বাক্স আছে অভিযোগ নেই -সরজমিন শিক্ষাভবন by নূর মোহাম্মদ
শিক্ষাভবনের
নিচ তলার মূল গেটের কলাপসিবল গেট। বাম পাশেই অভিযোগ বাক্স। ২০১১ সালের
২৩শে আগস্ট। ঢাকঢোল পিটিয়ে এটির উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন
তৎকালীন শিক্ষাসচিব, ওই ভবনের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। উদ্দেশ্য
শিক্ষাভবনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তথ্য ধরা পড়বে এই
বাক্সে। শিক্ষামন্ত্রী এটি উদ্বোধন করে বলেন, প্রতিদিন ওই বাক্স খোলা হবে।
অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর এর চাবি থাকবে স্বয়ং
আমার কাছে। শিক্ষাভবনে কাজ করতে এসে ঘুষ লাগে না শিক্ষকদের এ ধারণা সৃষ্টি
করবে এ বাক্স। এরপর ৪ বছর পেরিয়ে গেছে। একদিনও খোলা হয়নি এই বাক্স। এর চাবি
এখন সিন্ডিকেটের হাতে। শিক্ষাভবনের দুর্নীতি বন্ধ করতে শিক্ষামন্ত্রণালয়
এখানেই থেমে থাকেননি। কর্মকর্তাদের দুর্নীতি রুখতে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ৩২টি
রুমে বসানো হয় ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। এই সিসি ক্যামেরা
সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করেন মহাপরিচালক, কলেজ ও প্রশাসনের পরিচালক। এতেও
কোন কিছু কাজ হচ্ছে না। কোন ওষুধ ধরছে না দুর্নীতিবাজ এসব কর্মকর্তার। বরং
গত বছর শিক্ষামন্ত্রী ঝটিকা অভিযানে গিয়ে হাতেনাতে ধরেন তাদের। সাময়িক
বরখাস্ত করেন কয়েক কর্মকর্তাকে। বৃহস্পতিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল
গেটে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন বরগুনার ঘটাখালি বন্দর হোসানিয়া সিনিয়র মাদরাসা
শিক্ষক আমিনুল ইসলাম। কি কাজে এসেছেন জানতে চাইলে বলেন, ৫ তলার একজন
কর্মকর্তা আমার এমপিও করে দিবে বলে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। তিন বছর ধরে
ঘুরাচ্ছেন। এখন ফোনও ধরেন না। শুনেছি তাকে নাকি বদলি করা হয়েছে। আমার
কাগজপত্র তার কাছে। এই বিষয়টি মহাপরিচালককে (ডিজি) লিখিতভাবে জানাতে এসেছি।
বুধবার ডিজি ম্যাডাম প্রোগ্রামে ছিলেন। তাই দেখা করতে পারেনি। আজ আমাকে
গেটের দায়োয়ান ঢুকতে দিচ্ছে না। বৃহস্পতিবার নাকি অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া
ঢোকা নিষেধ। আপনি তো অভিযোগ করতে এসেছেন তাহলে নিচতলায় অভিযোগ বাক্সে ফেলে
গেলেই তো হয়। এমন প্রশ্নে আমিনুল ইসলামের সোজাসাপ্টা উত্তর- এর আগে দুই বার
ফেলে গেছি। কোন কাজ হয়নি। তাই এবার নিজে ডিজি ম্যাডামকে বলবো। শুধু আমিনুল
ইসলাম নয়, এমপিও, গ্রেড পরিবর্তন, টাইম স্কেল, বদলি, পদোন্নতিসহ নানা কাজ
নিয়ে এখানে প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে আড়াই শ’ শিক্ষক-কর্মচারী আসেন। এদের
বেশির ভাগই কাজ করাতে হয় টাকার বিনিময়ে। টাকা ছাড়া কোন ফাইল এক টেবিল থেকে
অন্য টেবিলে যায় না।
মাউশি সূত্র জানায়, টাকা দিলেই যে কাজ হয়ে যায় বিষয়টি এরকম না। টাকা দেয়ার পরও শতকরা ৬০ ভাগের বেশি কাজ হয় না। কিন্তু ঘুষ হিসেবে দেয়া এই টাকা ফেরত পাওয়া তো দূরের কথা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাক্ষাৎ পর্যন্ত পায় না ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারীরা। এসব অভিযোগ নিয়ে মহাপরিচালক ও প্রশাসনের পরিচালকের রুমে প্রতিদিন শিক্ষকদের ভিড় লেগে থাকে। আর মহাপরিচালক বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সাক্ষাৎ দেন। এর মধ্যে নানা প্রোগ্রাম ও প্রশাসনিক কাজ থাকায় প্রায়ই তাকে পাওয়া যায় না। দিনের পর দিন তার সাক্ষাৎ পাওয়ার আশায় তার রুমের সামনে বসে থাকেন শিক্ষকরা। তারপরও অভিযোগ বাক্সে অভিযোগ দেন না। এর কারণ জানতে চাইলে শিক্ষা ভবনের একজন উপ-পরিচালক বলেন, কেন অভিযোগ দিবেন? একটি অভিযোগ কি উপরের তলা ওঠে। নিচতলার অভিযোগ নিচতলায় গায়েব হয়ে যায়। বরং অভিযোগ বাক্সে যে শিক্ষক অভিযোগ করেন তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন হয়। ২০১২ সালে এরকম একটি ঘটনার বিচার করেছেন স্বয়ং মহাপরিচালক। এরপর থেকে শিক্ষকরা এখানে কোন অভিযোগ দেন না। দিলেও পড়ে সিন্ডিকেটের হাতে। কারণ চাবি তাদের হাতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষাভবনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর অদক্ষতা, দুর্নীতি, দুর্ব্যবহারের কারণে এই ভবনের খারাপ ইমেজ সৃষ্টি হয়েছে। ‘খারাপ ইমেজ’ উদ্ধার করে এই ভবনকে একটি স্বচ্ছ, দক্ষ, গতিশীল ও দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দ্রুত গড়ে তোলার জন্য এখানে কি না উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সবই মাঠে মরা। কোন হুঁশিয়ারি পরোয়ার করেন না এখানকার কর্মকর্তারা।
মাউশির অধীনে বর্তমানে প্রায় ৩৮ হাজার স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত। আর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় পৌনে ৫ লাখ। এর বাইরে সরকারি ৩৩০টি স্কুল ও দুই শতাধিক কলেজ এবং মাদরাসাসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন আরও প্রায় ২২ হাজার। এসব শিক্ষক-কর্মচারীর প্রয়োজনীয় নানা কাজকর্ম পরিচালিত হয় এ ভবনেই।
গেট থেকে হয়রানি শুরু: ঝিনাইদহের দখলপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষক মোতালিব। তিন মাস ধরে ঘুরছেন শিক্ষাভবনে। তার এমপিও ও সার্টিফিকেট বয়সের গরমিল। এটি ঠিক করাতে ৫ম তলার এক কর্মকর্তাকে ২০ হাজার টাকাও দিয়েছেন। কিন্তু আজ না কাল না পরশু। এসব বলে ঘুরাচ্ছেন তিন বছর ধরে। ভুক্তভোগী এই শিক্ষক বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে আমার চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে জুলাইয়ের মিটিং সমাধান না করতে পারলে ঝামেলায় পড়তে হবে। মাদরাসা শাখার খবর নিয়ে তিনি জেনেছেন, নরমাল প্রক্রিয়ায় নাকি এটি ১৫ দিনেই হয়ে যাওয়া সম্ভব। তিনি জানান, আমাদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলার সুযোগটুকু পাচ্ছি না। গেটে কর্তব্যরত আনসাররা ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। বলেন, আগে শিডিউল নেন তারপর। ওই আনসারকে বারবার অনুরোধ করায় বিরক্ত হয়ে বলেন, সোজা বের হয়ে যান। না হয় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো। অসহায় কণ্ঠে ওই শিক্ষক বলেন, একজন শিক্ষককে যখন আনসার সদস্যের হাতে ঘাড় ধাক্কা করার হুমকি পেতে হয় তখন আর কিছু থাকে না।
বাইরে লেনদেন: শিক্ষাভবনের দুর্নীতিবাজ রুম হিসেবে পরিচিত প্রায় ২ ডজন রুমে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এটি প্রতিনিয়ত মনিটরিং করেন মহাপরিচালক ও প্রশাসন পরিচালক।
মাউশির সূত্র বলছে, শিক্ষাভবনে এখন প্রকাশ্যে লেনদেন হয় না। এখন লেনদেন হয় বাইরে। দেশের প্রত্যেক জেলায় তাদের এজেন্ট রয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষকরা আগে থেকেই মুঠোফোনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিক্ষা ভবনে আসেন। এ ছাড়া ৯টি আঞ্চলিক কেন্দ্র তাদের প্রকাশ্য এজেন্ট আছে।
