১৫ দিন আগেই অভ্যুত্থানের আশঙ্কা -মার্কিন নথি: জিয়া ও মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড by মিজানুর রহমান খান
৩০
মে জিয়া হত্যাকাণ্ডের ৩৪ বছর পূর্তি হবে। দীর্ঘ সময় পরে মার্কিন গোপন
দলিলে উদ্ঘাটিত হলো জিয়া ও মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কাহিনি। এ বিষয়ে
প্রথম আলোর বিশেষ ধারাবাহিক আয়োজনের তৃতীয় কিস্তি প্রকাশিত হলো আজ।
জনপ্রিয় থাকতেও জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সামরিক নেতৃত্ব কমবেশি সব সময় ভঙ্গুর ছিল। আর এই ভঙ্গুরত্বকে যিনি নানাভাবে ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন, তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মার্কিন নথিগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে, ১৯৭৭ সাল থেকেই জিয়া-মঞ্জুর-মীর শওকত ও এরশাদের মধ্যে নানামাত্রিক দ্বৈরথ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। মঞ্জুর ও এরশাদের দূরত্ব মার্কিন দূতাবাস ১৯৭৮ সালের গোড়ায় জানতে পেরেছিল। অনুগত ও নিরাপদ ভেবে জিয়া এরশাদকে সেনাপ্রধান করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু জিয়া মন্ত্রিত্ব দিয়ে এরশাদকেও সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তা সফল হয়নি। তবে ১৯৮১ সালের এই দিনে চট্টগ্রামে যা ঘটেছিল, তার প্রেক্ষাপট তৈরির বীজ নিহিত ছিল ‘আর্মি পলিটিকসে’ই। দুই বছর আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই মহাপরিচালক এম এ হাকিম: ‘জিয়ার জনপ্রিয়তা হ্রাস পেলেই তার ওপর আঘাত আসতে পারে।’ ৩০ মে ৮১-তে কি তা-ই ঘটল?
জিয়ার জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন এবং বিএনপির ভেতরে অসন্তোষ ধূমায়িত হচ্ছিল, এমনকি একটি অভ্যুত্থানের আশঙ্কাও যে রয়েছে, সেটা মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড টেলর স্নাইডার ওয়াশিংটনকে জানিয়েছিলেন ১৫ মে ১৯৮১ অর্থাৎ অভ্যুত্থানের ১৫ দিন আগে। মার্কিন নথি পর্যালোচনায় বিস্ময়করভাবে জিয়া-মঞ্জুর-মীর শওকত-এরশাদের মধ্যকার টানাপোড়েনের একটা দীর্ঘ চিহ্ন-রেখা ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকার অারেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এডওয়ার্ড ই. মাস্টার্স ১৯৭৭ সালেই মঞ্জুরকে চট্টগ্রামে জিওসি করে প্রেরণকেই একটা বিরোধের সূচনা বলে ইঙ্গিত করেছিলেন। এর তিন বছর পর ১৯৮০ সালের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ খবরও পৌঁছে যায় যে জেনারেল মঞ্জুর জিয়ার প্রকাশ্য বিরোধিতায় নেমেছেন।
জিয়া হত্যাকাণ্ডের পরে অবমুক্ত না করা একটি সূত্রের বরাতে মার্কিন নথিতে উল্লেখ পাই, ‘১৯৮০ সালের শেষের দিকে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে “মঞ্জুর প্রকাশ্যেই জিয়ার সমালোচক হয়ে পড়েছিলেন। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্রোহ দমনে মঞ্জুরের প্রতি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। চট্টগ্রামে সৈন্যদের মধ্যে মঞ্জুর অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন বলে জানা যায়। আমাদের তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে অনেক কর্মকর্তা তাঁর ক্যারিশমায় অভিভূত হয়েছিলেন”।’
