‘শক্তির শাসন’ এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা by ড. আবদুল লতিফ মাসুম
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে
‘কোয়ার্সিভ গভর্ন্যান্স’ বলে একটি টার্ম আছে। এর অর্থÑ শক্তি প্রয়োগের
শাসন। সংক্ষেপে আমরা ‘শক্তির শাসন’ বলতে পারি। রাষ্ট্রই সেই শক্তি প্রয়োগের
বৈধ কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্রের বৈধ শক্তি প্রয়োগের দুটো দিক আছেÑ অভ্যন্তরীণ ও
বাহ্যিক। দেশের আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ বৈধ। অপর দিকে
দেশের স্বাধীনতা তথা অখণ্ডতা রক্ষায় বৈদেশিক শক্তির বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগও
বৈধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি শক্তি প্রয়োগ করতে
পারে। দেশের সীমান্ত আক্রান্ত হলে সেনাবাহিনীর কর্তব্যই হচ্ছে শক্তি
প্রয়োগের মাধ্যমে শত্রুর মোকাবেলা করা। কিন্তু এই শক্তি প্রয়োগ অবাধ এবং
নিরঙ্কুশ নয়। রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের ক্ষমতা যেমন সংবিধান দিয়ে সীমিত, তেমনি
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতাও সংবিধান, আইন এবং সংশ্লিষ্ট
বিধিবিধান দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চোর-ডাকাত,
বাটপার-বদমাশ কিংবা ছিনতাইকারীকে লাঠিপেটা করতে পারে। রাজপথের আইনশৃঙ্খলা
রক্ষা করতে লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট নিক্ষেপের মতো সীমিত কার্যব্যবস্থা নিতে
পারে। রাজনৈতিক কর্মসূচি তো দূরের কথা দৃশ্যমান জঘন্য অপরাধীকেও এরা গুলি
বর্ষণের অধিকার রাখে না। কোনো ব্যক্তি অন্যায়-অপকর্ম করলে তার বিরুদ্ধে
আইনগত ব্যবস্থা নেয়াই তাদের কাজ।
তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে শাসকেরা বিশেষত ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য বিরোধী ব্যক্তি, দল ও গোষ্ঠীকে নির্মৃল করার প্রয়াস নেয়। কোনো কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার আইনকানুন, বিধিবিধান, নিয়মনীতি এবং মানবাধিকারকে অগ্রাহ্য করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুম-খুন, জুলুম-নির্যাতন ও অন্যায়-অত্যাচর করার অবাধ অধিকার দেয়। আইনের ভাষায় একে বলা হয়, ‘এক্সট্রা জুডিসিয়াল কিলিং’ বা ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’। গোটা বিশ্বে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অমানবিক, অনৈতিক, ক্ষমতাবহির্ভূত ও নির্মম কর্মকাণ্ড বলে বিবেচিত। আইনের বৈধ প্রয়োগে নিয়োজিত অস্ত্রধারীরা অবৈধভাবে নিরস্ত্র মানুষের ওপর এই নির্মম আচরণ করছে।
খ. রাষ্ট্রের শক্তি প্রয়োগের সীমিত বৈধতা থাকলেও শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উৎস নয়। ক্ষমতার উৎস জনগণ। ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী যখন জনগণের সম্মতির ব্যাপারে শঙ্কিত হয়ে ওঠে, তখন তারাই তাদের সৃষ্ট তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলোপ করে। সুপরিকল্পিতভাবে চাণক্য চাতুর্যের সাথে এমন একটি নির্বাচনের আয়োজন করে, যেখানে সম্মতির পরিবর্তে শক্তির নিরঙ্কুশ প্রয়োগ ঘটে। ফিরে আসে মধ্যযুগীয় অভিধা, ‘মাইট ইজ রাইটÑ জোর যার মুলুক তার’।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পূর্বাহ্ণে শক্তির সর্বত্র প্রয়োগ ঘটে তখন, যখন-
০১. তথাকথিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন সব বিরোধী শক্তিকে হত্যা, নিপীড়ন, হামলা ও মামলা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ দুঃসাধ্য করে তোলে; ০২. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীÑ পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি দিয়ে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভীতির সৃষ্টি করে; ০৩. দলীয় ক্যাডার দিয়ে ভোটের বাক্স ভর্তি করে; ০৪. এইচ টি ইমামের ভাষায় উপজেলা পর্যন্ত প্রশাসনিক নির্দেশ পৌঁছে যায় এবং ০৫. এজেন্সি ব্যবহার করে প্রতিবাদী জাতীয় পার্টি প্রধান এরশাদকে দিয়ে ‘রাজনৈতিক তামাশার’ সৃষ্টি করা হয়।
