নির্ভয়াদের তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে by ইলিরা দেওয়ান
বর্তমানে
দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা ভয়াবহভাবে বেড়ে চলেছে। একই সঙ্গে বিচারহীনতার
সংস্কৃতিও এমন প্রকট হয়েছে, দুর্বৃত্তরা একটার পর একটা ঘটনা ঘটাচ্ছে,
কিন্তু পুলিশ কোনো দুর্বৃত্তকে ধরতে পারছে না। এ যেন বাংলা সিনেমার
অবধারিত চিত্র, পরবর্তী দৃশ্য আসার আগেই দর্শক বুঝে নেয়, পরের দৃশ্যে কী
ঘটতে যাচ্ছে!
২১ মে আদিবাসী এক কর্মজীবী নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় চলছে। এটি নারী নির্যাতনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতারই ধারাবাহিকতা। আমরা দিল্লির নির্ভয়ার কথা ভুলে যাইনি। দিল্লির ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়েছিলাম। আমার দেশে দিল্লি ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে কিন্তু খুব বেশি সময় লাগেনি! মাস খানেক পরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আমার দেশের ‘নির্ভয়া’ প্রথম আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর নির্ভয়াদের তালিকা দীর্ঘতরই হচ্ছে। আমরা চলতি মে মাসের পরিসংখ্যান থেকে নারীর নিরাপত্তাহীনতার ভয়াবহ চিত্রকে উপলব্ধি করতে পারি—২১ মে ঢাকার ঘটনা, ১১ মে সোনারগাঁয়ে চলন্ত বাসে পোশাকশ্রমিককে ধর্ষণ, ১৩ মে ময়মনসিংহে বাসচালক ও সহকারী এক তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়, ৩ ও ১ মে যথাক্রমে ঢাকার আশুলিয়া ও চট্টগ্রামে ট্রাঙ্ক ও লাগেজে দুই তরুণীর লাশ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ট্রেনে, নৌকায়, ট্রাকে, প্রাইভেট কার থেকে নামিয়ে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ তো শুধু চলন্ত যানে নির্যাতনের চিত্র; এর বাইরেও নারী নির্যাতনের মাত্রা কতটা মারাত্মক আকার নিয়েছে, সেটি পত্রিকার পাতা খুললেই বোঝা যায়। হঠাৎ নারী নির্যাতন বেড়েছে তা কিন্তু নয়; দীর্ঘদিনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্লিপ্ততা আর নিশ্চুপতা দুর্বৃত্তদের এসব সন্ত্রাসমূলক কাজে প্রশ্রয় বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন।
অবশেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুই দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। তারপর সন্দেহ যায় না, শেষ পর্যন্ত বিচার হবে তো। এমনিতেই দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনায় অপরাধীর শাস্তি পাওয়ার ঘটনা বিরল। তদুপরি মেয়েটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযান শুরুর আগেই আসামিরা সীমানা পেরিয়ে নিরাপদে চলে যায়। কখনো আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে আসামিরা বেরিয়ে আসে। বর্ষবরণে নারী লাঞ্ছনার ঘটনায়ও সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও ‘দুষ্টু ছেলেদের’ চিহ্নিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক মাস সময় লেগেছে।
আদিবাসী মেয়েটিকে নির্যাতনের সময় এক দুর্বৃত্ত বলেছে, মেয়েটি ‘উপজাতি’ বলে তাঁকে তুলে নেওয়া হয়েছে (সূত্র: প্রথম আলো)। দুর্বৃত্তদের এখানেও লাভের গুড়! আক্রান্ত মেয়েটি জাতিগত ও ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু। সুতরাং দুর্বৃত্তদের আর বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না! পাহাড় ও সমতলে আদিবাসী নারীর ওপর নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। কিন্তু সেসব ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় না বললেই চলে। আর যারা হাতেনাতে ধরা পড়ে, তারাও আইনের ফাঁক গলিয়ে দায়মুক্তি পেয়ে যায়। নির্যাতনকারীরা অধিকাংশই হয় কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী, নয়তো কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর ছত্রচ্ছায়ায় প্রশ্রয় পেয়ে থাকে। ফলে বিচারের হাত তাদের ছুঁতে পারে না। বিচারহীনতা ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি তাই দুর্বৃত্তদের আদিবাসী নারীর ওপর নির্যাতনে আরও বেশি প্রলুব্ধ করছে।
আমরা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে এ-ও জেনেছি, পয়লা বৈশাখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আদিবাসী ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে হয়। কিন্তু যৌন নিপীড়নকারী হিসেবে সোনার ছেলেদের এ শাস্তি কি যথেষ্ট? প্রচলিত আইনে কেন তাঁদের বিচার হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বলে তাঁদের চিরতরে বহিষ্কার করেছে। তাই প্রচলিত আইনে ফৌজদারি কার্যবিধি মোতাবেক এ যৌন নিপীড়কদের বিরুদ্ধে পুলিশের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
