জামায়াতকে বিএনপির লালবার্তা by লুৎফর রহমান
জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে চাইছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে অনেকটা লালবার্তা দেয়া হচ্ছে ২০ দলীয় জোট মিত্র জামায়াতকে। যুদ্ধাপরাধের তকমা পাওয়া দলটির সঙ্গ ছাড়তে চাপ বাড়ছে দেশে-বিদেশেও। বিএনপি নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পক্ষ থেকে পরামর্শ আসছে জামায়াত ছেড়ে নিজস্ব শক্তিতে পথ চলার। আন্তর্জাতিক মহলেও ধর্মভিত্তিক দলটি নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। এমন অবস্থায় দলটির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার বিপক্ষে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের একটি বড় অংশ। দলের তৃণমূল থেকেও জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে চাপ আসছে কেন্দ্রে। এমন অবস্থায় সম্প্রতি বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারাও এ নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। যদিও এ বিষয়ে জামায়াতের কোন বক্তব্য নেই। নেতাদের মত, জোট ভেঙে দিলে তাদের কোন আপত্তি নেই। তবে নিজেরা জোট ছেড়ে যাবেন না। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কারাবন্দি। তাদের মধ্যে এ অভিযোগে দুই নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এ বিচার কার্যক্রমকে ঘিরে দলটি সময়ে সময়ে যে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে, তাতে ব্যাপক প্রাণহানি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলটিকে নিয়ে নেতিবাচক বার্তা যায়। সহিংস কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকায় দলটিকে নিয়ে অনেক আগে থেকেই অস্বস্তি রয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে। গত বছরের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরেও টানাপড়েন ছিল বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে। আলোচিত এ নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে জোটের আন্দোলন-কর্মসূচিসহ নানা বিষয়ে মতদ্বৈততা দেখা দেয়ায় দুই দলের মধ্যে দূরত্ব ক্রমেই বাড়তে থাকে। দেখা দেয় অবিশ্বাসও। কখনও কখনও সরকারের সঙ্গে সমঝোতার অভিযোগ উঠে জামায়াতের বিরুদ্ধে। যদিও এমন অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে জামায়াত।
দুই দলের টানাপড়েনের মধ্যেই গত বছরের জানুয়ারিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এক প্রস্তাবে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার কথা বলে। পাস হওয়া ওই প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সুনাম আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সেই সুনাম ধরে রাখা এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার সংস্কৃতি বৃদ্ধি করা। বিএনপির উচিত জামায়াতে ইসলাম এবং হেফাজতে ইসলাম থেকে নিজেদের দূরে রাখা। ওই সময়ে সংঘটিত সহিংস ঘটনারও নিন্দা জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইদানীং সন্দেহের চোখে দেখছে জামায়াতকে। এদিকে সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময়েও জামায়াত নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিএনপি। মোদি ঢাকায় আসার আগে জামায়াতের পক্ষ থেকে ওই সফরকে স্বাগত জানানো হয়েছিল আনুষ্ঠানিকভাবে। কিন্তু মোদি ঢাকা ছাড়ার দিনেই বিবৃতি দিয়ে দলটি অবস্থান পরিবর্তন করে। মোদির সফরে দুই সরকারের মধ্যে যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা হয় তার একটিও বাংলাদেশের পক্ষে হয়নি বলে বিবৃতিতে দাবি করে জামায়াত। এদিকে নরেদ্র মোদির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের বিষয়ে শুরু থেকে নাটকীয়তা থাকলেও মোদির নিজস্ব আগ্রহেই শেষতক ওই বৈঠকটি হয়। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হলেও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি বিএনপি। নরেন্দ্র মোদির সফর শেষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয় শঙ্কর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ভারত গণতন্ত্রের পক্ষে, জঙ্গিবাদের বিপক্ষে। তার ওই বক্তব্যও জামায়াত বিষয়ে একটি ইঙ্গিত ছিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, জামায়াত নিয়ে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব স্তরে অস্বস্তি রয়েছে। এ অবস্থায় দলটির সঙ্গ ছাড়ার মধ্যে দলের স্বার্থ দেখছেন তারা। নেতাদের মতে, জামায়াত-নির্ভরতার কারণে এত দিন বিএনপিরই ক্ষতি হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে থেকে লাভ হয়েছে জামায়াতের। এমন অবস্থায় সম্পর্ক আর দীর্ঘায়িত না করে এখনই ছিন্ন করা উচিত। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার পক্ষে বলে দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে তিনি আলোচনা করেছেন, এমনও শোনা গেছে।
