শেষ কথা বলে কিছু নেই by সাজেদুল হক
জাতীয়
পার্টির গঠনতন্ত্রে কো-চেয়ারম্যান নামে কোনো পদ ছিল না। হুসেইন মুহম্মদ
এরশাদ একদিন হুট করে ঘোষণা দিলেন, তার ছোট ভাই জিএম কাদের জাতীয় পার্টির
কো-চেয়ারম্যান। এমনকি তিনি এও ঘোষণা করলেন, তার মৃত্যুর পর কাদেরই হবেন তার
রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী। খেয়াল করে দেখবেন, যেন কার কখন মৃত্যু হবে তাও
এরশাদ জানেন। এরশাদের এ ঘোষণা জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে তৈরি করে
চাপান-উতোর। বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তারই স্ত্রী রওশন এরশাদ। কিন্তু নিজের অনড়
অবস্থানের কথা জানান এরশাদ। বলেন, এটাই তার শেষ সিদ্ধান্ত।
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। খুব সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে এ কথাটি এরশাদের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। একসময় মনে করা হতো তিনি রাজনীতির আনপ্রেডিক্টেবল চরিত্র। তবে এখন বুঝা যাচ্ছে, তার সবকিছুই প্রেডিক্টেবল। তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন এবং তা পরিবর্তন করবেন। এ ব্যাপারে কোনোই অনিশ্চয়তা নেই। কো-চেয়ারম্যানবিষয়ক সিদ্ধান্তও এরশাদ আংশিক পরিবর্তন করেছেন। কো-চেয়ারম্যানের পর তিনি দলে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান পদ ঘোষণা করেছেন। সে পদে নিয়োগ দিয়েছেন রওশনকে। রওশনও নতুন পদ পেয়ে অভিমান ভুলেছেন। এ যেন সুখী এক সংসার। স্বামী প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। স্ত্রী বিরোধীদলের নেতা। পৃথিবীর কোথায়, কবে এমন ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় পার্টির কাউন্সিলও সুখী সংসারের অনুমতি দিয়েছে। যদিও জাতীয় পার্টি আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন ইতিহাসেরই অংশ। কোনো নির্বাচনেই দলটির প্রতি জনসমর্থনের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। এ দলের নেতা বেশি না কর্মী বেশি সে প্রশ্নও এখন উঠছে। জাতীয় পার্টিরই অনেক নেতা মনে করেন, একইসঙ্গে সরকার এবং বিরোধী দলে থাকার কারণেই এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের কথাও এরশাদ একাধিকবার বলেছেন। তবে নিজে তিনি এখনও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার পদ ছাড়েননি। তার দলের মন্ত্রীরাও পদত্যাগ করেননি। এরশাদ নির্দেশ দিলেও তার দলের মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন তা এখন আর কেউ বিশ্বাসও করেন না।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সেনাবাহিনীতে থাকার সময়ই অত্যন্ত চতুর সেনাকর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। কৌশলে অন্যদের ব্যবহার করে সব জায়গাতেই তিনি নিজের লোক সেট করেছিলেন। সেনাবাহিনীতে কোণঠাসা করে ফেলেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের। মহিউদ্দিন আহমদ তার ‘বিএনপি: সময়-অসময়’ শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন, বিচারপতি সাত্তার তখনো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হননি। সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ রীতিমতো ‘মার্কটাইম’ করছেন। ক্ষমতার মসনদটা তাঁর মনে হচ্ছিল হাতের নাগালের মধ্যেই। তার জীবনে অনেক উত্থান-পতন গেছে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সবুরে মেওয়া ফলে। তিনি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। খালেদ মোশাররফ, আবু তাহের বা আবুল মঞ্জুরের মতো মাথা গরম করার লোক তিনি ছিলেন না।
এক পর্যায়ে বন্দুকের নলের জোরে এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন। নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে তিনি দলে ভিড়িয়েছিলেন সুযোগ সন্ধানী রাজনীতিবিদদের। বহু হেভিওয়েট পলিটিশিয়ান জুটেছিলেন তার পাশে। এরশাদের সেনা অভ্যুত্থানে খুশি হয়েছিল আওয়ামী লীগও। তার নয় বছরের শাসনামলে ভোটাধিকার ছিল নির্বাসিত। আন্দোলনকারীদের তিনি দমন করেছিলেন কঠোর হাতে। তার বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিল বহু মানুষ। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল সীমিত। সাংবাদিকদের নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। যখন তখন পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া ছিল নিয়মিত ঘটনা। টিভি বলতে অবশ্য তখন শুধু বিটিভিই ছিল। যে কারণে তা আর বন্ধ করার প্রয়োজন পড়েনি। ছাত্র রাজনীতি হয়েছিল কলুষিত। রাজনীতিবিদদের বিভক্তির সুযোগ নিয়েছিলেন এ স্বৈরশাসক। পতনের পরও অবশ্য এরশাদ টিকে আছেন। এবং এখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। পরিপূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা। পৃথিবীর ইতিহাসে এটাও অবশ্য একটা বিস্ময়। যদিও পতনের পরপর কারাগারে যেতে হয়েছিল তাকে। কারাগারে কাটাতে হয়েছে দীর্ঘসময়। তার বিরুদ্ধে দায়ের হয় একাধিক মামলা। যদিও কারাগারে থেকে নির্বাচন করেও তিনি জয়ী হয়েছিলেন। একসময় রংপুর অঞ্চলে জনপ্রিয়তা ছিল তার। এরপর প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলই তাকে নানাভাবে ব্যবহার করেছে। ২০০৬ সালে বিএনপিকে ভেলকি দেখিয়েছিলেন তিনি। বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে রাখতে হঠাৎ যোগ দেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে। তবে ২০১৪ সালে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। স্ত্রী রওশন ভেস্তে দেন তার সব পরিকল্পনা। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেও এমপি নির্বাচিত হন এরশাদ। তিনি অবশ্য কম সময়ই স্বাধীন রাজনীতি করতে পেরেছেন।
