সুন্নি-শিয়া সঙ্ঘাত : যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পক্ষ নেয়া উচিত নয় by ফরিদ জাকারিয়া
দুই
দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের ধারণাগত কাঠামোর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের
বিষয়াবলি দেখেছে। এটি হলো : একনায়কতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, ধার্মিকতা বনাম
ধর্মনিরপেক্ষতা, শৃঙ্খলা বনাম অরাজকতা। কিন্তু এই অঞ্চলের রূপায়ণে সবচেয়ে
উল্লেখযোগ্য প্রবণতা এখন ভিন্ন কিছু। সেটি হলো : শিয়া বনাম সুন্নি। এই
জাতিগত সঙ্ঘাত এখন এ অঞ্চলের রাজনীতির প্রায় প্রতিটি দিককেই সংক্রমিত করছে।
এটা মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিকে শুধু কিংকর্তব্যবিমূঢ় করেনি, একই সাথে তা এই
অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনতে যুক্তরাষ্ট্র অথবা অন্য কোনো বাইরের শক্তির
ক্ষমতাকে সীমিত করতে থাকবে।
ওয়ালি নাসর তার দূরদৃষ্টিসম্মৃদ্ধ ‘শিয়া রেনেসাঁ’ শীর্ষক বইয়ে যুক্তি দেখিয়েছেন, ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন বর্তমান সঙ্কটের কেন্দ্রবিন্দু। যুক্তরাষ্ট্র তার কাজকে ইরাকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হিসেবে দেখেছে; কিন্তু এই অঞ্চলের মানুষ সেটাকে দেখেছে ভিন্ন কিছুÑ ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন হিসেবে। বিশ্বের মোট মুসলমানের ৮৫ শতাংশ সুন্নির আরবে দীর্ঘকাল আধিপত্য ছিল। এমনকি ইরাক ও বাহরাইনের মতো শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেও ছিল তাদের আধিপত্য। কিন্তু এক আঘাতেই এর পরিবর্তন হয়ে গেছে। একটি প্রধান আরব রাষ্ট্র ইরাক এখন শিয়া দ্বারা শাসিত। এটি অন্যান্য আরব শাসকের জন্যও বাজাচ্ছে সতর্কঘণ্টা। এতে তাদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা কেবলই বেড়ে চলেছে।
আরব অঞ্চলে সবসময় উত্তেজনা থাকলেও সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত বেশির ভাগ অংশে সুন্নি ও শিয়া শান্তিতে পাশাপাশি বসবাস করে আসছিলেন। ১৯৬০ ও ’৭০-এর দশকে একমাত্র শিয়া শক্তি ইরান শাহ দ্বারা শাসিত হয়ে আসছিল, যার শাসন না ছিল ধর্মীয়, না ছিল সাম্প্রদায়িক। বস্তুত, শাহের পতনের পর প্রথম তাকে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে এই অঞ্চলের বৃহত্তম সুন্নি শক্তি মিসর, আজকের সাম্প্রদায়িক পরিবেশে এটি কল্পনাতীত।
এই অবস্থা পাল্টে যায় ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর। এ বিপ্লব একটি আগ্রাসী ধর্মীয় শাসকশ্রেণীকে দেশটির ক্ষমতায় নিয়ে আসে। তারা এই অঞ্চলে শিয়া ধারণার ‘রফতানি’ করতে এবং শিয়াদের সমর্থন জোগাতে বদ্ধপরিকর ছিল। সে বছরেই সৌদি আরবে জঙ্গি উগ্রপন্থীরা মক্কায় মসজিদুল হারামের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঘোষণা করে যে, তারা সৌদি রাজপরিবারের বিরোধী। তারা এটাকে সৌদি শাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের শিথিল উপায় হিসেবে দেখেছিল। এই ঘটনা সৌদি আরবকে আতঙ্কিত করে তোলে। একই সাথে, এ ঘটনা শাসকদের ধর্মীয় অধিকারের দিকে বিশেষভাবে ঠেলে দেয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, সৌদি আরবের প্রধান মতাদর্শ ওয়াহাবি ইসলাম সবসময় শিয়াবিরোধী ছিল। সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার সময় চার পাশে, শিয়া মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করার ঘটনাও ঘটেছিল। আর তখন শিয়া ধর্মমতের প্রতি এক রকম ঘৃণাও ছড়ানো হয়।
