মাফিয়া পতনের সূচনা করলেন অদম্য বাবা by টিপু সুলতান
থাইল্যান্ডের জঙ্গলে আবিষ্কৃত প্রথম গণকবর। ডানে বড় মানব পাচারকারী চক্রের প্রধান আনোয়ার l ফাইল ছবি |
ছেলের
কবর আর ঘাতকের খোঁজে দিনের পর দিন থাই সমুদ্র উপকূলে কাটান কুইল্যা মিয়া।
তাঁর টানা চার মাসের অদম্য চেষ্টায় ধরা পড়ল মানব পাচারকারী সবচেয়ে ভয়ংকর
মাফিয়া চক্রের প্রধান আনোয়ার। সন্ধান মিলল থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবর।
এরপর একে একে প্রকাশ পেল রোমহর্ষক সব ঘটনা।
এই অদম্য বাবাকে পাচারকারী চক্র খুন করতে পারে—এ আশঙ্কায় তাঁকে রাখা হয় থাইল্যান্ড পুলিশের একটি সেফ হোমে। রোহিঙ্গা সোসাইটি ইন থাইল্যান্ডের সহায়তায় কুইল্যা মিয়ার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয় ২১ মে।
মিয়ানমারের আরাকানে বাড়ি কুইল্যা মিয়ার। সরকারি বাহিনীর নির্যাতনের মুখে অন্য আরও অনেক রোহিঙ্গার মতো তিনি দেশ ছাড়েন। সেটা প্রায় এক দশক আগে। তখন থেকে আছেন দক্ষিণ থাইল্যান্ডের সংখলা প্রদেশে। ছোটখাটো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। স্ত্রী-সন্তান থাকেন দেশে।
কুইল্যা মিয়া জানান, তাঁর দেশে রোহিঙ্গা যুবক ছেলেদের রাখাও বিপজ্জনক। তাই ছেলে মো. আবুল কাশেমকে (২৫) মালয়েশিয়া পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। আরাকানকেন্দ্রিক পাচারকারী চক্রের সঙ্গে মালয়েশিয়া পর্যন্ত পৌঁছে দিতে থাইল্যান্ডের মুদ্রায় ৬০ হাজার বাথ (বাংলাদেশি দেড় লাখ টাকার সমান) চুক্তি করেন। আগাম টাকা পরিশোধের পর গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সাগরপথে যাত্রা শুরু করেন কাশেম। দুই সপ্তাহ পর কুইল্যা মিয়ার কাছে ছেলের ফোন আসে থাইল্যান্ডের নম্বর থেকে। পাচারকারীরা আরও ৬০ হাজার বাথ দাবি করছে। না দিলে ছেলে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বন্দী থাকবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। এরপর আরও কয়েক দফা ফোন করে মুক্তিপণের জন্য তাগাদা দেয় পাচারকারীরা। নির্যাতন করে ছেলের কান্নাও শোনায়। থাইল্যান্ডে বসবাসকারী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন থেকে ধার করে একপর্যায়ে মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করেন কুইল্যা মিয়া। কিন্তু তত দিনে খবর আসে, ছেলে আর জীবিত নেই।
এরপর থেকে ছেলের কবর ও ঘাতকের সন্ধানে বের হন কুইল্যা মিয়া। তাঁকে সহায়তায় এগিয়ে আসে দক্ষিণ থাইল্যান্ডে দীর্ঘদিন বসবাসরত রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত কিছু থাই নাগরিক এবং রোহিঙ্গা সোসাইটি ইন থাইল্যান্ড। তাঁরা একপর্যায়ে জানতে পারেন, মিয়ানমারকেন্দ্রিক মানব পাচারকারীদের সবচেয়ে বড় চক্রের ক্যাম্পে মারা গেছেন কাশেম। এই চক্রের প্রধান মো. আনোয়ার সবচেয়ে ভয়ংকর ও প্রভাবশালী, থাকেন দক্ষিণ থাইল্যান্ডের হাতজ্জাই শহরে।
কুইল্যা মিয়া বলেন, আনোয়ারের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তাঁরা যোগাযোগ করেন সেনাবাহিনীর ওই এলাকার উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তার সঙ্গে। ওই কর্মকর্তা জানান, প্রমাণ ছাড়া তিনি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবেন না।
প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টায় কুইল্যার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হন থাইল্যান্ডের পাটানি প্রদেশের নূর আহাম্মদ। তিনিও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ, দুই পুরুষ ধরে থাইল্যান্ডের বাসিন্দা।