এর পরও ১৫৩ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। অবশিষ্ট আসনে নামকাওয়াস্তে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বেসরকারি মতে ৫ শতাংশ এবং সরকারি মতে ২০ শতাংশ ভোট পড়ে । সুতরাং গরিষ্ঠ জনগণের এই নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তটি বিরোধী জোটের নির্বাচন বর্জনের আহ্বানের প্রতি সমর্থন হিসেবে গণ্য করা যায়।
একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন যখন সরকারের শক্তি প্রয়োগে তথা সরকারি হরতালে ব্যর্থ হয়ে যায়, তখন বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবরোধ আন্দোলন ঘোষণা দেন। আন্দোলনের সফলতায় ভীত সরকারপক্ষ এর মধ্যে ‘নাশকতা’ আবিষ্কার করে। নাশকতা ঘটেও যায়। যতই দিন যেতে থাকে পেট্রলবোমার প্রকোপ ততই বাড়তে থাকে। বিরোধী নেত্রী সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, সরকারি দলই এসব করাচ্ছে। যে পক্ষেরই দায় হোক না কেন দেশ একটি মানবিক বিপর্যয়ের মুখে । সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে চুনোপুঁটি পর্যন্ত আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, আইএস, আলকায়েদার সাথে তুলনা করে দুটো উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। প্রথমত, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বলে অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে ‘কোয়ার্সিভ পাওয়ার’ বা শক্তি প্রয়োগের বৈধতা প্রমাণ করতে চায়। দ্বিতীয়ত, গোটা বিশ্বব্যাপী পাশ্চাত্যের নেতৃত্বে যে ‘ওয়ার অন টেরর’ চলছে তার সাথে একীভূত করে পুরনো প্রভুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়।
অবরোধের দুই মাস অতিক্রান্ত। এ সময়ে মোট নিহতের সংখ্যা ১১৩ (২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত)। এর মধ্যে পেট্রল ও আগুনে পুড়ে মারা গেছে ৬০ জন। তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ ও গণপিটুনিতে মৃতের সংখ্যা ৩৬। ‘সংঘষর্’, ‘গুলিবিদ্ধ’ ও ‘সড়ক দুর্ঘটনায়’ ১৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ, গণপিটুনি, সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ও সড়ক দুর্ঘটনা শিরোনামে যে মৃতের কথা বলা হয়েছে মূলত তা সরকারি বাহিনী আর দলীয় বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ড।
শক্তি প্রয়োগের নিকৃষ্ট নমুনা হচ্ছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’। বন্দুকযুদ্ধ শব্দটির সাথে আমাদের পরিচয় আছে। ১৯৭৪ সালে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন বাম নেতা সিরাজ সিকদার। তারপর সব আমলেই বন্দুকযুদ্ধের গল্প শোনা গেছে। অবরোধ আন্দোলনের পর বন্দুকযুদ্ধ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের সর্বমোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৬ (বন্দুকযুদ্ধ ও গণপিটুনি) + ১৭ ( সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ লাশ ও সড়ক দুর্ঘটনা)= ৫৩। আগেই বলা হয়েছে, বিবিধ নামে বলা হলেও আসলে সবই বন্দুকযুদ্ধের সব নাটকীয়তা। বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের যে পরিসংখ্যান ও রাজনৈতিক পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তা এ রকমÑ
বিএনপি ছাত্রদল : ১১; জামায়াত-শিবির : ১০; সন্ত্রাসী ডাকাত : ৫; চরমপন্থী : ৫; ইয়াবা ব্যবসায়ী : ১; গাড়িচালক : ১; মোজাইক মিস্ত্রি : ১; দোকানকর্মী : ১; মুঠোফোন মেকার : ১ এবং কলেজছাত্র : ১।
