ভারতের রাজ্যসভা টিভির টক শোতে বাংলাদেশ- সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ সংলাপ
ভারতের
সবচেয়ে বড় চাওয়া গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। কিভাবে সবার অংশগ্রহণে একটি
নির্বাচন করা যায় তা নিয়ে সংলাপের কথা হতে পারে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ
গণতন্ত্রের জন্য এই সংলাপ অত্যাবশ্যক। ভারতের দিক থেকে স্থিতিশীল,
গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি নির্দিষ্ট
রাজনৈতিক দলকে ঘিরে নিজস্ব প্রোপাগান্ডা নিয়ে ভারতের আচ্ছন্ন হওয়া উচিত হবে
না। এসব মত দিয়েছেন ভারতের বিশিষ্টজনরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশে
নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাই কমিশনার বীণা সিক্রি, সিনিয়র সাংবাদিক ভারত ভূষণ,
আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল, ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ
অ্যান্ড এনালাইসিস (আইডিএসএ)-এর ফেলো গবেষক শ্রুতি পাটনায়েক। সম্প্রতি
রাজ্যসভা টিভির দ্য বিগ শো’তে ‘পলিটিক্যাল টারময়েল ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক
আলোচনায় এসব কথা বলেন তারা। এতে তারা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক
পরিস্থিতি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন। বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার সরকার আইনগতভাবে বৈধ। তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিদেশী বিভিন্ন দেশ।
কিন্তু তার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও সমালোচনা করা হয়। বলা হয়, যেভাবেই দেখেন
এটা একদলীয় গণতন্ত্র। পার্লামেন্টে কথা বলার জন্য কোন বিরোধী দল নেই।
মিডিয়ায় কোন বিরোধিতা নেই। বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে
পার্লামেন্টের হাতে। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
ভিজুয়াল ও ইন্টারনেট মিডিয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী,
সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখার অনুমতি নেই। বন্ধুত্বপূর্ণ এই রাষ্ট্রে
বিরোধিতা করে কিছু বলার জায়গা নেই। ওই অনুষ্ঠানে কোন কোন বক্তা সরকারের
বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেন, গত নির্বাচনে যায় নি বিরোধীরা।
তাদেরকে নির্বাচনে আনা গেলে কার্যকর হতো গণতন্ত্র। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক
ছিলেন ইশান রাসেল। এতে বলা হয়, বিরোধীরা সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। তারা
নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছে। বারবারই তারা বাংলাদেশের বর্তমান সঙ্কট
থেকে উত্তরণে একটি সংলাপের ওপর জোর দেন। বলেন, সংলাপ হলো সক্রেটারিয়াল
মেথড। এটাই একমাত্র সমাধান। বাংলাদেশের মানুষ চায় গণতন্ত্র। তারা নির্বাচন
চায়। তারা ভোট দেয়ার অধিকার চায়। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ বেশ অজনপ্রিয় হয়েছে।
তারা ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। জনগণ তাদের
ভোটের অধিকার হারিয়েছে। নিচে ওই অনুষ্ঠানের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো:
ইশান রাসেল: বাংলাদেশে বিতর্কিত নির্বাচনের এক বছর পার হয়েছে। তা নিয়ে এ জাতির মধ্যে এখনও বিতর্ক চলছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার অফিসে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা। বিরোধী দলীয় কিছু সমর্থক নিহত হয়েছেন। বিরোধী দল সরকারের কাছে নতুন নির্বাচন দাবি করছে। কিন্তু পরিস্থিতি দিনকে দিন ক্রমশ ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়েই আমাদের অনুষ্ঠান ‘দ্য বিগ পিকচার’। এতে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাই কমিশনার বিনা সিক্রি। সিনিয়র সাংবাদিক ভারত ভূষণ। শ্রুতি পাটনায়েক, গবেষক আইডিএসএ। আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল। বাংলাদেশ থেকে যোগ দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক শামসুল আরেফিন। প্রথমেই আমি বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে যোগ দেব শামসুল আরেফিনের সঙ্গে।
প্রশ্ন: শামসুল, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে অবস্থানটা কি। এর কি কোন শেষ নেই?
শামসুল আরেফিন: আসলে গত বছর ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বিতর্ক চলছেই। এর কারণ, ওই নির্বাচনে অংশ নেয় নি বিএনপি। তারা বলছে, ওইদিন গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলেছিল, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকেই তারা নির্বাচন করবে। এরপর এক বছর পার হয়েছে। বিএনপি ৫ই জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করতে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু তারা ঢাকা শহর ও দেশের অন্য কোন স্থানে সভা করতে পারে নি। এদিন দুপুরের পর দলীয় অফিসে গিয়ে র্যালিতে যোগ দেয়ার কথা ছিল বেগম খালেদা জিয়ার। কিন্তু তাকে যেতে দেয়া হয় নি। তাকে আটকে রাখা হয় গুলশানের অফিসে। পুলিশ তাকে ঘেরাও করে রেখেছে। তিনি বাইরে বের হতে পারছেন না। ৫ই জানুয়ারি তিনি দুপুরের পর বের হতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাকে বাইরে যেতে অনুমতি দেয়া হয় নি। সেখানেই তিনি সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখেন। ঘোষণা করেন দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের অবরোধ। এ দিনে ঢাকায় খুব সংঘর্ষ হয় নি। তবে দেশের অন্যান্য স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। নিহত হয়েছেন তিন জন। প্রচুর মানুষ আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক যানবাহন। আন্তঃজেলা বাস, নৌযান চলাচল করে নি সারা দেশে। অবরোধ হিসেবে এসব পরিবহন বন্ধ করে দেয় সরকার। ৫ই জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রশ্ন: আমি এবার আসছি বীনা সিক্রির কাছে। এম্বাসেডর সিক্রি, আমি আপনার কাছে জানতে চাই এ সরকার কতটা বৈধ? বিরোধীরা নির্বাচনে অংশ নেয় নি। তাই ভারতেও এ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে। বিরোধীদের এমন দাবির পক্ষে কি কোন যুক্তি আছে?
