‘আম–কাঠলি’ by আকমল হোসেন
মৌলভীবাজারের চৌমোহনা এলাকায় বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে আম l প্রথম আলো |
ছোট
একটি ট্রাকে আম, কাঁঠাল, আনারস-লিচু এবং খইয়ের বস্তা তুলছেন শ্রমিকেরা।
মিষ্টির প্যাকেটও রাখা হচ্ছে। ঠেলাগাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশায়ও তোলা
হচ্ছে এসব মৌসুমি ফল। জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ়—এ দুই মাস মৌলভীবাজার শহরের কোর্ট
মার্কেটে প্রতিটি সকাল-দুপুরে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। সেখানে মৌসুমি ফলে
গাড়ি বোঝাই হয়, কিছুক্ষণ পর পর ছুটে যায় দূর-দূরান্তের দিকে। জেলার ঘরে ঘরে এখন চলছে পার্বণ। এর নাম ‘আম-কাঠলি’। ধনী-গরিবনির্বিশেষে,
নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী প্রায় সবাই কমবেশি ফল নিয়ে মেয়ে, ভাতিজি-ভাগনি বা
বোনের বাড়িতে ছুটছেন। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের অনেক এলাকাতেই বংশপরম্পরায়
উদ্যাপন করা হয় এই পার্বণ। এ উপলক্ষে কোর্ট মার্কেট, চৌমোহনা ও
পশ্চিমবাজার ফলের মার্কেটগুলো এখন সরগরম।
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, প্রাবন্ধিক এবং ছোটকাগজ খনন সম্পাদক মো. আবদুল খালিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ছোটকাল থেকেই এই আম-কাঠলি দিতে দেখে আসছি। দেওয়ার আগে মেয়ে বা বোনের বাড়ি জানানো হয়। দুই পক্ষের সম্মতিতে নির্দিষ্ট তারিখে ঠেলা বা ট্রাকে করে যার যার মতো আম-কাঁঠাল, আনারস, খই-মিষ্টি নিয়ে যাওয়া হয়। তারাও (যার বাড়ি দেওয়া হবে) এদিন সামর্থ্যমতো খাসি-বকরি জবাই করে। আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত করে। এটা এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের রেওয়াজ।’
গত শুক্রবার সকালে কোর্ট মার্কেট বাজারে ফল কিনছিলেন সদর উপজেলার মোস্তফাপুর গ্রামের রাশিদ মিয়া। মেয়ের বিয়ে হয়েছে সম্প্রতি। ‘মেয়ের বাড়ি আম-কাঠলি দিব, তাই কিনছি’ বললেন তিনি। সদর উপজেলার জগৎসী গ্রামের মুহিদ মিয়া বলেন, ‘ভাতিজির বাড়িতে আম-কাঠলি দিব। এবারই প্রথম দিচ্ছি।’ তিনি জানালেন, ৩ হাজার ২০০ টাকার আনারস, ৪ হাজার টাকার কাঁঠাল, ১ হাজার ৮০০ টাকার আম, ৪০০ টাকার লিচু, ৪৫০ টাকার খই এবং ১ হাজার ২০০ টাকার মিষ্টি কিনেছেন। এসব দিয়ে সাজানো হচ্ছে তাঁর ‘আম-কাঠলি’।
জ্যৈষ্ঠ মাস এলেই বিশেষ করে নববধূরা শ্বশুরবাড়িতে প্রতীক্ষায় থাকেন, কখন বাবা বা ভাইয়ের বাড়ি থেকে পাঠানো হবে ‘আম-কাঠলি’। মেয়ের চুলে পাক ধরলেও অনেকের বাবার বাড়ি থেকে যায় আম-কাঠলি। বিয়ের প্রথম বছর ‘আম-কাঠলি’ দেওয়া হয় ধুমধাম করে। এই উপলক্ষে দুই পক্ষের আত্মীয়স্বজনদের ঘটে মহামিলন। মেয়ের (শ্বশুর) বাড়িতে ছোটখাটো একটা বিয়ের মতো আয়োজন করা হয়। বিত্তবানদের ক্ষেত্রে এই উৎসব যতটা আনন্দের, হতদরিদ্র বাপ-ভাইদের পড়তে হয় ততটাই বেকায়দায়। তবু মেয়ের মান রাখতে, জামাই, নাতি-নাতনি ও মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকদের খুশি করতে দুই-চারটা কাঁঠাল, দুই-চার হালি আনারস, এক-দুই কেজি আম ও এক কেজি খই হলেও ‘আম-কাঠলি’ পাঠানো হয়।
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, প্রাবন্ধিক এবং ছোটকাগজ খনন সম্পাদক মো. আবদুল খালিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ছোটকাল থেকেই এই আম-কাঠলি দিতে দেখে আসছি। দেওয়ার আগে মেয়ে বা বোনের বাড়ি জানানো হয়। দুই পক্ষের সম্মতিতে নির্দিষ্ট তারিখে ঠেলা বা ট্রাকে করে যার যার মতো আম-কাঁঠাল, আনারস, খই-মিষ্টি নিয়ে যাওয়া হয়। তারাও (যার বাড়ি দেওয়া হবে) এদিন সামর্থ্যমতো খাসি-বকরি জবাই করে। আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত করে। এটা এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের রেওয়াজ।’
