ক্লু লুকিয়ে আছে সিসিটিভি রহস্যে by সৈয়দ আতিক
ঢাকার
অদূরে আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় পাওয়া সিসিটিভির ফুটেজের প্রকৃত সময়
নির্ধারণের অপশন আগে থেকে এলোমেলো করা ছিল। এমনকি খুনের দিন সকাল থেকে
ফুটেজ চালু থাকলেও ঘটনার কিছুক্ষণ আগে থেকে এর ধারণ করা ফুটেজে কোনো
মানুষের ছবি আসছে না। মূলত ধারণ ওই সময়টি ব্ল্যাক (কালো) হয়ে আছে। কিন্তু
খুনের পর রক্তাক্ত অবস্থার চিত্র ধারণ হয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্টদেরও এই বিষয়টি
ভাবিয়ে তুলেছে। র্যাবের সন্দেহ ব্যাংকের ভেতরে সিসিটিভি সম্পর্কে জ্ঞান
রাখে এমন কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। র্যাব তাদের ছায়া তদন্তে দু’জন
ব্যক্তিকে সন্দেহ করছে। প্রযুক্তিগত তদন্তে তাদের ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও
তথ্যানুন্ধান অব্যাহত রেখেছে। এদিকে ওই শাখা থেকে জব্দ করা সিসিটিভির
ফুটেজের রহস্য উৎঘাটনে আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছে পুলিশ। সিআইডি বা বুয়েট
বিশেষজ্ঞ টিমকে দিয়ে সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সহায়তা নেয়া
হচ্ছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যারা ব্যাংকে প্রবেশ করেছেন তারা নিজেদের ছবি দেখে তদন্তসংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করাতে সহায়তা করেছেন। কিন্তু খুনের ঘটনা ঘটে দুপুর আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে। সমস্যা হচ্ছে, সিসিটিভিতে সময় নির্ধারণী অপশন এলোমেলো দেখা যাচ্ছে। যে সময় খুন হয়েছে ওই সময়ের চেয়ে আরও দুই ঘণ্টা আগের সময় দেখানো হচ্ছে। আর ব্যাংক ৯টার সময় খুললেও সিসিটিভির চালুর সময় দেখানো হচ্ছে সকাল ৭টা। তখন থেকে তা রেকর্ড হচ্ছে, যা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের রীতিমতো বিস্মিত করে তুলেছে।
র্যাবের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক চালু থাকা অবস্থায় প্রতিদিনই সিসিটিভি চালু ছিল। আর এটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ম্যানেজারের নিজেরই অপারেট করার নিয়ম। কিন্তু অপারেটিং সিস্টেমে নিহত ব্যাংক ম্যানেজারের ঘনিষ্ঠ কেউ তদারক করতো কী না সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখন কেউ এটি অপারেট করার বিষয় স্বীকারও করছে না।
র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেছেন, আমাদের দেশে একের পর এক ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু অনেক ব্যাংকের শাখার ভেতরে ও বাইরে সিসি ক্যামেরা নেই। আশুলিয়ার কাঠগড়ার কমার্স ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ রহস্য নিয়ে জানতে চাইলে র্যাবের এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংকের ভেতরে কেউ সিসিটিভি অপারেট করতো। তিনিই এই গোলমাল করেছে। আর এ কারণে ঘটনার ফুটেজ ধারণ হয়নি। কিন্তু এর আগে ও পেছনে সিসিটিভির ফুটেজ আছে। এর ফলে ব্যাংকের ভেতরে যে ডাকাতি ও খুনের সঙ্গে জড়িত কেউ ছিল তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এখন তাকে খুঁজে বের করা তদন্তের বিষয়।
বিদেশে সিসি ক্যামেরা নিয়ে আধুনিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, কাঠগড়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে যারা ডাকাতির জন্য ভেতরে প্রবেশ করেছিল তাদের কোনো মুখোশ ছিল না। আর ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা প্রত্যক্ষদর্শী তারা ডাকাতদের দেখেছেন। কিন্তু চাঞ্চল্যকর বিষয় হল সারা দিনে সিসিটিভির ফুটেজ ধারণ হলে ঘটনার আগের ও পেছনের ফুটেজ নেই। তিনি বলেন, এ কাজটি যারা করেছে তারা আগে থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বিশেষ করে তিনি নিহত ব্যাংক ম্যানেজারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বা আইটি বিষয়ে তার জানাশোনা ছিল।