বীণা সিক্রি: ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচন ছিল বাস্তবতা। আইনগতভাবে বর্তমান সরকার ৫ বছর মেয়াদের জন্য বৈধ। আমি কয়েকটি দিক থেকে বিষয়টি দেখতে চাই। গত বছর নির্বাচনের আগে-পরে ডিসেম্বর ২০১৩, সেপ্টেম্বর ২০১৩ জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল নির্বাচন ভণ্ডুল করার। তাদের দাবি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু এ সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে জাতীয় সংসদ। ওই সময়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। তারা বলেছিল, এ ব্যবস্থা সংবিধান পরিপন্থি। সংসদীয় গণতন্ত্রে কোন রাষ্ট্রের প্রধান কোন অনির্বাচিত ব্যক্তি হতে পারেন না। এটা একটি সাধারণ বিষয়। ওই সময়ে বিএনপি গিয়েছে বিশ্ব মিডিয়ায়, আমেরিকায়, যুক্তরাজ্যে, পশ্চিমা দেশে সমর্থন পাওয়ার জন্য, যাতে নির্বাচন না হয়। নির্বাচনে অংশ নিতে মুখিয়ে ছিল বিএনপি। একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার ছেলে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ না নিতে বলেন শেষ মুহূর্তে। তারা নির্বাচনে অংশ নিলে হয়তো জিতে যেত। তাই এখন ওই নির্বাচনের বৈধতার প্রশ্ন তুললে সেটা অতীতের ইস্যু হয়ে যাবে। সারা বিশ্ব এ নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে। শেখ হাসিনা গত এক বছরে চীন থেকে জাপান, যুক্তরাজ্য সহ অনেক দেশ সফর করেছেন। কেউই তার নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে নি। বাংলাদশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত খোলামেলাভাবে এ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছিল না। কেউ এ নিয়ে আর কথা বলে নি। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রয়োজন। এদিকেই নজর দেয়া উচিত। এই সংলাপ একটি নির্বাচন দেয়ার জন্য হতে পারে না। এ নির্বাচন শুধু হতে পারে ৫ বছর পরে। সংলাপ হতে পারে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা নিয়ে। তা হতে পারে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা নিয়ে, বুরে্যাক্রেসির বিরাজনীতিকরণ করা নিয়ে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে। এর মাধ্যমে জনগণকে একটি আস্থায় নিতে হবে যে, যখনই নির্বাচন হোক, সেটা যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেও হয়, তাহলে যথেষ্ট চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সেস থাকবে। নির্বাচন হতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। এসব ইস্যু খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, বাংলাদেশে কেউই এখন এত তাড়াতাড়ি আরেকটি নির্বাচন চায় না। কারণ, সহিসংতা ছড়ানো নিয়ে সবাই আতঙ্কিত। হাসিনা জারি করেছেন ১৪৪ ধারা। দমন করছেন যেকোন রকম বিক্ষোভ-সমাবেশ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে তার অফিসে আটক রাখায় ব্যাপক সোরগোল হচ্ছে। অন্যভাবে দেখা যেতে পারে- কোন বাস, কোন বোট ঢাকা আসতে পারে নি ৫ই জানুয়ারি। এসব মিলে ঢাকা একটি স্থবির শহরে পরিণত হয়। তাদের উচিত সহিংসতা পরিহার করা। সাধারণ মানুষ সহিংসতা চায় না। তাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য সংলাপ অত্যাবশ্যক।
প্রশ্ন: ভারত ভূষণ আপনি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। আপনি কি মনে করেন যে, শেখ হাসিনার সামনে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা আছে?
ভারত ভূষণ: বিরোধীরা যদি শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেনই তাহলে কি নিয়ে কথা বলবেন? যদি বলা হয় গণতন্ত্র শক্তিশালী করার কথা, তাহলে কিভাবে সেই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবেন। যেভাবেই দেখেন এটা একদলীয় গণতন্ত্র। পার্লামেন্টে কথা বলার জন্য কোন বিরোধী দল নেই। মিডিয়ায় কোন বিরোধিতা নেই। বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে পার্লামেন্টের হাতে। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ভিজুয়াল ও ইন্টারনেট মিডিয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখার অনুমতি নেই। বন্ধুত্বপূর্ণ এই রাষ্ট্রে বিরোধিতা করে কিছু বলার জায়গা নেই। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মতো সুশীল সমাজ নীরব। উপজেলা নির্বাহী অফিসার গিয়ে একটি এনজিও বন্ধ করে দিতে পারেন। এটাই কি সরকারের বৈধতা। হ্যাঁ তারা নির্বাচনের মাধ্যমে এসেছে। তাতে প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ করে নি। যদি আপনি সরকারে বৈধতার কথা বলেন, তাহলে সারা বিশ্বই স্বীকার করে- হঁ্যাঁ সরকার আছে। তারা মনে করতে পারে গণতন্ত্রের সবচেয়ে ভাল উপায় এটা, এ পন্থাই অনুসরণ করা উচিত। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তারা মেনে নিয়েছে এটাই উত্তম সরকার। কারণ, বিরোধীরা নির্বাচনে যায় নি। যদি বিরোধীদের নির্বাচনে আনা যেত তাহলে পরিস্থিতি পরিবর্তন ঘটতো। তাহলে গণতন্ত্র কার্যকর হতো। যখন তারা মনে করবে বিরোধীরা সব সময়ই ভুল কথা বলে না, তখনই সংলাপ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল সব সময়ই মনে করে, বিরোধীরা ভুল। তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। থামিয়ে দিতে হবে। সুতরাং সেখানে কোন সংলাপ হতে পারে না। এ ধারণাটি আসলে কাজ করছে না।
প্রশ্ন: শ্রুতি পাটনায়েক রাজপথে সহিংসতা চলছে। এ সময়ে ঢাকার সাধারণ মানুষ কি ভাবতে পারেন। আমি আরও সহজ করে বলি রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কি পরিবর্তন আসছে?
শ্রুতি: আমার মনে হয় বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ হলো সহিংসতা নিয়ে। তারা সহিংসতাকে সমর্থন করছে না। সমর্থন করছে না হরতাল রাজনীতি। দ্বিতীয়ত, ম্যাডাম সিক্রি ঠিকই বলেছেন- দু’দলের মধ্যে সংলাপ হওয়া উচিত। এখন প্রশ্ন হলো কি ইস্যুতে সংলাপ হবে? বিএনপির দাবি নির্বাচন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাতে অংশ নেবে বিএনপি। আওয়ামী লীগের অবস্থান- এরই মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। এখন নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। দুই প্রধান রাজনৈতিক দল এ দুটি অবস্থানে অনড়। এটা সমঝোতা হওয়ার মতো নয়। যদি আপনি দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকে একটি কক্ষে বসিয়ে রাখেন তাহলে সেখান থেকে কোন ফল আসবে না। এখন প্রশ্ন হলো- দুই রাজনৈতিক দলকেই ভাবতে হবে এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার পথ কি তা খুঁজে বের করা। রাজনীতি সম্পৃক্ত নন, এমন লোকজনের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। শিক্ষিত মানুষ তারা। উদ্বেগ হলো ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি মধ্যে কি ঘটেছে? ৫ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন পেট্রলবোমায়। মানুষ পুড়ে মারা গেছে। মানুষ মনে করে হ্যাঁ সংলাপ হওয়া উচিত। সবকিছুতেই তাদের সায় আছে। বিএনপির উচিত নির্বাচনে অংশ নেয়া। চার মাসের মধ্যে বাংলাদেশে কি ঘটেছে তা দেখেছি। হতে পারে সহিংসতার উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা। তারা হরতালে সমর্থন পায় নি। তাই ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে সহিংসতা সৃষ্টি করে বাংলাদেশের দিকে বিশ্ববাসীকে আকৃষ্ট করা হয়েছে। যাতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়, সমঝোতায় আসতে। গত এক বছরে আওয়ামী লীগ সুশাসনে উন্নতি করেছে, বিশেষ করে দুর্নীতির বিষয়ে দৃষ্টি দিয়ে।
প্রশ্ন: জয়ন্ত ঘোষাল বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে অবাধে কাজ করছে না। সরকার এ জন্য বিরোধীদের দায়ী করছে। এক্ষেত্রে কি রেজুলিউশন হতে পারে?