যারা বন্দুকযুদ্ধে এবং অন্যভাবে নিহত হয়েছেন, সেসব ভুক্তভোগীর পরিবারগুলো জানায় যে, তাদের প্রায় সবাইকে নিহত হওয়ার এক দিন থেকে দুই সপ্তাহ আগে ধরে নেয়া হয়েছিল। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবিÑ এরা নাশকতার সময় ধরা পড়েছেন। তবে আগে গ্রেফতার হননি; কিন্তু বন্দুকযুদ্ধের শিকার হয়েছেন এমন ঘটনাও আছে। ‘সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চারজনের বিষয়ে তাদের আত্মীয়দের অভিযোগ সরকারি বাহিনী ধরে নিয়ে তাদের হত্যা করেছে। এ চারজনের মধ্যে দু’জন যশোরের মনিরামপুরের বিএনপির কর্মী, একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাত্রশিবিরের কর্মী এবং একজন কুমিল্লার কথিত স্থানীয় সন্ত্রাসী। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে যে সাতজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয় তাদের ছয়জনই বিএনপি ও ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ত। অতীতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পেশাদার অপরাধী নিহত হলেও গেল দুই মাসে নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিএনপি-জামায়াতের কর্মী। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এখন বন্দুকযুদ্ধে নতুন মাত্রা; মৃত্যুর দায় সহযোগীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া। পুলিশ বন্দুকযুদ্ধে নিহতের পরে মৃতের সহযোগীদের নামে হত্যামামলা দায়ের করে ‘ডাবল ফায়দা’ নেয়ার কৌশল অবলম্বন করছে।
মৃতদের পর এবারে পঙ্গু বা আহতদের প্রসঙ্গে আসা যাক। গত দুই মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, অসংখ্য লোক পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ ধরে নিয়ে এদের পায়ে গুলি করেছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ ১৫-এর ৯ জনই অরাজনৈতিক ব্যক্তি। প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই ১৫ জনের মধ্যে ৯ জনই কোনো রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী নন। তারা কেউ দিনমজুর, কেউ দোকানি, কেউ ভ্রাম্যমাণ খেলনা বিক্রেতা। একজন প্রবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রও এদের অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তির পর এ রকম তিনজনের পা কেটে ফেলা হয়েছে। আহত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের অভিযোগÑ কোনো অভিযোগ ছাড়াই পুলিশ তাদের পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পুলিশ মামলাও দিয়েছে। সব ঘটনার ক্ষেত্রেই পুলিশ কথিত বন্দুকযুদ্ধ বা হামলার কথা বলেছে। আহত ১৫ জনের ভাষ্য অনুযায়ী, পুলিশ খুব কাছ থেকে প্রত্যেকের শুধু পায়ে গুলি করেছে। এ ক্ষেত্রে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের উদাহরণ দেয়া যায়। ৪ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে পুলিশের গুলিতে আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নয়ন বাছার। নয়ন বলেন, ৪ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদরঘাটে টিউশনি শেষে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে থেকে একটি বাসে ওঠেন মীরহাজিরবাগে যাওয়ার জন্য। এ সময় কে বা কারা বাসে আগুন দেয়। বাস থেকে দ্রুত নেমে পড়ার পর পুলিশ তাকে আটক করে। পুলিশ জানতে চায় তিনি জামায়াত-শিবির করেন কি না। জবাবে তিনি বলেন তিনি হিন্দু। নাম নয়ন বাছার। এর পরও তিনি রেহাই পাননি। হাঁটুর ওপরে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে সাদা পোশাকের পুলিশ। রাস্তা থেকে শুধু শুধু ধরে নিয়ে গুলি করার ঘটনাও রয়েছে। ধরে নেয়ার দু’দিন পরও গুলিবর্ষণের ঘটনা আছে। লক্ষ্মীপুরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সৌদি প্রবাসীকে গুলি করার ঘটনা ঘটেছে। মিথ্যা অভিযোগে সরাসরি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের গুলিবর্ষণে আহত হয়েছে দোকানদার, রাস্তার টোকাই, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণীর মানুষ। (বিস্তারিত বিবরণের জন্য দেখুন প্রথম আলো, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫)।
