রাজপথে খালেদার বিচার! by আসিফ নজরুল
প্রথমে
কিছুটা রাখঢাক ছিল। এখন তাও নেই। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে তৃতীয় দফা
হামলাকালে সরাসরি অংশ নিয়েছে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। তৃতীয় দফা হামলা হয়
সরাসরি খালেদা জিয়ার গাড়ির ওপরই। গাড়িতে তাঁর ঠিক পেছনের সারির পাশের
জানালা ভেঙে যায়। এলোপাতাড়ি লাঠি, ঢিল আর কোমরে অস্ত্র নিয়ে এ রকম হামলা
অব্যাহত থাকলে খালেদা জিয়া নিজেও আহত হতে পারেন।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে তিন দফা হামলায় তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা বেধড়ক মারের শিকার হয়েছেন, কেউ কেউ রক্তাক্ত হয়েছেন। হামলাকারীরা কখনো জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে, কখনো ছাত্রলীগের ঘাঁটির ঘোষণা দিয়ে আক্রমণ করেছে। হামলাকারীদের ছবিতে স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা গেছে, বুধবারের হামলায় অংশ নেওয়া ছাত্রলীগের নেতাদের নাম-পরিচয় পর্যন্ত পত্রিকায় এসেছে। এ ধরনের হামলা দেশের ফৌজদারি আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ এবং দেশের নির্বাচনী আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। যেকোনো সভ্য দেশে এ জন্য হামলাকারীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করত, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার জন্য পুলিশের কাছে জবাবদিহি দাবি করা হতো। এ দেশে তা হয়নি, হবেও না। বরং হামলাকারীরা নিজেরাই মামলা দিয়েছেন হামলার শিকার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে, এই সুযোগে এখন পুলিশকে দিয়ে গ্রেপ্তার ও হয়রানিও করা যাবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের।
খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, একাধিকবার ছিলেন সংসদে বিরোধী দলের নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রচারণার পরও বহু মানুষ বিশ্বাস করে তিনি এখনো বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুজন নেতার একজন। তাঁর বা অন্য নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর যেকোনো হামলাকে বহু দলনিরপেক্ষ মানুষও নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করে। তাঁর ওপর এ ধরনের অব্যাহত হামলা শুধু অপরাধমূলক বা চরম শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ নয়, এটি নির্বাচনী কৌশলের দিক দিয়েও আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরাং হতে পারে। এই হামলায় জনমত প্রভাবিত হতে পারে, দেশে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সরকারের ইমেজ আরও ক্ষুণ্ন হতে পারে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সুস্থ রাজনীতির পুনঃপ্রবাহের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল, তা এসব হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে কিছুটা হোঁচট খেয়েছে। বিএনপির কর্মীরা এখন পোলিং এজেন্ট হতে বা কেন্দ্রে ঠিকমতো দায়িত্ব পালনে ভীতসন্ত্রস্ত হতে পারেন। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা এতে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারপরও একের পর এক হামলা কেন চালানো হচ্ছে?
খালেদা জিয়ার ওপর অব্যাহত হামলার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে দুটো। এক. তাঁকে নির্বাচনী প্রচারাভিযান থেকে বিরত রাখা। দুই. বিএনপিকে নির্বাচন বর্জন করতে প্ররোচিত করা। খালেদা জিয়া সরকার বা সংসদে বিরোধী দলের কেউ না বলে নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সুযোগ পাচ্ছেন, যা প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীরা পাচ্ছেন না। প্রচারাভিযানে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত উপস্থিতি বহু ভোটারকে প্রভাবিত করতে পারে, এই আশঙ্কা সরকারের মধ্যে থাকতে পারে। এ জন্য তাঁর ওপর হামলা করে তাঁকে বিরত রাখার চিন্তাও তাঁদের মধ্যে থাকতে পারে। যদি সে ধরনের মানসিকতা থেকে হামলাগুলো হয়ে থাকে, তাহলে তা অসুস্থ, অন্যায় ও অশুভ। শক্তি প্রয়োগ করে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ঢাল ব্যবহার করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীকে স্তব্ধ করার চেষ্টা চরমভাবে অগণতান্ত্রিক।
২....