নূর আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, একদিন তাঁরা খবর পান আনোয়ারের হাতজ্জাইয়ের বাড়িতে পাচারকারীদের বৈঠক হবে। জানালেন ওই সেনা কর্মকর্তাকে। ওই রাতেই সেখানে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু আগে থেকে টের পেয়ে আনোয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা সটকে পড়েন। বাড়ি তল্লাশি করে টাকা লেনদেনের কিছু কাগজপত্র পাওয়া যায়।
ওই অভিযানের পর আনোয়ার মিয়ানমার পালিয়ে যান। নূর আহাম্মদ জানালেন, ২৫ দিন পর আনোয়ার থাইল্যান্ডে ফেরেন। তাঁরা খবর পান, আনোয়ার পাশের প্রদেশ নাখন সি থাম্মারাতের এক বাড়িতে অবস্থান করছেন। ফোনে খবর দেন ওই সেনা কর্মকর্তাকে। এরপর ২৮ এপ্রিল ভোরে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আনোয়ারকে আটক করা হয়।
নাখন সি থাম্মারাতে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আনোয়ার মানব পাচার ও মুক্তিপণ আদায়ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং কুইল্যা মিয়ার ছেলের কবর কোথায় জানান। সে তথ্য অনুযায়ী, ১ মে মালয়েশিয়া সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের পাদাম বেসার জঙ্গলে প্রথম গণকবরের সন্ধান পায় থাই পুলিশ। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ২৭ জনের কঙ্কাল। এরপরই সারা দুনিয়া জানল গণকবরের খবর। পরদিন থেকে থাইল্যান্ডের সরকার শুরু করে মানব পাচারবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান।
রোহিঙ্গা সোসাইটি ইন থাইল্যান্ডের সদস্য ও ব্যাংককের ব্যবসায়ী মামুন রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, কুইল্যা মিয়া লেগে না থাকলে এ গণকবরের খবরও কেউ জানত না। এ কারবারও বন্ধ হতো না। লাশ হতো আরও অনেকের ছেলে। তিনি জানান, নিরাপত্তার কারণে কুইল্যা মিয়াকে কোথায় রাখা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। কারণ, তিনি থাইল্যান্ডে এ-সংক্রান্ত মামলার প্রধান সাক্ষী। আর এসব মামলায় পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি সন্দেহভাজন হিসেবে আছেন।
রুটি বিক্রেতা থেকে শতকোটি টাকার মালিক: থাইল্যান্ডের গণমাধ্যমের দাবি, মানব পাচারে জড়িয়ে আনোয়ার ওই দেশের মুদ্রায় অন্তত ৪০০ কোটি বাথের সম্পদের মালিক হয়েছেন।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, আনোয়ার এক দশক আগেও হাতজ্জাই শহরের রাস্তায় রুটি বেচতেন। তাঁর জন্মস্থান মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের মংডুর নলবইন্যা গ্রামে। বাবার নাম ননু মিয়া।
২০ বছর আগে সাগরপথে ট্রলারযোগে থাইল্যান্ড আসেন আনোয়ার। আবাস গড়েন সংখলা প্রদেশের হাতজ্জাই শহরে। এ শহরের রাস্তায় রুটি বিক্রি করতেন। পরে থাইল্যান্ডের নাগরিকত্ব পান।
প্রায় একই সময়ে আরাকান থেকে এসে হাতজ্জাই আবাস গড়েছেন এবং আনোয়ারকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছেন, এমন একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানান, ২০০৮ সালে আনোয়ার রুটি বিক্রি ছেড়ে দেন। কাজ শুরু করেন মানুষ পাচারকারী চক্রের সঙ্গে। শুরুতে তিনি নৌকায় (ওদের ভাষায় জাহাজ) দোভাষীর কাজ করতেন। পথঘাট চেনার পর বছর দুয়েকের মাথায় আনোয়ার যোগ দেন হাফেজ আহাম্মদের সঙ্গে। মিয়ানমার থেকে মানব পাচারের সে সময়ের বড় হোতা হাফেজ মিয়ানমারের নাগরিক, থাকেন ইয়াঙ্গুনে।
