রানা প্লাজা ধসের দুই বছর- ক্ষতিপূরণের অর্থ নিয়ে এখনো নানা প্রশ্ন by শুভংকর কর্মকার
রানা প্লাজা ধসের দুই বছর পরও ছেলে মো. ফরিদের লাশ পাননি মা স্বপ্না বেগম। সাভারে সেই ভবনের জায়গায় এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি l ছবি: প্রথম আলো |
সাভারের
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় পুরো ক্ষতিপূরণ বুঝে পাননি আহত শ্রমিক ও নিহত
শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা। আবার ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে বৈষম্য হয়েছে বলেও কেউ
কেউ অভিযোগ করছেন। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি মীমাংসা করতে সরকারের পক্ষ থেকে
গত এক বছরে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। আবার তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের
সংগঠন বিজিএমইএ অনেক আগে থেকেই চুপ। সংগঠনটির নেতৃত্বের দাবি, তাঁরা
সাধ্যমতো সহায়তা করেছেন এবং পুনর্বাসনের বিভিন্ন কাজ এখনো করে যাচ্ছেন। এদিকে
ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের মাত্র ৭০ শতাংশ দিতে পেরেছে আন্তর্জাতিক
শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বাধীন রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটি। তারা বলছে,
পর্যাপ্ত অর্থ পেলেই ক্ষতিপূরণের বাকি ৩০ শতাংশের অর্থ দেওয়া হবে।
অন্যদিকে, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে আইনি কোনো বাধ্যবাধকতাও তৈরি করা যায়নি।
হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি উদ্যোগ নিয়ে গঠন করেন উচ্চপর্যায়ের কমিটি।
সেই কমিটি গত বছর হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।
তাই ক্ষতিপূরণের মানদণ্ড ঠিক হয়নি। ফলে ভবিষ্যতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে
ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের বেলায় কেবল শ্রম আইনই কার্যকর হবে। অর্থাৎ দুর্ঘটনায়
নিহত শ্রমিকের পরিবার সর্বোচ্চ দুই লাখ ও আহত শ্রমিক সর্বোচ্চ আড়াই লাখ
টাকা পেতে পারে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সরকারি নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় ঘটনা ও বিদেশি চাপ থাকায় রানা প্লাজার ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে মালিকপক্ষ কখনোই চায় না ক্ষতিপূরণের মৌলিক কোনো মানদণ্ড হোক।’
দেশের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। নয়তলা রানা প্লাজা ধসে মারা যান ভবনটিতে অবস্থিত পাঁচ পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত হন ১ হাজার ১৬৭ জন শ্রমিক, গুরুতর আহত ছিলেন ৮১ জন।
ক্ষতিপূরণের অর্থ নিয়ে বৈষম্য: ধসে যাওয়া রানা প্লাজায় ফ্যান্টম অ্যাপারেলসের সুইং আয়রনম্যান বাবু মিয়ার লাশ ও কবর কোনোটাই এখনো খুঁজে পাননি তাঁর স্বজনেরা। বাবু মিয়ার মা মেহেরা গত বুধবার প্রথম আলোকে জানান, ডিএনএ পরীক্ষার পরও ছেলের কবরের কোনো সন্ধান পাননি তিনি। ক্ষতিপূরণ হিসেবে সব মিলিয়ে পেয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
বুধবার দুপুরে রানা প্লাজার সামনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একই ঘটনায় নিহতের কেউ পাবেন ২০ লাখ টাকা আর কেউ পাবেন এক লাখ—এ কেমন আইন। এমন ক্ষতিপূরণ আমরা চাই না, আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’
আরেক ছেলেহারা মা রাহেলা বেগমের কণ্ঠেও একই দাবি। তিনি বলেন, ‘ক্ষতিপূরণে কেন কমবেশি হবে? নিহতদের সবাইকে এক রকম আর আহতদের সবাইকে এক রকম ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।’ তাঁর ছেলে ফজলে রাব্বীও ফ্যান্টমে কাজ করতেন। জানালেন, তিনি ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সমন্বয় কমিটির সদস্য সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ক্ষতিপূরণের একটি সর্বনিম্ন হার নির্ধারণ করা হয়েছে। নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবার পাবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা। আহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ দুই লাখ টাকার নিচে হবে না। এ ছাড়া সব শ্রমিককে ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হতে পারে। এসব সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। তবে তহবিলে অর্থ পাওয়া সাপেক্ষে দেওয়া হবে।