জনপ্রিয়তা হ্রাসের প্রশ্ন: ১৯৮১ সালের ১৫ মে মার্কিন দূতাবাসের ‘ঢাকার রাজনৈতিক বিদ্বেষ’ শীর্ষক এক তারবার্তায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অভ্যুত্থানের আশঙ্কা বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। এখন ঢাকার অবস্থা গুমটের চারটি কারণ আছে। প্রথমত, দেশ শাসনে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সামর্থ্য হ্রাস পাচ্ছে বলে অনুভূত হচ্ছে। মার্কিন দূতাবাস এটা সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষ থেকেই শুনছে। জিয়া আগে যেভাবে দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন, সেভাবে এখন আর পারছেন না। একজন বিএনপি এমপির কথায়, ‘তিনি এখন একনায়কসুলভভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তিনি সঠিক পরামর্শ পাচ্ছেন না কিংবা সরকারি সিদ্ধান্ত শিথিলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, বিএনপিতে ‘মার্কিন কন্টাকটস’ সর্বদা সক্রিয় ছিল। ১৫ মে, ৮১ স্নাইডার লিখেছেন, ‘বিএনপির ভেতরে মার্কিন কন্টাকটসগুলো বলেছে, জিয়া এখন কারও কথা শোনা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন কিংবা তিনি কেবলই তাঁর উপদেষ্টাদের নিয়ে মশগুল থাকছেন। এক রাজাকারকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর আসনে বসিয়েছেন। জিয়া অত্যধিক বিদেশভ্রমণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মন্ত্রীরা তাঁর কাছ থেকে নির্দেশনা লাভের সুযোগ পাচ্ছেন না।’ বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী গত ২৮ মে এক আলোচনা সভায় যদিও তথ্য দেন যে দেশ পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জিয়া প্রতিদিন তিন-চারটি সভা করতেন।
মার্কিন দূতাবাসের ওই তারবার্তা বলেছে, ‘উল্লিখিত মন্তব্যে অতিরঞ্জন থাকলেও আমরা এটা বুঝতে পারছি যে জিয়া আগে যেভাবে সতর্কতা ও দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেন, তাতে ঘাটতি পড়ছে। বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছাড়া জিয়া ইদানীং যে আর কার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ, সেটাও তাঁরা বলতে পারছেন না। এর আগে জিয়ার ইনার সার্কেল দ্রুত পরিবর্তন হতো। ঢাকা গুমোট হওয়ার দ্বিতীয় ও তৃতীয় কারণ হলো যথাক্রমে দুর্নীতি বলগাহীন হয়ে ওঠা এবং দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলার অবনতি। অপরাধের সরকারি পরিসংখ্যানে সত্য প্রতিফলিত হচ্ছে না। কারণ, পুলিশ স্টেশনগুলো তাদের ইচ্ছামতো অপরাধ রেকর্ড করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আর চূড়ান্তভাবে অর্থনৈতিক সংকট প্রবল হয়ে উঠছে। মুদ্রাস্ফীতিকে অনেকেই মুখ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করছেন। দ্রব্যমূল্যেরও ঊর্ধ্বগতি ঘটছে’।