সিন্ডিকেটের কবলে শিক্ষা ভবন: পুরো শিক্ষাভবন নিয়ন্ত্রিত হয় কয়েকটি সিন্ডিকেটে। এ কারণে বারবার নানা উদ্যোগ নিয়ে দুর্নীতির রাহুগ্রাস দূর করা যাচ্ছে না। অতীতে একাধিক সিন্ডিকেট থাকলেও শিক্ষাভবনে বর্তমানে একটি সিন্ডিকেট বিদ্যমান। সেটি হলো মহাপরিচালকের সিন্ডিকেট। বর্তমান মহাপরিচালক ঢাকা বোর্ডে চেয়ারম্যান থাকাকালে সেখানের কর্মরতকে তিনি শিক্ষাভবনে নিয়ে এসেছেন। উদ্দেশ্য তার বলয় গড়ে তোলা। তবে বর্তমান মহাপরিচালকের বেশ সুনাম রয়েছে। কিন্তু তার নাম ব্যবহার করে সিন্ডিকেটের কর্মকর্তারা নামে-বেনামে দুর্নীতি-অনিয়ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। এর আগে ডিজির সময় শিক্ষা ভবনের ৬টি বেশি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ছিল। সিন্ডিকেট যন্ত্রণায় কাজ করতে পারতেন না তিনি। বর্তমান ডিজি আসার পর শাখা ও উপশাখায় কিছু সিন্ডিকেট কমানো গেলে মূল ধারার দুটি সিন্ডিকেট এখনও রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: কলেজ ও প্রশাসনের পরিচালক প্রফেসর ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আমি যতক্ষণ অফিসে থাকি পুরো সময় সিসি টিভি মনিটরিং করি। কিছু আগে গেটের বাইরে এক আনসার সদস্য একজন শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিল। তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযোগ বাক্সে বিষয়টি আমি আসার পর খোঁজ খবর নেইনি।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি বলেন, এই ভবনে দুর্নীতি করে প্রমোশন পেয়েছেন এরকম দৃষ্টান্ত ছিল। এখানে যতদিন সিন্ডিকেট মুক্ত না হবে ততদিন দুর্নীতি হয়রানি বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে ২৮৭ শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও মাউশির একটি সংঘবন্ধ চক্র অবৈধভাবে করেছিল। বর্তমানে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা কোথায় আছেন? তারা কিন্তু শিক্ষাভবনের সঙ্গে যুক্ত।
মাউশি সূত্র জানায়, টাকা দিলেই যে কাজ হয়ে যায় বিষয়টি এরকম না। টাকা দেয়ার পরও শতকরা ৬০ ভাগের বেশি কাজ হয় না। কিন্তু ঘুষ হিসেবে দেয়া এই টাকা ফেরত পাওয়া তো দূরের কথা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাক্ষাৎ পর্যন্ত পায় না ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারীরা। এসব অভিযোগ নিয়ে মহাপরিচালক ও প্রশাসনের পরিচালকের রুমে প্রতিদিন শিক্ষকদের ভিড় লেগে থাকে। আর মহাপরিচালক বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সাক্ষাৎ দেন। এর মধ্যে নানা প্রোগ্রাম ও প্রশাসনিক কাজ থাকায় প্রায়ই তাকে পাওয়া যায় না। দিনের পর দিন তার সাক্ষাৎ পাওয়ার আশায় তার রুমের সামনে বসে থাকেন শিক্ষকরা। তারপরও অভিযোগ বাক্সে অভিযোগ দেন না। এর কারণ জানতে চাইলে শিক্ষা ভবনের একজন উপ-পরিচালক বলেন, কেন অভিযোগ দিবেন? একটি অভিযোগ কি উপরের তলা ওঠে। নিচতলার অভিযোগ নিচতলায় গায়েব হয়ে যায়। বরং অভিযোগ বাক্সে যে শিক্ষক অভিযোগ করেন তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন হয়। ২০১২ সালে এরকম একটি ঘটনার বিচার করেছেন স্বয়ং মহাপরিচালক। এরপর থেকে শিক্ষকরা এখানে কোন অভিযোগ দেন না। দিলেও পড়ে সিন্ডিকেটের হাতে। কারণ চাবি তাদের হাতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষাভবনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর অদক্ষতা, দুর্নীতি, দুর্ব্যবহারের কারণে এই ভবনের খারাপ ইমেজ সৃষ্টি হয়েছে। ‘খারাপ ইমেজ’ উদ্ধার করে এই ভবনকে একটি স্বচ্ছ, দক্ষ, গতিশীল ও দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দ্রুত গড়ে তোলার জন্য এখানে কি না উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সবই মাঠে মরা। কোন হুঁশিয়ারি পরোয়ার করেন না এখানকার কর্মকর্তারা।
মাউশির অধীনে বর্তমানে প্রায় ৩৮ হাজার স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত। আর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় পৌনে ৫ লাখ। এর বাইরে সরকারি ৩৩০টি স্কুল ও দুই শতাধিক কলেজ এবং মাদরাসাসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন আরও প্রায় ২২ হাজার। এসব শিক্ষক-কর্মচারীর প্রয়োজনীয় নানা কাজকর্ম পরিচালিত হয় এ ভবনেই।