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। খুব সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে এ কথাটি এরশাদের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। একসময় মনে করা হতো তিনি রাজনীতির আনপ্রেডিক্টেবল চরিত্র। তবে এখন বুঝা যাচ্ছে, তার সবকিছুই প্রেডিক্টেবল। তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন এবং তা পরিবর্তন করবেন। এ ব্যাপারে কোনোই অনিশ্চয়তা নেই। কো-চেয়ারম্যানবিষয়ক সিদ্ধান্তও এরশাদ আংশিক পরিবর্তন করেছেন। কো-চেয়ারম্যানের পর তিনি দলে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান পদ ঘোষণা করেছেন। সে পদে নিয়োগ দিয়েছেন রওশনকে। রওশনও নতুন পদ পেয়ে অভিমান ভুলেছেন। এ যেন সুখী এক সংসার। স্বামী প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। স্ত্রী বিরোধীদলের নেতা। পৃথিবীর কোথায়, কবে এমন ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় পার্টির কাউন্সিলও সুখী সংসারের অনুমতি দিয়েছে। যদিও জাতীয় পার্টি আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন ইতিহাসেরই অংশ। কোনো নির্বাচনেই দলটির প্রতি জনসমর্থনের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। এ দলের নেতা বেশি না কর্মী বেশি সে প্রশ্নও এখন উঠছে। জাতীয় পার্টিরই অনেক নেতা মনে করেন, একইসঙ্গে সরকার এবং বিরোধী দলে থাকার কারণেই এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের কথাও এরশাদ একাধিকবার বলেছেন। তবে নিজে তিনি এখনও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার পদ ছাড়েননি। তার দলের মন্ত্রীরাও পদত্যাগ করেননি। এরশাদ নির্দেশ দিলেও তার দলের মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন তা এখন আর কেউ বিশ্বাসও করেন না।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সেনাবাহিনীতে থাকার সময়ই অত্যন্ত চতুর সেনাকর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। কৌশলে অন্যদের ব্যবহার করে সব জায়গাতেই তিনি নিজের লোক সেট করেছিলেন। সেনাবাহিনীতে কোণঠাসা করে ফেলেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের। মহিউদ্দিন আহমদ তার ‘বিএনপি: সময়-অসময়’ শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন, বিচারপতি সাত্তার তখনো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হননি। সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ রীতিমতো ‘মার্কটাইম’ করছেন। ক্ষমতার মসনদটা তাঁর মনে হচ্ছিল হাতের নাগালের মধ্যেই। তার জীবনে অনেক উত্থান-পতন গেছে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সবুরে মেওয়া ফলে। তিনি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। খালেদ মোশাররফ, আবু তাহের বা আবুল মঞ্জুরের মতো মাথা গরম করার লোক তিনি ছিলেন না।
এক পর্যায়ে বন্দুকের নলের জোরে এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন। নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে তিনি দলে ভিড়িয়েছিলেন সুযোগ সন্ধানী রাজনীতিবিদদের। বহু হেভিওয়েট পলিটিশিয়ান জুটেছিলেন তার পাশে। এরশাদের সেনা অভ্যুত্থানে খুশি হয়েছিল আওয়ামী লীগও। তার নয় বছরের শাসনামলে ভোটাধিকার ছিল নির্বাসিত। আন্দোলনকারীদের তিনি দমন করেছিলেন কঠোর হাতে। তার বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিল বহু মানুষ। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল সীমিত। সাংবাদিকদের নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। যখন তখন পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া ছিল নিয়মিত ঘটনা। টিভি বলতে অবশ্য তখন শুধু বিটিভিই ছিল। যে কারণে তা আর বন্ধ করার প্রয়োজন পড়েনি। ছাত্র রাজনীতি হয়েছিল কলুষিত। রাজনীতিবিদদের বিভক্তির সুযোগ নিয়েছিলেন এ স্বৈরশাসক। পতনের পরও অবশ্য এরশাদ টিকে আছেন। এবং এখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। পরিপূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা। পৃথিবীর ইতিহাসে এটাও অবশ্য একটা বিস্ময়। যদিও পতনের পরপর কারাগারে যেতে হয়েছিল তাকে। কারাগারে কাটাতে হয়েছে দীর্ঘসময়। তার বিরুদ্ধে দায়ের হয় একাধিক মামলা। যদিও কারাগারে থেকে নির্বাচন করেও তিনি জয়ী হয়েছিলেন। একসময় রংপুর অঞ্চলে জনপ্রিয়তা ছিল তার। এরপর প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলই তাকে নানাভাবে ব্যবহার করেছে। ২০০৬ সালে বিএনপিকে ভেলকি দেখিয়েছিলেন তিনি। বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে রাখতে হঠাৎ যোগ দেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে। তবে ২০১৪ সালে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। স্ত্রী রওশন ভেস্তে দেন তার সব পরিকল্পনা। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেও এমপি নির্বাচিত হন এরশাদ। তিনি অবশ্য কম সময়ই স্বাধীন রাজনীতি করতে পেরেছেন।
No comments