স্নাইডার তাঁর ওই বার্তায় আরও উল্লেখ করেন, ‘দূতাবাসের কতিপয় নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, গ্রাম এলাকায় জিয়ার জনপ্রিয়তা কমেছে। অনেক গ্রামবাসী বিশ্বাস করেন, জিয়ার আর নতুন করে কিছুই বলার নেই। আমরা মনে করি, জিয়ার জনপ্রিয়তা সামান্য কিছুটা কমতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, জিয়া এখনো গ্রামে জনপ্রিয়। তাঁকেই একমাত্র নেতা মনে করা হয়, যিনি কিছুটা স্থিতিশীল নিরাপত্তা দিতে পারেন। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই, বর্তমানে যে অস্থিরতা চলছে, তাতে জিয়ার জন্য আশঙ্কাজনক বিপদের বীজ রয়েছে। এটা সামরিক বাহিনীতে একটি সামরিক অভ্যুত্থান জাগিয়ে তুলতে এবং পরিণতিতে সরকারের জন্য হুমকি বয়ে আনতে পারে। অবশ্য এ ধরনের আশঙ্কা সম্ভবত আপাতত স্তিমিত হয়েছে। আমরা এ মুহূর্তে অভ্যুত্থান-চেষ্টা কিংবা উল্লেখযোগ্য সামরিক অসন্তোষের গুজব শুনতে পাই না।’
পেছন ফেরা: জিয়া হত্যার তিন বছর আগেই এরশাদ ‘হতাশ’ হয়ে পড়েছিলেন। ১৯৭৮ সালের ২৭ এপ্রিল স্নাইডার তাঁকে অনুগত সমর্থক বিবেচনায় জিয়া তাঁকে সেনাপ্রধানের পদ দেবেন বলে উল্লেখ করেন। ৭৮ সালের ২৫ জুন বার্গেনসেন বলেন, দূতাবাসের কর্মকর্তারা এরশাদের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝতে পেরেছেন, তিনি শক্তিশালী রাষ্ট্রপতিব্যবস্থার পক্ষে। ২৯ মার্চ ৭৮ মসিউর রহমান যাদু মিয়া স্নাইডারকে বলেন, মধ্য এপ্রিলে জিয়া সেনাপ্রধানের পদ ছেড়ে সেখানে এরশাদকে আনবেন, এ বিষয়ে তিনি কথিতমতে শওকত আলীর সমর্থন নিয়েছেন। যদিও এ পদটি শওকত আলীই চাইছিলেন। ১৯৭৭ সালের ৩ জুন রাষ্ট্রদূত মাস্টার্সের আরেক মন্তব্য: ‘জিয়া সেনাপ্রধান পদ ধরে রাখলে তিনি এরশাদের মতোই এক হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। এরশাদ ভাবেন, সেনাপ্রধান হওয়া এখন তাঁর “কর্তব্য”। আর দস্তগীর জিয়ার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হতে পারেন।’ মাস্টার্স আরও বলেছিলেন, ‘আমাদের জন্য এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে ভুট্টোর পরিণতি জিয়া মনে রেখেছেন। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ “আর্মি পলিটিকস” তাঁকে গুরুত্বের সঙ্গে মনে রাখতে হবে।’
সায়েমকে সরানোর পরে ১৫ নভেম্বর ১৯৭৭ মাস্টার্স এক সিক্রেট তারবার্তায় লিখেছিলেন, শক্তিশালীতম গুজবের কেন্দ্রস্থল সামরিক বাহিনীর উচ্চতম পর্যায়। মঞ্জুরকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে। মেজর জেনারেল হলে তাঁকে ডিভিশন কমান্ড করতেই হবে। সাভারে নবম ডিভিশন থেকে যশোরে বদলির বিরোধিতা মীর শওকত করতেই পারেন। আবার জিয়া তাঁর সিদ্ধান্তে স্থির থাকলে তিনি তা মেনেও নেবেন। এরপরই মাস্টার্স লেখেন: ‘বেশ কিছুটা সময় মীর শওকত ও মঞ্জুরের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল না। কিন্তু তাঁরা উভয়ে জিয়ার প্রতি অনুগত ছিলেন। তবে বিশেষ করে ৩০ সেপ্টেম্বর ও ২ অক্টোবরে সেনা বাহিনীতে বিদ্রোহের (মিউটিনি) পরে এ দুজনের মধ্যকার ঝগড়াঝঁাটি বিবেচনায় জিয়া হয়তো উভয়কে ঢাকা থেকে বিদায় করে দেওয়াকেই অভিপ্রেত মনে করেছেন।’ মাস্টার্সের কথায়: ‘রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে যে মীর শওকত এরশাদের সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত। এরশাদ অবশ্য ডেপুটি চিফের পদেই থাকছেন, যদি পদোন্নতি বা তাঁর সরাসরি সেনা পদে না থাকা জিয়া দরকারি মনে করেন। অন্যদিকে গুজব হলো, একটা ভীতি আছে যে মীর শওকত ও মঞ্জুর (তাঁর সৈন্য কম) তাঁদের অধীন সৈন্যদের নিয়ে লড়াইয়ে নামতে পারেন। কিংবা কতিপয় “দুর্বৃত্ত” বা গ্রেপ্তার না হওয়া বিদ্রোহী সেনারা নগরে আঘাত হানতে পারেন।’