বিজিএমইএ আর অর্থ দেবে না: ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দাবিনামা বা ক্লেইম ফরম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য তিন কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন। তবে রানা প্লাজা ডোনারস ট্রাস্ট ফান্ডে জমা আছে ২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অবশ্য এ অর্থের মধ্যে আছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেওয়া সহায়তা ২৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার ও নিউ ওয়েব বটমের শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া প্রাইমার্কের ৬৩ লাখ ডলার। আর আছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বেনেটনসহ অন্যদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া ২৩ লাখ ডলার।
রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটি এ তথ্য দিয়ে বলেছে, তহবিল থেকে গত বছর পাঁচ কিস্তিতে আহত ও নিহত শ্রমিক পরিবারের ২ হাজার ৭৭০ জনকে তাঁদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের ৪০ শতাংশ দেওয়া হয়। এ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রাপ্ত সহায়তা ও এককালীন দেওয়া ৫০ হাজার টাকা কর্তন করে রাখা হয়েছিল। পরে চলতি মাসে ক্ষতিপূরণের বাকি ৩০ শতাংশের অর্থ দেওয়া হয় ২ হাজার ৯৬৮ জনকে। ক্ষতিপূরণের বাকি ৩০ শতাংশ অর্থ পাওয়া সাপেক্ষে দেওয়ার কথা বলে সমন্বয় কমিটি ২০ এপ্রিল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে।
রানা প্লাজা ধসের পর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে প্রায় ১২৭ কোটি টাকা জমা হয়। সেখান থেকে সহায়তা, চিকিৎসা ও উদ্ধার কার্যক্রমে খরচ করা হয় ২২ কোটি টাকা। আর বর্তমানে পুরো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য দরকার ৬০ লাখ ডলার বা ৪৬-৪৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক তাসলিমা আখ্তার প্রথম আলোকে বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়াতেই প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে মানুষ টাকা দিয়েছে। এ অর্থ শ্রমিকদের কাছে যাওয়া উচিত।
এদিকে ক্ষতিপূরণ বিষয়ে বিজিএমইএর পিছটান দেওয়ার অভিযোগ বেশ পুরোনো। রানা প্লাজা ধসের পর একটি সহায়তা তহবিল গঠন করে বিজিএমইএ। প্রত্যেক সদস্যকে ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা করে তহবিলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় সংগঠনের পক্ষ থেকে সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। বিজিএমইএর হুমকির পরও কাজ হয়েছে সামান্যই। সাড়ে তিন হাজার সদস্যের মধ্যে বিজিএমইএর তহবিলে তখন মাত্র ১ হাজার ৮৪২ সদস্য টাকা জমা দেন। জমা পড়ে সাড়ে ১৪ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রম আইন অনুযায়ী মালিকপক্ষের এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। তবে আমরা ১৫ কোটি টাকার মতো খরচ করেছি। তার পরও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পুনর্বাসনের কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের জন্য সমন্বয় কমিটির উদ্যোগটির সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত নই। তা ছাড়া বিজিএমইএ একটি সংগঠন। তাদের আলাদা কোনো আয় নেই। ফলে ক্ষতিপূরণের জন্য নতুন করে অর্থ দেওয়া সম্ভব নয়।’
মানদণ্ড হলো না: হাইকোর্টের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চের স্বতঃপ্রণোদিত রুলের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত কমিটির সুপারিশ ছিল, প্রত্যেক নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবার এবং স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যাওয়া শ্রমিক ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। আর আহত হওয়ার ধরন অনুযায়ী শ্রমিকেরা পাবেন দেড় লাখ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে সাত লাখ টাকা।