খালেদা জিয়ার ওপর হামলার আগে প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছিলেন, খালেদা নির্বাচনী অভিযানে বের হলে জিজ্ঞেস করবেন, তিনি কেন মানুষ পোড়ানোর আদেশ দিয়েছিলেন। এ ধরনের প্রশ্ন করার অধিকার যেকোনো মানুষের আছে, এ ধরনের আহ্বানও প্রধানমন্ত্রী করতে পারেন। কিন্তু এটি অর্থবহ করতে হলে আগে মানুষকে বিশ্বাস করাতে হবে যে খালেদা জিয়া নিজে পেট্রলবোমা মারার নির্দেশ দিয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রচারিত খালেদা জিয়ার কোনো বক্তৃতা-বিবৃতিতে এ ধরনের নির্দেশ দিতে দেখা যায়নি। তিনি ৫ জানুয়ারি-পরবর্তী সময়ে পুলিশ প্রহরায় অবরুদ্ধ ছিলেন বলে বাইরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর সরাসরি কথা বলার কোনো সুযোগও ছিল না। তিনি কি তাহলে ফোনে বা ইন্টারনেটে এ ধরনের কোনো নির্দেশ দিয়েছিলেন? তিনি যদি তা করে থাকেন, সরকারের কাছে অবশ্যই তার রেকর্ড থাকার কথা। যদি সরকারের কাছে এমন রেকর্ড থাকে, তাহলে গণমাধ্যমে তা প্রচার হওয়ার কথা। আমরা এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো গণমাধ্যমেও পাইনি, আইন-আদালতে দাখিল করার কথাও শুনিনি।
গণমাধ্যমে সরকারি দলের নেতারা ও কিছু আলোচক বলে থাকেন যে বিরোধী দলের কর্মসূচিকালে পেট্রলবোমার প্রয়োগ হয়েছে বলে এই দায়দায়িত্ব তাদের বা আরও সুনির্দিষ্ট করলে খালেদা জিয়ার। তাঁদের এই বক্তব্য সঠিক হতে পারে। কিন্তু তাহলে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি চলাকালে বা তারা বিরোধী দলে থাকাকালে লগি-বইঠা, গানপাউডার আর বোমার আঘাতে যেসব প্রাণহানি ঘটেছে, তার দায়দায়িত্ব আওয়ামী লীগের নেত্রীর ওপর বর্তাবে। বর্তমান সরকারের সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যেসব গুম ও ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনা ঘটেছে, তার দায়দায়িত্বও সরকারপ্রধানের ওপর বর্তাবে। আগের আমলের ক্রসফায়ারের জন্য একইভাবে দায়ী হবেন বিএনপির নেত্রী।
১৯৯০ সালের পর বহু প্রাণহানির ঘটনার জন্য তাহলে জনগণের অধিকার থাকবে দুই নেত্রীর কাছে জবাব চাওয়ার। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় এ ধরনের জবাবদিহির একটি মাত্র সুযোগই আমরা সৃষ্টি করেছি। তা হচ্ছে নির্বাচন। গত চার মাসে সরকার অক্লান্তভাবে নাশকতা ও পেট্রলবোমার জন্য খালেদা ও বিএনপিকে দায়ী করেছে। এখনো নাহয় তা অব্যাহত থাকুক! কিন্তু বিচারের দায়িত্ব জনগণের নির্বাচনী সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক, ছাত্রলীগ-যুবলীগের পিস্তল-লাঠি আর পেশিশক্তির ওপর না। প্রয়োজনে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে পেট্রলবোমার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু সেটি যেন হয় ন্যায়বিচার, আরোপিত বিচার নয়।
যিনি বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাঁর বিচার রাস্তাঘাটে হতে পারে না। অশ্লীল গালাগালি করে লাঠি হাতে তাঁর দিকে মারমুখী হয়ে ছুটে যেতে পারে না ছাত্রলীগ কিংবা যুবলীগ। এসব ঘটনা আর ছবি মানুষকে শুধু আওয়ামী লীগ না, গোটা রাজনীতির ওপরই বিদ্বিষ্ট করে তুলতে পারে।
৩....