গত শুক্রবার সকালে কোর্ট মার্কেট বাজারে ফল কিনছিলেন সদর উপজেলার মোস্তফাপুর গ্রামের রাশিদ মিয়া। মেয়ের বিয়ে হয়েছে সম্প্রতি। ‘মেয়ের বাড়ি আম-কাঠলি দিব, তাই কিনছি’ বললেন তিনি। সদর উপজেলার জগৎসী গ্রামের মুহিদ মিয়া বলেন, ‘ভাতিজির বাড়িতে আম-কাঠলি দিব। এবারই প্রথম দিচ্ছি।’ তিনি জানালেন, ৩ হাজার ২০০ টাকার আনারস, ৪ হাজার টাকার কাঁঠাল, ১ হাজার ৮০০ টাকার আম, ৪০০ টাকার লিচু, ৪৫০ টাকার খই এবং ১ হাজার ২০০ টাকার মিষ্টি কিনেছেন। এসব দিয়ে সাজানো হচ্ছে তাঁর ‘আম-কাঠলি’।
জ্যৈষ্ঠ মাস এলেই বিশেষ করে নববধূরা শ্বশুরবাড়িতে প্রতীক্ষায় থাকেন, কখন বাবা বা ভাইয়ের বাড়ি থেকে পাঠানো হবে ‘আম-কাঠলি’। মেয়ের চুলে পাক ধরলেও অনেকের বাবার বাড়ি থেকে যায় আম-কাঠলি। বিয়ের প্রথম বছর ‘আম-কাঠলি’ দেওয়া হয় ধুমধাম করে। এই উপলক্ষে দুই পক্ষের আত্মীয়স্বজনদের ঘটে মহামিলন। মেয়ের (শ্বশুর) বাড়িতে ছোটখাটো একটা বিয়ের মতো আয়োজন করা হয়। বিত্তবানদের ক্ষেত্রে এই উৎসব যতটা আনন্দের, হতদরিদ্র বাপ-ভাইদের পড়তে হয় ততটাই বেকায়দায়। তবু মেয়ের মান রাখতে, জামাই, নাতি-নাতনি ও মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকদের খুশি করতে দুই-চারটা কাঁঠাল, দুই-চার হালি আনারস, এক-দুই কেজি আম ও এক কেজি খই হলেও ‘আম-কাঠলি’ পাঠানো হয়।
আম-কাঠলির জন্য ট্রাকে তোলা হচ্ছে কাঁঠাল। মৌলভীবাজার শহরের কোর্ট মার্কেট থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো |
সংস্কৃতিকর্মী শৈলেন রায় বললেন, ‘আমাদের
মধ্যে (হিন্দুধর্মাবলম্বী) অইভাবে আম-কাঠলি দেওয়া হয় না। কিন্তু ফলের
মৌসুমে মেয়েকে নাইওর আনার রেওয়াজ আছে।’
সদর উপজেলার জাকান্দি মুন্সীবাড়ির মৌসুমি ফল বিক্রেতা মো. মছদ্দর মিয়া বলেন, জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে প্রতিদিন সকাল হলেই জেলার আদমপুর, ব্রাহ্মণবাজার, মুছাই, মির্জাপুর, শমশেরগঞ্জ, শমশেরনগর থেকে কাঁঠাল ও আনারস এই মার্কেটে এনে স্তূপ করা হয়। প্রতিদিন অন্তত ১৫ থেকে ২০টি ছোট ট্রাক এখান থেকে বোঝাই করে আত্মীয়বাড়ি নিয়ে যান লোকজন। এ ছাড়া অটোরিকশা, ঠেলা, টমটম—এসব তো আছেই। খই বিক্রেতা ননী গোপাল বণিক বলেন, ৫ কেজি থেকে ৩০-৩২ কেজি করে খই নেওয়া হয়। এটা নির্ভর করে কাঁঠালের ওপর। কাঁঠাল যত বেশি। খইও তত বেশি নেওয়া হয়।
এই অঞ্চলের মানুষদের সংসারে যতই থাক টানাপোড়েন, অর্থকষ্ট, ‘আম-কাঠলির’ এ উৎসব উদ্যাপন করেন ঘটা করে। এর সঙ্গে মিশে আছে এক অন্যরকম আবেগ, উচ্ছ্বাস, যা পারিবারিক বন্ধনকে নতুন রূপ দেয়।
সদর উপজেলার জাকান্দি মুন্সীবাড়ির মৌসুমি ফল বিক্রেতা মো. মছদ্দর মিয়া বলেন, জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে প্রতিদিন সকাল হলেই জেলার আদমপুর, ব্রাহ্মণবাজার, মুছাই, মির্জাপুর, শমশেরগঞ্জ, শমশেরনগর থেকে কাঁঠাল ও আনারস এই মার্কেটে এনে স্তূপ করা হয়। প্রতিদিন অন্তত ১৫ থেকে ২০টি ছোট ট্রাক এখান থেকে বোঝাই করে আত্মীয়বাড়ি নিয়ে যান লোকজন। এ ছাড়া অটোরিকশা, ঠেলা, টমটম—এসব তো আছেই। খই বিক্রেতা ননী গোপাল বণিক বলেন, ৫ কেজি থেকে ৩০-৩২ কেজি করে খই নেওয়া হয়। এটা নির্ভর করে কাঁঠালের ওপর। কাঁঠাল যত বেশি। খইও তত বেশি নেওয়া হয়।
এই অঞ্চলের মানুষদের সংসারে যতই থাক টানাপোড়েন, অর্থকষ্ট, ‘আম-কাঠলির’ এ উৎসব উদ্যাপন করেন ঘটা করে। এর সঙ্গে মিশে আছে এক অন্যরকম আবেগ, উচ্ছ্বাস, যা পারিবারিক বন্ধনকে নতুন রূপ দেয়।
No comments