পেট্রলবোমাসহ আটকের পর যুবলীগ নেতাদের মন্ত্রীর নির্দেশে ছাড়া হয়: বিএনপি
সরকার দাবি না মানলে অবরোধের পাশাপাশি আগামী রোববার থেকে ফের কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ এ হুঁশিয়ারি দেন। বিবৃতিতে সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, সময় থাকতে জনদাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। জাতিকে রক্ষা করুন, দেশ বাঁচান। জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন। তাহলেই আপনার নিরাপদ প্রস্থানের বিষয়টি জনগণ সহানুভুতির সঙ্গে বিবেচনা করবে। অন্যথায় আগামী রোববার থেকে পুনরায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষনা দিতে আমরা বাধ্য হবো। গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলনের বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান অনির্দিষ্টকালের শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের সকল নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে চলমান অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিগত এক মাসের গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলনে বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোটের ১৫০০০ এর অধিক নেতা-কর্মীকে সরকারি পেটোয়া পুলিশ বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। প্রতিদিন অনেক নেতা-কর্মীকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হচ্ছে। গুম, খুন ও অপহরণের শিকার হচ্ছে অনেক নেতা-কর্মী। রাতের অন্ধকারে নিভৃত জনপদ গ্রাম-গ্রামান্তরে হানাদার বাহিনীর কায়দায় নিরীহ জনগণের বসতবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হচ্ছে। সর্বনাশা অবৈধ এ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার নেশায় পোড়া মাটি নীতি অবলম্বন করেছে। বিএনপির এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিএনপি ও ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বারবার পেট্রলবোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এই হিংস্রতার সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়ে আসছি। অথচ আন্দোলনকারীদেরকে দলীয়করণকৃত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যদের মাধ্যমে বাড়ি থেকে ধরে নেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থকরণের কুমানসে এসব ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা দেখিয়ে সরকার পক্ষে জনগণের সহানুভুতি আদায়ের কূটকৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গতকাল কয়েকটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি প্রকৃত ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে, সরকারদলীয় লোকেরাই এসব পেট্রলবোমাবাজির সঙ্গে জড়িত। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলের কাছে সহানুভূতি আদায়ের জন্য তারা এ ঘৃণ্য ও ন্যক্কারজনক নীতি গ্রহণ করেছে। আমরা ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে জাতিকে অবহিত করেছি। সরকারবিরোধী ন্যায়সঙ্গত গণ-আন্দোলনকে কলুষিত করে রাজনৈতিক হীন স্বার্থ চরিতার্থ করাই এর প্রকৃত উদ্দেশ্য। এটি আওয়ামী রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অপসংস্কৃতি। সালাহউদ্দিন বলেন, চৌদ্দগ্রামে পেট্রলবোমাসহ দুই যুবলীগ নেতা মানিক ও বাবুলকে আটকের পর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সদ্য বিবাহিত স্থানীয় মন্ত্রীর নির্দেশে তাদের ছেড়ে দেয় হয়। জনগণ মনে করে চৌদ্দগ্রাম ট্র্যাজেডির খলনায়ক এই মন্ত্রী ও তার নির্দেশদাতা অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্বরোচিত এ ঘটনায় খালেদা জিয়াসহ ২০-দলীয় জোটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে পরিকল্পিতভাবে হুকুমের আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে বরাবরের মতোই। ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং এ ধরনের সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। বিবৃতিতে বলা হয়, একই রকম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গতকাল ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের ছাত্র গোলাম কিবরিয়াকে মিছিল থেকে ধরে নিয়ে বোমাবাজ সাজানো হয়েছে। শাহজাহানপুরে কাউসার নামে এক যুবককে পুলিশ গুলি করে তাকে বোমাবাজ সাজিয়েছে। চৌদ্দগ্রামে শান্তিপূর্ণ মিছিল থেকে গ্রেপ্তার করে চৌদ্দগ্রাম শিবির সভাপতি বোরহান উদ্দিন, আবু ইউসুফ, আবু সুফিয়ান ও আবদুল আলীমকে থানায় নিয়ে পায়ে গুলি করে তাদেরকে কুমিল্লা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা এ সকল জঘন্য কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের নসিহত করতে চাই- আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে আপনাদের প্রত্যেকটি বেআইনি কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। অতএব, অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের বেআইনি নির্দেশ আপনারা মানতে বাধ্য নন। নিরীহ জনগণের বুকে গুলি চালাবেন না। যে কর্মকর্তা একটি লাশের বদলে দুইটি লাশ ফেলার ঘোষণা দিয়েছেন তার ভবিষ্যৎ পরিণতি কখনোই শুভ হতে পারেনা। বিবৃতিতে বলা হয়, অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী অবশেষে অনুধাবণ করেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে তীব্র দমন-পীড়নের মাধ্যমে জনগনের ন্যায়সঙ্গত গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলন দমানো সম্ভব নয়। তাই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। কিন্তু তিনি বিগত ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে ৫ শতাংশ ভোটের মালিকানা নিয়ে ৯৫ শতাংশ জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রতিরোধের মুখে অবৈধ সরকারের কাঁচের ঘর ভেঙে খান খান হয়ে যাবে অচিরেই। গণ-আন্দোলনে জনতার বিজয় আসন্ন। খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে বিগত ৫ দিনের হরতাল ও চলমান অবরোধ পালন করতে গিয়ে ২০-দলীয় জোটের নিহত নেতাকর্মী, সরকারের এজেন্টদের দিয়ে পেট্রলবোমা নিক্ষেপে নিহত নিরীহ মানুষের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। গণ-আন্দোলনে বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। সেসঙ্গে হরতাল এবং চলমান অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মী এসং দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানান।
No comments