জয়ন্ত: আমার হিসাব ভিন্ন। আমি আওয়ামী লীগপন্থি বা আওয়ামী লীগ বিরোধী এমন কোন অবস্থান নিতে পারি না। একইভাবে বিএনপিপন্থি বা বিএনপি বিরোধী অবস্থান নিতে পারি না। একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি বলতে পারি ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি বেশ কিছু আসনে বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু তারা পার্লামেন্ট বর্জন করেছে। আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, এবার নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোন করেছিলেন খালেদা জিয়াকে। নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ফলে বিরোধীদের উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। আপনি বলতে পারেন, এক্ষেত্রে বিদেশী চাপও ছিল। এর সঙ্গে আমি একমত। তারা চেষ্টাও করেছিল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে রয়েছে প্রচণ্ড রকম মেরুকরণ। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল আমরা সেদিনগুলোর কথা ভুলি নাই। কেন মুখ্যসচিব ব্রজেশ মিশ্রকে বাংলাদেশে যেতে দেয়া হয় নি। এসবই ইতিহাস। ইতিহাস হলো সমসাময়িক। আমাদের সেসব দিনের কথাও ভোলা উচিত নয়। আপনি জানেন, এর আগে শেখ হাসিনার সরকার বিরোধীদের বলেছেন, আপনারা পার্লামেন্ট বর্জন করেছেন। কিন্তু পার্লামেন্টের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হিসেবে বেতনভাতা নিচ্ছেন। এ ইস্যুটি তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেছেন, এক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করা উচিত নয়। আপনাদের নির্বাচনে আসা উচিত। এখন আমরা দেখছি সহিংসতা। নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে বিরোধী দল একটি র্যালি করার মতো স্বাধীনতা পাচ্ছে না। আমি তো এটাও সমর্থন করতে পারি না। এটা আসলে গণতন্ত্র নয়। বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে সংলাপের পুরনো পথে ফেরা উচিত। ভারত ভূষণ, শ্রুতি বলেছেন কিসের সংলাপ, কিসের ভিত্তিতে সংলাপ? কোথা থেকে সূত্রপাত করতে হবে? কিন্তু আপনারা হয়তো জানেন, সংলাপ হলো সক্রেটারিয়াল মেথড। এটাই একমাত্র সমাধান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তুতু ম্যা ম্যা সংস্কৃতি আছে। এটা আমি জানি। যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে যান, যখন সালমান খুরশিদ, প্রণব মুখার্জি, মিস্টার কৃষ্ণা সফরে গিয়েছিলেন আমি তাদের সঙ্গে সফরে ছিলাম। আমি দেখেছি তারা খালেদার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু ওই সময় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তারা জানে না যে, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিকল্পনা কি? তিনি কি বিএনপি অফিসে যাবেন কি যাবেন না, তারা তা ঠিক করে দেয়। ফলে সেখানে একটি বদ্ধমূল মানসিকতা রয়েছে। মনের ভেতর ব্লক রয়েছে। আমি স্বীকার করি সেখানে প্রচণ্ডরকম রাজনৈতিক মেরুকরণ আছে। কিন্তু সংলাপ ছাড়া আর কি পন্থা আছে সমস্যা সমাধানে? সংলাপই একমাত্র সমাধান। এ ছাড়া আমরা সহিংসতাকে প্রশ্রয় দিতে পারি না।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে একমাত্র সমাধান বলা হচ্ছে সংলাপ। ভারত ভূষণ এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার আছে?
ভারত ভূষণ: আমি বলতে চেয়েছি কিভাবে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা যায়, কিভাবে সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন করা যায় তা নিয়ে সংলাপের কথা। কিন্তু আমি যেমনটা বলেছি, এমন সংলাপে কোন কাজ হবে বলে মনে হয় না। কারণ, শেখ হাসিনা তার ক্ষমতাকে সুসংহত করেছেন। তিনি কোন মধ্যবর্তী নির্বাচন দেবেন না। নির্বাচনের আগে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে বলা হয়েছিল। ওই সময় বিএনপি রাজি হয় নি। তারা আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের দিকে এগিয়েছে। কিন্তু এখন তারা বুঝতে পারছে তাদের সেই পদক্ষেপ ছিল ভুল। ফলে তারা মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা দেশে যেমন সুসংহত করেছেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পেয়েছেন সমর্থন। তিনি রাজপথের প্রতিবাদ কঠোর হস্তে দমন করবেন। তিনি সফলতার সঙ্গে তা করছেনও। যখন পরিস্থিতি ভাল দেখবেন তখনই নির্বাচন দিতে পারেন। কারণ, তিনি আরেক দফা ক্ষমতায় থাকতে চান।
জয়ন্ত: আমি কিছু বলতে চাই। জাতীয় নির্বাচনের আগে হয়েছে উপনির্বাচন। ওইসব উপনির্বাচনে বিএনপি ভাল করেছে। অনেক আসনে আওয়ামী লীগের ফল ভাল ছিল না। তাহলে কি করে নির্বাচনের আগে আপনি এটা বলতে পারেন? ওই সময় বিএনপিকে খোশমেজাজে দেখা গেছে। কারণ, উপনির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগকে বেশ কিছু আসনে পরাজিত করতে পেরেছে। তাই আমার মনে হয় নির্বাচন ও সংলাপ এটা হতে পারে হপসন চয়েস। আমাদেরকে নির্বাচন করতে হবে সংলাপের মাধ্যমে।
প্রশ্ন: এম্বাসেডর সিক্রি আপনি বাংলাদেশে ছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ভারতপন্থি হিসেবে দেখা হয়। এ বিষয়ে আপনার মত কি?
