পাকিস্তানে বাংলাদেশী মডেল by উইলিয়াম বি মাইলাম
বর্তমান
সময়ে পাকিস্তান থেকে আশার উদ্ভব হওয়ার যথেষ্ট ভাল কারণ আছে। কয়েক দিন আগে
ওয়াশিংটনে এক সম্মেলনে আমি মডারেটরের দায়িত্ব পালন করছিলাম। ওই সম্মেলনটি
ছিল দেশের বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ ব্যবস্থা আরও বিরাষ্ট্রীয়করণ করা যায়
কি-না তা নিয়ে। এখনও দেখার বিষয় যে, কতগুলো মার্কিনি ও অন্যান্য বিদেশী
বিনিয়োগকারী পাকিস্তানের সঙ্কটময় অর্থনৈতিক খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। সেখানকার
অর্থনীতিতে রয়েছে সংঘাতময় নীতি ও তার চর্চা, স্বচ্ছতাহীন ও উচ্চমূল্যের
প্রকল্প। সংস্কার ও উন্নত সুশাসন প্রয়োজন এই বিদ্যুৎ খাতকে পরিচ্ছন্ন করতে।
পাকিস্তানে বিদ্যুৎ সঙ্কট সমাধানের সুযোগ খুবই কম। ওই সম্মেলনে সবাই একটি
আস্থার কথা শুনিয়েছেন। তা হলো পাকিস্তান অনেক উন্নত হয়েছে। এতে সেখানে
আর্থিক খাতে বিদেশী বিনিয়োগের নিশ্চয়তা আছে, যদি কোন নেতিবাচক প্রভাব না
পড়ে।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি থেকেই অন্ততপক্ষে এই আস্থার জন্ম। দেশে এবং বিদেশে জেনারেলদের বিষয়ে একটি ধারণা জন্মেছে। তা হলো পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর যে লেজেগোবরে অবস্থা হয়েছিল তা থেকে তারা পরিশুদ্ধ হচ্ছে। এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল বছরের পর বছর দুর্বলচিত্তের ও ভুল নির্দেশনামূলক নীতির কারণে। সম্প্রতি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করেছে যে, নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। গত বছর জঙ্গি তৎপরতা কমে গেছে, বিশেষ করে এই তৎপরতা কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে গণহত্যার পর থেকে। ওই ঘটনায় সেনাবাহিনী বুঝতে পেরেছে তালেবান নির্মূল করতে, নর্থ ওয়াজিরিস্তানে জঙ্গি তৎপরতা ও অন্যান্য উপজাতি ইস্যুতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সমর্থন।
তারপর থেকেই রেঞ্জারের মাধ্যমে সেনাবাহিনী অন্যান্য দুর্নীতি বিরোধী কাজে করাচিকে পরিশুদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়। এটা রাজনৈতিক সমঝোতা ভঙ্গ করেছে, যেহেতু পিপিপি এবং এমকিউএম দুর্নীতি বিরোধী পদক্ষেপ অনুধাবন করতে পেরেছে। এসব দলের ভিতর থেকে যে বেদনার কথা বলা হচ্ছিল তা সত্ত্বেও রেঞ্জাররা দৃশ্যত এখনও সক্রিয় আছে। আমি কল্পনা করতে পারি যে, অরাজনৈতিক অনেক পাকিস্তানি করাচির পরিশুদ্ধ অভিযানকে সমর্থন করেন। তারা মনে করেন এটা অনেক আগেই করা উচিত ছিল। আসল বিষয় হলো, আমি ধারণা করি, যৌক্তিক সময়ের শেষে ন্যাশনাল অ্যাকশন প্লান নেয়া হবে। তা হবে পাকিস্তানের সব জঙ্গি সংগঠনকে বিনাশ বা নিষ্ক্রিয় করা। যদি তাই হয় তাহলে এটা ভাবা বোকামি হবে যে, এ কাজটি এক দশকের কম সময়ে করা যাবে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন এসে যায়, যেসব গ্রুপকে সেনাবাহিনী যথারীতি দেখে থাকে একটি প্রক্সি হিসেবে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা এবং কিভাবে করা হবে। দীর্ঘ মেয়াদে পাকিস্তানে যারা বিনিয়োগ করতে চান তাদের মনে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাবে।
কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কি হবে তা এখানে উঠে আসে। প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু বাধা দেয়া হলেও বেসামরিক রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন পিএমএল-এন সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক জায়গা করে দিতে নতি স্বীকার করেছে। দৃশ্যত বেসামরিক সরকার একেবারেই অসংলগ্ন এবং সেনাবাহিনীর সামনে তারা নমনীয়। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের বিগত মেয়াদের ইতিহাস বলে সেনাবাহিনীর সামনে নতজানু হয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত থাকা ‘আউট অব ক্যারেক্টার’।
