মিয়ানমারে ভারতীয় সেনা অভিযানে জীবন সিংহের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা by পরিতোষ পাল
মিয়ানমারে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিতর্কিত অভিযানে যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন তথা কেএলও-র প্রধান জীবন সিংহ সহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। অন্য নিহত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমানে কেএলও-ও সেকেন্ড ইন কমান্ড নিত্যানন্দ ওরফে জামাই। মিয়ানমারে ভারতীয় সেনার অভিযান নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে জোরালো আলোচনা শুরু হয়েছে তখনই বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে মৃত জঙ্গিদের কয়েকজনের পরিচয়। তবে সরকারিভাবে কোন কিছু না জানানোয় প্রবল ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। গতকালই গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে জীবন সিংহে মৃতদেহের ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হলেই তার লাশ পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হবে। তবে সেনা অভিযান নিয়ে পরস্পরবিরোধী নানা সংবাদ জানাজানির ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও কোন তথ্যই জানানো হচ্ছ না। তবে জীবন সিংহের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল আলোড়ন তৈরি হয়েছে। উত্তরবঙ্গে প্রশাসনিক মহলেও প্রবল চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে এই খবরে। অবশ্য বিতর্ক এড়াতে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, নিহত জঙ্গিদের পরিচয় মেলেনি। ফলে তাদের মধ্যে কেএলও প্রধান রয়েছেন কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত বৃহস্পতিবার ভোরে মিয়ানমারের কয়েকটি জঙ্গি ঘাঁটিতে অতর্কিতে হামলা চালায় ভারতীয় সেনার কমান্ডো বাহিনী। হামলায় নিহত জনা চল্লিশেক জঙ্গির মধ্যে ২০ জন কেএলও কর্মী মারা গেছে বলে সেনাবাহিনী দাবি করেছিল। আহতও হয় অনেকে। পরে গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানায়, হামলায় নিহতের মধ্যে কেএলও প্রধান জীবন সিংহও রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামের বাসিন্দা জীবন সিংহ ১৯৮৮ সাল থেকে কেএলও’র সঙ্গে যুক্ত। কয়েক বছরের মধ্যেই সাংগঠনিক দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে সংগঠনের প্রথম সারির নেতা হয়ে ওঠেন। বছর দশেক আগে ভুটানে সেনা অভিযানে বড়োসড়ো ধাক্কা খাওয়ার পর থেকেই কার্যত ভেঙে পড়ে এই সংগঠনটি। তার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে শুরু করে জঙ্গিরা। কিন্তু জীবন সিংহের নাগাল মেলেনি। এক সময় জানা গিয়েছিল সে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। পরে অবশ্য মিয়ানমারের দিকেই তার যাতায়াত ছিল বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। তার বিরুদ্ধে ৫০টিরও বেশি মামলা রয়েছে বিভিন্ন থানায়। একাধিক খুনেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এদিকে সেনা অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার ঘন ঘন বৈঠকে বসে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেনা অভিযান পরবর্তী পরিস্থিতি এবং জঙ্গিদের মিথ্যে প্রচার নিয়ে পর্যালোচনায় বসেছিলেন। সেই বৈঠকের পরে উত্তর পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী জীতেন্দ্র সিং এবং জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান আর এন রবিকে পরিস্থিতি পর্যালোচনায় মণিপুর ও নাগাল্যান্ডে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা সেখানে গিয়ে সিভিল সোসাইটির কাছ থেকে সেনা অভিযান সম্পর্কে মতামত যেমন সংগ্রহ করবেন তেমনি জঙ্গিদের মিথ্যা প্রচারণাও খণ্ডন করেন। অন্যদিকে জঙ্গিদের প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় গতকাল দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিক্কও, স্বরাষ্ট্র সচিব এল সি গোয়েল, সেনা প্রধান দলবীর সিং ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ আধিকারিকরা। বৈঠকে সতর্কতামূলক সবরকম ব্যবস্থা নেয়র নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে আগামী দিনে আরও এই ধরনে সেনা অভিযান নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা তা জানা যায় নি।
No comments