কারা ফোনে আড়ি পাতছে, কারা ইন্টারনেটে ছড়াচ্ছে? by মোর্শেদ নোমান
মুঠোফোনের
পর এবার ল্যান্ডফোনেও নজরদারির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ উদ্যোগ কার্যকর
হলে বিটিসিএলসহ বর্তমানে চালু থাকা চারটি ল্যান্ডফোন গ্রাহকদেরও কল রেকর্ড
পর্যালোচনা করা যাবে। তাই পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক (পিএসটিএন)
অপারেটরদের এর আওতায় নিয়ে আসার জন্য বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের
এনটিএমসির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
মোবাইল বা মুঠোফোনে আড়ি পাতার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অনেক বিষয়ই জনসমক্ষে নিয়ে আসা হচ্ছে। সুস্পষ্ট নীতিমালার অধীনে বিষয়টি পরিচালিত না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হচ্ছে। সুস্পষ্টভাবে কেউই বলছে না কারা আড়ি পাতছে, কারাই বা তা ছড়াচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এনটিএমসির মাধ্যমে আইনগতভাবে এসব বিষয় মনিটর করছে। এ নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে না।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের টেলিফোনে কথোপকথনের নানা ধরনের অডিও ক্লিপ ইন্টারনেটে ছাড়া হচ্ছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা-কর্মীর টেলিফোন সংলাপ ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার টেলিফোন আলাপও চলে আসে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে।
বাংলালিকস নামের একটি সাইটে নিয়মিতভাবেই তুলে ধরা হচ্ছে নানা ধরনের টেলিফোন সংলাপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি।
টেলিযোগাযোগ আইন বিশেষজ্ঞ তানজীব-উল আলম মনে করেন, বাংলালিকস যা করছে তা শতভাগ ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনে অপরাধ। তারা এসব অডিও কোথায় পাচ্ছে, সে বিষয়ে অনুসন্ধান প্রয়োজন। আড়ি পাতার মাধ্যমে অন্যের টেলিফোন কথোপকথন রেকর্ড করার অধিকার সংশ্লিষ্ট সংস্থা ছাড়া অন্য কারও সুযোগ নেই। তাই এর উৎস খুঁজে বের করতে সরকারেরই ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন।
বিটিআরসির কর্মকর্তারা বলছেন, টেলিযোগাযোগ আইনের ক্ষমতাবলেই ‘আইনগতভাবেই’ টেলিফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে। আইনটির ৯৭(ক) ধারায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যবহারকারীর পাঠানো বার্তা ও কথোপকথন প্রতিহত, ধারণ বা এ-সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহে সরকার সময় সময় নির্ধারিত সময়ের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা বা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাকে কোনো ক্ষমতা দিতে পারবে।’
আইনে ‘সরকার’ বলতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বোঝানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমেই এ ধারা প্রযোজ্য হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে টেলিফোন কথোপকথনের অডিও ক্লিপ পাওয়া যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, এনটিএমসির পক্ষ থেকে এগুলো বাইরে দেওয়ার সুযোগ নেই। এসব বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এনটিএমসি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত টেলিযোগাযোগ আইনে ধারাটি ছিল না। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালে সংশোধন করে এ ধারাটি যোগ করা হয়।
এ আইন অনুসারে বর্তমানে ছয়টি মুঠোফোন কোম্পানির ফোনে আড়ি পাতা হয়। আড়ি পাতার জন্য একটি জাতীয় তদারকি কেন্দ্র গঠন (ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার-এনটিএমসি) করা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এর প্রধান। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই কেন্দ্র কাজ শুরু করেছে।
কিন্তু আড়ি পাতার বিষয়টির অপপ্রয়োগ নিয়ে চিন্তিত আইনজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মীরা। তাঁদের মতে, অন্যায়ভাবে কোনো ব্যক্তিগত বিষয়ে গোপনে অনুপ্রবেশ বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আড়ি পাতা গ্রহণযোগ্য নয়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান জানান, আড়ি পাতার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা থাকা উচিত। কখন কার টেলিফোনে আড়ি পাতা হবে, সে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ থাকতে হবে এবং পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রিতভাবে হতে হবে।