আমার এক বন্ধু সম্প্রতি কৌতুক করে বললেন পরিবর্তিত বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়া (বাংলাদেশ সলিউশন) হয়তো পাকিস্তানে দেখতে পাবো আমরা। ২০০৭ সাল থেকে মাঝে মধ্যেই আমি বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়া নিয়ে লিখেছি। সংক্ষেপে বলা যায়, ২০০৭ সালে যখন বাংলাদেশে তখনকার বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান হয় তখন আমরা এই সমাধান প্রক্রিয়ার টার্মটি ব্যবহার করেছিলাম। ওই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক কিছু ব্যক্তিকে নিয়ে রাজনৈতিক সংস্কার ও সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয় বাংলাদেশে, যে দেশ নৈরাজ্যে কিনারায় অবস্থান করছিল। এই বেসামরিক শাসনের পর্দার আড়ালে ছিল সেনাবাহিনীর ক্ষমতা। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) ক্ষমতার অর্ধ মেয়াদের সময় কিছু পাকিস্তানি এই ধারণার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। তখন সেখানকার শাসনযন্ত্রে দুর্নীতি ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে শাসকচক্র সুবিধা নিয়েছে। এছাড়া সরকার কোন আদর্শ ও নীতি খুঁজে পেতে অক্ষম ছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়া দরকার হয়ে পড়ে একটি অভ্যুত্থানের জন্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেসামরিক রাজনীতির স্থানে সেনাবাহিনী অব্যাহতভাবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা হতে পারে বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়ার একটি অভ্যন্তরীণ অবস্থার প্রকাশ। এক্ষেত্রে একটি অভ্যুত্থান অত্যাবশ্যক নয়।
যে কোন ঘটনায় কেন যে কেউ বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়ার যে কোন একটি সংস্করণ প্রত্যাশা করেন পাকিস্তান বা অন্য কোন দেশের জন্য? বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়া কার্যত ব্যর্থ হয়েছিল। এটা মোটেও কোন সমাধান ছিল না। এতে আরও খারাপ রাজনৈতিক পরিণতির সূচনা ঘটায়। পরবর্তী সামরিক নয়, কর্তৃত্বপরায়ণ শাসন বাংলাদেশে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আনেনি। এর পরিবর্তে এনেছে বিশৃঙ্খলা, নিরাপত্তাহীনতা ও মৃত্যু। যেসব বাংলাদেশী তাদের হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলেন, তারা লেখার মাধ্যমে মত প্রকাশ করেন, সরকারের বিরোধিতা করেন তাদেরকে, এমনকি বিদেশীদের হত্যা করা হয় দৃশ্যত দায়মুক্তিতে। এখন অনেক দেশের ভ্রমন সতর্কতায় রয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি অজ্ঞাত কারণে একজন ইতালিয়ান এনজিওকর্মী ও জাপানের লেটুস চাষিকে হত্যা করা হয়েছে।
এ লেখাটি বাংলাদেশ নিয়ে না হওয়ায় বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়া যে বাংলাদেশে কার্যকারিতা আনেনি তা নিয়ে এখানে বিশদ বলতে চাই না। দুই বিদেশী হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীনরা এ হত্যাকাণ্ডের জন্য আইসিসকে দায়ী করে। এর মাধ্যমে তারা পশ্চিমা দেশগুলোকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করেছিল। তারা পশ্চিমা দেশগুলোকে বলতে চেয়েছিল এসব অপরাধ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। যখন প্রমাণিত হয় যে, তারা পশ্চিমাদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না, তখন তারা এর জন্য বিরোধীদের, বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করে। প্রকৃতপক্ষেই এর উদ্দেশ্য হলো বিরোধীদের নির্মূল করার সরকারি প্রচেষ্টা। ক্রমবর্ধমান বিরোধিতা সত্ত্বেও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়েছে দ্রুতগতিতে। অপরাধ প্রতিরোধ ও অপরাধীদের ধরা যেত যদি বিরোধীদের দমন না করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো আরও কার্যকর হতো। যদি তারা তাদের সময় বাস্তবে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতেন তাহলে অপরাধ প্রতিরোধ ও অপরাধীদের ধরা যেত।
পাকিস্তানের জন্য বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এখানে আমরা বলি, সেনাবাহিনী অগ্রসর হয়ে পাকিস্তানে একই রকম সরকার প্রতিষ্ঠা করার আশঙ্কা রয়েছে- তা হলো সামরিক সরকারের জন্য বেসামরিক ফ্রন্ট। এটা অপরিহার্য নয়, তবে তা অসম্ভবও নয়। এটা নির্ভর করে বেসামরিক পক্ষগুলো প্রকৃতপক্ষে কিভাবে শাসন করছে তার ওপর। রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে পেশোয়ার গণহত্যা শোচনীয় একটি বিষয়। বেসামরিক সরকার সুশাসনের চ্যালেঞ্জ, নীতির বাস্তবায়ন, সিদ্ধান্ত নেয়া, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারে কিনা তা দেখার ব্যাপার। বিগত পিপিপি সরকার শুধু একটি ক্ষেত্রেই কৃতিত্ব দাবি করে। তা হলো তারা পুরো ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছে। বর্তমান পিএমএল-এন সরকার এখন পর্যন্ত সে পথেই হাঁটছে।