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, পাওয়া ফুটেজে আগের ধারণ করা ভিডিও আছে। ঘটনার দিনেরও আছে, আগের দিনেরও আছে। কিন্তু সংঘটিত হওয়ার অপরাধের চিত্র নেই। তবে মেঝেতে রক্তের দাগের ফুটেজ আছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ব্যাংকের ভেতরের কোনো এক্সপার্ট জড়িত আছে।
র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ যুগান্তরকে বলেন, ‘ঘটনাটি পুরো রহস্যজনক। যে সিসিটিভি চালু ছিল এবং ঘটনার পরের রক্তের চিত্র দেখাচ্ছে তা হলে ঘটনার সময়কার চিত্র থাকবে না কেন? এটি প্রশ্নের বিষয়। তিনি বলেন, অপরাধীরা আগে থেকেই কৌশল নির্ধারণ করেছে যেহেতু ব্যাংকে মুখোশ পরে প্রবেশ করলে ধরা পড়ার আশংকা থাকবে তাই তারা আগে থেকে আটঘাট বেঁধে এ অপারেশনে অংশ নেয়। এতে করে ব্যাংকের কারও সংশ্লিষ্টতা যে আছে তা সন্দেহ করাই স্বাভাবিক।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার খবর শুনে আমরা যখন ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করি তখনও সিসিটিভি চিত্র ধারণ করছিল। কে প্রবেশ করছে কে বের হচ্ছে সবই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এটি স্টোরেজ হচ্ছিল কি না সেটি এখন প্রযুক্তিগত তদন্তের বিষয়। তিনি বলেন, খুন ও ডাকাতের সঙ্গে ভেতরে ও বাইরের সদস্যরা এতটাই দক্ষতা নিয়ে সম্পন্ন করেছে যে এ কারণে তারা ওই সময়টি ব্ল্যাঙ্ক করে দিয়েছে। আর সেখানেই রহস্য লুকিয়ে আছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের আশুলিয়ার কাঠগড়া শাখায় ডাকাতদের তাণ্ডবে ওই শাখার ব্যবস্থাপক ওয়ালিউল্লাহসহ আটজনের প্রাণহানি ঘটে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে আরও একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এ ঘটনায় ৯ জনের প্রাণ যায়। ঘটনার দিন সাইফুল ও বোরহান এবং শুক্রবার ভোরে বাবুল সর্দার ও মিন্টু প্রধান নামে দুই জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করে। ঢাকা জেলা পুলিশ জানায়, এরাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জে ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেন, শুধু ডাকাতি নয় দেশের স্থিতিশীল অবস্থাকে অস্থিতিশীল করতে জঙ্গিরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের সবাইকে খুঁজে বের করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঝিমিয়ে পড়া জঙ্গিরা নিজের শক্তি জানান দিতে এবং ফান্ড জোগাড় করতে এ নারকীয় হত্যাকাণ্ড ও ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বোমা সরঞ্জাম, জিহাদি বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের ধারণা, ব্যাংকের ভেতরে কেউ আগে থেকেই কলকাঠি নেড়েছে। তদন্তে এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এদিকে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার জঙ্গিরা স্বীকার করেছেন, তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। রেকি করা ছুরি চালানোর জন্য একজন দক্ষ মুজাহিদ তাদের প্রশিক্ষণ দিতেন।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদেক মো. সোহেল ঘটনার দিন যুগান্তরকে বলেন, যে প্রতিষ্ঠান সিসিটিভি সংযোগ দিয়েছে তারা মনিটরিং করতো। তিনি বলেন, ওই শাখা থেকে পুলিশ সিসিটিভি জব্দ করেছে। তারা বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল জানান, ব্যাংক শাখাটির আটটি সিসি ক্যামেরা জব্দ করা আছে। তা থেকে কোনো ধরনের ফুটেজ তারা বের করতে পারেননি। আজ আদালতের আদেশ নিয়ে ক্যামেরায় থাকা ফুটেজ সিআইডি বা বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের কাছে হস্তান্তর করে রহস্য উদঘাটনের সহায়তা নেয়া হবে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একজন কর্মকর্তা বলেন, ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে বড় ক্লু হচ্ছে, ‘সিসিটিভি রহস্য’। তদন্ত এখান থেকে শুরু করা হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে। তখন দেখা যাবে ব্যাংকের শাখায় বসেই ঘটনার কলকাঠি নাড়া হয়েছিল।