‘এরশাদ ইজ দ্য ম্যান নেক্সট ইন লাইন।’ মাস্টার্স ১৯৭৭ সালের নভেম্বরে এটা কীভাবে লিখেছিলেন? মার্কিন রাষ্ট্রদূত সেই সঙ্গে আরও বলেছিলেন, এরশাদের একটি অসুবিধা ও আরেকটি সুবিধা আছে। অসুবিধা হলো তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি, রিপ্যাটরিয়েট। আর সুবিধা হলো মুক্তিযোদ্ধাদের ভেতরের সরাসরি বিরোধে তাঁকে জড়াতে হয় না।
পাঁচ পৃষ্ঠার ওই সিক্রেট তারবার্তার শেষে মাস্টার্স জিয়ার জন্য একটি প্রার্থনা করেছিলেন: ‘জিয়াকে অবশ্যই এমন চ্যানেল বের করতে হবে, যাতে মুজিবের শেষ দিনগুলোর প্রায় নৈরাজ্যকর অবস্থা কিংবা ১৯৫৮ সালে আইয়ুবেরÿ ক্ষমতা দখলের আগের অবস্থার দিকে পরিস্থিতি না গড়ায়।’
জিয়া তাঁর মন্ত্রিসভায় (উপদেষ্টা পরিষদে) অ্যাডমিরাল খান, এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদ, বিডিআর–প্রধান জেনারেল দস্তগীর ও ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এরশাদকে নিতে চাইলেন। কিন্তু শর্ত হলো এরশাদ ও দস্তগীরকে মন্ত্রী হতে হলে তাঁদের উর্দি ছাড়তে হবে। ১৯৭৭ সালের ২ জুলাই সেনানিবাসে সভা হলো। দস্তগীর বললেন, আমরা চারজনই চাকরি ছাড়ব। আপনাকেও সেনাপ্রধানের পদ ছাড়তে হবে। জিয়া তা নাকচ করেন।
বার্গেনসেন ৭ জুলাই, ৭৭ এক তারবার্তায় লিখেছেন, জ্যেষ্ঠদের তরফে জিয়াকে কিছুটা ‘সক্রিয় শত্রুতা’ সইতে হয়। এরশাদের অধীন সেনারা কম গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তদুপরি তা ভাবার বিষয়। গণভোটে নিরঙ্কুশ বিজয় ও বিপুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও জিয়া তাঁর সহকর্মীদের দ্বারাই চ্যালেঞ্জের কবলে পড়তে পারেন।
২২ এপ্রিল ১৯৭৭ রাষ্ট্রদূত মাস্টার্স নিয়তির লিখন লিখেছিলেন? ‘এরশাদের পদোন্নতি হয়তো যৌক্তিক। কিন্তু জিয়ারÿ ক্ষমতার ঘাঁটি সেনানিবাস। এরশাদ বা অন্য কেউ ওপরে উঠলে তা আরও অনেকগুলো রদবদল বয়ে আনে, তখন জিয়াকে পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে রাখতে হবে।’
১৯৭৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মার্কিন পলিটিক্যাল কাউন্সিলর তৎকালীন এনএসআই মহাপরিচালক এম এ হাকিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। হাকিম তাঁকে বলেছিলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায়ের বিভক্তি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি। জিয়া স্পষ্টতই এরশাদকে চিফ অব স্টাফ করতে চান। কিন্তু রিপ্যাটরিয়েট ও মুক্তিেযাদ্ধাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে।’ উল্লেখ্য, মঞ্জুর ও শওকত উভয়ে সেনাপ্রধান হতে আগ্রহী ছিলেন।