সিক্রি: কে ভারতপন্থি, কে ভারতপন্থি নয়, তা নিয়ে কথা বলবো না আমি। কিভাবে সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন করা যায় তা নিয়ে সংলাপের কথা বলবো আমরা। ভারতের দিক থেকে স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ তিনটি বিষয়ই গুরুত্বপপূর্ণ। আমি মনে করি এর মধ্যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হলো ভারতের সবচেয়ে বড় চাওয়া। কারণ, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়ই বাংলাদেশে কট্টর ইসলামপন্থি জামায়াতকে পরাজিত করা যায়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই জামায়াতে ইসলামীই বিএনপি সরকারে ছিল। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেন। আমরা স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমাদের জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমাদের দেখার বিষয় বাংলাদেশের মানুষ কি চায়। তারা গণতন্ত্র চায়। তারা নির্বাচন চায়। তারা ভোট দেয়ার অধিকার চায়। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ বেশ অজনপ্রিয় হয়েছে। তারা ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। জনগণ তাদের ভোটের অধিকার হারিয়েছে। একই সঙ্গে তারা বিএনপির দুর্বলতা সম্পর্কে জেনেছে। তারা জেনেছে, বিএনপি সুশাসন দিতে পারে না। তারা বিভক্ত। তাদের নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত ছিল। তাই যেকোন সংলাপে সরকারকে ৫ বছর সময় দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতসহ আন্তর্জাতিক দুনিয়া যদি এ বিষয়ে একমত হয় তাহলে সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে সংলাপ হতে পারে। মেয়াদ শেষে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনকে আরও শক্তিশালী করবেন কিনা, এটা শেখ হাসিনার ইস্যু। যে জিনিসটা প্রয়োজন তাহলো, প্রথমত এ সরকার ৫ বছর মেয়াদে থাকবে, এতে সম্মত হওয়া। সংলাপের শুরুর ক্ষেত্রে এটা প্রাথমিক একটি বিষয়। এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি ভারত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এতে একমত হবে। সবাই যদি এতে সম্মত হয়, তাহলে আমি মনে করি সংলাপ শুরু করার জন্য খুব ভাল একটি পরিবেশ সৃষ্টি হবে। কেন না এটা জরুরি, পরবর্তী নির্বাচনে যখনই সেটা হোক না কেন, সেটা চার বছর পরে হবে- শেখ হাসিনার স্বার্থে তিনি যদি পুনর্নির্বাচিত হতে চান, শক্তিশালী একটি নির্বাচন কমিশন থাকতে হবে। তার নৈপুণ্যের দিক দিয়ে জনগণকে অবশ্যই বোঝাতে পারতে হবে। নাগরিক সমাজ, অর্থনৈতিক প্রগতি, মানুষের সমৃদ্ধি, অর্থনীতি কার্যকর করা, শান্তিপূর্ণ জীবনধারা- এসব ক্ষেত্রে তার নৈপুণ্যগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। দ্বিতীয় যে বিষয়টা নিয়ে বাংলাদেশের জনগণ সম্পূর্ণ বিরক্ত তা হলো সহিংসতা। তারা হরতাল চায় না, তারা সহিংসতা চায় না। সেদিক থেকে হয়তো তারা এটা মেনে নিতে পারে যে, শেখ হাসিনা সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছেন না। হয়তো। কিন্তু তারপরও সংলাপ প্রয়োজন। কেননা পরবর্তী বারের জন্য সবার অংশগ্রহণের প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। বুরে্যাক্রেসির নিশ্চয়তা থাকতে হবে। এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেখান থেকে ইঙ্গিত মেলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আর সেটা ভারতের জন্য খুবই উদ্বেগের কারণ। মৌলবাদ দমনে শেখ হাসিনার সফলতা আমরা বারবার দেখেছি। তারা পশ্চিমবঙ্গে এসে ঘাঁটি গেড়েছে বর্ধমান ও অন্যান্য জায়গায়। কাজেই ভারতের বড় ধরনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে। ভারতকে বাংলাদেশের জনগণ, সরকার ও সকল রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রশ্ন: আমি সবার কাছ থেকে সর্বশেষ মন্তব্যগুলো নিচ্ছি, কেননা আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই। শ্রুতি আপনার থেকে শুরু করবো। বিনিয়োগের দিক থেকে- শিনজো আবেকে বাংলাদেশ সফরে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন শেখ হাসিনা। বিমসটেক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চীনা নৌপথ (ম্যারিটাইম সিল্ক রুট) প্রসঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে। ওই অঞ্চলে অনেক বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। তো এসব বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না। কেননা ভারত ও অন্যান্য দেশও এ ধরনের চুক্তি থেকে উপকৃত হবে।
শ্রুতি: নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সভা-সমাবেশ আর গুলশান বিএনপি কার্যালয়ে বেগম জিয়ার অবরুদ্ধ থাকার ইস্যুগুলো সরকার কিভাবে মোকাবিলা করছে তার ভিত্তিতে সম্ভবত যে ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা মানুষ করছে, আমি মনে করি ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে যাবে তার একটা প্রভাব পড়বে। আমি মনে করি সহিংসতার প্রভাব পড়ছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে আগেও সহিংসতার প্রভাব পড়েছে। অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের রপ্তানিতে এর প্রভাব পড়বে। কেননা হরতাল থাকলে মানুষ চলাফেরা করতে পারে না। কারখানায় কাজে যেতে পারে না। সেটা নিশ্চয়ই কারখানার উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এমন একটি দেশে বিনিয়োগ করার জন্য বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বোঝানো খুবই কঠিন হয়ে যায়, যেখানে আপনি জানেন না পরদিন কি ঘটতে যাচ্ছে। কাজেই আমি মনে করি, বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমি এর সঙ্গে এটাও বলতে চাই, গত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ ধরে রাখতে পেরেছে এ দেশটি; যেটা এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় প্রশংসার দাবিদার। এ কারণে আমি মনে করি স্থিতিশীলতা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
প্রশ্ন: অর্থাৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থেকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সুফল বয়ে নিয়ে আসবে। আমি ভারত ভূষণের কাছে সর্বশেষ মন্তব্যের জন্য যাবো। জয়ন্ত আমি দুঃখিত, আমাদের সময় শেষ হয়ে এসেছে। ভারত, সবকিছু যদি আমরা সারমর্ম করি তাহলে আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতে সমাধা হবে নাকি আপনি যেমনটা বলেছেন, শেখ হাসিনা এ বিদ্রোহ পরিস্থিতি এখনকার মতো দমন করবেন এবং পরবর্তীকালে কোন এক সময় বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে এ নিয়ে বক্তব্য দেবেন।
ভারত: আমি মনে করি তিনি এ বিদ্রোহ দমন করবেন। এটা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আমরা জানি না কি ঘটতে পারে। কিন্তু একজন ভারতীয় হিসেবে আমি বলবো, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে ঘিরে নিজস্ব প্রোপাগান্ডা নিয়ে আমাদের আচ্ছন্ন হওয়া উচিত হবে না। আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ। আওয়ামী লীগই কিন্তু বাংলাদেশ সংবিধানে ইসলামিক শব্দটা অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বিনা সিক্রি: না না। তারা ইসলামিক শব্দটা চালু করে নি। সংবিধান সংশোধনের সময় তারা ওটা বাদ দেয় নি।
শ্রুতি: ’৮০-র দশকে, জেনারেল এরশাদ।