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে তিন দফা হামলায় তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা বেধড়ক মারের শিকার হয়েছেন, কেউ কেউ রক্তাক্ত হয়েছেন। হামলাকারীরা কখনো জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে, কখনো ছাত্রলীগের ঘাঁটির ঘোষণা দিয়ে আক্রমণ করেছে। হামলাকারীদের ছবিতে স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা গেছে, বুধবারের হামলায় অংশ নেওয়া ছাত্রলীগের নেতাদের নাম-পরিচয় পর্যন্ত পত্রিকায় এসেছে। এ ধরনের হামলা দেশের ফৌজদারি আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ এবং দেশের নির্বাচনী আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। যেকোনো সভ্য দেশে এ জন্য হামলাকারীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করত, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার জন্য পুলিশের কাছে জবাবদিহি দাবি করা হতো। এ দেশে তা হয়নি, হবেও না। বরং হামলাকারীরা নিজেরাই মামলা দিয়েছেন হামলার শিকার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে, এই সুযোগে এখন পুলিশকে দিয়ে গ্রেপ্তার ও হয়রানিও করা যাবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের।
খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, একাধিকবার ছিলেন সংসদে বিরোধী দলের নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রচারণার পরও বহু মানুষ বিশ্বাস করে তিনি এখনো বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুজন নেতার একজন। তাঁর বা অন্য নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর যেকোনো হামলাকে বহু দলনিরপেক্ষ মানুষও নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করে। তাঁর ওপর এ ধরনের অব্যাহত হামলা শুধু অপরাধমূলক বা চরম শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ নয়, এটি নির্বাচনী কৌশলের দিক দিয়েও আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরাং হতে পারে। এই হামলায় জনমত প্রভাবিত হতে পারে, দেশে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সরকারের ইমেজ আরও ক্ষুণ্ন হতে পারে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সুস্থ রাজনীতির পুনঃপ্রবাহের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল, তা এসব হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে কিছুটা হোঁচট খেয়েছে। বিএনপির কর্মীরা এখন পোলিং এজেন্ট হতে বা কেন্দ্রে ঠিকমতো দায়িত্ব পালনে ভীতসন্ত্রস্ত হতে পারেন। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা এতে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারপরও একের পর এক হামলা কেন চালানো হচ্ছে?
খালেদা জিয়ার ওপর অব্যাহত হামলার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে দুটো। এক. তাঁকে নির্বাচনী প্রচারাভিযান থেকে বিরত রাখা। দুই. বিএনপিকে নির্বাচন বর্জন করতে প্ররোচিত করা। খালেদা জিয়া সরকার বা সংসদে বিরোধী দলের কেউ না বলে নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সুযোগ পাচ্ছেন, যা প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীরা পাচ্ছেন না। প্রচারাভিযানে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত উপস্থিতি বহু ভোটারকে প্রভাবিত করতে পারে, এই আশঙ্কা সরকারের মধ্যে থাকতে পারে। এ জন্য তাঁর ওপর হামলা করে তাঁকে বিরত রাখার চিন্তাও তাঁদের মধ্যে থাকতে পারে। যদি সে ধরনের মানসিকতা থেকে হামলাগুলো হয়ে থাকে, তাহলে তা অসুস্থ, অন্যায় ও অশুভ। শক্তি প্রয়োগ করে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ঢাল ব্যবহার করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীকে স্তব্ধ করার চেষ্টা চরমভাবে অগণতান্ত্রিক।
২....
খালেদা জিয়ার ওপর হামলার আগে প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছিলেন, খালেদা নির্বাচনী অভিযানে বের হলে জিজ্ঞেস করবেন, তিনি কেন মানুষ পোড়ানোর আদেশ দিয়েছিলেন। এ ধরনের প্রশ্ন করার অধিকার যেকোনো মানুষের আছে, এ ধরনের আহ্বানও প্রধানমন্ত্রী করতে পারেন। কিন্তু এটি অর্থবহ করতে হলে আগে মানুষকে বিশ্বাস করাতে হবে যে খালেদা জিয়া নিজে পেট্রলবোমা মারার নির্দেশ দিয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রচারিত খালেদা জিয়ার কোনো বক্তৃতা-বিবৃতিতে এ ধরনের নির্দেশ দিতে দেখা যায়নি। তিনি ৫ জানুয়ারি-পরবর্তী সময়ে পুলিশ প্রহরায় অবরুদ্ধ ছিলেন বলে বাইরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর সরাসরি কথা বলার কোনো সুযোগও ছিল না। তিনি কি তাহলে ফোনে বা ইন্টারনেটে এ ধরনের কোনো নির্দেশ দিয়েছিলেন? তিনি যদি তা করে থাকেন, সরকারের কাছে অবশ্যই তার রেকর্ড থাকার কথা। যদি সরকারের কাছে এমন রেকর্ড থাকে, তাহলে গণমাধ্যমে তা প্রচার হওয়ার কথা। আমরা এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো গণমাধ্যমেও পাইনি, আইন-আদালতে দাখিল করার কথাও শুনিনি।
গণমাধ্যমে সরকারি দলের নেতারা ও কিছু আলোচক বলে থাকেন যে বিরোধী দলের কর্মসূচিকালে পেট্রলবোমার প্রয়োগ হয়েছে বলে এই দায়দায়িত্ব তাদের বা আরও সুনির্দিষ্ট করলে খালেদা জিয়ার। তাঁদের এই বক্তব্য সঠিক হতে পারে। কিন্তু তাহলে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি চলাকালে বা তারা বিরোধী দলে থাকাকালে লগি-বইঠা, গানপাউডার আর বোমার আঘাতে যেসব প্রাণহানি ঘটেছে, তার দায়দায়িত্ব আওয়ামী লীগের নেত্রীর ওপর বর্তাবে। বর্তমান সরকারের সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যেসব গুম ও ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনা ঘটেছে, তার দায়দায়িত্বও সরকারপ্রধানের ওপর বর্তাবে। আগের আমলের ক্রসফায়ারের জন্য একইভাবে দায়ী হবেন বিএনপির নেত্রী।
১৯৯০ সালের পর বহু প্রাণহানির ঘটনার জন্য তাহলে জনগণের অধিকার থাকবে দুই নেত্রীর কাছে জবাব চাওয়ার। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় এ ধরনের জবাবদিহির একটি মাত্র সুযোগই আমরা সৃষ্টি করেছি। তা হচ্ছে নির্বাচন। গত চার মাসে সরকার অক্লান্তভাবে নাশকতা ও পেট্রলবোমার জন্য খালেদা ও বিএনপিকে দায়ী করেছে। এখনো নাহয় তা অব্যাহত থাকুক! কিন্তু বিচারের দায়িত্ব জনগণের নির্বাচনী সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক, ছাত্রলীগ-যুবলীগের পিস্তল-লাঠি আর পেশিশক্তির ওপর না। প্রয়োজনে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে পেট্রলবোমার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু সেটি যেন হয় ন্যায়বিচার, আরোপিত বিচার নয়।
যিনি বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাঁর বিচার রাস্তাঘাটে হতে পারে না। অশ্লীল গালাগালি করে লাঠি হাতে তাঁর দিকে মারমুখী হয়ে ছুটে যেতে পারে না ছাত্রলীগ কিংবা যুবলীগ। এসব ঘটনা আর ছবি মানুষকে শুধু আওয়ামী লীগ না, গোটা রাজনীতির ওপরই বিদ্বিষ্ট করে তুলতে পারে।
৩....
ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি পরিদর্শনে ১৭ কূটনীতিক |
রাজনীতি
সব সময় পরিচ্ছন্ন কোনো প্রতিযোগিতা নয়। গণতন্ত্র সব সময় শালীন নয়। বহু
বছর আগে স্যামুয়েল হান্টিংটন যৌথভাবে ক্রাইসিস অব ডেমোক্রেসি নামক
রিপোর্টে আমেরিকা ও ইউরোপের উন্নত গণতন্ত্রের অনেক সংকটকে চিহ্নিত
করেছিলেন। আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার অনেক অঞ্চলে এই সংকট দিনে দিনে
আরও তীব্র হয়েছে। গত কয়েক বছরে এসব অঞ্চলে ইন্দোনেশিয়া ও তিউনিসিয়ার মতো
কয়েকটি দেশ বাদে অন্য সব অঞ্চলে গণতন্ত্র দুর্বল হয়েছে, নির্বাচন বা
গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, বিরোধী দলের প্রতি সহনশীলতা
হ্রাস পেয়েছে।
আমাদের এই অঞ্চলে ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক শিষ্টাচারের অবনতি ঘটেছে, শ্রীলঙ্কায় ২০১৫ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিরোধী দলের ওপর চরম নিপীড়ন হয়েছে, মালদ্বীপে একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর ভিন্নমতের ওপর রাষ্ট্রীয় খড়্গ নেমে এসেছে। বাংলাদেশ যে বহু প্রতিবন্ধকতার পরও ১৯৯০ সালের পর অব্যাহতভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেছে, তার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল এ দেশে একটি মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক কাঠামো ও সংস্কৃতি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত ও একতরফা নির্বাচনের পর আমাদের গণতন্ত্র মারাত্মক হোঁচট খেয়েছে। তার প্রতিফলন শুধু দেশের অর্থনীতি নয়, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধের ওপর পড়েছে।