রাষ্ট্রের শক্তি প্রয়োগের সীমিত ও সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলোর কথা প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে বিগত দুই মাস ধরে কী হচ্ছে? সুনির্দিষ্ট অপরাধীদের দমন না করে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি আন্দোলনকারী বিরোধী শক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শাসকদলের নেতা-পাতি নেতারা প্রকাশ্যেই নির্মূলের আদেশ দিচ্ছেন। অভিজিত রায়ের মতো মূল্যবান জীবনকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। অথচ এরা সাধারণ মানুষ এবং সরকারবিরোধী ব্যক্তিদের নির্বিচারে হত্যা করছে। বিচারবহির্ভূত এসব হত্যাকাণ্ডে সিভিল সোসাইটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু তাদের উদ্যোগ যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছে একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, জনগণের অর্থে লালিত আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত কর্তাব্যক্তিরা আইনকানুন, রীতিরেওয়াজ, ভদ্রতাসভ্যতার কোনো তোয়াক্কাই করছেন না। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এসব ব্যক্তির দায়িত্বহীন উক্তি নাগরিক সাধারণকে বিচলিত না করে পারে না। আরো উদ্বেগের বিষয়, তারা ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত রাজনীতিকদের ভাষায় কথা বলছেন। সরাসরি শক্তি প্রয়োগ তথা হত্যার প্রকাশ্য নির্দেশ দিচ্ছেন জুনিয়র অফিসারেরাও। অথচ তারা তা পারেন না। তারা সংবিধান ও আইনের ব্যতিক্রমী কাজ করছেন। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ প্রতিটি নাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভের অবিচ্ছেদ্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। বলা হয়েছে, ‘...আইন অনুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না যাহাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম ও সম্মতির হানি ঘটে।’ সুতরাং শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অর্জিত শাসনের ক্ষমতা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা রক্তপাতে নিশ্চিত করা যাবে না। অবশেষে শাসককুলের উদ্দেশে জাতীয় কবি নজরুলের ভাষায় নিবেদন করিÑ ‘শক্তি সিন্ধু মাঝে রহি’ হায় শক্তি পেল না যে/ মরিবার বহুপূর্বে, জানিও মরিয়া গিয়াছে সে।’
লেখক : প্রফেসর, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল : mal55ju@yahoo.com
তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে শাসকেরা বিশেষত ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য বিরোধী ব্যক্তি, দল ও গোষ্ঠীকে নির্মৃল করার প্রয়াস নেয়। কোনো কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার আইনকানুন, বিধিবিধান, নিয়মনীতি এবং মানবাধিকারকে অগ্রাহ্য করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুম-খুন, জুলুম-নির্যাতন ও অন্যায়-অত্যাচর করার অবাধ অধিকার দেয়। আইনের ভাষায় একে বলা হয়, ‘এক্সট্রা জুডিসিয়াল কিলিং’ বা ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’। গোটা বিশ্বে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অমানবিক, অনৈতিক, ক্ষমতাবহির্ভূত ও নির্মম কর্মকাণ্ড বলে বিবেচিত। আইনের বৈধ প্রয়োগে নিয়োজিত অস্ত্রধারীরা অবৈধভাবে নিরস্ত্র মানুষের ওপর এই নির্মম আচরণ করছে।