হাকিম মার্কিন কূটনীতিককে বলেছিলেন, মঞ্জুরের সঙ্গে শওকতের, আবার উভয়ের সঙ্গে এরশাদের বিরোধ আছে। জিয়া যতক্ষণ জনসমর্থন ধরে রাখতে পারবেন, শীর্ষ সেনা পদের বিরোধ ততক্ষণ নিমজ্জিত থাকবে। এ সমস্যা কঠিন হবে তখনই, যখন জিয়া সমস্যায় পড়বেন।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক৷
mrkhanbd@gmail.com
জনপ্রিয় থাকতেও জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সামরিক নেতৃত্ব কমবেশি সব সময় ভঙ্গুর ছিল। আর এই ভঙ্গুরত্বকে যিনি নানাভাবে ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন, তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মার্কিন নথিগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে, ১৯৭৭ সাল থেকেই জিয়া-মঞ্জুর-মীর শওকত ও এরশাদের মধ্যে নানামাত্রিক দ্বৈরথ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। মঞ্জুর ও এরশাদের দূরত্ব মার্কিন দূতাবাস ১৯৭৮ সালের গোড়ায় জানতে পেরেছিল। অনুগত ও নিরাপদ ভেবে জিয়া এরশাদকে সেনাপ্রধান করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু জিয়া মন্ত্রিত্ব দিয়ে এরশাদকেও সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তা সফল হয়নি। তবে ১৯৮১ সালের এই দিনে চট্টগ্রামে যা ঘটেছিল, তার প্রেক্ষাপট তৈরির বীজ নিহিত ছিল ‘আর্মি পলিটিকসে’ই। দুই বছর আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই মহাপরিচালক এম এ হাকিম: ‘জিয়ার জনপ্রিয়তা হ্রাস পেলেই তার ওপর আঘাত আসতে পারে।’ ৩০ মে ৮১-তে কি তা-ই ঘটল?
জিয়ার জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন এবং বিএনপির ভেতরে অসন্তোষ ধূমায়িত হচ্ছিল, এমনকি একটি অভ্যুত্থানের আশঙ্কাও যে রয়েছে, সেটা মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড টেলর স্নাইডার ওয়াশিংটনকে জানিয়েছিলেন ১৫ মে ১৯৮১ অর্থাৎ অভ্যুত্থানের ১৫ দিন আগে। মার্কিন নথি পর্যালোচনায় বিস্ময়করভাবে জিয়া-মঞ্জুর-মীর শওকত-এরশাদের মধ্যকার টানাপোড়েনের একটা দীর্ঘ চিহ্ন-রেখা ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকার অারেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এডওয়ার্ড ই. মাস্টার্স ১৯৭৭ সালেই মঞ্জুরকে চট্টগ্রামে জিওসি করে প্রেরণকেই একটা বিরোধের সূচনা বলে ইঙ্গিত করেছিলেন। এর তিন বছর পর ১৯৮০ সালের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ খবরও পৌঁছে যায় যে জেনারেল মঞ্জুর জিয়ার প্রকাশ্য বিরোধিতায় নেমেছেন।
জিয়া হত্যাকাণ্ডের পরে অবমুক্ত না করা একটি সূত্রের বরাতে মার্কিন নথিতে উল্লেখ পাই, ‘১৯৮০ সালের শেষের দিকে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে “মঞ্জুর প্রকাশ্যেই জিয়ার সমালোচক হয়ে পড়েছিলেন। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্রোহ দমনে মঞ্জুরের প্রতি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। চট্টগ্রামে সৈন্যদের মধ্যে মঞ্জুর অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন বলে জানা যায়। আমাদের তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে অনেক কর্মকর্তা তাঁর ক্যারিশমায় অভিভূত হয়েছিলেন”।’