লেবানন, ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান তার প্রভাব প্রসারিত করার সাথে সাথে সৌদি আরবের সম্প্রদায়গত মনোভঙ্গি আরো চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এক দশক আগে সৌদি কর্মকর্তারা দেশের শিয়া সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্ত এবং ক্ষমতাবান করার কথা বলতেন। আজ সৌদি আরবে শিয়াদের ইরানের এজেন্ট হিসেবে সন্দেহের চোখে দেখা হয়।
ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ সম্প্রদায়গত লড়াই হয়ে উঠেছে। ‘কার্নেগি অ্যানডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’-এর একটি রিপোর্টে ফারিয়া আল মুসলিমি উল্লেখ করেছেন, এখন ইয়েমেনে দুই পক্ষের একে অন্যকে ‘পারসিক’ এবং ‘দায়েশ’ (আইএসআইএস বা ইসলামি রাষ্ট্র সম্পর্কে আরব তাচ্ছিল্যের প্রতিশব্দ) হিসেবে চিহ্নিত করছে। আল মুসলিমি লিখেছেন, সম্প্রদায়গত মনোভাব ক্রমেই চাঙ্গা হচ্ছে, ইয়েমেনের সমাজে এই ধারাতেই দৃষ্টিভঙ্গির পুনর্বিন্যাস ঘটছে। জাতীয় চেতনা বা ভিত্তির পরিবর্তে সম্প্রদায়গত পরিচিতি বা অবস্থানের আলোকে পরস্পরের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে।
ইরানের প্রভাব সম্পর্কে, বিশেষত ইরাকে এই প্রভাব নিয়ে সৌদি আরবের বাস্তব কৌশলগত উদ্বেগ রয়েছে। সম্প্রতি লেখালেখি শুরু করা সৌদি ব্যাংকার আলি আল শিহাবি আমাকে বলেছেন, দক্ষিণ ইরাকের পুরোটা এখন ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া দিয়ে পূর্ণ। এটি সৌদি আরবের তেল ক্ষেত্র থেকে মাত্র দুই ঘণ্টা ড্রাইভের পথ। সৌদি আরব এ নিয়ে সত্যিকারভাবেই উদ্বিগ্ন। তবে সাম্প্রদায়িক রণকৌশল সঙ্কীর্ণ ভূ-রাজনীতির চেয়েও গভীরতর কিছু। সৌদি আরব ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ চরমপন্থী পর্যন্ত অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। দেশটির বৃহৎ ও সক্রিয় সামাজিক মিডিয়া প্রান্তিক ইসলামপন্থীদের দ্বারা প্রভাবিত। দেশটির আয়ের প্রধান উৎস তেলের দাম কমছে, সরকারি রাজস্ব ভাণ্ডার ভেঙে পড়ছে আর দেশের জনগণের জন্য এতদিন উদারভাবে যে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছিল, তা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় শাসকদের বৃহত্তর বৈধতা অর্জনের প্রয়োজনও বাড়ছে।
এসব নানা ধরনের সঙ্কটের সাথে যোগ হয়েছে গত সপ্তাহে একজন বিশিষ্ট শিয়া আলেমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা, ইরানের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ, ইয়েমেনের যুদ্ধ এবং সিরিয়ার প্রতি সৌদি নীতি। এর সাথে আপনি দেখবেন, সৌদি আরব তার ইতিহাসে সবচেয়ে কঠোর ও আক্রমণাত্মক সাম্প্রদায়িক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে। এই কৌশলে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অনেক ঝুঁকি রয়েছে। সৌদি আরবের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী শিয়া এবং তারা দেশটির তেল ক্ষেত্রের ওপরে থাকা পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে বসবাস করে। আর প্রতিবেশী বাহরাইন ও ইয়েমেনের শিয়ারা এখন তাদের ওপর নির্যাতক হিসেবে সৌদি আরবকে দেখছে। ইরানও নিশ্চয় যেকোনো সময়ে সৌদি আরবে তার প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করবে।
সাধারণভাবে এ অঞ্চলে ইরানের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতিরোধকারী হিসেবে সৌদি আরবকে সমর্থন করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু এই বৃহত্তর সম্প্রদায়গত সঙ্ঘাতে কোনো পক্ষ গ্রহণ করা আমেরিকার উচিত হবে না। এটি কারো কারো ক্ষেত্রে গৃহযুদ্ধ। সর্বোপরি, ‘ইসলামি রাষ্ট্রের’ বিরুদ্ধে সংগ্রামে ওয়াশিংটনের প্রধান মিত্র হলো বাগদাদের শিয়াপ্রধান সরকার। এর পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এককভাবে সবচেয়ে বড় হুমকি মধ্যপ্রাচ্যের চরমপন্থী সুন্নি জিহাদিদের কাছ থেকে আসছে। ওদের অনেকে সৌদি আরব থেকে অনুপ্রেরণা, তহবিল ও মতবাদগত সমর্থন পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে স্যাটেলাইট টিভি সিএনএনের সিনিয়র সাংবাদিক ও নিউজউইকের সাবেক সম্পাদক ফরিদ জাকারিয়ার এ লেখাটি ওয়াশিংটন পোস্টে ৭ জানুয়ারি প্রকাশ হয়েছে। তার এই কলামটির অনুবাদ করেছেন মাসুমুর রহমান খলিলী