খ. রাষ্ট্রের শক্তি প্রয়োগের সীমিত বৈধতা থাকলেও শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উৎস নয়। ক্ষমতার উৎস জনগণ। ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী যখন জনগণের সম্মতির ব্যাপারে শঙ্কিত হয়ে ওঠে, তখন তারাই তাদের সৃষ্ট তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলোপ করে। সুপরিকল্পিতভাবে চাণক্য চাতুর্যের সাথে এমন একটি নির্বাচনের আয়োজন করে, যেখানে সম্মতির পরিবর্তে শক্তির নিরঙ্কুশ প্রয়োগ ঘটে। ফিরে আসে মধ্যযুগীয় অভিধা, ‘মাইট ইজ রাইটÑ জোর যার মুলুক তার’।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পূর্বাহ্ণে শক্তির সর্বত্র প্রয়োগ ঘটে তখন, যখন-
০১. তথাকথিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন সব বিরোধী শক্তিকে হত্যা, নিপীড়ন, হামলা ও মামলা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ দুঃসাধ্য করে তোলে; ০২. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীÑ পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি দিয়ে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভীতির সৃষ্টি করে; ০৩. দলীয় ক্যাডার দিয়ে ভোটের বাক্স ভর্তি করে; ০৪. এইচ টি ইমামের ভাষায় উপজেলা পর্যন্ত প্রশাসনিক নির্দেশ পৌঁছে যায় এবং ০৫. এজেন্সি ব্যবহার করে প্রতিবাদী জাতীয় পার্টি প্রধান এরশাদকে দিয়ে ‘রাজনৈতিক তামাশার’ সৃষ্টি করা হয়।
এর পরও ১৫৩ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। অবশিষ্ট আসনে নামকাওয়াস্তে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বেসরকারি মতে ৫ শতাংশ এবং সরকারি মতে ২০ শতাংশ ভোট পড়ে । সুতরাং গরিষ্ঠ জনগণের এই নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তটি বিরোধী জোটের নির্বাচন বর্জনের আহ্বানের প্রতি সমর্থন হিসেবে গণ্য করা যায়।
একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন যখন সরকারের শক্তি প্রয়োগে তথা সরকারি হরতালে ব্যর্থ হয়ে যায়, তখন বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবরোধ আন্দোলন ঘোষণা দেন। আন্দোলনের সফলতায় ভীত সরকারপক্ষ এর মধ্যে ‘নাশকতা’ আবিষ্কার করে। নাশকতা ঘটেও যায়। যতই দিন যেতে থাকে পেট্রলবোমার প্রকোপ ততই বাড়তে থাকে। বিরোধী নেত্রী সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, সরকারি দলই এসব করাচ্ছে। যে পক্ষেরই দায় হোক না কেন দেশ একটি মানবিক বিপর্যয়ের মুখে । সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে চুনোপুঁটি পর্যন্ত আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, আইএস, আলকায়েদার সাথে তুলনা করে দুটো উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। প্রথমত, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বলে অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে ‘কোয়ার্সিভ পাওয়ার’ বা শক্তি প্রয়োগের বৈধতা প্রমাণ করতে চায়। দ্বিতীয়ত, গোটা বিশ্বব্যাপী পাশ্চাত্যের নেতৃত্বে যে ‘ওয়ার অন টেরর’ চলছে তার সাথে একীভূত করে পুরনো প্রভুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়।
অবরোধের দুই মাস অতিক্রান্ত। এ সময়ে মোট নিহতের সংখ্যা ১১৩ (২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত)। এর মধ্যে পেট্রল ও আগুনে পুড়ে মারা গেছে ৬০ জন। তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ ও গণপিটুনিতে মৃতের সংখ্যা ৩৬। ‘সংঘষর্’, ‘গুলিবিদ্ধ’ ও ‘সড়ক দুর্ঘটনায়’ ১৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ, গণপিটুনি, সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ও সড়ক দুর্ঘটনা শিরোনামে যে মৃতের কথা বলা হয়েছে মূলত তা সরকারি বাহিনী আর দলীয় বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ড।