ভারত: বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। আমাদের বিএনপি-বিরোধী হওয়াও উচিত নয়। বিষয়টা হচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে স্রেফ নির্বাচনী লক্ষ্যেই বিএনপির যেতে হবে। আর তারা তাদের শিক্ষাটা পেয়ে গেছে। কেননা জামায়াতে ইসলামী প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে বর্তমান অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে। কাজেই কিভাবে এ সমস্যা সমাধান করা যায় তা নিয়ে বিএনপিকে ভাবতে হবে। এটা শুধু আওয়ামী লীগের সমস্যা নয়, এটা বিএনপিরও একটি সমস্যা।
ইশান রাসেল: সমস্যা সমাধানে সম্ভবত বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে তাদের থিংকট্যাঙ্কদের নিয়ে বসতে হবে। এরপর একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সারসংক্ষেপ বলা যেতে পারে, সংলাপ জরুরি। কিন্তু একইসঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যাপক অন্তর্নিরীক্ষণ প্রয়োজন। দেশটিতে সম্ভবত গণতন্ত্রের সার্বিক ধারণাটাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার।
ইশান রাসেল: বাংলাদেশে বিতর্কিত নির্বাচনের এক বছর পার হয়েছে। তা নিয়ে এ জাতির মধ্যে এখনও বিতর্ক চলছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার অফিসে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা। বিরোধী দলীয় কিছু সমর্থক নিহত হয়েছেন। বিরোধী দল সরকারের কাছে নতুন নির্বাচন দাবি করছে। কিন্তু পরিস্থিতি দিনকে দিন ক্রমশ ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়েই আমাদের অনুষ্ঠান ‘দ্য বিগ পিকচার’। এতে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাই কমিশনার বিনা সিক্রি। সিনিয়র সাংবাদিক ভারত ভূষণ। শ্রুতি পাটনায়েক, গবেষক আইডিএসএ। আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল। বাংলাদেশ থেকে যোগ দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক শামসুল আরেফিন। প্রথমেই আমি বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে যোগ দেব শামসুল আরেফিনের সঙ্গে।
প্রশ্ন: শামসুল, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে অবস্থানটা কি। এর কি কোন শেষ নেই?
শামসুল আরেফিন: আসলে গত বছর ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বিতর্ক চলছেই। এর কারণ, ওই নির্বাচনে অংশ নেয় নি বিএনপি। তারা বলছে, ওইদিন গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলেছিল, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকেই তারা নির্বাচন করবে। এরপর এক বছর পার হয়েছে। বিএনপি ৫ই জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করতে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু তারা ঢাকা শহর ও দেশের অন্য কোন স্থানে সভা করতে পারে নি। এদিন দুপুরের পর দলীয় অফিসে গিয়ে র্যালিতে যোগ দেয়ার কথা ছিল বেগম খালেদা জিয়ার। কিন্তু তাকে যেতে দেয়া হয় নি। তাকে আটকে রাখা হয় গুলশানের অফিসে। পুলিশ তাকে ঘেরাও করে রেখেছে। তিনি বাইরে বের হতে পারছেন না। ৫ই জানুয়ারি তিনি দুপুরের পর বের হতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাকে বাইরে যেতে অনুমতি দেয়া হয় নি। সেখানেই তিনি সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখেন। ঘোষণা করেন দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের অবরোধ। এ দিনে ঢাকায় খুব সংঘর্ষ হয় নি। তবে দেশের অন্যান্য স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। নিহত হয়েছেন তিন জন। প্রচুর মানুষ আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক যানবাহন। আন্তঃজেলা বাস, নৌযান চলাচল করে নি সারা দেশে। অবরোধ হিসেবে এসব পরিবহন বন্ধ করে দেয় সরকার। ৫ই জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রশ্ন: আমি এবার আসছি বীনা সিক্রির কাছে। এম্বাসেডর সিক্রি, আমি আপনার কাছে জানতে চাই এ সরকার কতটা বৈধ? বিরোধীরা নির্বাচনে অংশ নেয় নি। তাই ভারতেও এ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে। বিরোধীদের এমন দাবির পক্ষে কি কোন যুক্তি আছে?
বীণা সিক্রি: ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচন ছিল বাস্তবতা। আইনগতভাবে বর্তমান সরকার ৫ বছর মেয়াদের জন্য বৈধ। আমি কয়েকটি দিক থেকে বিষয়টি দেখতে চাই। গত বছর নির্বাচনের আগে-পরে ডিসেম্বর ২০১৩, সেপ্টেম্বর ২০১৩ জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল নির্বাচন ভণ্ডুল করার। তাদের দাবি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু এ সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে জাতীয় সংসদ। ওই সময়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। তারা বলেছিল, এ ব্যবস্থা সংবিধান পরিপন্থি। সংসদীয় গণতন্ত্রে কোন রাষ্ট্রের প্রধান কোন অনির্বাচিত ব্যক্তি হতে পারেন না। এটা একটি সাধারণ বিষয়। ওই সময়ে বিএনপি গিয়েছে বিশ্ব মিডিয়ায়, আমেরিকায়, যুক্তরাজ্যে, পশ্চিমা দেশে সমর্থন পাওয়ার জন্য, যাতে নির্বাচন না হয়। নির্বাচনে অংশ নিতে মুখিয়ে ছিল বিএনপি। একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার ছেলে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ না নিতে বলেন শেষ মুহূর্তে। তারা নির্বাচনে অংশ নিলে হয়তো জিতে যেত। তাই এখন ওই নির্বাচনের বৈধতার প্রশ্ন তুললে সেটা অতীতের ইস্যু হয়ে যাবে। সারা বিশ্ব এ নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে। শেখ হাসিনা গত এক বছরে চীন থেকে জাপান, যুক্তরাজ্য সহ অনেক দেশ সফর করেছেন। কেউই তার নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে নি। বাংলাদশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত খোলামেলাভাবে এ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছিল না। কেউ এ নিয়ে আর কথা বলে নি। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রয়োজন। এদিকেই নজর দেয়া উচিত। এই সংলাপ একটি নির্বাচন দেয়ার জন্য হতে পারে না। এ নির্বাচন শুধু হতে পারে ৫ বছর পরে। সংলাপ হতে পারে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা নিয়ে। তা হতে পারে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা নিয়ে, বুরে্যাক্রেসির বিরাজনীতিকরণ করা নিয়ে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে। এর মাধ্যমে জনগণকে একটি আস্থায় নিতে হবে যে, যখনই নির্বাচন হোক, সেটা যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেও হয়, তাহলে যথেষ্ট চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সেস থাকবে। নির্বাচন হতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। এসব ইস্যু খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, বাংলাদেশে কেউই এখন এত তাড়াতাড়ি আরেকটি নির্বাচন চায় না। কারণ, সহিসংতা ছড়ানো নিয়ে সবাই আতঙ্কিত। হাসিনা জারি করেছেন ১৪৪ ধারা। দমন করছেন যেকোন রকম বিক্ষোভ-সমাবেশ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে তার অফিসে আটক রাখায় ব্যাপক সোরগোল হচ্ছে। অন্যভাবে দেখা যেতে পারে- কোন বাস, কোন বোট ঢাকা আসতে পারে নি ৫ই জানুয়ারি। এসব মিলে ঢাকা একটি স্থবির শহরে পরিণত হয়। তাদের উচিত সহিংসতা পরিহার করা। সাধারণ মানুষ সহিংসতা চায় না। তাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য সংলাপ অত্যাবশ্যক।
প্রশ্ন: ভারত ভূষণ আপনি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। আপনি কি মনে করেন যে, শেখ হাসিনার সামনে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা আছে?