ওয়ালি নাসর তার দূরদৃষ্টিসম্মৃদ্ধ ‘শিয়া রেনেসাঁ’ শীর্ষক বইয়ে যুক্তি দেখিয়েছেন, ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন বর্তমান সঙ্কটের কেন্দ্রবিন্দু। যুক্তরাষ্ট্র তার কাজকে ইরাকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হিসেবে দেখেছে; কিন্তু এই অঞ্চলের মানুষ সেটাকে দেখেছে ভিন্ন কিছুÑ ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন হিসেবে। বিশ্বের মোট মুসলমানের ৮৫ শতাংশ সুন্নির আরবে দীর্ঘকাল আধিপত্য ছিল। এমনকি ইরাক ও বাহরাইনের মতো শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেও ছিল তাদের আধিপত্য। কিন্তু এক আঘাতেই এর পরিবর্তন হয়ে গেছে। একটি প্রধান আরব রাষ্ট্র ইরাক এখন শিয়া দ্বারা শাসিত। এটি অন্যান্য আরব শাসকের জন্যও বাজাচ্ছে সতর্কঘণ্টা। এতে তাদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা কেবলই বেড়ে চলেছে।
আরব অঞ্চলে সবসময় উত্তেজনা থাকলেও সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত বেশির ভাগ অংশে সুন্নি ও শিয়া শান্তিতে পাশাপাশি বসবাস করে আসছিলেন। ১৯৬০ ও ’৭০-এর দশকে একমাত্র শিয়া শক্তি ইরান শাহ দ্বারা শাসিত হয়ে আসছিল, যার শাসন না ছিল ধর্মীয়, না ছিল সাম্প্রদায়িক। বস্তুত, শাহের পতনের পর প্রথম তাকে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে এই অঞ্চলের বৃহত্তম সুন্নি শক্তি মিসর, আজকের সাম্প্রদায়িক পরিবেশে এটি কল্পনাতীত।
এই অবস্থা পাল্টে যায় ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর। এ বিপ্লব একটি আগ্রাসী ধর্মীয় শাসকশ্রেণীকে দেশটির ক্ষমতায় নিয়ে আসে। তারা এই অঞ্চলে শিয়া ধারণার ‘রফতানি’ করতে এবং শিয়াদের সমর্থন জোগাতে বদ্ধপরিকর ছিল। সে বছরেই সৌদি আরবে জঙ্গি উগ্রপন্থীরা মক্কায় মসজিদুল হারামের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঘোষণা করে যে, তারা সৌদি রাজপরিবারের বিরোধী। তারা এটাকে সৌদি শাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের শিথিল উপায় হিসেবে দেখেছিল। এই ঘটনা সৌদি আরবকে আতঙ্কিত করে তোলে। একই সাথে, এ ঘটনা শাসকদের ধর্মীয় অধিকারের দিকে বিশেষভাবে ঠেলে দেয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, সৌদি আরবের প্রধান মতাদর্শ ওয়াহাবি ইসলাম সবসময় শিয়াবিরোধী ছিল। সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার সময় চার পাশে, শিয়া মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করার ঘটনাও ঘটেছিল। আর তখন শিয়া ধর্মমতের প্রতি এক রকম ঘৃণাও ছড়ানো হয়।
লেবানন, ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান তার প্রভাব প্রসারিত করার সাথে সাথে সৌদি আরবের সম্প্রদায়গত মনোভঙ্গি আরো চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এক দশক আগে সৌদি কর্মকর্তারা দেশের শিয়া সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্ত এবং ক্ষমতাবান করার কথা বলতেন। আজ সৌদি আরবে শিয়াদের ইরানের এজেন্ট হিসেবে সন্দেহের চোখে দেখা হয়।
ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ সম্প্রদায়গত লড়াই হয়ে উঠেছে। ‘কার্নেগি অ্যানডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’-এর একটি রিপোর্টে ফারিয়া আল মুসলিমি উল্লেখ করেছেন, এখন ইয়েমেনে দুই পক্ষের একে অন্যকে ‘পারসিক’ এবং ‘দায়েশ’ (আইএসআইএস বা ইসলামি রাষ্ট্র সম্পর্কে আরব তাচ্ছিল্যের প্রতিশব্দ) হিসেবে চিহ্নিত করছে। আল মুসলিমি লিখেছেন, সম্প্রদায়গত মনোভাব ক্রমেই চাঙ্গা হচ্ছে, ইয়েমেনের সমাজে এই ধারাতেই দৃষ্টিভঙ্গির পুনর্বিন্যাস ঘটছে। জাতীয় চেতনা বা ভিত্তির পরিবর্তে সম্প্রদায়গত পরিচিতি বা অবস্থানের আলোকে পরস্পরের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে।
ইরানের প্রভাব সম্পর্কে, বিশেষত ইরাকে এই প্রভাব নিয়ে সৌদি আরবের বাস্তব কৌশলগত উদ্বেগ রয়েছে। সম্প্রতি লেখালেখি শুরু করা সৌদি ব্যাংকার আলি আল শিহাবি আমাকে বলেছেন, দক্ষিণ ইরাকের পুরোটা এখন ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া দিয়ে পূর্ণ। এটি সৌদি আরবের তেল ক্ষেত্র থেকে মাত্র দুই ঘণ্টা ড্রাইভের পথ। সৌদি আরব এ নিয়ে সত্যিকারভাবেই উদ্বিগ্ন। তবে সাম্প্রদায়িক রণকৌশল সঙ্কীর্ণ ভূ-রাজনীতির চেয়েও গভীরতর কিছু। সৌদি আরব ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ চরমপন্থী পর্যন্ত অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। দেশটির বৃহৎ ও সক্রিয় সামাজিক মিডিয়া প্রান্তিক ইসলামপন্থীদের দ্বারা প্রভাবিত। দেশটির আয়ের প্রধান উৎস তেলের দাম কমছে, সরকারি রাজস্ব ভাণ্ডার ভেঙে পড়ছে আর দেশের জনগণের জন্য এতদিন উদারভাবে যে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছিল, তা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় শাসকদের বৃহত্তর বৈধতা অর্জনের প্রয়োজনও বাড়ছে।
এসব নানা ধরনের সঙ্কটের সাথে যোগ হয়েছে গত সপ্তাহে একজন বিশিষ্ট শিয়া আলেমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা, ইরানের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ, ইয়েমেনের যুদ্ধ এবং সিরিয়ার প্রতি সৌদি নীতি। এর সাথে আপনি দেখবেন, সৌদি আরব তার ইতিহাসে সবচেয়ে কঠোর ও আক্রমণাত্মক সাম্প্রদায়িক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে। এই কৌশলে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অনেক ঝুঁকি রয়েছে। সৌদি আরবের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী শিয়া এবং তারা দেশটির তেল ক্ষেত্রের ওপরে থাকা পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে বসবাস করে। আর প্রতিবেশী বাহরাইন ও ইয়েমেনের শিয়ারা এখন তাদের ওপর নির্যাতক হিসেবে সৌদি আরবকে দেখছে। ইরানও নিশ্চয় যেকোনো সময়ে সৌদি আরবে তার প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করবে।
সাধারণভাবে এ অঞ্চলে ইরানের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতিরোধকারী হিসেবে সৌদি আরবকে সমর্থন করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু এই বৃহত্তর সম্প্রদায়গত সঙ্ঘাতে কোনো পক্ষ গ্রহণ করা আমেরিকার উচিত হবে না। এটি কারো কারো ক্ষেত্রে গৃহযুদ্ধ। সর্বোপরি, ‘ইসলামি রাষ্ট্রের’ বিরুদ্ধে সংগ্রামে ওয়াশিংটনের প্রধান মিত্র হলো বাগদাদের শিয়াপ্রধান সরকার। এর পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এককভাবে সবচেয়ে বড় হুমকি মধ্যপ্রাচ্যের চরমপন্থী সুন্নি জিহাদিদের কাছ থেকে আসছে। ওদের অনেকে সৌদি আরব থেকে অনুপ্রেরণা, তহবিল ও মতবাদগত সমর্থন পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে স্যাটেলাইট টিভি সিএনএনের সিনিয়র সাংবাদিক ও নিউজউইকের সাবেক সম্পাদক ফরিদ জাকারিয়ার এ লেখাটি ওয়াশিংটন পোস্টে ৭ জানুয়ারি প্রকাশ হয়েছে। তার এই কলামটির অনুবাদ করেছেন মাসুমুর রহমান খলিলী
No comments