শক্তি প্রয়োগের নিকৃষ্ট নমুনা হচ্ছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’। বন্দুকযুদ্ধ শব্দটির সাথে আমাদের পরিচয় আছে। ১৯৭৪ সালে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন বাম নেতা সিরাজ সিকদার। তারপর সব আমলেই বন্দুকযুদ্ধের গল্প শোনা গেছে। অবরোধ আন্দোলনের পর বন্দুকযুদ্ধ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের সর্বমোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৬ (বন্দুকযুদ্ধ ও গণপিটুনি) + ১৭ ( সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ লাশ ও সড়ক দুর্ঘটনা)= ৫৩। আগেই বলা হয়েছে, বিবিধ নামে বলা হলেও আসলে সবই বন্দুকযুদ্ধের সব নাটকীয়তা। বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের যে পরিসংখ্যান ও রাজনৈতিক পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তা এ রকমÑ
বিএনপি ছাত্রদল : ১১; জামায়াত-শিবির : ১০; সন্ত্রাসী ডাকাত : ৫; চরমপন্থী : ৫; ইয়াবা ব্যবসায়ী : ১; গাড়িচালক : ১; মোজাইক মিস্ত্রি : ১; দোকানকর্মী : ১; মুঠোফোন মেকার : ১ এবং কলেজছাত্র : ১।
যারা বন্দুকযুদ্ধে এবং অন্যভাবে নিহত হয়েছেন, সেসব ভুক্তভোগীর পরিবারগুলো জানায় যে, তাদের প্রায় সবাইকে নিহত হওয়ার এক দিন থেকে দুই সপ্তাহ আগে ধরে নেয়া হয়েছিল। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবিÑ এরা নাশকতার সময় ধরা পড়েছেন। তবে আগে গ্রেফতার হননি; কিন্তু বন্দুকযুদ্ধের শিকার হয়েছেন এমন ঘটনাও আছে। ‘সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চারজনের বিষয়ে তাদের আত্মীয়দের অভিযোগ সরকারি বাহিনী ধরে নিয়ে তাদের হত্যা করেছে। এ চারজনের মধ্যে দু’জন যশোরের মনিরামপুরের বিএনপির কর্মী, একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাত্রশিবিরের কর্মী এবং একজন কুমিল্লার কথিত স্থানীয় সন্ত্রাসী। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে যে সাতজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয় তাদের ছয়জনই বিএনপি ও ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ত। অতীতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পেশাদার অপরাধী নিহত হলেও গেল দুই মাসে নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিএনপি-জামায়াতের কর্মী। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এখন বন্দুকযুদ্ধে নতুন মাত্রা; মৃত্যুর দায় সহযোগীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া। পুলিশ বন্দুকযুদ্ধে নিহতের পরে মৃতের সহযোগীদের নামে হত্যামামলা দায়ের করে ‘ডাবল ফায়দা’ নেয়ার কৌশল অবলম্বন করছে।
মৃতদের পর এবারে পঙ্গু বা আহতদের প্রসঙ্গে আসা যাক। গত দুই মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, অসংখ্য লোক পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ ধরে নিয়ে এদের পায়ে গুলি করেছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ ১৫-এর ৯ জনই অরাজনৈতিক ব্যক্তি। প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই ১৫ জনের মধ্যে ৯ জনই কোনো রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী নন। তারা কেউ দিনমজুর, কেউ দোকানি, কেউ ভ্রাম্যমাণ খেলনা বিক্রেতা। একজন প্রবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রও এদের অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তির পর এ রকম তিনজনের পা কেটে ফেলা হয়েছে। আহত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের অভিযোগÑ কোনো অভিযোগ ছাড়াই পুলিশ তাদের পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পুলিশ মামলাও দিয়েছে। সব ঘটনার ক্ষেত্রেই পুলিশ কথিত বন্দুকযুদ্ধ বা হামলার কথা বলেছে। আহত ১৫ জনের ভাষ্য অনুযায়ী, পুলিশ খুব কাছ থেকে প্রত্যেকের শুধু পায়ে গুলি করেছে। এ ক্ষেত্রে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের উদাহরণ দেয়া