দুই বছরের মধ্যে আনোয়ার ছাড়িয়ে যান ওস্তাদ হাফেজ আহাম্মদকেও। তিনি নিজেই গড়ে তোলেন আরও বড় পাচারকারী চক্র। অল্প দিনে হয়ে ওঠেন এ জগতের সবচেয়ে বড় মাফিয়া। এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল অনেকগুলো সূত্রই নিশ্চিত করেছে যে ২০১২ সাল থেকে আনোয়ারই পুরোনো মানব পাচার কারবারকে মুক্তিপণ বাণিজ্যে রূপান্তর করেন। জঙ্গলে ক্যাম্প বা নিজস্ব বন্দিশালা গড়ে তোলেন, যা পরে অন্যরা অনুসরণ করে।
এই অদম্য বাবাকে পাচারকারী চক্র খুন করতে পারে—এ আশঙ্কায় তাঁকে রাখা হয় থাইল্যান্ড পুলিশের একটি সেফ হোমে। রোহিঙ্গা সোসাইটি ইন থাইল্যান্ডের সহায়তায় কুইল্যা মিয়ার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয় ২১ মে।
মিয়ানমারের আরাকানে বাড়ি কুইল্যা মিয়ার। সরকারি বাহিনীর নির্যাতনের মুখে অন্য আরও অনেক রোহিঙ্গার মতো তিনি দেশ ছাড়েন। সেটা প্রায় এক দশক আগে। তখন থেকে আছেন দক্ষিণ থাইল্যান্ডের সংখলা প্রদেশে। ছোটখাটো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। স্ত্রী-সন্তান থাকেন দেশে।
কুইল্যা মিয়া জানান, তাঁর দেশে রোহিঙ্গা যুবক ছেলেদের রাখাও বিপজ্জনক। তাই ছেলে মো. আবুল কাশেমকে (২৫) মালয়েশিয়া পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। আরাকানকেন্দ্রিক পাচারকারী চক্রের সঙ্গে মালয়েশিয়া পর্যন্ত পৌঁছে দিতে থাইল্যান্ডের মুদ্রায় ৬০ হাজার বাথ (বাংলাদেশি দেড় লাখ টাকার সমান) চুক্তি করেন। আগাম টাকা পরিশোধের পর গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সাগরপথে যাত্রা শুরু করেন কাশেম। দুই সপ্তাহ পর কুইল্যা মিয়ার কাছে ছেলের ফোন আসে থাইল্যান্ডের নম্বর থেকে। পাচারকারীরা আরও ৬০ হাজার বাথ দাবি করছে। না দিলে ছেলে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বন্দী থাকবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। এরপর আরও কয়েক দফা ফোন করে মুক্তিপণের জন্য তাগাদা দেয় পাচারকারীরা। নির্যাতন করে ছেলের কান্নাও শোনায়। থাইল্যান্ডে বসবাসকারী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন থেকে ধার করে একপর্যায়ে মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করেন কুইল্যা মিয়া। কিন্তু তত দিনে খবর আসে, ছেলে আর জীবিত নেই।
এরপর থেকে ছেলের কবর ও ঘাতকের সন্ধানে বের হন কুইল্যা মিয়া। তাঁকে সহায়তায় এগিয়ে আসে দক্ষিণ থাইল্যান্ডে দীর্ঘদিন বসবাসরত রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত কিছু থাই নাগরিক এবং রোহিঙ্গা সোসাইটি ইন থাইল্যান্ড। তাঁরা একপর্যায়ে জানতে পারেন, মিয়ানমারকেন্দ্রিক মানব পাচারকারীদের সবচেয়ে বড় চক্রের ক্যাম্পে মারা গেছেন কাশেম। এই চক্রের প্রধান মো. আনোয়ার সবচেয়ে ভয়ংকর ও প্রভাবশালী, থাকেন দক্ষিণ থাইল্যান্ডের হাতজ্জাই শহরে।
কুইল্যা মিয়া বলেন, আনোয়ারের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তাঁরা যোগাযোগ করেন সেনাবাহিনীর ওই এলাকার উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তার সঙ্গে। ওই কর্মকর্তা জানান, প্রমাণ ছাড়া তিনি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবেন না।
প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টায় কুইল্যার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হন থাইল্যান্ডের পাটানি প্রদেশের নূর আহাম্মদ। তিনিও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ, দুই পুরুষ ধরে থাইল্যান্ডের বাসিন্দা।
নূর আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, একদিন তাঁরা খবর পান আনোয়ারের হাতজ্জাইয়ের বাড়িতে পাচারকারীদের বৈঠক হবে। জানালেন ওই সেনা কর্মকর্তাকে। ওই রাতেই সেখানে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু আগে থেকে টের পেয়ে আনোয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা সটকে পড়েন। বাড়ি তল্লাশি করে টাকা লেনদেনের কিছু কাগজপত্র পাওয়া যায়।
ওই অভিযানের পর আনোয়ার মিয়ানমার পালিয়ে যান। নূর আহাম্মদ জানালেন, ২৫ দিন পর আনোয়ার থাইল্যান্ডে ফেরেন। তাঁরা খবর পান, আনোয়ার পাশের প্রদেশ নাখন সি থাম্মারাতের এক বাড়িতে অবস্থান করছেন। ফোনে খবর দেন ওই সেনা কর্মকর্তাকে। এরপর ২৮ এপ্রিল ভোরে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আনোয়ারকে আটক করা হয়।
নাখন সি থাম্মারাতে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আনোয়ার মানব পাচার ও মুক্তিপণ আদায়ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং কুইল্যা মিয়ার ছেলের কবর কোথায় জানান। সে তথ্য অনুযায়ী, ১ মে মালয়েশিয়া সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের পাদাম বেসার জঙ্গলে প্রথম গণকবরের সন্ধান পায় থাই পুলিশ। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ২৭ জনের কঙ্কাল। এরপরই সারা দুনিয়া জানল গণকবরের খবর। পরদিন থেকে থাইল্যান্ডের সরকার শুরু করে মানব পাচারবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান।
রোহিঙ্গা সোসাইটি ইন থাইল্যান্ডের সদস্য ও ব্যাংককের ব্যবসায়ী মামুন রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, কুইল্যা মিয়া লেগে না থাকলে এ গণকবরের খবরও কেউ জানত না। এ কারবারও বন্ধ হতো না। লাশ হতো আরও অনেকের ছেলে। তিনি জানান, নিরাপত্তার কারণে কুইল্যা মিয়াকে কোথায় রাখা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। কারণ, তিনি থাইল্যান্ডে এ-সংক্রান্ত মামলার প্রধান সাক্ষী। আর এসব মামলায় পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি সন্দেহভাজন হিসেবে আছেন।
রুটি বিক্রেতা থেকে শতকোটি টাকার মালিক: থাইল্যান্ডের গণমাধ্যমের দাবি, মানব পাচারে জড়িয়ে আনোয়ার ওই দেশের মুদ্রায় অন্তত ৪০০ কোটি বাথের সম্পদের মালিক হয়েছেন।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, আনোয়ার এক দশক আগেও হাতজ্জাই শহরের রাস্তায় রুটি বেচতেন। তাঁর জন্মস্থান মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের মংডুর নলবইন্যা গ্রামে। বাবার নাম ননু মিয়া।
২০ বছর আগে সাগরপথে ট্রলারযোগে থাইল্যান্ড আসেন আনোয়ার। আবাস গড়েন সংখলা প্রদেশের হাতজ্জাই শহরে। এ শহরের রাস্তায় রুটি বিক্রি করতেন। পরে থাইল্যান্ডের নাগরিকত্ব পান।
প্রায় একই সময়ে আরাকান থেকে এসে হাতজ্জাই আবাস গড়েছেন এবং আনোয়ারকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছেন, এমন একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানান, ২০০৮ সালে আনোয়ার রুটি বিক্রি ছেড়ে দেন। কাজ শুরু করেন মানুষ পাচারকারী চক্রের সঙ্গে। শুরুতে তিনি নৌকায় (ওদের ভাষায় জাহাজ) দোভাষীর কাজ করতেন। পথঘাট চেনার পর বছর দুয়েকের মাথায় আনোয়ার যোগ দেন হাফেজ আহাম্মদের সঙ্গে। মিয়ানমার থেকে মানব পাচারের সে সময়ের বড় হোতা হাফেজ মিয়ানমারের নাগরিক, থাকেন ইয়াঙ্গুনে।
দুই বছরের মধ্যে আনোয়ার ছাড়িয়ে যান ওস্তাদ হাফেজ আহাম্মদকেও। তিনি নিজেই গড়ে তোলেন আরও বড় পাচারকারী চক্র। অল্প দিনে হয়ে ওঠেন এ জগতের সবচেয়ে বড় মাফিয়া। এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল অনেকগুলো সূত্রই নিশ্চিত করেছে যে ২০১২ সাল থেকে আনোয়ারই পুরোনো মানব পাচার কারবারকে মুক্তিপণ বাণিজ্যে রূপান্তর করেন। জঙ্গলে ক্যাম্প বা নিজস্ব বন্দিশালা গড়ে তোলেন, যা পরে অন্যরা অনুসরণ করে।
No comments