ভারত ভূষণ: বিরোধীরা যদি শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেনই তাহলে কি নিয়ে কথা বলবেন? যদি বলা হয় গণতন্ত্র শক্তিশালী করার কথা, তাহলে কিভাবে সেই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবেন। যেভাবেই দেখেন এটা একদলীয় গণতন্ত্র। পার্লামেন্টে কথা বলার জন্য কোন বিরোধী দল নেই। মিডিয়ায় কোন বিরোধিতা নেই। বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে পার্লামেন্টের হাতে। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ভিজুয়াল ও ইন্টারনেট মিডিয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখার অনুমতি নেই। বন্ধুত্বপূর্ণ এই রাষ্ট্রে বিরোধিতা করে কিছু বলার জায়গা নেই। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মতো সুশীল সমাজ নীরব। উপজেলা নির্বাহী অফিসার গিয়ে একটি এনজিও বন্ধ করে দিতে পারেন। এটাই কি সরকারের বৈধতা। হ্যাঁ তারা নির্বাচনের মাধ্যমে এসেছে। তাতে প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ করে নি। যদি আপনি সরকারে বৈধতার কথা বলেন, তাহলে সারা বিশ্বই স্বীকার করে- হঁ্যাঁ সরকার আছে। তারা মনে করতে পারে গণতন্ত্রের সবচেয়ে ভাল উপায় এটা, এ পন্থাই অনুসরণ করা উচিত। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তারা মেনে নিয়েছে এটাই উত্তম সরকার। কারণ, বিরোধীরা নির্বাচনে যায় নি। যদি বিরোধীদের নির্বাচনে আনা যেত তাহলে পরিস্থিতি পরিবর্তন ঘটতো। তাহলে গণতন্ত্র কার্যকর হতো। যখন তারা মনে করবে বিরোধীরা সব সময়ই ভুল কথা বলে না, তখনই সংলাপ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল সব সময়ই মনে করে, বিরোধীরা ভুল। তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। থামিয়ে দিতে হবে। সুতরাং সেখানে কোন সংলাপ হতে পারে না। এ ধারণাটি আসলে কাজ করছে না।
প্রশ্ন: শ্রুতি পাটনায়েক রাজপথে সহিংসতা চলছে। এ সময়ে ঢাকার সাধারণ মানুষ কি ভাবতে পারেন। আমি আরও সহজ করে বলি রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কি পরিবর্তন আসছে?
শ্রুতি: আমার মনে হয় বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ হলো সহিংসতা নিয়ে। তারা সহিংসতাকে সমর্থন করছে না। সমর্থন করছে না হরতাল রাজনীতি। দ্বিতীয়ত, ম্যাডাম সিক্রি ঠিকই বলেছেন- দু’দলের মধ্যে সংলাপ হওয়া উচিত। এখন প্রশ্ন হলো কি ইস্যুতে সংলাপ হবে? বিএনপির দাবি নির্বাচন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাতে অংশ নেবে বিএনপি। আওয়ামী লীগের অবস্থান- এরই মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। এখন নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। দুই প্রধান রাজনৈতিক দল এ দুটি অবস্থানে অনড়। এটা সমঝোতা হওয়ার মতো নয়। যদি আপনি দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকে একটি কক্ষে বসিয়ে রাখেন তাহলে সেখান থেকে কোন ফল আসবে না। এখন প্রশ্ন হলো- দুই রাজনৈতিক দলকেই ভাবতে হবে এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার পথ কি তা খুঁজে বের করা। রাজনীতি সম্পৃক্ত নন, এমন লোকজনের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। শিক্ষিত মানুষ তারা। উদ্বেগ হলো ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি মধ্যে কি ঘটেছে? ৫ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন পেট্রলবোমায়। মানুষ পুড়ে মারা গেছে। মানুষ মনে করে হ্যাঁ সংলাপ হওয়া উচিত। সবকিছুতেই তাদের সায় আছে। বিএনপির উচিত নির্বাচনে অংশ নেয়া। চার মাসের মধ্যে বাংলাদেশে কি ঘটেছে তা দেখেছি। হতে পারে সহিংসতার উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা। তারা হরতালে সমর্থন পায় নি। তাই ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে সহিংসতা সৃষ্টি করে বাংলাদেশের দিকে বিশ্ববাসীকে আকৃষ্ট করা হয়েছে। যাতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়, সমঝোতায় আসতে। গত এক বছরে আওয়ামী লীগ সুশাসনে উন্নতি করেছে, বিশেষ করে দুর্নীতির বিষয়ে দৃষ্টি দিয়ে।
প্রশ্ন: জয়ন্ত ঘোষাল বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে অবাধে কাজ করছে না। সরকার এ জন্য বিরোধীদের দায়ী করছে। এক্ষেত্রে কি রেজুলিউশন হতে পারে?