জনপ্রিয়তা হ্রাসের প্রশ্ন: ১৯৮১ সালের ১৫ মে মার্কিন দূতাবাসের ‘ঢাকার রাজনৈতিক বিদ্বেষ’ শীর্ষক এক তারবার্তায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অভ্যুত্থানের আশঙ্কা বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। এখন ঢাকার অবস্থা গুমটের চারটি কারণ আছে। প্রথমত, দেশ শাসনে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সামর্থ্য হ্রাস পাচ্ছে বলে অনুভূত হচ্ছে। মার্কিন দূতাবাস এটা সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষ থেকেই শুনছে। জিয়া আগে যেভাবে দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন, সেভাবে এখন আর পারছেন না। একজন বিএনপি এমপির কথায়, ‘তিনি এখন একনায়কসুলভভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তিনি সঠিক পরামর্শ পাচ্ছেন না কিংবা সরকারি সিদ্ধান্ত শিথিলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, বিএনপিতে ‘মার্কিন কন্টাকটস’ সর্বদা সক্রিয় ছিল। ১৫ মে, ৮১ স্নাইডার লিখেছেন, ‘বিএনপির ভেতরে মার্কিন কন্টাকটসগুলো বলেছে, জিয়া এখন কারও কথা শোনা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন কিংবা তিনি কেবলই তাঁর উপদেষ্টাদের নিয়ে মশগুল থাকছেন। এক রাজাকারকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর আসনে বসিয়েছেন। জিয়া অত্যধিক বিদেশভ্রমণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মন্ত্রীরা তাঁর কাছ থেকে নির্দেশনা লাভের সুযোগ পাচ্ছেন না।’ বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী গত ২৮ মে এক আলোচনা সভায় যদিও তথ্য দেন যে দেশ পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জিয়া প্রতিদিন তিন-চারটি সভা করতেন।
মার্কিন দূতাবাসের ওই তারবার্তা বলেছে, ‘উল্লিখিত মন্তব্যে অতিরঞ্জন থাকলেও আমরা এটা বুঝতে পারছি যে জিয়া আগে যেভাবে সতর্কতা ও দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেন, তাতে ঘাটতি পড়ছে। বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছাড়া জিয়া ইদানীং যে আর কার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ, সেটাও তাঁরা বলতে পারছেন না। এর আগে জিয়ার ইনার সার্কেল দ্রুত পরিবর্তন হতো। ঢাকা গুমোট হওয়ার দ্বিতীয় ও তৃতীয় কারণ হলো যথাক্রমে দুর্নীতি বলগাহীন হয়ে ওঠা এবং দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলার অবনতি। অপরাধের সরকারি পরিসংখ্যানে সত্য প্রতিফলিত হচ্ছে না। কারণ, পুলিশ স্টেশনগুলো তাদের ইচ্ছামতো অপরাধ রেকর্ড করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আর চূড়ান্তভাবে অর্থনৈতিক সংকট প্রবল হয়ে উঠছে। মুদ্রাস্ফীতিকে অনেকেই মুখ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করছেন। দ্রব্যমূল্যেরও ঊর্ধ্বগতি ঘটছে’।