আড়ি পাতার বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাপীও বিতর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ন্ত্রণমূলক কাঠামো রয়েছে। একটি বিশেষ আদালতের অনুমতি ছাড়া সেখানে আড়ি পাতা আইনত নিষিদ্ধ। এ ছাড়া রয়েছে সিনেটরদের নিয়ে গঠিত সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটি।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি জৈল সিং রাষ্ট্রপতি ভবনের টেলিফোনে আড়ি পাতার জন্য রাজীব গান্ধী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন। ১৯৯০ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথাবার্তা যখন চলছিল, সেই সময় চন্দ্রশেখরের টেলিফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছিল। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত টেলিফোনে আড়ি পাতার ঘটনায় ১৯৭৪ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে বিদায় নিতে হয়েছিল।
গত বছরের অক্টোবরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পেশ করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাপক আড়ি পাতা প্রযুক্তি অনলাইন গোপনীয়তার নির্বিচার লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ঘোষণায় নিশ্চিত করা অধিকারের মূল বিষয়বস্তুর ওপর আঘাত। সন্ত্রাস দমন-সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরির জন্য জাতিসংঘের বিশেষভাবে নিয়োজিত মানবাধিকার আইনজীবী বেন এমারসন প্রতিবেদনে বলেন, জাতিসংঘের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ঘোষণার ১৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির নিজস্ব গোপনীয়, পরিবার, বাড়ি ও অনুরূপ বিষয়কে অযৌক্তিক বা বেআইনি হস্তক্ষেপের লক্ষ্যবস্তু বানানো যাবে না, তেমনি তার সুনাম ও সম্মানের ওপর বেআইনি আঘাত করা যাবে না।
এর আগে ওই বছরের জুলাই মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার নাভি পিল্লাই এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আড়ি পাতা কর্মসূচিতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে সমালোচনা করেছিলেন।
বাংলাদেশেও টেলিফোনে আড়ি পাতার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হয়। বিটিআরসির একটি সূত্রমতে, ২০১০ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে একটি গোয়েন্দা সংস্থা মন্ত্রী ও সরকারদলীয় কয়েকজন নেতার মুঠোফোনে আড়ি পাতে এবং এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতনদের কাছে পাঠায়। এ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে হইচই পড়ে যায়। পরে খোঁজ নিয়ে সরকার জানতে পারে, আড়ি পাতার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানত না। কীভাবে আড়ি পাতা হয়েছে, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোয়েন্দা সংস্থা নিজের মতো করেই আড়ি পাতার কাজ করেছে।
পরে ওই বছরের ৭ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কার্যপত্রে বলা হয়, রাষ্ট্র ও জননিরাপত্তার স্বার্থে মুঠোফোনে আড়ি পাতার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই নিয়ন্ত্রণ করবে।
মোবাইল বা মুঠোফোনে আড়ি পাতার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অনেক বিষয়ই জনসমক্ষে নিয়ে আসা হচ্ছে। সুস্পষ্ট নীতিমালার অধীনে বিষয়টি পরিচালিত না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হচ্ছে। সুস্পষ্টভাবে কেউই বলছে না কারা আড়ি পাতছে, কারাই বা তা ছড়াচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এনটিএমসির মাধ্যমে আইনগতভাবে এসব বিষয় মনিটর করছে। এ নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে না।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের টেলিফোনে কথোপকথনের নানা ধরনের অডিও ক্লিপ ইন্টারনেটে ছাড়া হচ্ছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা-কর্মীর টেলিফোন সংলাপ ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার টেলিফোন আলাপও চলে আসে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে।
বাংলালিকস নামের একটি সাইটে নিয়মিতভাবেই তুলে ধরা হচ্ছে নানা ধরনের টেলিফোন সংলাপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি।
টেলিযোগাযোগ আইন বিশেষজ্ঞ তানজীব-উল আলম মনে করেন, বাংলালিকস যা করছে তা শতভাগ ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনে অপরাধ। তারা এসব অডিও কোথায় পাচ্ছে, সে বিষয়ে অনুসন্ধান প্রয়োজন। আড়ি পাতার মাধ্যমে অন্যের টেলিফোন কথোপকথন রেকর্ড করার অধিকার সংশ্লিষ্ট সংস্থা ছাড়া অন্য কারও সুযোগ নেই। তাই এর উৎস খুঁজে বের করতে সরকারেরই ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন।
বিটিআরসির কর্মকর্তারা বলছেন, টেলিযোগাযোগ আইনের ক্ষমতাবলেই ‘আইনগতভাবেই’ টেলিফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে। আইনটির ৯৭(ক) ধারায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যবহারকারীর পাঠানো বার্তা ও কথোপকথন প্রতিহত, ধারণ বা এ-সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহে সরকার সময় সময় নির্ধারিত সময়ের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা বা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাকে কোনো ক্ষমতা দিতে পারবে।’