জানতে চাইলে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ উপকমিটির প্রধান এম এম আকাশ গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের তৈরি করা কমিটি সব সদস্যের সম্মতি নিয়েই প্রতিবেদনটি কোর্টে জমা দেয়। শুধু বিজিএমইএর প্রতিনিধি এতে অনাপত্তি দেন। আমি জানতে চাই, কেন কোর্ট থেকে সিদ্ধান্ত এল না? ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘কোর্ট সিদ্ধান্ত দিলে সেটি আইন হয়ে যেত। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের বিষয়েও একটি মানদণ্ড হতো। এটি যাতে ভেস্তে যায়, সে জন্য বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। আর সে জন্যই সাময়িক ভিত্তিতে কিছু অনুদান দেওয়া হয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সরকারি নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় ঘটনা ও বিদেশি চাপ থাকায় রানা প্লাজার ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে মালিকপক্ষ কখনোই চায় না ক্ষতিপূরণের মৌলিক কোনো মানদণ্ড হোক।’
দেশের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। নয়তলা রানা প্লাজা ধসে মারা যান ভবনটিতে অবস্থিত পাঁচ পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত হন ১ হাজার ১৬৭ জন শ্রমিক, গুরুতর আহত ছিলেন ৮১ জন।
ক্ষতিপূরণের অর্থ নিয়ে বৈষম্য: ধসে যাওয়া রানা প্লাজায় ফ্যান্টম অ্যাপারেলসের সুইং আয়রনম্যান বাবু মিয়ার লাশ ও কবর কোনোটাই এখনো খুঁজে পাননি তাঁর স্বজনেরা। বাবু মিয়ার মা মেহেরা গত বুধবার প্রথম আলোকে জানান, ডিএনএ পরীক্ষার পরও ছেলের কবরের কোনো সন্ধান পাননি তিনি। ক্ষতিপূরণ হিসেবে সব মিলিয়ে পেয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
বুধবার দুপুরে রানা প্লাজার সামনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একই ঘটনায় নিহতের কেউ পাবেন ২০ লাখ টাকা আর কেউ পাবেন এক লাখ—এ কেমন আইন। এমন ক্ষতিপূরণ আমরা চাই না, আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’
আরেক ছেলেহারা মা রাহেলা বেগমের কণ্ঠেও একই দাবি। তিনি বলেন, ‘ক্ষতিপূরণে কেন কমবেশি হবে? নিহতদের সবাইকে এক রকম আর আহতদের সবাইকে এক রকম ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।’ তাঁর ছেলে ফজলে রাব্বীও ফ্যান্টমে কাজ করতেন। জানালেন, তিনি ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সমন্বয় কমিটির সদস্য সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ক্ষতিপূরণের একটি সর্বনিম্ন হার নির্ধারণ করা হয়েছে। নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবার পাবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা। আহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ দুই লাখ টাকার নিচে হবে না। এ ছাড়া সব শ্রমিককে ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হতে পারে। এসব সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। তবে তহবিলে অর্থ পাওয়া সাপেক্ষে দেওয়া হবে।
বিজিএমইএ আর অর্থ দেবে না: ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দাবিনামা বা ক্লেইম ফরম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য তিন কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন। তবে রানা প্লাজা ডোনারস ট্রাস্ট ফান্ডে জমা আছে ২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অবশ্য এ অর্থের মধ্যে আছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেওয়া সহায়তা ২৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার ও নিউ ওয়েব বটমের শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া প্রাইমার্কের ৬৩ লাখ ডলার। আর আছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বেনেটনসহ অন্যদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া ২৩ লাখ ডলার।
রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটি এ তথ্য দিয়ে বলেছে, তহবিল থেকে গত বছর পাঁচ কিস্তিতে আহত ও নিহত শ্রমিক পরিবারের ২ হাজার ৭৭০ জনকে তাঁদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের ৪০ শতাংশ দেওয়া হয়। এ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রাপ্ত সহায়তা ও এককালীন দেওয়া ৫০ হাজার টাকা কর্তন করে রাখা হয়েছিল। পরে চলতি মাসে ক্ষতিপূরণের বাকি ৩০ শতাংশের অর্থ দেওয়া হয় ২ হাজার ৯৬৮ জনকে। ক্ষতিপূরণের বাকি ৩০ শতাংশ অর্থ পাওয়া সাপেক্ষে দেওয়ার কথা বলে সমন্বয় কমিটি ২০ এপ্রিল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে।
রানা প্লাজা ধসের পর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে প্রায় ১২৭ কোটি টাকা জমা হয়। সেখান থেকে সহায়তা, চিকিৎসা ও উদ্ধার কার্যক্রমে খরচ করা হয় ২২ কোটি টাকা। আর বর্তমানে পুরো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য দরকার ৬০ লাখ ডলার বা ৪৬-৪৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক তাসলিমা আখ্তার প্রথম আলোকে বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়াতেই প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে মানুষ টাকা দিয়েছে। এ অর্থ শ্রমিকদের কাছে যাওয়া উচিত।
এদিকে ক্ষতিপূরণ বিষয়ে বিজিএমইএর পিছটান দেওয়ার অভিযোগ বেশ পুরোনো। রানা প্লাজা ধসের পর একটি সহায়তা তহবিল গঠন করে বিজিএমইএ। প্রত্যেক সদস্যকে ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা করে তহবিলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় সংগঠনের পক্ষ থেকে সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। বিজিএমইএর হুমকির পরও কাজ হয়েছে সামান্যই। সাড়ে তিন হাজার সদস্যের মধ্যে বিজিএমইএর তহবিলে তখন মাত্র ১ হাজার ৮৪২ সদস্য টাকা জমা দেন। জমা পড়ে সাড়ে ১৪ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রম আইন অনুযায়ী মালিকপক্ষের এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। তবে আমরা ১৫ কোটি টাকার মতো খরচ করেছি। তার পরও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পুনর্বাসনের কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের জন্য সমন্বয় কমিটির উদ্যোগটির সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত নই। তা ছাড়া বিজিএমইএ একটি সংগঠন। তাদের আলাদা কোনো আয় নেই। ফলে ক্ষতিপূরণের জন্য নতুন করে অর্থ দেওয়া সম্ভব নয়।’
মানদণ্ড হলো না: হাইকোর্টের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চের স্বতঃপ্রণোদিত রুলের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত কমিটির সুপারিশ ছিল, প্রত্যেক নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবার এবং স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যাওয়া শ্রমিক ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। আর আহত হওয়ার ধরন অনুযায়ী শ্রমিকেরা পাবেন দেড় লাখ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে সাত লাখ টাকা।
জানতে চাইলে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ উপকমিটির প্রধান এম এম আকাশ গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের তৈরি করা কমিটি সব সদস্যের সম্মতি নিয়েই প্রতিবেদনটি কোর্টে জমা দেয়। শুধু বিজিএমইএর প্রতিনিধি এতে অনাপত্তি দেন। আমি জানতে চাই, কেন কোর্ট থেকে সিদ্ধান্ত এল না? ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘কোর্ট সিদ্ধান্ত দিলে সেটি আইন হয়ে যেত। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের বিষয়েও একটি মানদণ্ড হতো। এটি যাতে ভেস্তে যায়, সে জন্য বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। আর সে জন্যই সাময়িক ভিত্তিতে কিছু অনুদান দেওয়া হয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক।’
No comments