারণা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। পৃথিবীব্যাপী মানি লন্ডারিং এখন একটি গুরুতর সমস্যা। দিনকে দিন এ সমস্যার ব্যাপ্তি ঘটছে। ঘন ঘন আইনের পরিবর্তন-সংশোধন এ ধারণাকে আরও তীব্র থেকে তীব্রতর করছে। এপিজির সেই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় আমার মনে হয় তারাও মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে অতটা পরিপক্ব নয়, যতটা তারা আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে রেটিং নির্ধারণের ব্যাপারে। এটা অবশ্য আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন। যদিও এপিজি তাদের সর্বশেষ খসড়া প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পর্যালোচনা করে, একই সঙ্গে তারা রেটিং প্রদান করে। এপিজি রেটিং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও বিকাশের ক্ষেত্রে একটি মাত্রা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে ২০০২ সালের ৭ এপ্রিল থেকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন ও কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগ এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ইউনিট চালু করা হয়েছে। সর্বশেষ আইন সংশোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে আইনি ক্ষমতা দিয়ে আলাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যা বিএফআইইউ নামে সমধিক পরিচিত। দুদক ছাড়াও বিএফআইইউ ও সিআইডিকে মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত অপরাধের তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আইন সংশোধনের মাধ্যমে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথমে বাংলাদেশ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০২ প্রণয়ন করে। সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণীত হয়। পরে ওই আইনসমূহকে আরও কার্যকর এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার লক্ষ্যে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২; মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন (সংশোধন), ২০১৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) আইন ২০১২ ও ২০১৩ প্রণীত হয়। দেশের মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ কাঠামোকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার লক্ষ্যে সময় নির্ধারক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করা হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটায় যে শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মেঘ জমেছে, তা দূর করতে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে এককভাবে কোনো দেশের পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই সুফল বয়ে আনতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় এপিজির বৈঠকে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো নতুন দিকনির্দেশনা লাভ করবে আশা করছি। এ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে।
গত কয়েক বছরে সংঘটিত বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ছাড়াও দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা জাতীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অগ্রগামিতার সঙ্গে সঙ্গে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের আর্থিক অপরাধ এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধপ্রবণতাও। আর এ অপরাধগুলোর মধ্যে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন যেকোনো দেশের আর্থিক স্থিতাবস্থাকে বিপন্ন করতে পারে। নিত্য পরিবর্তনশীল কলাকৌশলের মাধ্যমে অপরাধীদের দ্বারা সংঘটিত এ–জাতীয় অপরাধ প্রতিহত করা কখনো কখনো বেশ কঠিন। তবে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ) বিশ্বের সব রাষ্ট্রের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে। পাশাপাশি সময়ে সময়ে তা পর্যালোচনা করছে। বাংলাদেশকেও একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে ওই সংস্থার সুপারিশসমূহ পরিপালন করতে হয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী দেশের মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ পরিপালন ব্যবস্থা সমুন্নত রাখা এবং দেশে একটি সুসংহত মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ সরকার দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান যেভাবে উজ্জ্বল হচ্ছে দিনে দিনে, তা অব্যাহত রাখতে হলে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধে পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জনের পথ ধরে এগোতে হবে। বাংলাদেশের অবস্থা সমুন্নত রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে আমাদের সবার। শুধু আইন প্রণয়ন কিংবা আইনের প্রয়োগই মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না। আমাদের এই বিশাল দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠীকে এ বিষয়টি সঠিকভাবে অবহিত করতে হবে। তাদের ভেতর সচেতনতা তৈরি করতে হবে। অন্যথায় এ ক্ষেত্রে গৃহীত উদ্যোগের সুফল পাওয়া যাবে না।
মো. খুরশীদ আলম খান: সম্পাদক, ডিএলআর এবং প্যানেল আইনজীবী, দুদকের সুপ্রিম কোর্ট সেল।
বাংলাদেশে ২০০২ সালের ৭ এপ্রিল থেকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন ও কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগ এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ইউনিট চালু করা হয়েছে। সর্বশেষ আইন সংশোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে আইনি ক্ষমতা দিয়ে আলাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যা বিএফআইইউ নামে সমধিক পরিচিত। দুদক ছাড়াও বিএফআইইউ ও সিআইডিকে মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত অপরাধের তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আইন সংশোধনের মাধ্যমে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথমে বাংলাদেশ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০২ প্রণয়ন করে। সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণীত হয়। পরে ওই আইনসমূহকে আরও কার্যকর এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার লক্ষ্যে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২; মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন (সংশোধন), ২০১৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) আইন ২০১২ ও ২০১৩ প্রণীত হয়। দেশের মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ কাঠামোকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার লক্ষ্যে সময় নির্ধারক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করা হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটায় যে শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মেঘ জমেছে, তা দূর করতে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে এককভাবে কোনো দেশের পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই সুফল বয়ে আনতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় এপিজির বৈঠকে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো নতুন দিকনির্দেশনা লাভ করবে আশা করছি। এ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে।
গত কয়েক বছরে সংঘটিত বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ছাড়াও দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা জাতীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অগ্রগামিতার সঙ্গে সঙ্গে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের আর্থিক অপরাধ এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধপ্রবণতাও। আর এ অপরাধগুলোর মধ্যে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন যেকোনো দেশের আর্থিক স্থিতাবস্থাকে বিপন্ন করতে পারে। নিত্য পরিবর্তনশীল কলাকৌশলের মাধ্যমে অপরাধীদের দ্বারা সংঘটিত এ–জাতীয় অপরাধ প্রতিহত করা কখনো কখনো বেশ কঠিন। তবে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ) বিশ্বের সব রাষ্ট্রের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে। পাশাপাশি সময়ে সময়ে তা পর্যালোচনা করছে। বাংলাদেশকেও একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে ওই সংস্থার সুপারিশসমূহ পরিপালন করতে হয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী দেশের মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ পরিপালন ব্যবস্থা সমুন্নত রাখা এবং দেশে একটি সুসংহত মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ সরকার দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান যেভাবে উজ্জ্বল হচ্ছে দিনে দিনে, তা অব্যাহত রাখতে হলে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধে পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জনের পথ ধরে এগোতে হবে। বাংলাদেশের অবস্থা সমুন্নত রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে আমাদের সবার। শুধু আইন প্রণয়ন কিংবা আইনের প্রয়োগই মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না। আমাদের এই বিশাল দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠীকে এ বিষয়টি সঠিকভাবে অবহিত করতে হবে। তাদের ভেতর সচেতনতা তৈরি করতে হবে। অন্যথায় এ ক্ষেত্রে গৃহীত উদ্যোগের সুফল পাওয়া যাবে না।
মো. খুরশীদ আলম খান: সম্পাদক, ডিএলআর এবং প্যানেল আইনজীবী, দুদকের সুপ্রিম কোর্ট সেল।
No comments