জয়ন্ত: আমার হিসাব ভিন্ন। আমি আওয়ামী লীগপন্থি বা আওয়ামী লীগ বিরোধী এমন কোন অবস্থান নিতে পারি না। একইভাবে বিএনপিপন্থি বা বিএনপি বিরোধী অবস্থান নিতে পারি না। একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি বলতে পারি ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি বেশ কিছু আসনে বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু তারা পার্লামেন্ট বর্জন করেছে। আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, এবার নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোন করেছিলেন খালেদা জিয়াকে। নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ফলে বিরোধীদের উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। আপনি বলতে পারেন, এক্ষেত্রে বিদেশী চাপও ছিল। এর সঙ্গে আমি একমত। তারা চেষ্টাও করেছিল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে রয়েছে প্রচণ্ড রকম মেরুকরণ। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল আমরা সেদিনগুলোর কথা ভুলি নাই। কেন মুখ্যসচিব ব্রজেশ মিশ্রকে বাংলাদেশে যেতে দেয়া হয় নি। এসবই ইতিহাস। ইতিহাস হলো সমসাময়িক। আমাদের সেসব দিনের কথাও ভোলা উচিত নয়। আপনি জানেন, এর আগে শেখ হাসিনার সরকার বিরোধীদের বলেছেন, আপনারা পার্লামেন্ট বর্জন করেছেন। কিন্তু পার্লামেন্টের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হিসেবে বেতনভাতা নিচ্ছেন। এ ইস্যুটি তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেছেন, এক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করা উচিত নয়। আপনাদের নির্বাচনে আসা উচিত। এখন আমরা দেখছি সহিংসতা। নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে বিরোধী দল একটি র্যালি করার মতো স্বাধীনতা পাচ্ছে না। আমি তো এটাও সমর্থন করতে পারি না। এটা আসলে গণতন্ত্র নয়। বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে সংলাপের পুরনো পথে ফেরা উচিত। ভারত ভূষণ, শ্রুতি বলেছেন কিসের সংলাপ, কিসের ভিত্তিতে সংলাপ? কোথা থেকে সূত্রপাত করতে হবে? কিন্তু আপনারা হয়তো জানেন, সংলাপ হলো সক্রেটারিয়াল মেথড। এটাই একমাত্র সমাধান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তুতু ম্যা ম্যা সংস্কৃতি আছে। এটা আমি জানি। যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে যান, যখন সালমান খুরশিদ, প্রণব মুখার্জি, মিস্টার কৃষ্ণা সফরে গিয়েছিলেন আমি তাদের সঙ্গে সফরে ছিলাম। আমি দেখেছি তারা খালেদার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু ওই সময় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তারা জানে না যে, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিকল্পনা কি? তিনি কি বিএনপি অফিসে যাবেন কি যাবেন না, তারা তা ঠিক করে দেয়। ফলে সেখানে একটি বদ্ধমূল মানসিকতা রয়েছে। মনের ভেতর ব্লক রয়েছে। আমি স্বীকার করি সেখানে প্রচণ্ডরকম রাজনৈতিক মেরুকরণ আছে। কিন্তু সংলাপ ছাড়া আর কি পন্থা আছে সমস্যা সমাধানে? সংলাপই একমাত্র সমাধান। এ ছাড়া আমরা সহিংসতাকে প্রশ্রয় দিতে পারি না।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে একমাত্র সমাধান বলা হচ্ছে সংলাপ। ভারত ভূষণ এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার আছে?
ভারত ভূষণ: আমি বলতে চেয়েছি কিভাবে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা যায়, কিভাবে সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন করা যায় তা নিয়ে সংলাপের কথা। কিন্তু আমি যেমনটা বলেছি, এমন সংলাপে কোন কাজ হবে বলে মনে হয় না। কারণ, শেখ হাসিনা তার ক্ষমতাকে সুসংহত করেছেন। তিনি কোন মধ্যবর্তী নির্বাচন দেবেন না। নির্বাচনের আগে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে বলা হয়েছিল। ওই সময় বিএনপি রাজি হয় নি। তারা আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের দিকে এগিয়েছে। কিন্তু এখন তারা বুঝতে পারছে তাদের সেই পদক্ষেপ ছিল ভুল। ফলে তারা মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা দেশে যেমন সুসংহত করেছেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পেয়েছেন সমর্থন। তিনি রাজপথের প্রতিবাদ কঠোর হস্তে দমন করবেন। তিনি সফলতার সঙ্গে তা করছেনও। যখন পরিস্থিতি ভাল দেখবেন তখনই নির্বাচন দিতে পারেন। কারণ, তিনি আরেক দফা ক্ষমতায় থাকতে চান।
জয়ন্ত: আমি কিছু বলতে চাই। জাতীয় নির্বাচনের আগে হয়েছে উপনির্বাচন। ওইসব উপনির্বাচনে বিএনপি ভাল করেছে। অনেক আসনে আওয়ামী লীগের ফল ভাল ছিল না। তাহলে কি করে নির্বাচনের আগে আপনি এটা বলতে পারেন? ওই সময় বিএনপিকে খোশমেজাজে দেখা গেছে। কারণ, উপনির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগকে বেশ কিছু আসনে পরাজিত করতে পেরেছে। তাই আমার মনে হয় নির্বাচন ও সংলাপ এটা হতে পারে হপসন চয়েস। আমাদেরকে নির্বাচন করতে হবে সংলাপের মাধ্যমে।
প্রশ্ন: এম্বাসেডর সিক্রি আপনি বাংলাদেশে ছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ভারতপন্থি হিসেবে দেখা হয়। এ বিষয়ে আপনার মত কি?