স্নাইডার তাঁর ওই বার্তায় আরও উল্লেখ করেন, ‘দূতাবাসের কতিপয় নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, গ্রাম এলাকায় জিয়ার জনপ্রিয়তা কমেছে। অনেক গ্রামবাসী বিশ্বাস করেন, জিয়ার আর নতুন করে কিছুই বলার নেই। আমরা মনে করি, জিয়ার জনপ্রিয়তা সামান্য কিছুটা কমতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, জিয়া এখনো গ্রামে জনপ্রিয়। তাঁকেই একমাত্র নেতা মনে করা হয়, যিনি কিছুটা স্থিতিশীল নিরাপত্তা দিতে পারেন। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই, বর্তমানে যে অস্থিরতা চলছে, তাতে জিয়ার জন্য আশঙ্কাজনক বিপদের বীজ রয়েছে। এটা সামরিক বাহিনীতে একটি সামরিক অভ্যুত্থান জাগিয়ে তুলতে এবং পরিণতিতে সরকারের জন্য হুমকি বয়ে আনতে পারে। অবশ্য এ ধরনের আশঙ্কা সম্ভবত আপাতত স্তিমিত হয়েছে। আমরা এ মুহূর্তে অভ্যুত্থান-চেষ্টা কিংবা উল্লেখযোগ্য সামরিক অসন্তোষের গুজব শুনতে পাই না।’
পেছন ফেরা: জিয়া হত্যার তিন বছর আগেই এরশাদ ‘হতাশ’ হয়ে পড়েছিলেন। ১৯৭৮ সালের ২৭ এপ্রিল স্নাইডার তাঁকে অনুগত সমর্থক বিবেচনায় জিয়া তাঁকে সেনাপ্রধানের পদ দেবেন বলে উল্লেখ করেন। ৭৮ সালের ২৫ জুন বার্গেনসেন বলেন, দূতাবাসের কর্মকর্তারা এরশাদের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝতে পেরেছেন, তিনি শক্তিশালী রাষ্ট্রপতিব্যবস্থার পক্ষে। ২৯ মার্চ ৭৮ মসিউর রহমান যাদু মিয়া স্নাইডারকে বলেন, মধ্য এপ্রিলে জিয়া সেনাপ্রধানের পদ ছেড়ে সেখানে এরশাদকে আনবেন, এ বিষয়ে তিনি কথিতমতে শওকত আলীর সমর্থন নিয়েছেন। যদিও এ পদটি শওকত আলীই চাইছিলেন। ১৯৭৭ সালের ৩ জুন রাষ্ট্রদূত মাস্টার্সের আরেক মন্তব্য: ‘জিয়া সেনাপ্রধান পদ ধরে রাখলে তিনি এরশাদের মতোই এক হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। এরশাদ ভাবেন, সেনাপ্রধান হওয়া এখন তাঁর “কর্তব্য”। আর দস্তগীর জিয়ার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হতে পারেন।’ মাস্টার্স আরও বলেছিলেন, ‘আমাদের জন্য এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে ভুট্টোর পরিণতি জিয়া মনে রেখেছেন। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ “আর্মি পলিটিকস” তাঁকে গুরুত্বের সঙ্গে মনে রাখতে হবে।’
সায়েমকে সরানোর পরে ১৫ নভেম্বর ১৯৭৭ মাস্টার্স এক সিক্রেট তারবার্তায় লিখেছিলেন, শক্তিশালীতম গুজবের কেন্দ্রস্থল সামরিক বাহিনীর উচ্চতম পর্যায়। মঞ্জুরকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে। মেজর জেনারেল হলে তাঁকে ডিভিশন কমান্ড করতেই হবে। সাভারে নবম ডিভিশন থেকে যশোরে বদলির বিরোধিতা মীর শওকত করতেই পারেন। আবার জিয়া তাঁর সিদ্ধান্তে স্থির থাকলে তিনি তা মেনেও নেবেন। এরপরই মাস্টার্স লেখেন: ‘বেশ কিছুটা সময় মীর শওকত ও মঞ্জুরের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল না। কিন্তু তাঁরা উভয়ে জিয়ার প্রতি অনুগত ছিলেন। তবে বিশেষ করে ৩০ সেপ্টেম্বর ও ২ অক্টোবরে সেনা বাহিনীতে বিদ্রোহের (মিউটিনি) পরে এ দুজনের মধ্যকার ঝগড়াঝঁাটি বিবেচনায় জিয়া হয়তো উভয়কে ঢাকা থেকে বিদায় করে দেওয়াকেই অভিপ্রেত মনে করেছেন।’ মাস্টার্সের কথায়: ‘রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে যে মীর শওকত এরশাদের সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত। এরশাদ অবশ্য ডেপুটি চিফের পদেই থাকছেন, যদি পদোন্নতি বা তাঁর সরাসরি সেনা পদে না থাকা জিয়া দরকারি মনে করেন। অন্যদিকে গুজব হলো, একটা ভীতি আছে যে মীর শওকত ও মঞ্জুর (তাঁর সৈন্য কম) তাঁদের অধীন সৈন্যদের নিয়ে লড়াইয়ে নামতে পারেন। কিংবা কতিপয় “দুর্বৃত্ত” বা গ্রেপ্তার না হওয়া বিদ্রোহী সেনারা নগরে আঘাত হানতে পারেন।’
