ওবামার সেরা সাত ভাষণ
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থী মনোনয়নের আনুষ্ঠানিকতায় ডেমোক্রেটিক দলের জাতীয় সম্মেলনে ভাষণ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সম্মেলনের তৃতীয় দিনে তিনি এক আবেগঘন বক্তৃতায় দলীয় প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের প্রতি নিজের অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেন। প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের আশাবাদী ভবিষ্যতের চিত্র তুলে ধরেন। সম্মেলনের এ ভাষণকে ওবামার সেরা ভাষণগুলোর একটি বলে জানিয়েছে ইউএসএ টুডে। ওবামার সেরা সাতটি ভাষণের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এখানে তুলে ধরা হল- ডেমোক্রেটিক সম্মেলন ২০০৪ : ২০০৪ সালে ডেমোক্রেটিক দলের কনভেনশনে ঐতিহাসিক এক ভাষণ দেন বারাক ওবামা। সে সময় তিনি ছিলেন ইলিনয় রাজ্যের সিনেটর প্রার্থী। ১৯২৮ সালের পর ওবামাই প্রথম ব্যক্তি যিনি কংগ্রেস সদস্য কিংবা গভর্নর না হয়েও সম্মেলনে ভাষণ দেন। সেই ভাষণে ওবামা তার পারিবারিক জীবনের শেকড় থেকে শিখর পর্যন্ত ঘটনাবলি আমেরিকান স্বপ্নের সঙ্গে মিশিয়ে অত্যন্ত আবেগমথিত উপায়ে উপস্থাপন করেন। কীভাবে তার কেনিয়ান বাবা পড়াশোনা করতে আমেরিকায় এসেছিলেন এবং কানসাসের সামরিক পরিবারের মেয়ে বিয়ে করেছিলেন।
কীভাবে ওবামা মার্কিন রাজনীতিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এবং আমেরিকানদের স্বপ্ন পূরণে ডেমোক্রেট দলের সঙ্গে পথ পাড়ি দিচ্ছেন। সেই ভাষণে ওবামা বলেন, ‘আমার বাবা-মা আমাকে কেবল অসম্ভব ভালোবাসাই দেননি। তারা আমাকে একটি আফ্রিকান নাম দিয়েছেন বারাক (নামের অর্থ শান্তিপূর্ণ)। বাবা বলেছিলেন, শান্ত সহিষ্ণু আমেরিকায় বারাকের সাফল্য কোথাও আটকাবে না। তারা আমাকে সেরা স্কুলে ভর্তি করেছিলেন। যদিও তারা ধনী ছিলেন না। কেননা উদার আমেরিকায় সমৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে ধনী হওয়া লাগে না।’ কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ : ক্ষমতার মেয়াদ ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি মিসরের কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। ভাষণের শুরুতে তিনি বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের মধ্যে একটি প্রচণ্ড উত্তেজনার মুহূর্তে মিলিত হয়েছি, যে উত্তেজনার শেকড় গ্রথিত রয়েছে ঐতিহাসিক উপাদানের মধ্যে যা কিনা নীতি সম্পর্কিত যে কোনো চলমান বিতর্ককে অতিক্রম করে যায়। ইসলাম ও পশ্চিমের মধ্যকার সম্পর্কের মধ্যে যেমন রয়েছে সহাবস্থান ও সহযোগিতা, তেমনি রয়েছে সংঘাত ও ধর্মযুদ্ধের ঘটনাও। তিনি বলেন, প্রতিটি ধর্মের অন্তঃস্থলে একটি নিয়ম আছে, সেটা হল- আমরা অন্যের প্রতি তা-ই করি যা আমরা অন্যের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি। এই সত্য জাতি ও মানুষের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে।
এ বিশ্বাস নতুন কিছু নয়; এটা কালো, সাদা বা বাদামি নয়; সেটা খ্রিস্টান বা মুসলমান বা ইহুদিও নয়। এটা হল সেই বিশ্বাস যা সভ্যতার দোলনাতেই স্পন্দিত হয়েছিল, এবং এটা হল সেই বিশ্বাস যা স্পন্দিত হয়েছে সভ্যতার দোলনায় এবং এখনও যা বিশ্বজুড়ে লাখো-কোটি মানুষের বুকে স্পন্দিত হয়ে চলেছে। এটা হল অন্য মানুষের প্রতি আস্থা, এবং এটা তা-ই যা আজ আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। আমাদের সেই সামর্থ্য আছে- যে পৃথিবী চাই তাকে বানানোর, তবে শুধু যদি কী লিখা আছে সেটা মনে রেখে আমাদের মনে নবসূচনা সৃষ্টির সাহস থাকে। পবিত্র কোরআন আমাদের বলে, হে মানবজাতি, আমি তোমাদের পুরুষ ও নারী হিসেবে সৃষ্টি করিয়াছি; আমি তোমাদের জাতি ও গোত্রে ভাগ করিয়াছি যাতে তোমরা একে অন্যকে জানিতে পার।’ নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ ২০০৯ : মার্কিন ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরপরই নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন বারাক ওবামা। সে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ পুরস্কার গ্রহণ অনেকের কাছেই অস্বস্তির ছিল। কেননা যুক্তরাষ্ট্র তখন দুটো যুদ্ধের মাঝখানে দাঁড়িয়ে। আফগানিস্তান ও ইরাকে তার যুদ্ধফ্রন্ট খোলা।
শান্তি পুরস্কার গ্রহণকালে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন ওবামা। তিনি বিনয়ের সঙ্গে বলেন, ‘নেলসন ম্যান্ডেলা বা আর যারা এই নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের পরিমাপ করার মতো শিক্ষা-দীক্ষা বা যোগ্যতা আমার নেই। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিশ্বশান্তির প্রতি তৈরি হওয়া নতুন নতুন হুমকি থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারি না। এটা শুধু সন্ত্রাসবাদিতা নয়, বরং নাগরিক আÍবিরোধ ও গণ-গোলাগুলি পৃথিবীকে হুমকিতে ফেলেছে। আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, আমরা একটি কঠিন সময় পার করছি। শুধু সামরিক শক্তি প্রয়োগ করলেই হবে না, তার নৈতিক নায্যতাও খতিয়ে দেখতে হবে।’ সেলমা ভাষণ ২০১৫ : আমেরিকার ইতিহাসে কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘সেলমা’ পদযাত্রার ৫০তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ওবামা তার ভাষণে বলেন, ‘ওই ঘটনাটি ছিল একটি মাইলফলক। অধিকার রক্ষার সংগ্রামের প্রতীক, শুধু কৃষ্ণাঙ্গদের জন্যই নয়, সব আমেরিকানের জন্যও।’ এ সময় শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রসঙ্গ টেনে ওবামা আরও বলেন, ‘সেই বর্ণবাদের ছায়া আমাদের জাতির ওপর থেকে এখনও সরে যায়নি। আমরা জানি,
আমাদের সেই পদযাত্রা শেষ হয়নি। চূড়ান্ত বিজয় এখনও অর্জিত হয়নি।’ কৃষ্ণাঙ্গ গির্জায় হামলা ২০১৫ : যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের এক গির্জায় শ্বেতাঙ্গ বন্দুকধারীর হামলায় ৯ জন নিহত হন। এরপর ৫ হাজার মানুষের সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের সংকট নিয়ে এক আবেগঘন ভাষণ দেন। ওবামা বলেন, ‘একটি জাতি হিসেবে এই ভয়ংকর ট্র্যাজেডিতে ঈশ্বর আমাদের অপার কৃপা করেছেন, কারণ আমরা কোথায় অন্ধ হয়ে আছি, তা আমাদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন।’ ওবামা এতটাই আবেগপূর্ণ কণ্ঠে তার কথাগুলো উচ্চারণ করতে থাকেন, শুনে মনে হচ্ছিল তিনি যেন ধর্মীয় নীতি-উপদেশ দিচ্ছেন। চার্চের বাদকদের যন্ত্রসঙ্গীতে তার সবচেয়ে আবেগঘন কথা আরও জোরালো হয়ে উঠেছিল। রজার বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন ২০১৬ : নিউ জার্সির রজার বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন ভাষণে ওবামা বলেন, ‘রাজনীতিতে এবং জীবনে- দুই ক্ষেত্রেই অজ্ঞতা চলে না। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না, তুমি যে বিষয়ে কথা বলছ, সে বিষয়ে তুমি জানো না।’ ডেমোক্রেটিক সম্মেলন ভাষণ ২০১৬ : এই ভাষণে হিলারিকে সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি ভোটারদের উদ্বেগ আমলে নিয়ে তাদের হতাশা উপলব্ধির কথাও তুলে ধরেন ওবামা।
No comments