সিক্রি: কে ভারতপন্থি, কে ভারতপন্থি নয়, তা নিয়ে কথা বলবো না আমি। কিভাবে সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন করা যায় তা নিয়ে সংলাপের কথা বলবো আমরা। ভারতের দিক থেকে স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ তিনটি বিষয়ই গুরুত্বপপূর্ণ। আমি মনে করি এর মধ্যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হলো ভারতের সবচেয়ে বড় চাওয়া। কারণ, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়ই বাংলাদেশে কট্টর ইসলামপন্থি জামায়াতকে পরাজিত করা যায়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই জামায়াতে ইসলামীই বিএনপি সরকারে ছিল। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেন। আমরা স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমাদের জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমাদের দেখার বিষয় বাংলাদেশের মানুষ কি চায়। তারা গণতন্ত্র চায়। তারা নির্বাচন চায়। তারা ভোট দেয়ার অধিকার চায়। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ বেশ অজনপ্রিয় হয়েছে। তারা ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। জনগণ তাদের ভোটের অধিকার হারিয়েছে। একই সঙ্গে তারা বিএনপির দুর্বলতা সম্পর্কে জেনেছে। তারা জেনেছে, বিএনপি সুশাসন দিতে পারে না। তারা বিভক্ত। তাদের নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত ছিল। তাই যেকোন সংলাপে সরকারকে ৫ বছর সময় দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতসহ আন্তর্জাতিক দুনিয়া যদি এ বিষয়ে একমত হয় তাহলে সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে সংলাপ হতে পারে। মেয়াদ শেষে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনকে আরও শক্তিশালী করবেন কিনা, এটা শেখ হাসিনার ইস্যু। যে জিনিসটা প্রয়োজন তাহলো, প্রথমত এ সরকার ৫ বছর মেয়াদে থাকবে, এতে সম্মত হওয়া। সংলাপের শুরুর ক্ষেত্রে এটা প্রাথমিক একটি বিষয়। এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি ভারত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এতে একমত হবে। সবাই যদি এতে সম্মত হয়, তাহলে আমি মনে করি সংলাপ শুরু করার জন্য খুব ভাল একটি পরিবেশ সৃষ্টি হবে। কেন না এটা জরুরি, পরবর্তী নির্বাচনে যখনই সেটা হোক না কেন, সেটা চার বছর পরে হবে- শেখ হাসিনার স্বার্থে তিনি যদি পুনর্নির্বাচিত হতে চান, শক্তিশালী একটি নির্বাচন কমিশন থাকতে হবে। তার নৈপুণ্যের দিক দিয়ে জনগণকে অবশ্যই বোঝাতে পারতে হবে। নাগরিক সমাজ, অর্থনৈতিক প্রগতি, মানুষের সমৃদ্ধি, অর্থনীতি কার্যকর করা, শান্তিপূর্ণ জীবনধারা- এসব ক্ষেত্রে তার নৈপুণ্যগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। দ্বিতীয় যে বিষয়টা নিয়ে বাংলাদেশের জনগণ সম্পূর্ণ বিরক্ত তা হলো সহিংসতা। তারা হরতাল চায় না, তারা সহিংসতা চায় না। সেদিক থেকে হয়তো তারা এটা মেনে নিতে পারে যে, শেখ হাসিনা সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছেন না। হয়তো। কিন্তু তারপরও সংলাপ প্রয়োজন। কেননা পরবর্তী বারের জন্য সবার অংশগ্রহণের প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। বুরে্যাক্রেসির নিশ্চয়তা থাকতে হবে। এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেখান থেকে ইঙ্গিত মেলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আর সেটা ভারতের জন্য খুবই উদ্বেগের কারণ। মৌলবাদ দমনে শেখ হাসিনার সফলতা আমরা বারবার দেখেছি। তারা পশ্চিমবঙ্গে এসে ঘাঁটি গেড়েছে বর্ধমান ও অন্যান্য জায়গায়। কাজেই ভারতের বড় ধরনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে। ভারতকে বাংলাদেশের জনগণ, সরকার ও সকল রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রশ্ন: আমি সবার কাছ থেকে সর্বশেষ মন্তব্যগুলো নিচ্ছি, কেননা আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই। শ্রুতি আপনার থেকে শুরু করবো। বিনিয়োগের দিক থেকে- শিনজো আবেকে বাংলাদেশ সফরে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন শেখ হাসিনা। বিমসটেক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চীনা নৌপথ (ম্যারিটাইম সিল্ক রুট) প্রসঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে। ওই অঞ্চলে অনেক বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। তো এসব বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না। কেননা ভারত ও অন্যান্য দেশও এ ধরনের চুক্তি থেকে উপকৃত হবে।
শ্রুতি: নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সভা-সমাবেশ আর গুলশান বিএনপি কার্যালয়ে বেগম জিয়ার অবরুদ্ধ থাকার ইস্যুগুলো সরকার কিভাবে মোকাবিলা করছে তার ভিত্তিতে সম্ভবত যে ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা মানুষ করছে, আমি মনে করি ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে যাবে তার একটা প্রভাব পড়বে। আমি মনে করি সহিংসতার প্রভাব পড়ছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে আগেও সহিংসতার প্রভাব পড়েছে। অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের রপ্তানিতে এর প্রভাব পড়বে। কেননা হরতাল থাকলে মানুষ চলাফেরা করতে পারে না। কারখানায় কাজে যেতে পারে না। সেটা নিশ্চয়ই কারখানার উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এমন একটি দেশে বিনিয়োগ করার জন্য বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বোঝানো খুবই কঠিন হয়ে যায়, যেখানে আপনি জানেন না পরদিন কি ঘটতে যাচ্ছে। কাজেই আমি মনে করি, বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমি এর সঙ্গে এটাও বলতে চাই, গত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ ধরে রাখতে পেরেছে এ দেশটি; যেটা এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় প্রশংসার দাবিদার। এ কারণে আমি মনে করি স্থিতিশীলতা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
প্রশ্ন: অর্থাৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থেকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সুফল বয়ে নিয়ে আসবে। আমি ভারত ভূষণের কাছে সর্বশেষ মন্তব্যের জন্য যাবো। জয়ন্ত আমি দুঃখিত, আমাদের সময় শেষ হয়ে এসেছে। ভারত, সবকিছু যদি আমরা সারমর্ম করি তাহলে আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতে সমাধা হবে নাকি আপনি যেমনটা বলেছেন, শেখ হাসিনা এ বিদ্রোহ পরিস্থিতি এখনকার মতো দমন করবেন এবং পরবর্তীকালে কোন এক সময় বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে এ নিয়ে বক্তব্য দেবেন।
ভারত: আমি মনে করি তিনি এ বিদ্রোহ দমন করবেন। এটা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আমরা জানি না কি ঘটতে পারে। কিন্তু একজন ভারতীয় হিসেবে আমি বলবো, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে ঘিরে নিজস্ব প্রোপাগান্ডা নিয়ে আমাদের আচ্ছন্ন হওয়া উচিত হবে না। আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ। আওয়ামী লীগই কিন্তু বাংলাদেশ সংবিধানে ইসলামিক শব্দটা অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বিনা সিক্রি: না না। তারা ইসলামিক শব্দটা চালু করে নি। সংবিধান সংশোধনের সময় তারা ওটা বাদ দেয় নি।
শ্রুতি: ’৮০-র দশকে, জেনারেল এরশাদ।
ভারত: বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। আমাদের বিএনপি-বিরোধী হওয়াও উচিত নয়। বিষয়টা হচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে স্রেফ নির্বাচনী লক্ষ্যেই বিএনপির যেতে হবে। আর তারা তাদের শিক্ষাটা পেয়ে গেছে। কেননা জামায়াতে ইসলামী প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে বর্তমান অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে। কাজেই কিভাবে এ সমস্যা সমাধান করা যায় তা নিয়ে বিএনপিকে ভাবতে হবে। এটা শুধু আওয়ামী লীগের সমস্যা নয়, এটা বিএনপিরও একটি সমস্যা।
ইশান রাসেল: সমস্যা সমাধানে সম্ভবত বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে তাদের থিংকট্যাঙ্কদের নিয়ে বসতে হবে। এরপর একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সারসংক্ষেপ বলা যেতে পারে, সংলাপ জরুরি। কিন্তু একইসঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যাপক অন্তর্নিরীক্ষণ প্রয়োজন। দেশটিতে সম্ভবত গণতন্ত্রের সার্বিক ধারণাটাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার।
No comments