যায়। ৪ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে পুলিশের গুলিতে আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নয়ন বাছার। নয়ন বলেন, ৪ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদরঘাটে টিউশনি শেষে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে থেকে একটি বাসে ওঠেন মীরহাজিরবাগে যাওয়ার জন্য। এ সময় কে বা কারা বাসে আগুন দেয়। বাস থেকে দ্রুত নেমে পড়ার পর পুলিশ তাকে আটক করে। পুলিশ জানতে চায় তিনি জামায়াত-শিবির করেন কি না। জবাবে তিনি বলেন তিনি হিন্দু। নাম নয়ন বাছার। এর পরও তিনি রেহাই পাননি। হাঁটুর ওপরে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে সাদা পোশাকের পুলিশ। রাস্তা থেকে শুধু শুধু ধরে নিয়ে গুলি করার ঘটনাও রয়েছে। ধরে নেয়ার দু’দিন পরও গুলিবর্ষণের ঘটনা আছে। লক্ষ্মীপুরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সৌদি প্রবাসীকে গুলি করার ঘটনা ঘটেছে। মিথ্যা অভিযোগে সরাসরি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের গুলিবর্ষণে আহত হয়েছে দোকানদার, রাস্তার টোকাই, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণীর মানুষ। (বিস্তারিত বিবরণের জন্য দেখুন প্রথম আলো, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫)।
রাষ্ট্রের শক্তি প্রয়োগের সীমিত ও সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলোর কথা প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে বিগত দুই মাস ধরে কী হচ্ছে? সুনির্দিষ্ট অপরাধীদের দমন না করে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি আন্দোলনকারী বিরোধী শক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শাসকদলের নেতা-পাতি নেতারা প্রকাশ্যেই নির্মূলের আদেশ দিচ্ছেন। অভিজিত রায়ের মতো মূল্যবান জীবনকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। অথচ এরা সাধারণ মানুষ এবং সরকারবিরোধী ব্যক্তিদের নির্বিচারে হত্যা করছে। বিচারবহির্ভূত এসব হত্যাকাণ্ডে সিভিল সোসাইটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু তাদের উদ্যোগ যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছে একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, জনগণের অর্থে লালিত আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত কর্তাব্যক্তিরা আইনকানুন, রীতিরেওয়াজ, ভদ্রতাসভ্যতার কোনো তোয়াক্কাই করছেন না। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এসব ব্যক্তির দায়িত্বহীন উক্তি নাগরিক সাধারণকে বিচলিত না করে পারে না। আরো উদ্বেগের বিষয়, তারা ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত রাজনীতিকদের ভাষায় কথা বলছেন। সরাসরি শক্তি প্রয়োগ তথা হত্যার প্রকাশ্য নির্দেশ দিচ্ছেন জুনিয়র অফিসারেরাও। অথচ তারা তা পারেন না। তারা সংবিধান ও আইনের ব্যতিক্রমী কাজ করছেন। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ প্রতিটি নাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভের অবিচ্ছেদ্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। বলা হয়েছে, ‘...আইন অনুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না যাহাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম ও সম্মতির হানি ঘটে।’ সুতরাং শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অর্জিত শাসনের ক্ষমতা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা রক্তপাতে নিশ্চিত করা যাবে না। অবশেষে শাসককুলের উদ্দেশে জাতীয় কবি নজরুলের ভাষায় নিবেদন করিÑ ‘শক্তি সিন্ধু মাঝে রহি’ হায় শক্তি পেল না যে/ মরিবার বহুপূর্বে, জানিও মরিয়া গিয়াছে সে।’
লেখক : প্রফেসর, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল : mal55ju@yahoo.com
No comments