জানা গেছে, সার্ভিস ওয়ান নামে যে প্রতিষ্ঠান ওই শাখায় সিসিটিভির সংযোগ দিয়েছে তারাও বিস্মিত হয়েছে। কারণ, মার্চ মাস থেকে সময় নির্ধারণী অপশনে জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা বলেন, যে কারও হাতেই ওই ঘটনার সময় জটিলতা করা হয়েছে।
যুগান্তর স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী জানান, ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার আটজনকে আসামি করে টঙ্গী মডেল থানায় মামলা করেছে পুলিশ। আশুলিয়া থানার ওসি তদন্ত দীপক চন্দ্র সাহা ওই মামলার বাদী হয়েছেন। আসামিরা হলেন- মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাসকান্দি গ্রামের মৃত এসকান্দার সর্দারের ছেলে মো. বাবুল সর্দার, মানিকগঞ্জ শিবালয় উপজেলার ব্রাহ্মণকুল গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মিন্টু প্রধান, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শংকরপাশা গ্রামের আবুল কালাম মৃধার ছেলে বোরহান উদ্দিন, ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থানার ধুকুরিয়া গ্রামের আনোয়ার ওরফে চানমিয়ার ছেলে সাইফুল ওরফে আল-আমিন। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা পিতা ও ঠিকানাবিহীন আরও ৪ আসামি হলেন- মাহফুজ, পলাশ, সুমন, হাফিজ। শেষের এ চার আসামি টঙ্গীর খালেকের বাড়ির ভাড়াটে ছিলেন।
কোর্ট রিপোর্টার জানান, আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত দুই ডাকাতের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
এরা হলেন- বাবুল সর্দার ও মিন্টু প্রধান। শনিবার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শহিদুল ইসলাম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ডাকাতিসহ হত্যার অভিযোগে দায়ের করা এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) দীপক চন্দ্র সাহা ১০ দিন রিমান্ড আবেদন করেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যারা ব্যাংকে প্রবেশ করেছেন তারা নিজেদের ছবি দেখে তদন্তসংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করাতে সহায়তা করেছেন। কিন্তু খুনের ঘটনা ঘটে দুপুর আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে। সমস্যা হচ্ছে, সিসিটিভিতে সময় নির্ধারণী অপশন এলোমেলো দেখা যাচ্ছে। যে সময় খুন হয়েছে ওই সময়ের চেয়ে আরও দুই ঘণ্টা আগের সময় দেখানো হচ্ছে। আর ব্যাংক ৯টার সময় খুললেও সিসিটিভির চালুর সময় দেখানো হচ্ছে সকাল ৭টা। তখন থেকে তা রেকর্ড হচ্ছে, যা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের রীতিমতো বিস্মিত করে তুলেছে।
র্যাবের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক চালু থাকা অবস্থায় প্রতিদিনই সিসিটিভি চালু ছিল। আর এটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ম্যানেজারের নিজেরই অপারেট করার নিয়ম। কিন্তু অপারেটিং সিস্টেমে নিহত ব্যাংক ম্যানেজারের ঘনিষ্ঠ কেউ তদারক করতো কী না সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখন কেউ এটি অপারেট করার বিষয় স্বীকারও করছে না।
