কিশোরীর ঘরের দরজায় বিয়ের তারিখ লেখা! by সুমন মোল্লা
গ্রামের এক মাকে তাঁর মেয়ের বিয়ের বয়স হওয়ার তারিখ মনে করিয়ে দিচ্ছেন রুপালি বেগম (বাঁ থেকে তৃতীয়)। সঙ্গে কিশোরীরা l ছবি: প্রথম আলো |
কিশোরী
লাবনী আক্তারের মা-বাবা জানেন, তাঁদের মেয়ের বিয়ের বয়স হতে এখনো দুই বছর
এক মাস বাকি। ২০১৭ সালের ১৪ মের আগে লাবনীর বিয়ে নয়। মেয়েকে ২০১৮ সালের ৭
আগস্টের আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো যাবে না, জানেন জুয়েনা আক্তারের
মা-বাবাও। তাঁরা এখন জানেন এর আগে বিয়ে দেওয়া বেআইনি।
এই চিত্র ছোট্ট গ্রাম কবিরখান্দার। কিশোরগঞ্জের হাওরপ্রধান অষ্টগ্রাম উপজেলার পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের একটি গ্রাম এটি। বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ আর বিশাল জলরাশিবেষ্টিত।
এই গ্রামের মেয়েদের বিয়ের উপযুক্ত বয়স হওয়ার দিনটি এখন ঘরে ঝোলানো ক্যালেন্ডারের পাতায়, নয়তো ঘরের দরজায় লেখা আছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই দিনক্ষণ নির্ধারণের কাজটি করে চলেছেন ওই গ্রামেরই রুপালি আক্তার (৩২)। মেয়েশিশুদের জন্মসনদ দেখে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার দিনটি এভাবে নির্ধারণ করে দেন রুপালি। যাদের জন্মসনদ নেই, তাদের অভিভাবকের কাছ থেকে সম্ভাব্য জন্মতারিখ জেনে তারিখ ঠিক করে দেন তিনি। তাঁর এ কাজের ফলে কবিরখান্দা ও এর আশপাশের গ্রামে বাল্যবিবাহ কমে যাচ্ছে।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির এই অভিনব সংগ্রাম একসময় রুপালি একাই চালিয়ে গেছেন। তবে এখন আর একা নন তিনি। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন সমাজের সচেতন ব্যক্তি ও স্থানীয় কিশোরীরা।
রুপালি কবিরখান্দা গ্রামেরই মেয়ে। তাঁর স্বামীর বাড়িও এই গ্রামে। বাবা গেদু মিয়া কৃষিশ্রমিক আর মা মরিয়ম নেছা গৃহিণী। মা-বাবার চাপাচাপিতে নিজের অমতে রুপালির যখন বিয়ে হয়, তখন তাঁর বয়স সবে ১২ পেরিয়েছে। পড়ছিলেন অষ্টম শ্রেণিতে। বিয়ের পর আর পড়াশোনা হয়নি। বাল্যবিবাহের কারণে দাম্পত্য জীবনে বোঝাপড়ার অভাব ছিল। সুখের ঘাটতি থাকলেও সংসার ছেড়ে আসেননি রুপালি। এরই মধ্যে তিনটি কন্যাসন্তানের মা হন। সেই থেকে রুপালি প্রতিজ্ঞা করেন, আর যাই হোক, নিজের গ্রামে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে।
বছর দশেক আগে কাজে নেমে পড়েন রুপালি। নিজেই ঠিক করে নেন কর্মপন্থা। রুপালি জানালেন, ‘প্রতিবছর গ্রামের কিশোরীর সংখ্যা গণনা করি। এ বছর ৯৮ জন কিশোরীর তালিকা করেছি। সংখ্যা ঠিক হলে অভিভাবকদের কাছ থেকে জন্মতারিখ জেনে নিই। যাদের জন্মসনদ নেই, তাদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জন্মের কাছাকাছি দিন বের করি। তারপর হিসাবে বসি। কোন সালের কত তারিখে মেয়েটির ১৮ বছর পূর্ণ হবে। হিসাব থেকে বের হওয়া তারিখটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিশোরী ও তার অভিভাবককে জানিয়ে আসি। বলি, এর আগে বিয়ে-ভাবনা মাথায় আনা যাবে না।’
রুপালি বলেন, ‘দিনক্ষণটি যেন বাবা-মায়েরা ভুলে না যায়, সেই কারণে ঘরের থাকা ক্যালেন্ডারের পাতায়, দরজায় কিংবা খাতায় লিখে দিয়ে আসি। আর নিজের কাছে থাকা খাতায় তা সংরক্ষণ করি।’
এরপর ঘুরে ঘুরে ওই সব পরিবারে যান রুপালি। তারিখটি মনে আছে কি না, যাচাই করেন। যারা মুখস্থ বলে দিতে পারেন, সেসব অভিভাবককে ধন্যবাদ জানান। যাঁরা বলতে পারেন না, নিজের খাতা দেখে অভিভাবকদের সেই তারিখটি মনে করিয়ে দিয়ে আসেন।