আইনে ‘সরকার’ বলতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বোঝানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমেই এ ধারা প্রযোজ্য হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে টেলিফোন কথোপকথনের অডিও ক্লিপ পাওয়া যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, এনটিএমসির পক্ষ থেকে এগুলো বাইরে দেওয়ার সুযোগ নেই। এসব বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এনটিএমসি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত টেলিযোগাযোগ আইনে ধারাটি ছিল না। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালে সংশোধন করে এ ধারাটি যোগ করা হয়।
এ আইন অনুসারে বর্তমানে ছয়টি মুঠোফোন কোম্পানির ফোনে আড়ি পাতা হয়। আড়ি পাতার জন্য একটি জাতীয় তদারকি কেন্দ্র গঠন (ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার-এনটিএমসি) করা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এর প্রধান। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই কেন্দ্র কাজ শুরু করেছে।
কিন্তু আড়ি পাতার বিষয়টির অপপ্রয়োগ নিয়ে চিন্তিত আইনজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মীরা। তাঁদের মতে, অন্যায়ভাবে কোনো ব্যক্তিগত বিষয়ে গোপনে অনুপ্রবেশ বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আড়ি পাতা গ্রহণযোগ্য নয়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান জানান, আড়ি পাতার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা থাকা উচিত। কখন কার টেলিফোনে আড়ি পাতা হবে, সে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ থাকতে হবে এবং পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রিতভাবে হতে হবে।
আড়ি পাতার বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাপীও বিতর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ন্ত্রণমূলক কাঠামো রয়েছে। একটি বিশেষ আদালতের অনুমতি ছাড়া সেখানে আড়ি পাতা আইনত নিষিদ্ধ। এ ছাড়া রয়েছে সিনেটরদের নিয়ে গঠিত সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটি।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি জৈল সিং রাষ্ট্রপতি ভবনের টেলিফোনে আড়ি পাতার জন্য রাজীব গান্ধী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন। ১৯৯০ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথাবার্তা যখন চলছিল, সেই সময় চন্দ্রশেখরের টেলিফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছিল। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত টেলিফোনে আড়ি পাতার ঘটনায় ১৯৭৪ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে বিদায় নিতে হয়েছিল।
গত বছরের অক্টোবরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পেশ করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাপক আড়ি পাতা প্রযুক্তি অনলাইন গোপনীয়তার নির্বিচার লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ঘোষণায় নিশ্চিত করা অধিকারের মূল বিষয়বস্তুর ওপর আঘাত। সন্ত্রাস দমন-সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরির জন্য জাতিসংঘের বিশেষভাবে নিয়োজিত মানবাধিকার আইনজীবী বেন এমারসন প্রতিবেদনে বলেন, জাতিসংঘের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ঘোষণার ১৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির নিজস্ব গোপনীয়, পরিবার, বাড়ি ও অনুরূপ বিষয়কে অযৌক্তিক বা বেআইনি হস্তক্ষেপের লক্ষ্যবস্তু বানানো যাবে না, তেমনি তার সুনাম ও সম্মানের ওপর বেআইনি আঘাত করা যাবে না।
এর আগে ওই বছরের জুলাই মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার নাভি পিল্লাই এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আড়ি পাতা কর্মসূচিতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে সমালোচনা করেছিলেন।
বাংলাদেশেও টেলিফোনে আড়ি পাতার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হয়। বিটিআরসির একটি সূত্রমতে, ২০১০ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে একটি গোয়েন্দা সংস্থা মন্ত্রী ও সরকারদলীয় কয়েকজন নেতার মুঠোফোনে আড়ি পাতে এবং এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতনদের কাছে পাঠায়। এ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে হইচই পড়ে যায়। পরে খোঁজ নিয়ে সরকার জানতে পারে, আড়ি পাতার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানত না। কীভাবে আড়ি পাতা হয়েছে, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোয়েন্দা সংস্থা নিজের মতো করেই আড়ি পাতার কাজ করেছে।
পরে ওই বছরের ৭ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কার্যপত্রে বলা হয়, রাষ্ট্র ও জননিরাপত্তার স্বার্থে মুঠোফোনে আড়ি পাতার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই নিয়ন্ত্রণ করবে।
No comments