র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেছেন, আমাদের দেশে একের পর এক ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু অনেক ব্যাংকের শাখার ভেতরে ও বাইরে সিসি ক্যামেরা নেই। আশুলিয়ার কাঠগড়ার কমার্স ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ রহস্য নিয়ে জানতে চাইলে র্যাবের এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংকের ভেতরে কেউ সিসিটিভি অপারেট করতো। তিনিই এই গোলমাল করেছে। আর এ কারণে ঘটনার ফুটেজ ধারণ হয়নি। কিন্তু এর আগে ও পেছনে সিসিটিভির ফুটেজ আছে। এর ফলে ব্যাংকের ভেতরে যে ডাকাতি ও খুনের সঙ্গে জড়িত কেউ ছিল তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এখন তাকে খুঁজে বের করা তদন্তের বিষয়।
বিদেশে সিসি ক্যামেরা নিয়ে আধুনিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, কাঠগড়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে যারা ডাকাতির জন্য ভেতরে প্রবেশ করেছিল তাদের কোনো মুখোশ ছিল না। আর ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা প্রত্যক্ষদর্শী তারা ডাকাতদের দেখেছেন। কিন্তু চাঞ্চল্যকর বিষয় হল সারা দিনে সিসিটিভির ফুটেজ ধারণ হলে ঘটনার আগের ও পেছনের ফুটেজ নেই। তিনি বলেন, এ কাজটি যারা করেছে তারা আগে থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বিশেষ করে তিনি নিহত ব্যাংক ম্যানেজারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বা আইটি বিষয়ে তার জানাশোনা ছিল।
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, পাওয়া ফুটেজে আগের ধারণ করা ভিডিও আছে। ঘটনার দিনেরও আছে, আগের দিনেরও আছে। কিন্তু সংঘটিত হওয়ার অপরাধের চিত্র নেই। তবে মেঝেতে রক্তের দাগের ফুটেজ আছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ব্যাংকের ভেতরের কোনো এক্সপার্ট জড়িত আছে।
র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ যুগান্তরকে বলেন, ‘ঘটনাটি পুরো রহস্যজনক। যে সিসিটিভি চালু ছিল এবং ঘটনার পরের রক্তের চিত্র দেখাচ্ছে তা হলে ঘটনার সময়কার চিত্র থাকবে না কেন? এটি প্রশ্নের বিষয়। তিনি বলেন, অপরাধীরা আগে থেকেই কৌশল নির্ধারণ করেছে যেহেতু ব্যাংকে মুখোশ পরে প্রবেশ করলে ধরা পড়ার আশংকা থাকবে তাই তারা আগে থেকে আটঘাট বেঁধে এ অপারেশনে অংশ নেয়। এতে করে ব্যাংকের কারও সংশ্লিষ্টতা যে আছে তা সন্দেহ করাই স্বাভাবিক।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার খবর শুনে আমরা যখন ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করি তখনও সিসিটিভি চিত্র ধারণ করছিল। কে প্রবেশ করছে কে বের হচ্ছে সবই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এটি স্টোরেজ হচ্ছিল কি না সেটি এখন প্রযুক্তিগত তদন্তের বিষয়। তিনি বলেন, খুন ও ডাকাতের সঙ্গে ভেতরে ও বাইরের সদস্যরা এতটাই দক্ষতা নিয়ে সম্পন্ন করেছে যে এ কারণে তারা ওই সময়টি ব্ল্যাঙ্ক করে দিয়েছে। আর সেখানেই রহস্য লুকিয়ে আছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের আশুলিয়ার কাঠগড়া শাখায় ডাকাতদের তাণ্ডবে ওই শাখার ব্যবস্থাপক ওয়ালিউল্লাহসহ আটজনের প্রাণহানি ঘটে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে আরও একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এ ঘটনায় ৯ জনের প্রাণ যায়। ঘটনার দিন সাইফুল ও বোরহান এবং শুক্রবার ভোরে বাবুল সর্দার ও মিন্টু প্রধান নামে দুই জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করে। ঢাকা জেলা পুলিশ জানায়, এরাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জে ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেন, শুধু ডাকাতি নয় দেশের স্থিতিশীল অবস্থাকে অস্থিতিশীল করতে জঙ্গিরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের সবাইকে খুঁজে বের করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঝিমিয়ে পড়া জঙ্গিরা নিজের শক্তি জানান দিতে এবং ফান্ড জোগাড় করতে এ নারকীয় হত্যাকাণ্ড ও ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বোমা সরঞ্জাম, জিহাদি বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের ধারণা, ব্যাংকের ভেতরে কেউ আগে থেকেই কলকাঠি নেড়েছে। তদন্তে এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এদিকে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার জঙ্গিরা স্বীকার করেছেন, তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। রেকি করা ছুরি চালানোর জন্য একজন দক্ষ মুজাহিদ তাদের প্রশিক্ষণ দিতেন।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদেক মো. সোহেল ঘটনার দিন যুগান্তরকে বলেন, যে প্রতিষ্ঠান সিসিটিভি সংযোগ দিয়েছে তারা মনিটরিং করতো। তিনি বলেন, ওই শাখা থেকে পুলিশ সিসিটিভি জব্দ করেছে। তারা বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল জানান, ব্যাংক শাখাটির আটটি সিসি ক্যামেরা জব্দ করা আছে। তা থেকে কোনো ধরনের ফুটেজ তারা বের করতে পারেননি। আজ আদালতের আদেশ নিয়ে ক্যামেরায় থাকা ফুটেজ সিআইডি বা বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের কাছে হস্তান্তর করে রহস্য উদঘাটনের সহায়তা নেয়া হবে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একজন কর্মকর্তা বলেন, ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে বড় ক্লু হচ্ছে, ‘সিসিটিভি রহস্য’। তদন্ত এখান থেকে শুরু করা হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে। তখন দেখা যাবে ব্যাংকের শাখায় বসেই ঘটনার কলকাঠি নাড়া হয়েছিল।
জানা গেছে, সার্ভিস ওয়ান নামে যে প্রতিষ্ঠান ওই শাখায় সিসিটিভির সংযোগ দিয়েছে তারাও বিস্মিত হয়েছে। কারণ, মার্চ মাস থেকে সময় নির্ধারণী অপশনে জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা বলেন, যে কারও হাতেই ওই ঘটনার সময় জটিলতা করা হয়েছে।
যুগান্তর স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী জানান, ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার আটজনকে আসামি করে টঙ্গী মডেল থানায় মামলা করেছে পুলিশ। আশুলিয়া থানার ওসি তদন্ত দীপক চন্দ্র সাহা ওই মামলার বাদী হয়েছেন। আসামিরা হলেন- মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাসকান্দি গ্রামের মৃত এসকান্দার সর্দারের ছেলে মো. বাবুল সর্দার, মানিকগঞ্জ শিবালয় উপজেলার ব্রাহ্মণকুল গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মিন্টু প্রধান, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শংকরপাশা গ্রামের আবুল কালাম মৃধার ছেলে বোরহান উদ্দিন, ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থানার ধুকুরিয়া গ্রামের আনোয়ার ওরফে চানমিয়ার ছেলে সাইফুল ওরফে আল-আমিন। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা পিতা ও ঠিকানাবিহীন আরও ৪ আসামি হলেন- মাহফুজ, পলাশ, সুমন, হাফিজ। শেষের এ চার আসামি টঙ্গীর খালেকের বাড়ির ভাড়াটে ছিলেন।
কোর্ট রিপোর্টার জানান, আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত দুই ডাকাতের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
এরা হলেন- বাবুল সর্দার ও মিন্টু প্রধান। শনিবার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শহিদুল ইসলাম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ডাকাতিসহ হত্যার অভিযোগে দায়ের করা এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) দীপক চন্দ্র সাহা ১০ দিন রিমান্ড আবেদন করেন।
No comments