(উইলিয়াম বি মাইলাম: ওয়াশিংটনে উড্র উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার। তিনি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। দ্য ফ্রাইডে টাইমস-এ প্রকাশিত লেখার ভাষান্তর)
পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি থেকেই অন্ততপক্ষে এই আস্থার জন্ম। দেশে এবং বিদেশে জেনারেলদের বিষয়ে একটি ধারণা জন্মেছে। তা হলো পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর যে লেজেগোবরে অবস্থা হয়েছিল তা থেকে তারা পরিশুদ্ধ হচ্ছে। এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল বছরের পর বছর দুর্বলচিত্তের ও ভুল নির্দেশনামূলক নীতির কারণে। সম্প্রতি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করেছে যে, নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। গত বছর জঙ্গি তৎপরতা কমে গেছে, বিশেষ করে এই তৎপরতা কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে গণহত্যার পর থেকে। ওই ঘটনায় সেনাবাহিনী বুঝতে পেরেছে তালেবান নির্মূল করতে, নর্থ ওয়াজিরিস্তানে জঙ্গি তৎপরতা ও অন্যান্য উপজাতি ইস্যুতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সমর্থন।
তারপর থেকেই রেঞ্জারের মাধ্যমে সেনাবাহিনী অন্যান্য দুর্নীতি বিরোধী কাজে করাচিকে পরিশুদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়। এটা রাজনৈতিক সমঝোতা ভঙ্গ করেছে, যেহেতু পিপিপি এবং এমকিউএম দুর্নীতি বিরোধী পদক্ষেপ অনুধাবন করতে পেরেছে। এসব দলের ভিতর থেকে যে বেদনার কথা বলা হচ্ছিল তা সত্ত্বেও রেঞ্জাররা দৃশ্যত এখনও সক্রিয় আছে। আমি কল্পনা করতে পারি যে, অরাজনৈতিক অনেক পাকিস্তানি করাচির পরিশুদ্ধ অভিযানকে সমর্থন করেন। তারা মনে করেন এটা অনেক আগেই করা উচিত ছিল। আসল বিষয় হলো, আমি ধারণা করি, যৌক্তিক সময়ের শেষে ন্যাশনাল অ্যাকশন প্লান নেয়া হবে। তা হবে পাকিস্তানের সব জঙ্গি সংগঠনকে বিনাশ বা নিষ্ক্রিয় করা। যদি তাই হয় তাহলে এটা ভাবা বোকামি হবে যে, এ কাজটি এক দশকের কম সময়ে করা যাবে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন এসে যায়, যেসব গ্রুপকে সেনাবাহিনী যথারীতি দেখে থাকে একটি প্রক্সি হিসেবে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা এবং কিভাবে করা হবে। দীর্ঘ মেয়াদে পাকিস্তানে যারা বিনিয়োগ করতে চান তাদের মনে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাবে।
কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কি হবে তা এখানে উঠে আসে। প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু বাধা দেয়া হলেও বেসামরিক রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন পিএমএল-এন সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক জায়গা করে দিতে নতি স্বীকার করেছে। দৃশ্যত বেসামরিক সরকার একেবারেই অসংলগ্ন এবং সেনাবাহিনীর সামনে তারা নমনীয়। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের বিগত মেয়াদের ইতিহাস বলে সেনাবাহিনীর সামনে নতজানু হয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত থাকা ‘আউট অব ক্যারেক্টার’।
আমার এক বন্ধু সম্প্রতি কৌতুক করে বললেন পরিবর্তিত বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়া (বাংলাদেশ সলিউশন) হয়তো পাকিস্তানে দেখতে পাবো আমরা। ২০০৭ সাল থেকে মাঝে মধ্যেই আমি বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়া নিয়ে লিখেছি। সংক্ষেপে বলা যায়, ২০০৭ সালে যখন বাংলাদেশে তখনকার বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান হয় তখন আমরা এই সমাধান প্রক্রিয়ার টার্মটি ব্যবহার করেছিলাম। ওই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক কিছু ব্যক্তিকে নিয়ে রাজনৈতিক সংস্কার ও সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয় বাংলাদেশে, যে দেশ নৈরাজ্যে কিনারায় অবস্থান করছিল। এই বেসামরিক শাসনের পর্দার আড়ালে ছিল সেনাবাহিনীর ক্ষমতা। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) ক্ষমতার অর্ধ মেয়াদের সময় কিছু পাকিস্তানি এই ধারণার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। তখন সেখানকার শাসনযন্ত্রে দুর্নীতি ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে শাসকচক্র সুবিধা নিয়েছে। এছাড়া সরকার কোন আদর্শ ও নীতি খুঁজে পেতে অক্ষম ছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়া দরকার হয়ে পড়ে একটি অভ্যুত্থানের জন্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেসামরিক রাজনীতির স্থানে সেনাবাহিনী অব্যাহতভাবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা হতে পারে বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়ার একটি অভ্যন্তরীণ অবস্থার প্রকাশ। এক্ষেত্রে একটি অভ্যুত্থান অত্যাবশ্যক নয়।
যে কোন ঘটনায় কেন যে কেউ বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়ার যে কোন একটি সংস্করণ প্রত্যাশা করেন পাকিস্তান বা অন্য কোন দেশের জন্য? বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়া কার্যত ব্যর্থ হয়েছিল। এটা মোটেও কোন সমাধান ছিল না। এতে আরও খারাপ রাজনৈতিক পরিণতির সূচনা ঘটায়। পরবর্তী সামরিক নয়, কর্তৃত্বপরায়ণ শাসন বাংলাদেশে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আনেনি। এর পরিবর্তে এনেছে বিশৃঙ্খলা, নিরাপত্তাহীনতা ও মৃত্যু। যেসব বাংলাদেশী তাদের হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলেন, তারা লেখার মাধ্যমে মত প্রকাশ করেন, সরকারের বিরোধিতা করেন তাদেরকে, এমনকি বিদেশীদের হত্যা করা হয় দৃশ্যত দায়মুক্তিতে। এখন অনেক দেশের ভ্রমন সতর্কতায় রয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি অজ্ঞাত কারণে একজন ইতালিয়ান এনজিওকর্মী ও জাপানের লেটুস চাষিকে হত্যা করা হয়েছে।
এ লেখাটি বাংলাদেশ নিয়ে না হওয়ায় বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়া যে বাংলাদেশে কার্যকারিতা আনেনি তা নিয়ে এখানে বিশদ বলতে চাই না। দুই বিদেশী হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীনরা এ হত্যাকাণ্ডের জন্য আইসিসকে দায়ী করে। এর মাধ্যমে তারা পশ্চিমা দেশগুলোকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করেছিল। তারা পশ্চিমা দেশগুলোকে বলতে চেয়েছিল এসব অপরাধ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। যখন প্রমাণিত হয় যে, তারা পশ্চিমাদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না, তখন তারা এর জন্য বিরোধীদের, বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করে। প্রকৃতপক্ষেই এর উদ্দেশ্য হলো বিরোধীদের নির্মূল করার সরকারি প্রচেষ্টা। ক্রমবর্ধমান বিরোধিতা সত্ত্বেও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়েছে দ্রুতগতিতে। অপরাধ প্রতিরোধ ও অপরাধীদের ধরা যেত যদি বিরোধীদের দমন না করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো আরও কার্যকর হতো। যদি তারা তাদের সময় বাস্তবে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতেন তাহলে অপরাধ প্রতিরোধ ও অপরাধীদের ধরা যেত।
পাকিস্তানের জন্য বাংলাদেশ সমাধান প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এখানে আমরা বলি, সেনাবাহিনী অগ্রসর হয়ে পাকিস্তানে একই রকম সরকার প্রতিষ্ঠা করার আশঙ্কা রয়েছে- তা হলো সামরিক সরকারের জন্য বেসামরিক ফ্রন্ট। এটা অপরিহার্য নয়, তবে তা অসম্ভবও নয়। এটা নির্ভর করে বেসামরিক পক্ষগুলো প্রকৃতপক্ষে কিভাবে শাসন করছে তার ওপর। রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে পেশোয়ার গণহত্যা শোচনীয় একটি বিষয়। বেসামরিক সরকার সুশাসনের চ্যালেঞ্জ, নীতির বাস্তবায়ন, সিদ্ধান্ত নেয়া, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারে কিনা তা দেখার ব্যাপার। বিগত পিপিপি সরকার শুধু একটি ক্ষেত্রেই কৃতিত্ব দাবি করে। তা হলো তারা পুরো ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছে। বর্তমান পিএমএল-এন সরকার এখন পর্যন্ত সে পথেই হাঁটছে।
(উইলিয়াম বি মাইলাম: ওয়াশিংটনে উড্র উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার। তিনি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। দ্য ফ্রাইডে টাইমস-এ প্রকাশিত লেখার ভাষান্তর)
No comments