দেশে নারী নির্যাতন বেড়ে চলেছে, কিন্তু এসব ঘটনার কোনো সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হচ্ছে না। রাষ্ট্র নারীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে। নির্যাতিত মেয়েটি অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনটি থানায় গেলেও থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তাঁর মামলা গ্রহণ করেননি। ঘটনা জানার পরেও তিন থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ভুক্তভোগীকে সহায়তা করেনি এটি, নিঃসন্দেহে দায়িত্ব অবহেলার চরম দৃষ্টান্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ গড়িমসি ভাব থেকে এটি স্পষ্ট যে নারী নির্যাতনের ঘটনাকে তারা কীভাবে মূল্যায়ন করে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এমনিতে সাধারণ জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতার সংকট তৈরি হয়ে আছে। এ সংকট কাটানোর জন্য সেদিন দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সুস্পষ্ট জবাবদিহি থাকা বাঞ্ছনীয়। একইভাবে ওই সব থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও দায়িত্বে অবহেলার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা দরকার।
থানা-পুলিশের এমন দায়িত্বহীন আচরণে স্বাভাবিকভাবে ভুক্তভোগী মেয়েটির মানসিক অবস্থা আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই এ মুহূর্তে মেয়েটির স্বাভাবিক মানসিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য রাষ্ট্রের উচিত উন্নত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন মিডিয়ায় মেয়েটির আবাসস্থলের ঠিকানা প্রকাশ পাওয়ায় তাঁর পরিবার বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মেয়েটি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও রাষ্ট্রের নিতে হবে। এ ঘটনার পর মেয়েটির জীবিকা বন্ধ হয়ে যাবে, এতে সন্দেহ নেই। তাই মেয়েটির ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে।
এত অনিয়ম, অনিশ্চয়তা, বিচারহীনতা ও দায়মুক্তির সংস্কৃতির মধ্যেও আমাদের মাঝে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন নির্যাতনের শিকার সেই আদিবাসী মেয়েটি। এ মামলায় তিনি ‘লড়াই’ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এত কম সময়ে মানসিক ও শারীরিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে তিনি যে দৃঢ়তা ও সাহসের পরিচয় দিয়েছেন, তা দেশের বিবেক ও মনুষ্যবোধকে আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ‘আমরাই নির্ভয়া! সব বাধা পেরিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারি’।
ইলিরা দেওয়ান: হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
ilira.dewan@gmail.com
২১ মে আদিবাসী এক কর্মজীবী নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় চলছে। এটি নারী নির্যাতনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতারই ধারাবাহিকতা। আমরা দিল্লির নির্ভয়ার কথা ভুলে যাইনি। দিল্লির ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়েছিলাম। আমার দেশে দিল্লি ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে কিন্তু খুব বেশি সময় লাগেনি! মাস খানেক পরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আমার দেশের ‘নির্ভয়া’ প্রথম আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর নির্ভয়াদের তালিকা দীর্ঘতরই হচ্ছে। আমরা চলতি মে মাসের পরিসংখ্যান থেকে নারীর নিরাপত্তাহীনতার ভয়াবহ চিত্রকে উপলব্ধি করতে পারি—২১ মে ঢাকার ঘটনা, ১১ মে সোনারগাঁয়ে চলন্ত বাসে পোশাকশ্রমিককে ধর্ষণ, ১৩ মে ময়মনসিংহে বাসচালক ও সহকারী এক তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়, ৩ ও ১ মে যথাক্রমে ঢাকার আশুলিয়া ও চট্টগ্রামে ট্রাঙ্ক ও লাগেজে দুই তরুণীর লাশ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ট্রেনে, নৌকায়, ট্রাকে, প্রাইভেট কার থেকে নামিয়ে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ তো শুধু চলন্ত যানে নির্যাতনের চিত্র; এর বাইরেও নারী নির্যাতনের মাত্রা কতটা মারাত্মক আকার নিয়েছে, সেটি পত্রিকার পাতা খুললেই বোঝা যায়। হঠাৎ নারী নির্যাতন বেড়েছে তা কিন্তু নয়; দীর্ঘদিনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্লিপ্ততা আর নিশ্চুপতা দুর্বৃত্তদের এসব সন্ত্রাসমূলক কাজে প্রশ্রয় বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন।
অবশেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুই দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। তারপর সন্দেহ যায় না, শেষ পর্যন্ত বিচার হবে তো। এমনিতেই দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনায় অপরাধীর শাস্তি পাওয়ার ঘটনা বিরল। তদুপরি মেয়েটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযান শুরুর আগেই আসামিরা সীমানা পেরিয়ে নিরাপদে চলে যায়। কখনো আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে আসামিরা বেরিয়ে আসে। বর্ষবরণে নারী লাঞ্ছনার ঘটনায়ও সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও ‘দুষ্টু ছেলেদের’ চিহ্নিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক মাস সময় লেগেছে।