‘এরশাদ ইজ দ্য ম্যান নেক্সট ইন লাইন।’ মাস্টার্স ১৯৭৭ সালের নভেম্বরে এটা কীভাবে লিখেছিলেন? মার্কিন রাষ্ট্রদূত সেই সঙ্গে আরও বলেছিলেন, এরশাদের একটি অসুবিধা ও আরেকটি সুবিধা আছে। অসুবিধা হলো তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি, রিপ্যাটরিয়েট। আর সুবিধা হলো মুক্তিযোদ্ধাদের ভেতরের সরাসরি বিরোধে তাঁকে জড়াতে হয় না।
পাঁচ পৃষ্ঠার ওই সিক্রেট তারবার্তার শেষে মাস্টার্স জিয়ার জন্য একটি প্রার্থনা করেছিলেন: ‘জিয়াকে অবশ্যই এমন চ্যানেল বের করতে হবে, যাতে মুজিবের শেষ দিনগুলোর প্রায় নৈরাজ্যকর অবস্থা কিংবা ১৯৫৮ সালে আইয়ুবেরÿ ক্ষমতা দখলের আগের অবস্থার দিকে পরিস্থিতি না গড়ায়।’
জিয়া তাঁর মন্ত্রিসভায় (উপদেষ্টা পরিষদে) অ্যাডমিরাল খান, এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদ, বিডিআর–প্রধান জেনারেল দস্তগীর ও ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এরশাদকে নিতে চাইলেন। কিন্তু শর্ত হলো এরশাদ ও দস্তগীরকে মন্ত্রী হতে হলে তাঁদের উর্দি ছাড়তে হবে। ১৯৭৭ সালের ২ জুলাই সেনানিবাসে সভা হলো। দস্তগীর বললেন, আমরা চারজনই চাকরি ছাড়ব। আপনাকেও সেনাপ্রধানের পদ ছাড়তে হবে। জিয়া তা নাকচ করেন।
বার্গেনসেন ৭ জুলাই, ৭৭ এক তারবার্তায় লিখেছেন, জ্যেষ্ঠদের তরফে জিয়াকে কিছুটা ‘সক্রিয় শত্রুতা’ সইতে হয়। এরশাদের অধীন সেনারা কম গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তদুপরি তা ভাবার বিষয়। গণভোটে নিরঙ্কুশ বিজয় ও বিপুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও জিয়া তাঁর সহকর্মীদের দ্বারাই চ্যালেঞ্জের কবলে পড়তে পারেন।
২২ এপ্রিল ১৯৭৭ রাষ্ট্রদূত মাস্টার্স নিয়তির লিখন লিখেছিলেন? ‘এরশাদের পদোন্নতি হয়তো যৌক্তিক। কিন্তু জিয়ারÿ ক্ষমতার ঘাঁটি সেনানিবাস। এরশাদ বা অন্য কেউ ওপরে উঠলে তা আরও অনেকগুলো রদবদল বয়ে আনে, তখন জিয়াকে পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে রাখতে হবে।’
১৯৭৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মার্কিন পলিটিক্যাল কাউন্সিলর তৎকালীন এনএসআই মহাপরিচালক এম এ হাকিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। হাকিম তাঁকে বলেছিলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায়ের বিভক্তি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি। জিয়া স্পষ্টতই এরশাদকে চিফ অব স্টাফ করতে চান। কিন্তু রিপ্যাটরিয়েট ও মুক্তিেযাদ্ধাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে।’ উল্লেখ্য, মঞ্জুর ও শওকত উভয়ে সেনাপ্রধান হতে আগ্রহী ছিলেন।
হাকিম মার্কিন কূটনীতিককে বলেছিলেন, মঞ্জুরের সঙ্গে শওকতের, আবার উভয়ের সঙ্গে এরশাদের বিরোধ আছে। জিয়া যতক্ষণ জনসমর্থন ধরে রাখতে পারবেন, শীর্ষ সেনা পদের বিরোধ ততক্ষণ নিমজ্জিত থাকবে। এ সমস্যা কঠিন হবে তখনই, যখন জিয়া সমস্যায় পড়বেন।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক৷
mrkhanbd@gmail.com
No comments