এদিকে জামায়াত ও ২০ দলীয় জোটের বিষয়ে সম্প্রতি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বিষোদ্গার করেন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। গত ২৮শে মে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রকাশ্যে জোট ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। ওই সভায় উপস্থিত খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য জিয়াউর রহমানও একসময় জোট গঠন করেছিলেন। পরে তিনি ওই জোট ভেঙে দিয়ে তাদের বিএনপিতে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমি মনে করি, এখন আর ২০ দলীয় জোটের প্রয়োজন নেই। কারণ যেসব জেলায় জোটের শরিক দলের আসন রয়েছে, সেসব জেলায় বিএনপির নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। তাই ২০ দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে তাদের বিএনপিতে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব রাখেন তিনি। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বিএনপি রাজনীতির দুটি ধাপ পার করেছে। এখন চলছে তৃতীয় ধাপ। এ ধাপে দলটি জামায়াতনির্ভর হয়ে উঠেছে। আর এ কারণে চারদিক থেকে চাপে রয়েছেন খালেদা জিয়া। এ ধাপটি বেশিদিন থাকবে বলে মনে হয় না। দলটিকে বাঁচতে হলে চতুর্থ ধাপে জিয়াউর রহমানের রাজনীতির আদর্শে ফিরে আসতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে মাহবুবুর রহমান এক সাক্ষাৎকারে জামায়াতের বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, জামায়াতকে ঘাড়ে বসিয়ে আমাদের কি লাভ হয়েছে। কোন লাভ হয়নি। যা লাভ হয়েছে তা জামায়াতেরই। উল্টো জামায়াতকে সঙ্গে রাখার কারণে বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি বলে দুর্নাম সইতে হচ্ছে। এর আগে জামায়াত ছাড়ার কথা উঠে আসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের ফোনালাপে। ওই দুই নেতার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। ফোনালাপে জামায়াত প্রসঙ্গে আবেদ বলেন, স্যার (মওদুদ), আগেও আপনাকে বলছিলাম যে জামায়াতের ব্যাপারে বিএনপি যত দিন সিদ্ধান্ত নিতে না পারবে, তত দিন পর্যন্ত বিশ্ব দরবারে বলেন আর বাংলাদেশী দরবারে বলেন, কোন দেশে আর বিএনপি থাকবে না। এ ব্যাপারে এখনই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। এর উত্তরে মওদুদ আহমদ বলেছিলেন, কথা ঠিক, তুমি তো জানো আমার মত কতটুকু।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপিকে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে গঠন করা সরকারের মন্ত্রিসভায় জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ মন্ত্রী হন। জোট সরকারের বিদায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক জমানায় এ জোটের তেমন তৎপরতা না থাকলেও ২০০৯ সালের নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবেই অংশ নেয় জামায়াত। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জোটগতভাবেই আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করে চার দল। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করতে ২০১২ সালের ১৮ই এপ্রিল চারদলীয় জোটের কলেবর বাড়িয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠিত হয়। পরে পর্যায়ক্রমে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দল এ জোটে যোগ দিলে তা ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়।
দুই দলের টানাপড়েনের মধ্যেই গত বছরের জানুয়ারিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এক প্রস্তাবে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার কথা বলে। পাস হওয়া ওই প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সুনাম আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সেই সুনাম ধরে রাখা এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার সংস্কৃতি বৃদ্ধি করা। বিএনপির উচিত জামায়াতে ইসলাম এবং হেফাজতে ইসলাম থেকে নিজেদের দূরে রাখা। ওই সময়ে সংঘটিত সহিংস ঘটনারও নিন্দা জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইদানীং সন্দেহের চোখে দেখছে জামায়াতকে। এদিকে সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময়েও জামায়াত নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিএনপি। মোদি ঢাকায় আসার আগে জামায়াতের পক্ষ থেকে ওই সফরকে স্বাগত জানানো হয়েছিল আনুষ্ঠানিকভাবে। কিন্তু মোদি ঢাকা ছাড়ার দিনেই বিবৃতি দিয়ে দলটি অবস্থান পরিবর্তন করে। মোদির সফরে দুই সরকারের মধ্যে যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা হয় তার একটিও বাংলাদেশের পক্ষে হয়নি বলে বিবৃতিতে দাবি করে জামায়াত। এদিকে নরেদ্র মোদির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের বিষয়ে শুরু থেকে নাটকীয়তা থাকলেও মোদির নিজস্ব আগ্রহেই শেষতক ওই বৈঠকটি হয়। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হলেও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি বিএনপি। নরেন্দ্র মোদির সফর শেষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয় শঙ্কর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ভারত গণতন্ত্রের পক্ষে, জঙ্গিবাদের বিপক্ষে। তার ওই বক্তব্যও জামায়াত বিষয়ে একটি ইঙ্গিত ছিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, জামায়াত নিয়ে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব স্তরে অস্বস্তি রয়েছে। এ অবস্থায় দলটির সঙ্গ ছাড়ার মধ্যে দলের স্বার্থ দেখছেন তারা। নেতাদের মতে, জামায়াত-নির্ভরতার কারণে এত দিন বিএনপিরই ক্ষতি হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে থেকে লাভ হয়েছে জামায়াতের। এমন অবস্থায় সম্পর্ক আর দীর্ঘায়িত না করে এখনই ছিন্ন করা উচিত। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার পক্ষে বলে দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে তিনি আলোচনা করেছেন, এমনও শোনা গেছে।
এদিকে জামায়াত ও ২০ দলীয় জোটের বিষয়ে সম্প্রতি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বিষোদ্গার করেন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। গত ২৮শে মে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রকাশ্যে জোট ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। ওই সভায় উপস্থিত খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য জিয়াউর রহমানও একসময় জোট গঠন করেছিলেন। পরে তিনি ওই জোট ভেঙে দিয়ে তাদের বিএনপিতে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমি মনে করি, এখন আর ২০ দলীয় জোটের প্রয়োজন নেই। কারণ যেসব জেলায় জোটের শরিক দলের আসন রয়েছে, সেসব জেলায় বিএনপির নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। তাই ২০ দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে তাদের বিএনপিতে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব রাখেন তিনি। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বিএনপি রাজনীতির দুটি ধাপ পার করেছে। এখন চলছে তৃতীয় ধাপ। এ ধাপে দলটি জামায়াতনির্ভর হয়ে উঠেছে। আর এ কারণে চারদিক থেকে চাপে রয়েছেন খালেদা জিয়া। এ ধাপটি বেশিদিন থাকবে বলে মনে হয় না। দলটিকে বাঁচতে হলে চতুর্থ ধাপে জিয়াউর রহমানের রাজনীতির আদর্শে ফিরে আসতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে মাহবুবুর রহমান এক সাক্ষাৎকারে জামায়াতের বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, জামায়াতকে ঘাড়ে বসিয়ে আমাদের কি লাভ হয়েছে। কোন লাভ হয়নি। যা লাভ হয়েছে তা জামায়াতেরই। উল্টো জামায়াতকে সঙ্গে রাখার কারণে বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি বলে দুর্নাম সইতে হচ্ছে। এর আগে জামায়াত ছাড়ার কথা উঠে আসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের ফোনালাপে। ওই দুই নেতার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। ফোনালাপে জামায়াত প্রসঙ্গে আবেদ বলেন, স্যার (মওদুদ), আগেও আপনাকে বলছিলাম যে জামায়াতের ব্যাপারে বিএনপি যত দিন সিদ্ধান্ত নিতে না পারবে, তত দিন পর্যন্ত বিশ্ব দরবারে বলেন আর বাংলাদেশী দরবারে বলেন, কোন দেশে আর বিএনপি থাকবে না। এ ব্যাপারে এখনই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। এর উত্তরে মওদুদ আহমদ বলেছিলেন, কথা ঠিক, তুমি তো জানো আমার মত কতটুকু।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপিকে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে গঠন করা সরকারের মন্ত্রিসভায় জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ মন্ত্রী হন। জোট সরকারের বিদায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক জমানায় এ জোটের তেমন তৎপরতা না থাকলেও ২০০৯ সালের নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবেই অংশ নেয় জামায়াত। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জোটগতভাবেই আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করে চার দল। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করতে ২০১২ সালের ১৮ই এপ্রিল চারদলীয় জোটের কলেবর বাড়িয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠিত হয়। পরে পর্যায়ক্রমে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দল এ জোটে যোগ দিলে তা ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়।
No comments