এ দেশে এখন নারকীয় পেট্রলবোমা প্রতিবাদের ভাষা হয়েছে, বিরোধী দলের নেতার গুম হওয়া সহনীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে, জবাবদিহির জন্য প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উল্টো ক্ষমতাসীনদের নিপীড়ন-নির্যাতনের সহযোগী হয়েছে, মিথ্যাচার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নামতে নামতে আমরা যদি এমন এক জায়গায় চলে যাই যে রাস্তাঘাটে সরকারি দলের পান্ডারা একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে অনবরত আক্রমণ করতে পারবে, তাহলে এ দেশে গণতন্ত্র পুরোপুরিই বিপন্ন হয়ে যাবে একসময়। সামাজিক সম্প্রীতি ও শিষ্টাচারবোধও হবে বিপর্যস্ত।
বাংলাদেশের যেকোনো গণতান্ত্রিক শক্তির উচিত খালেদা জিয়ার ওপর অব্যাহত হামলার তীব্র প্রতিবাদ করা। বিরোধী দলের আন্দোলনকালে নাশকতার জন্য যাঁরা তাঁর সুষ্ঠু বিচার বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন, তাঁরা অবশ্যই তা মনে করতে পারেন। কিন্তু তাঁদেরও উচিত তাঁর বিরুদ্ধে রাজপথে বর্বরতার নিন্দা জানানো। রাজপথে কোনো মানুষের ওপরই প্রকাশ্যে হামলা করার অধিকার কারও নেই।
আশার কথা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা খালেদা জিয়ার ওপর হামলায় তাঁদের অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মনে রাখতে হবে, এই হামলা শুধু বন্ধ করা না, এর বিচার করার দায়িত্বও তাঁদের।
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আমাদের এই অঞ্চলে ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক শিষ্টাচারের অবনতি ঘটেছে, শ্রীলঙ্কায় ২০১৫ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিরোধী দলের ওপর চরম নিপীড়ন হয়েছে, মালদ্বীপে একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর ভিন্নমতের ওপর রাষ্ট্রীয় খড়্গ নেমে এসেছে। বাংলাদেশ যে বহু প্রতিবন্ধকতার পরও ১৯৯০ সালের পর অব্যাহতভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেছে, তার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল এ দেশে একটি মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক কাঠামো ও সংস্কৃতি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত ও একতরফা নির্বাচনের পর আমাদের গণতন্ত্র মারাত্মক হোঁচট খেয়েছে। তার প্রতিফলন শুধু দেশের অর্থনীতি নয়, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধের ওপর পড়েছে।
এ দেশে এখন নারকীয় পেট্রলবোমা প্রতিবাদের ভাষা হয়েছে, বিরোধী দলের নেতার গুম হওয়া সহনীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে, জবাবদিহির জন্য প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উল্টো ক্ষমতাসীনদের নিপীড়ন-নির্যাতনের সহযোগী হয়েছে, মিথ্যাচার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নামতে নামতে আমরা যদি এমন এক জায়গায় চলে যাই যে রাস্তাঘাটে সরকারি দলের পান্ডারা একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে অনবরত আক্রমণ করতে পারবে, তাহলে এ দেশে গণতন্ত্র পুরোপুরিই বিপন্ন হয়ে যাবে একসময়। সামাজিক সম্প্রীতি ও শিষ্টাচারবোধও হবে বিপর্যস্ত।
বাংলাদেশের যেকোনো গণতান্ত্রিক শক্তির উচিত খালেদা জিয়ার ওপর অব্যাহত হামলার তীব্র প্রতিবাদ করা। বিরোধী দলের আন্দোলনকালে নাশকতার জন্য যাঁরা তাঁর সুষ্ঠু বিচার বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন, তাঁরা অবশ্যই তা মনে করতে পারেন। কিন্তু তাঁদেরও উচিত তাঁর বিরুদ্ধে রাজপথে বর্বরতার নিন্দা জানানো। রাজপথে কোনো মানুষের ওপরই প্রকাশ্যে হামলা করার অধিকার কারও নেই।
আশার কথা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা খালেদা জিয়ার ওপর হামলায় তাঁদের অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মনে রাখতে হবে, এই হামলা শুধু বন্ধ করা না, এর বিচার করার দায়িত্বও তাঁদের।
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments