বাবা হাসপাতালে, ছেলের লড়াই ক্রিকেট মাঠে
বিকেএসপিতে ক্রিকেট কোচিং স্কুলের (সিসিএস সঙ্গে সেঞ্চুরিকরে ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে আসা ইমতিয়াজ। ছবি: প্রথম আলো |
কাল সন্ধ্যায় ইমতিয়াজ হোসেনের সঙ্গে যখন মুঠোফোনে কথা হলো, তিনি রাস্তায়। যাচ্ছেন স্কয়ার হাসপাতালে। অসুস্থ হয়ে ১০ দিন ধরে বাবা আনোয়ার হোসেন সেখানে ভর্তি। বাবাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার মেঘ ঘুরছে তাঁর মাথার ওপর। ইমতিয়াজের খেলায় অবশ্য ব্যক্তিজীবনের কঠিন পরিস্থিতির প্রভাব নেই। কিংবা কে জানে, ব্যক্তিগত জীবনের সেই লড়াইটাই টেনে আসছেন মাঠে! এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে নিয়মিত রান পাচ্ছেন প্রাইম দোলেশ্বরের ওপেনার। এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি রান তাঁর। সর্বোচ্চ দুইটি সেঞ্চুরিও। আজও ইমতিয়াজ হোসেনের ব্যাটেই আরও একবার সওয়ার প্রাইম দোলেশ্বর। কলাবাগান ক্রিকেট অ্যাকাডেমির বিপক্ষে তাঁর ৮৬ রানের ইনিংসেই দোলেশ্বর ২৮৭ করতে পেরেছে। ১০ রানের জন্য প্রিমিয়ার লিগে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০০ রানের মাইলফলক ছোঁয়া হয়নি। কীভাবে পারছেন এমন পরিস্থিতির মধ্যে ধারাবাহিক ভালো খেলতে? মানসিক দৃঢ়তাই যেন ইমতিয়াজের মূল শক্তি। গতকালই বলছিলেন, ‘আমার খেলা দেখার জন্য বাবা বাড়ি থেকে চলে আসেন ঢাকায়। আমার ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে তাঁর অনেক অবদান। হার্টের রোগী তো, টেনশন কাজ করে। কাল (আজ) তাঁর এনজিওগ্রাম করার কথা। বাবার জন্য দোয়া করবেন প্লিজ।’ ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায় ১৪ বছর ধরে খেলছেন ইমতিয়াজ। দীর্ঘ এই সময়ে জাতীয় লিগ, বিসিএল, প্রিমিয়ার লিগ কম খেলা হয়নি সিলেটের এই ব্যাটসম্যানের। তবে এবারের প্রিমিয়ার লিগে দারুণ ধারাবাহিকতা। লিগে দেশের অনেক তারকা ব্যাটসম্যানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন তরতর করে। ছন্দটা ধরে রাখতে চান সামনেও, ‘এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। যেখানেই খেলেন ভালো করতে হবে। এবার ভালো খেলছি বলে সবাই প্রশংসা করছে, অনুপ্রাণিত করছে। এটা যেমন উদ্বুদ্ধ করে, মনোযোগ আরও বাড়িয়ে দেয়। চেষ্টা করব ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে।’ যেহেতু ভালো খেলছেন, তাঁকে নিয়ে এবার বেশ আলোচনা। দীর্ঘদিন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা ৩১ বছর বয়সী সিলেটের এই ব্যাটসম্যান এমন সাড়া আগে কখনো পাননি, ‘এবার সাড়া একটু বেশিই পাচ্ছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততা নেই বলে জাতীয় দলের অধিকাংশ খেলোয়াড় প্রিমিয়ার লিগে খেলছে। এ কারণে সংবাদমাধ্যমের মনোযোগও বেশি।’ দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি দেখলে ইমতিয়াজের বয়সটা হয়তো কঠিন বাস্তবতার কথাই মনে করিয়ে দেবে তাঁকে। তবু বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলার স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রাখতে চান তিনি, ‘সবারই স্বপ্ন থাকে দেশের হয়ে খেলা। স্বপ্নটা আমারও আছে। যদি ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক রান করতে পারি, সুযোগ একদিন আসতেও পারে।’ অতীতে আসেনি; সুযোগটা যদি ভবিষ্যতেও না আসে, তবু হতোদ্যম হতে চান না ইমতিয়াজ। ক্রিকেট যে মিশে গেছে তাঁর রক্তে, ‘ক্রিকেট ছাড়া আর কিছু চিন্তা করতে পারি না। আমি খেলি প্যাশন থেকে। যত দিন ফিটনেস ও পারফরম্যান্স থাকবে, ক্রিকেট আমাকে খেলতেই হবে। আমার সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।’
No comments