গেট থেকে হয়রানি শুরু: ঝিনাইদহের দখলপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষক মোতালিব। তিন মাস ধরে ঘুরছেন শিক্ষাভবনে। তার এমপিও ও সার্টিফিকেট বয়সের গরমিল। এটি ঠিক করাতে ৫ম তলার এক কর্মকর্তাকে ২০ হাজার টাকাও দিয়েছেন। কিন্তু আজ না কাল না পরশু। এসব বলে ঘুরাচ্ছেন তিন বছর ধরে। ভুক্তভোগী এই শিক্ষক বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে আমার চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে জুলাইয়ের মিটিং সমাধান না করতে পারলে ঝামেলায় পড়তে হবে। মাদরাসা শাখার খবর নিয়ে তিনি জেনেছেন, নরমাল প্রক্রিয়ায় নাকি এটি ১৫ দিনেই হয়ে যাওয়া সম্ভব। তিনি জানান, আমাদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলার সুযোগটুকু পাচ্ছি না। গেটে কর্তব্যরত আনসাররা ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। বলেন, আগে শিডিউল নেন তারপর। ওই আনসারকে বারবার অনুরোধ করায় বিরক্ত হয়ে বলেন, সোজা বের হয়ে যান। না হয় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো। অসহায় কণ্ঠে ওই শিক্ষক বলেন, একজন শিক্ষককে যখন আনসার সদস্যের হাতে ঘাড় ধাক্কা করার হুমকি পেতে হয় তখন আর কিছু থাকে না।
বাইরে লেনদেন: শিক্ষাভবনের দুর্নীতিবাজ রুম হিসেবে পরিচিত প্রায় ২ ডজন রুমে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এটি প্রতিনিয়ত মনিটরিং করেন মহাপরিচালক ও প্রশাসন পরিচালক।
মাউশির সূত্র বলছে, শিক্ষাভবনে এখন প্রকাশ্যে লেনদেন হয় না। এখন লেনদেন হয় বাইরে। দেশের প্রত্যেক জেলায় তাদের এজেন্ট রয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষকরা আগে থেকেই মুঠোফোনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিক্ষা ভবনে আসেন। এ ছাড়া ৯টি আঞ্চলিক কেন্দ্র তাদের প্রকাশ্য এজেন্ট আছে।
সিন্ডিকেটের কবলে শিক্ষা ভবন: পুরো শিক্ষাভবন নিয়ন্ত্রিত হয় কয়েকটি সিন্ডিকেটে। এ কারণে বারবার নানা উদ্যোগ নিয়ে দুর্নীতির রাহুগ্রাস দূর করা যাচ্ছে না। অতীতে একাধিক সিন্ডিকেট থাকলেও শিক্ষাভবনে বর্তমানে একটি সিন্ডিকেট বিদ্যমান। সেটি হলো মহাপরিচালকের সিন্ডিকেট। বর্তমান মহাপরিচালক ঢাকা বোর্ডে চেয়ারম্যান থাকাকালে সেখানের কর্মরতকে তিনি শিক্ষাভবনে নিয়ে এসেছেন। উদ্দেশ্য তার বলয় গড়ে তোলা। তবে বর্তমান মহাপরিচালকের বেশ সুনাম রয়েছে। কিন্তু তার নাম ব্যবহার করে সিন্ডিকেটের কর্মকর্তারা নামে-বেনামে দুর্নীতি-অনিয়ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। এর আগে ডিজির সময় শিক্ষা ভবনের ৬টি বেশি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ছিল। সিন্ডিকেট যন্ত্রণায় কাজ করতে পারতেন না তিনি। বর্তমান ডিজি আসার পর শাখা ও উপশাখায় কিছু সিন্ডিকেট কমানো গেলে মূল ধারার দুটি সিন্ডিকেট এখনও রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: কলেজ ও প্রশাসনের পরিচালক প্রফেসর ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আমি যতক্ষণ অফিসে থাকি পুরো সময় সিসি টিভি মনিটরিং করি। কিছু আগে গেটের বাইরে এক আনসার সদস্য একজন শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিল। তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযোগ বাক্সে বিষয়টি আমি আসার পর খোঁজ খবর নেইনি।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি বলেন, এই ভবনে দুর্নীতি করে প্রমোশন পেয়েছেন এরকম দৃষ্টান্ত ছিল। এখানে যতদিন সিন্ডিকেট মুক্ত না হবে ততদিন দুর্নীতি হয়রানি বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে ২৮৭ শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও মাউশির একটি সংঘবন্ধ চক্র অবৈধভাবে করেছিল। বর্তমানে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা কোথায় আছেন? তারা কিন্তু শিক্ষাভবনের সঙ্গে যুক্ত।
No comments