রুপালি মাসে অন্তত দুবার গ্রামে বের হন। এখন তাঁর সঙ্গে থাকেন গ্রামের কিশোরীরাও। ঘরে ঘরে গিয়ে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে বলেন। বয়স হওয়ার আগেই কেউ মেয়ে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন শুনলে ছুটে যান। তাঁদের বোঝান।
তবে শুরুতে রুপালির এই কাজ সহজে গ্রহণ করেনি হাওরবেষ্টিত গ্রামটির মানুষেরা। কেউ কেউ বাঁকা চোখেও দেখেছেন। এখন তাঁরাও বুঝতে পারছেন, রুপালি যা করছেন তা সমাজের ভালোর জন্যই করছেন। এখন রুপালি সবার সহযোগিতাই পাচ্ছেন।
উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে কবিরখান্দা গ্রাম। সম্প্রতি গ্রামটিতে গিয়ে রুপালির প্রসঙ্গ তুলতেই তৌহিদ মিয়া (৫৫) নামের একজন বললেন, ‘রুপালি থাকতে ১৮ বছরের আগে কোনো মাইয়ারে বিয়া দেওয়ার জু (সুযোগ) নাই।’ তিনি জানান, বাল্যবিবাহ দেওয়ার অপরাধে অভিভাবকের কপালে যে জেল-জরিমানা জুটতে পারে, সেই আইনটিও এখন গ্রামের সবার জানা।
কথা হয় গৃহবধূ মিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি কিশোরী জুয়েনার মা। মিনা বললেন, ‘কম বয়সে বিয়া দিলে মাইয়ার অবস্থা শেষ, পোলার জীবনও ফিনিস (ধ্বংস)।’ কে বলল এ কথা—এমন প্রশ্নে মিনার জবাব, ‘কেডা আবার, রুপালি কইছে।’
কিশোরী রুনার খালা লাবনী জানালেন, রুনার বিয়ের কথা ভাবছিলেন তাঁরা। পাত্রও প্রায় ঠিক হয়েছিল। জানতে পেরে রুপালি এসে হাজির। বোঝালেন বাল্যবিবাহের কুফল। বড় ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বুঝতে পেরে তাঁরা বিয়ে থেকে বিরত থাকেন। এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ১৮ বছরের আগে আর রুনার বিয়ে নয়।
অষ্টগ্রাম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাজমহল বেগম বলে, ‘রুপালি আপা আছে, চিন্তা করি না। নিজের এবং অন্যের বাল্যবিবাহ ঠেকাতে আমরাই এখন যথেষ্ট।’
দুই মাসে চার কিশোরীকে রক্ষা: ইদ্রিস মিয়ার মেয়ে রিমা বেগম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। সম্প্রতি তার বিয়ে ঠিক হয়। শেষে রুপালির হস্তক্ষেপে রক্ষা পায়। জেএসসি পরীক্ষা চলার সময় পাউন গ্রামের তানিয়া বেগমের বিয়ে ঠিক হলেও শেষে তাকে আর ‘কবুল’ বলতে হয়নি। ফরাজিহাটির অষ্টম শ্রেণির সাবানা ও দেউন্দিদীঘির অষ্টম শ্রেণির আলেয়া বেগমও বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে রক্ষা পায় রুপালির উদ্যোগে।
তবে রুপালির দুঃখ টিলাহাটি গ্রামের পাকিজা বেগম নামে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর জন্য। তার বিয়ে প্রথমে ঠেকাতে পারলেও শেষরক্ষা করতে পারেননি। অভিভাবকেরা গোপনে অন্য গ্রামে নিয়ে তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে রুপালির এই সংগ্রামের বিষয়টি নজর কাড়ে উপজেলা প্রশাসন ও কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার। ইদানীং উপজেলা প্রশাসন ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো বিভিন্ন সভা ও কর্মশালায় রুপালির অভিজ্ঞতা শোনানোর ব্যবস্থা করে।
রুপালি আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাল্যবিবাহ যে অভিশাপ, তা নিজের জীবন থেকে শিখেছি। এই কারণে মনে হয়েছে, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। বাকি জীবন এই কাজটিই করে যেতে চাই।’
রুপালির স্বামী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নজব আলী। তিনি বলেন, ‘রুপালির কাজকে গ্রামের মানুষ ভালো বলে, শুনতে ভালো লাগে।’ নজব স্বীকার করেন, বাল্যবিবাহের কারণে দাম্পত্য জীবন শুরুর দিকে তাঁদের বোঝাপড়ায় সমস্যা হতো।
পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রিপন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রুপালি আমাদের সমাজের অন্ধকার দূর করছে। তাঁর কারণে এই এলাকায় বাল্যবিবাহ অনেক কমতেছে।’
অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন মনে করেন, রুপালি তাঁর কাজ দিয়ে হাওরের বাতিঘর হয়ে উঠছেন।
এই চিত্র ছোট্ট গ্রাম কবিরখান্দার। কিশোরগঞ্জের হাওরপ্রধান অষ্টগ্রাম উপজেলার পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের একটি গ্রাম এটি। বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ আর বিশাল জলরাশিবেষ্টিত।
এই গ্রামের মেয়েদের বিয়ের উপযুক্ত বয়স হওয়ার দিনটি এখন ঘরে ঝোলানো ক্যালেন্ডারের পাতায়, নয়তো ঘরের দরজায় লেখা আছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই দিনক্ষণ নির্ধারণের কাজটি করে চলেছেন ওই গ্রামেরই রুপালি আক্তার (৩২)। মেয়েশিশুদের জন্মসনদ দেখে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার দিনটি এভাবে নির্ধারণ করে দেন রুপালি। যাদের জন্মসনদ নেই, তাদের অভিভাবকের কাছ থেকে সম্ভাব্য জন্মতারিখ জেনে তারিখ ঠিক করে দেন তিনি। তাঁর এ কাজের ফলে কবিরখান্দা ও এর আশপাশের গ্রামে বাল্যবিবাহ কমে যাচ্ছে।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির এই অভিনব সংগ্রাম একসময় রুপালি একাই চালিয়ে গেছেন। তবে এখন আর একা নন তিনি। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন সমাজের সচেতন ব্যক্তি ও স্থানীয় কিশোরীরা।
রুপালি কবিরখান্দা গ্রামেরই মেয়ে। তাঁর স্বামীর বাড়িও এই গ্রামে। বাবা গেদু মিয়া কৃষিশ্রমিক আর মা মরিয়ম নেছা গৃহিণী। মা-বাবার চাপাচাপিতে নিজের অমতে রুপালির যখন বিয়ে হয়, তখন তাঁর বয়স সবে ১২ পেরিয়েছে। পড়ছিলেন অষ্টম শ্রেণিতে। বিয়ের পর আর পড়াশোনা হয়নি। বাল্যবিবাহের কারণে দাম্পত্য জীবনে বোঝাপড়ার অভাব ছিল। সুখের ঘাটতি থাকলেও সংসার ছেড়ে আসেননি রুপালি। এরই মধ্যে তিনটি কন্যাসন্তানের মা হন। সেই থেকে রুপালি প্রতিজ্ঞা করেন, আর যাই হোক, নিজের গ্রামে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে।
বছর দশেক আগে কাজে নেমে পড়েন রুপালি। নিজেই ঠিক করে নেন কর্মপন্থা। রুপালি জানালেন, ‘প্রতিবছর গ্রামের কিশোরীর সংখ্যা গণনা করি। এ বছর ৯৮ জন কিশোরীর তালিকা করেছি। সংখ্যা ঠিক হলে অভিভাবকদের কাছ থেকে জন্মতারিখ জেনে নিই। যাদের জন্মসনদ নেই, তাদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জন্মের কাছাকাছি দিন বের করি। তারপর হিসাবে বসি। কোন সালের কত তারিখে মেয়েটির ১৮ বছর পূর্ণ হবে। হিসাব থেকে বের হওয়া তারিখটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিশোরী ও তার অভিভাবককে জানিয়ে আসি। বলি, এর আগে বিয়ে-ভাবনা মাথায় আনা যাবে না।’
রুপালি বলেন, ‘দিনক্ষণটি যেন বাবা-মায়েরা ভুলে না যায়, সেই কারণে ঘরের থাকা ক্যালেন্ডারের পাতায়, দরজায় কিংবা খাতায় লিখে দিয়ে আসি। আর নিজের কাছে থাকা খাতায় তা সংরক্ষণ করি।’
এরপর ঘুরে ঘুরে ওই সব পরিবারে যান রুপালি। তারিখটি মনে আছে কি না, যাচাই করেন। যারা মুখস্থ বলে দিতে পারেন, সেসব অভিভাবককে ধন্যবাদ জানান। যাঁরা বলতে পারেন না, নিজের খাতা দেখে অভিভাবকদের সেই তারিখটি মনে করিয়ে দিয়ে আসেন।
রুপালি মাসে অন্তত দুবার গ্রামে বের হন। এখন তাঁর সঙ্গে থাকেন গ্রামের কিশোরীরাও। ঘরে ঘরে গিয়ে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে বলেন। বয়স হওয়ার আগেই কেউ মেয়ে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন শুনলে ছুটে যান। তাঁদের বোঝান।
