‘সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশে অলিম্পিকে ৫ জন!’
মাহফিজুর রহমান সাগর দেশের অন্যতম সাঁতারু। গুয়াহাটি ও শিলংয়ে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ এসএ গেমসে তিনি দেশের হয়ে জিতেছেন সাতটি ব্রোঞ্জ। তবে তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় স্মৃতি ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিক। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞে সেবার তাঁর হাতেই ছিল গর্বের জাতীয় পতাকা। অলিম্পিকে দেশের পতাকা বহন করার গৌরবের অভিজ্ঞতা তাঁর চোখ খুলে দিয়েছে। হৃদয়ে তাঁর আকুতি—একটিবার যদি অলিম্পিকের বিশ্ব পরিমণ্ডলে একটা পদক জিততে পারত বাংলাদেশ! নিজের আকুতি প্রকাশ করতেই ফেসবুকের শরণাপন্ন মাহফিজুর। আর কাউকে নয়, সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্বোধন করে লেখা এক পোস্টে তিনি জানিয়েছেন অলিম্পিকে দেশের ‘অর্জন’ নিয়ে নিজের বেদনার্ত অভিজ্ঞতার কথা। পাঠকদের জন্য মাহফিজুরের ফেসবুক পোস্টটি কিছুটা সম্পাদনা করে তুলে ধরা হলো...
“খোলা চিঠি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনার নেতৃত্বে আমাদের দেশের সকল ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটছে, যা অবশ্যই আমাদের সবার কাম্য। একটি দেশকে সারা বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সহজ মাধ্যম হলো খেলাধুলা। আপনি দেশকে ভালোবাসে, খেলাধুলাও। যার প্রমাণ আমরা পেয়েছিলাম ক্রিকেটে পাকিস্তানকে পরাজিত করার পর আপনার চোখে আনন্দাশ্রু দেখে। আপনার এই আনন্দাশ্রু আমরা বারবারই দেখতে চাই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ক্রিকেট অলিম্পিকের খেলা নয়। ক্রিকেটে বাংলাদেশ যদি কোনো দিন বিশ্বকাপ জেতে তাহলে হয়তো ২৫-৩০টি দেশ বাংলাদেশের এই সাফল্যের কথা জানতে পারবে। যদি অলিম্পিকে কোনো দিন বাংলাদেশ সোনার পদক জেতে তাহলে তা জানতে পারবে গোটা বিশ্বই। কিন্তু হতাশার বিষয় কি জানেন? বাংলাদেশের কোনো ক্রীড়াবিদ এখনো পর্যন্ত নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পায়নি। এখনো পর্যন্ত প্রায় সবাই অলিম্পিক খেলতে গেছে দানের কোটায়। তাই অলিম্পিকে পদক আশা করাটা রীতিমতো অলীক স্বপ্ন ও হাসির খোরাকই হয়ে ওঠে। আপনার কি ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের কথা মনে আছে? সেবার আমি বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে মার্চপাস্ট করেছিলাম। টেলিভিশন সম্প্রচারে আমাকে দেখানোর পরপরই আপনাকে দেখিয়েছিল। সেদিন ধারাভাষ্যকার বাংলাদেশকে নিয়ে কী বলেছিলেন জানেন? তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের সদস্য সংখ্যা মাত্র ৫! এই ৫ জন ১৬৪ মিলিয়ন জনসংখ্যার একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে! জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যতম একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত অলিম্পিকে কোনো পদক জিততে পারেনি।’ পরে যখন কথাটা শুনতে পাই তখন মনে হচ্ছিল লজ্জায় গর্তে লুকাই। আমরা সব সময়ই এশিয়ান গেমস, অলিম্পিকের মতো আসরে যাই ‘অভিজ্ঞতা’ অর্জনের জন্য। আর কতদিন ‘অভিজ্ঞতা’র জন্য খেলব আমরা? খুব খারাপ লাগে যখন দেখি আমাদের চেয়েও জনসংখ্যায় ক্ষুদ্র, পিছিয়ে থাকা ও দরিদ্র দেশ অলিম্পিকে সোনার পদক পাচ্ছে, দেশের জাতীয় সংগীত বাজাচ্ছে! অলিম্পিকের কথা আপাতত বাদ দিই। আসি এসএ গেমসের প্রসঙ্গে। এস এ গেমসকে বলা হয় দক্ষিণ এশিয়ার ‘অলিম্পিক!’ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি এসএ গেমসের সর্বশেষ আসরে বাংলাদেশের অবস্থার ৮ দেশের মধ্যে পঞ্চম। ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান তো বটেই। যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পরেও আমাদের অবস্থান। ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড নেপালের বিপক্ষে মাত্র একটি সোনার পদকের ব্যবধানে এগিয়ে আমরা। এসব গেমসে একজন ক্রীড়াবিদের কারণেই বেজে ওঠে জাতীয় সংগীত, সবার ওপরে স্থান নেয় দেশের জাতীয় পতাকা। সর্বশেষ এসএ গেমসে ২৩৪ বারের মধ্যে মাত্র ৪ বার বেজেছে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। আমাদের সব প্রতিবেশী তুমুল গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছি না আমরা। কেবল আপনিই পারেন খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়াতে। দেশের সব ক্ষেত্রের পাশাপাশি খেলাধুলার উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে। খেলোয়াড়দের দিকে সুযোগ-সুবিধার হাত বাড়াতে যেন তারা সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে—সে ব্যবস্থা করে দিতে। আর কোনো দিনই যেন আমাদের দেশের ক্রীড়াবিদেরা কেবল অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রীড়ার আসরে অংশ না নেয়, তাঁরা যেন জেতার জন্যই মাঠে নেমে দেশকে সম্মানিত, গৌরবান্বিত করতে পারে। খেলাধুলায় বিনিয়োগে কোনো ক্ষতি নেই। বরং এটি দেশের জন্য অত্যন্ত লাভজনক।"