আদিবাসী মেয়েটিকে নির্যাতনের সময় এক দুর্বৃত্ত বলেছে, মেয়েটি ‘উপজাতি’ বলে তাঁকে তুলে নেওয়া হয়েছে (সূত্র: প্রথম আলো)। দুর্বৃত্তদের এখানেও লাভের গুড়! আক্রান্ত মেয়েটি জাতিগত ও ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু। সুতরাং দুর্বৃত্তদের আর বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না! পাহাড় ও সমতলে আদিবাসী নারীর ওপর নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। কিন্তু সেসব ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় না বললেই চলে। আর যারা হাতেনাতে ধরা পড়ে, তারাও আইনের ফাঁক গলিয়ে দায়মুক্তি পেয়ে যায়। নির্যাতনকারীরা অধিকাংশই হয় কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী, নয়তো কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর ছত্রচ্ছায়ায় প্রশ্রয় পেয়ে থাকে। ফলে বিচারের হাত তাদের ছুঁতে পারে না। বিচারহীনতা ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি তাই দুর্বৃত্তদের আদিবাসী নারীর ওপর নির্যাতনে আরও বেশি প্রলুব্ধ করছে।
আমরা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে এ-ও জেনেছি, পয়লা বৈশাখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আদিবাসী ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে হয়। কিন্তু যৌন নিপীড়নকারী হিসেবে সোনার ছেলেদের এ শাস্তি কি যথেষ্ট? প্রচলিত আইনে কেন তাঁদের বিচার হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বলে তাঁদের চিরতরে বহিষ্কার করেছে। তাই প্রচলিত আইনে ফৌজদারি কার্যবিধি মোতাবেক এ যৌন নিপীড়কদের বিরুদ্ধে পুলিশের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
দেশে নারী নির্যাতন বেড়ে চলেছে, কিন্তু এসব ঘটনার কোনো সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হচ্ছে না। রাষ্ট্র নারীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে। নির্যাতিত মেয়েটি অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনটি থানায় গেলেও থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তাঁর মামলা গ্রহণ করেননি। ঘটনা জানার পরেও তিন থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ভুক্তভোগীকে সহায়তা করেনি এটি, নিঃসন্দেহে দায়িত্ব অবহেলার চরম দৃষ্টান্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ গড়িমসি ভাব থেকে এটি স্পষ্ট যে নারী নির্যাতনের ঘটনাকে তারা কীভাবে মূল্যায়ন করে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এমনিতে সাধারণ জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতার সংকট তৈরি হয়ে আছে। এ সংকট কাটানোর জন্য সেদিন দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সুস্পষ্ট জবাবদিহি থাকা বাঞ্ছনীয়। একইভাবে ওই সব থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও দায়িত্বে অবহেলার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা দরকার।
থানা-পুলিশের এমন দায়িত্বহীন আচরণে স্বাভাবিকভাবে ভুক্তভোগী মেয়েটির মানসিক অবস্থা আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই এ মুহূর্তে মেয়েটির স্বাভাবিক মানসিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য রাষ্ট্রের উচিত উন্নত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন মিডিয়ায় মেয়েটির আবাসস্থলের ঠিকানা প্রকাশ পাওয়ায় তাঁর পরিবার বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মেয়েটি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও রাষ্ট্রের নিতে হবে। এ ঘটনার পর মেয়েটির জীবিকা বন্ধ হয়ে যাবে, এতে সন্দেহ নেই। তাই মেয়েটির ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে।
এত অনিয়ম, অনিশ্চয়তা, বিচারহীনতা ও দায়মুক্তির সংস্কৃতির মধ্যেও আমাদের মাঝে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন নির্যাতনের শিকার সেই আদিবাসী মেয়েটি। এ মামলায় তিনি ‘লড়াই’ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এত কম সময়ে মানসিক ও শারীরিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে তিনি যে দৃঢ়তা ও সাহসের পরিচয় দিয়েছেন, তা দেশের বিবেক ও মনুষ্যবোধকে আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ‘আমরাই নির্ভয়া! সব বাধা পেরিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারি’।
ইলিরা দেওয়ান: হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
ilira.dewan@gmail.com
No comments