তবে শুরুতে রুপালির এই কাজ সহজে গ্রহণ করেনি হাওরবেষ্টিত গ্রামটির মানুষেরা। কেউ কেউ বাঁকা চোখেও দেখেছেন। এখন তাঁরাও বুঝতে পারছেন, রুপালি যা করছেন তা সমাজের ভালোর জন্যই করছেন। এখন রুপালি সবার সহযোগিতাই পাচ্ছেন।
উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে কবিরখান্দা গ্রাম। সম্প্রতি গ্রামটিতে গিয়ে রুপালির প্রসঙ্গ তুলতেই তৌহিদ মিয়া (৫৫) নামের একজন বললেন, ‘রুপালি থাকতে ১৮ বছরের আগে কোনো মাইয়ারে বিয়া দেওয়ার জু (সুযোগ) নাই।’ তিনি জানান, বাল্যবিবাহ দেওয়ার অপরাধে অভিভাবকের কপালে যে জেল-জরিমানা জুটতে পারে, সেই আইনটিও এখন গ্রামের সবার জানা।
কথা হয় গৃহবধূ মিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি কিশোরী জুয়েনার মা। মিনা বললেন, ‘কম বয়সে বিয়া দিলে মাইয়ার অবস্থা শেষ, পোলার জীবনও ফিনিস (ধ্বংস)।’ কে বলল এ কথা—এমন প্রশ্নে মিনার জবাব, ‘কেডা আবার, রুপালি কইছে।’
কিশোরী রুনার খালা লাবনী জানালেন, রুনার বিয়ের কথা ভাবছিলেন তাঁরা। পাত্রও প্রায় ঠিক হয়েছিল। জানতে পেরে রুপালি এসে হাজির। বোঝালেন বাল্যবিবাহের কুফল। বড় ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বুঝতে পেরে তাঁরা বিয়ে থেকে বিরত থাকেন। এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ১৮ বছরের আগে আর রুনার বিয়ে নয়।
অষ্টগ্রাম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাজমহল বেগম বলে, ‘রুপালি আপা আছে, চিন্তা করি না। নিজের এবং অন্যের বাল্যবিবাহ ঠেকাতে আমরাই এখন যথেষ্ট।’
দুই মাসে চার কিশোরীকে রক্ষা: ইদ্রিস মিয়ার মেয়ে রিমা বেগম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। সম্প্রতি তার বিয়ে ঠিক হয়। শেষে রুপালির হস্তক্ষেপে রক্ষা পায়। জেএসসি পরীক্ষা চলার সময় পাউন গ্রামের তানিয়া বেগমের বিয়ে ঠিক হলেও শেষে তাকে আর ‘কবুল’ বলতে হয়নি। ফরাজিহাটির অষ্টম শ্রেণির সাবানা ও দেউন্দিদীঘির অষ্টম শ্রেণির আলেয়া বেগমও বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে রক্ষা পায় রুপালির উদ্যোগে।
তবে রুপালির দুঃখ টিলাহাটি গ্রামের পাকিজা বেগম নামে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর জন্য। তার বিয়ে প্রথমে ঠেকাতে পারলেও শেষরক্ষা করতে পারেননি। অভিভাবকেরা গোপনে অন্য গ্রামে নিয়ে তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে রুপালির এই সংগ্রামের বিষয়টি নজর কাড়ে উপজেলা প্রশাসন ও কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার। ইদানীং উপজেলা প্রশাসন ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো বিভিন্ন সভা ও কর্মশালায় রুপালির অভিজ্ঞতা শোনানোর ব্যবস্থা করে।
রুপালি আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাল্যবিবাহ যে অভিশাপ, তা নিজের জীবন থেকে শিখেছি। এই কারণে মনে হয়েছে, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। বাকি জীবন এই কাজটিই করে যেতে চাই।’
রুপালির স্বামী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নজব আলী। তিনি বলেন, ‘রুপালির কাজকে গ্রামের মানুষ ভালো বলে, শুনতে ভালো লাগে।’ নজব স্বীকার করেন, বাল্যবিবাহের কারণে দাম্পত্য জীবন শুরুর দিকে তাঁদের বোঝাপড়ায় সমস্যা হতো।
পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রিপন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রুপালি আমাদের সমাজের অন্ধকার দূর করছে। তাঁর কারণে এই এলাকায় বাল্যবিবাহ অনেক কমতেছে।’
অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন মনে করেন, রুপালি তাঁর কাজ দিয়ে হাওরের বাতিঘর হয়ে উঠছেন।
No comments