ধুলোয় মিশে গেল নেপালের ঐতিহ্য
নান্দনিক মহত্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল হাজার বছরের সাংস্কৃতিক নিদর্শন। বুক ফুলিয়ে ঘোষণা করছিল আঞ্চলিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য। কিন্তু মুহূর্তেই বিধ্বস্ত সেই সমৃদ্ধ রাজ্য। আকাশে উদ্ধত সেই উঁচু মিনার এখন ভূপাতিত। কয়েক সেকেন্ডের তাণ্ডবে ঝুপঝুপিয়ে ঝরে পড়ল সভ্যতার সাক্ষী বহনকারী স্থাপনা। ভূমিকম্প কেবল হাজার হাজার মানুষকে কবরস্থ করেনি, পুঁতে ফেলেছে মানুষের ইতিহাস। রোববার এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বাদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত নেপালের ঐতিহাসিক ধর্মীয় মন্দির ও ঐতিহ্যবাহী ভাস্কর্যগুলো একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। দেশটির প্রাচীন রাজাদের শাসনামলের স্মৃতি বহন করছিল এসব স্থাপনা। নেপালের ঐতিহাসিক ধারাহারা টাওয়ারটি এখন যেন একটি বেদি। দুর্বার স্কয়ারে ২০০ সর্পিল সিঁড়িবিশিষ্ট ৯ তলা এ টাওয়ারটি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ।
কিন্তু তা যেন মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। এর ধ্বংসস্তূপই হয়েছিল কয়েকশ’ মানুষের মৃত্যুর ফাঁদ। কাঠমান্ডুর দরবার স্কয়ার দেখে আর চেনার উপায় নেই। এতদিন যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল ৫০ মিটার উঁচু ভীমসেন টাওয়ার বা ধারাহারা টাওয়ার, সেখানে খাড়া রয়েছে ১০ মিটারের একটি ভাঙা অংশ। ১৮৩২ সালে তৈরি এ মিনার ৭.৯ রিখটারের ভূমিকম্প বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারেনি। অন্তত ২০০ পর্যটক নিয়ে ভেঙে পড়েছে। বহুদিন বন্ধ থাকার পর মাত্র বছর দশেক হল এ মিনার দর্শকদের জন্য ফের খুলে দেয়া হয়েছিল। এখান থেকে কাঠমান্ডু উপত্যকার সৌন্দর্য্য যিনি দেখেছেন তিনি সারা জীবন তা মনে রাখবেন। কাঠমান্ডুরই বসন্তপুর দরবার স্কয়ার এলাকার প্রাচীন মন্দিরগুলোর অবস্থা ভালো নয়। এ অঞ্চলের প্রাচীনতম মন্দিরগুলো ১১ শতাব্দীতে তৈরি বলে দাবি করেন অনেকে। এ মন্দিরগুলো তৈরির কাজ মহারাজ শঙ্করদেবের আমলে তৈরি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। অনেকের দাবি শঙ্করদেব নন তার কয়েকশ বছর পর রত্নমল্ল এখানকার মন্দিরগুলো তৈরি করান। এখানকার বিখ্যাত হনুমানধোকা অঞ্চলে এক সময় নেপালের মল্ল ও শাহ বংশীয় রাজাদের বাসভবন ছিল। পরে এ অঞ্চলটির বেশিরভাগ ভবনকেই হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে একাধিক জাদুঘরও। এদিকে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনিতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট হওয়া যায়নি। কাঠমান্ডু থেকে ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমের এ স্থানে ২৬০০ বছর আগে বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেপালের ঐতিহাসিক এসব নিদর্শন আর পুরোপুরি মেরামত করা সম্ভব নয়। এর আগে ১৮৩৩ ও ১৯৩৪ সালে দুটো ভয়াবহ ভূমিকম্পে কাঠমান্ডু উপত্যাকার অনেক স্মৃতিস্তম্ভ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেগুলো আজও মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
No comments