“খোলা চিঠি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনার নেতৃত্বে আমাদের দেশের সকল ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটছে, যা অবশ্যই আমাদের সবার কাম্য। একটি দেশকে সারা বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সহজ মাধ্যম হলো খেলাধুলা। আপনি দেশকে ভালোবাসে, খেলাধুলাও। যার প্রমাণ আমরা পেয়েছিলাম ক্রিকেটে পাকিস্তানকে পরাজিত করার পর আপনার চোখে আনন্দাশ্রু দেখে। আপনার এই আনন্দাশ্রু আমরা বারবারই দেখতে চাই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ক্রিকেট অলিম্পিকের খেলা নয়। ক্রিকেটে বাংলাদেশ যদি কোনো দিন বিশ্বকাপ জেতে তাহলে হয়তো ২৫-৩০টি দেশ বাংলাদেশের এই সাফল্যের কথা জানতে পারবে। যদি অলিম্পিকে কোনো দিন বাংলাদেশ সোনার পদক জেতে তাহলে তা জানতে পারবে গোটা বিশ্বই। কিন্তু হতাশার বিষয় কি জানেন? বাংলাদেশের কোনো ক্রীড়াবিদ এখনো পর্যন্ত নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পায়নি। এখনো পর্যন্ত প্রায় সবাই অলিম্পিক খেলতে গেছে দানের কোটায়। তাই অলিম্পিকে পদক আশা করাটা রীতিমতো অলীক স্বপ্ন ও হাসির খোরাকই হয়ে ওঠে। আপনার কি ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের কথা মনে আছে? সেবার আমি বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে মার্চপাস্ট করেছিলাম। টেলিভিশন সম্প্রচারে আমাকে দেখানোর পরপরই আপনাকে দেখিয়েছিল। সেদিন ধারাভাষ্যকার বাংলাদেশকে নিয়ে কী বলেছিলেন জানেন? তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের সদস্য সংখ্যা মাত্র ৫! এই ৫ জন ১৬৪ মিলিয়ন জনসংখ্যার একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে! জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যতম একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত অলিম্পিকে কোনো পদক জিততে পারেনি।’ পরে যখন কথাটা শুনতে পাই তখন মনে হচ্ছিল লজ্জায় গর্তে লুকাই। আমরা সব সময়ই এশিয়ান গেমস, অলিম্পিকের মতো আসরে যাই ‘অভিজ্ঞতা’ অর্জনের জন্য। আর কতদিন ‘অভিজ্ঞতা’র জন্য খেলব আমরা? খুব খারাপ লাগে যখন দেখি আমাদের চেয়েও জনসংখ্যায় ক্ষুদ্র, পিছিয়ে থাকা ও দরিদ্র দেশ অলিম্পিকে সোনার পদক পাচ্ছে, দেশের জাতীয় সংগীত বাজাচ্ছে! অলিম্পিকের কথা আপাতত বাদ দিই। আসি এসএ গেমসের প্রসঙ্গে। এস এ গেমসকে বলা হয় দক্ষিণ এশিয়ার ‘অলিম্পিক!’ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি এসএ গেমসের সর্বশেষ আসরে বাংলাদেশের অবস্থার ৮ দেশের মধ্যে পঞ্চম। ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান তো বটেই। যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পরেও আমাদের অবস্থান। ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড নেপালের বিপক্ষে মাত্র একটি সোনার পদকের ব্যবধানে এগিয়ে আমরা। এসব গেমসে একজন ক্রীড়াবিদের কারণেই বেজে ওঠে জাতীয় সংগীত, সবার ওপরে স্থান নেয় দেশের জাতীয় পতাকা। সর্বশেষ এসএ গেমসে ২৩৪ বারের মধ্যে মাত্র ৪ বার বেজেছে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। আমাদের সব প্রতিবেশী তুমুল গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছি না আমরা। কেবল আপনিই পারেন খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়াতে। দেশের সব ক্ষেত্রের পাশাপাশি খেলাধুলার উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে। খেলোয়াড়দের দিকে সুযোগ-সুবিধার হাত বাড়াতে যেন তারা সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে—সে ব্যবস্থা করে দিতে। আর কোনো দিনই যেন আমাদের দেশের ক্রীড়াবিদেরা কেবল অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রীড়ার আসরে অংশ না নেয়, তাঁরা যেন জেতার জন্যই মাঠে নেমে দেশকে সম্মানিত, গৌরবান্বিত করতে পারে। খেলাধুলায় বিনিয়োগে কোনো ক্ষতি নেই। বরং এটি দেশের জন্য অত্যন্ত লাভজনক।"
No comments