রাজনৈতিক সংকট- এই পরিস্থিতিতে নাগরিকদের ভূমিকা কী? by আলী রীয়াজ
বাংলাদেশের
রাজনীতি যে এক দিকনির্দেশনাহীন পথে যাত্রা শুরু করেছে, তা আমাদের স্বীকার
করে নেওয়া দরকার। এক মাস ধরে বিরাজমান পরিস্থিতির শেষ কোথায়, এই প্রশ্ন
সবাই প্রতিনিয়তই করছেন। কিন্তু এর উত্তর যে কার কাছে আছে, সেটা কেউ জানেন
বলে মনে হয় না। সমস্যা সমাধানে কমবেশি সবাই তাঁদের মতামত দেন, পথ নির্দেশ
করেন। কিন্তু সমাধানের চাবিকাঠি কার বা কাদের হাতে, এই প্রশ্নের কোনো উত্তর
পাওয়া যায় না। গত এক মাসে সরকার ও বিরোধীদের কথাবার্তায় এটা স্পষ্ট
যে কেউ আর কাউকে সামান্য ছাড় দিতে রাজি নয়। উভয় পক্ষের ধারণা, তাদের
অনুসৃত পথেই এই পরিস্থিতির অবসান ঘটবে এবং তাতে যে তাদের বিজয় ঘটবেই, এই
বিষয়েও তারা নিশ্চিত। বিজয় কেবল সময়ের ব্যাপার বলেই উভয় পক্ষের ধারণা,
যে কারণে আর কোনো রকম বিকল্প তাদের বিবেচনায় নেই, বিবেচনায় নেওয়াকেও
তারা পরাজয়ের অংশ বলেই ধরে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের একাংশ এবং তার মিত্ররা
মনে করছে যে এই দফায় পরাজিত করা গেলে দল হিসেবে বিএনপির অবসান ঘটবে। সেই
কারণে তারা আর পিছপা হতে রাজি নয়। তাদের আচরণে এটা স্পষ্ট যে তারা মনে
করে, এই ধরনের চাপের মুখে যেকোনো ধরনের বিকল্প খোঁজার অর্থ হলো রাজনৈতিক
পরাজয়, যার ফলে সংগঠন ও কর্মীদের মনোবলের ওপরে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া
পড়বে।
অন্যদিকে, সম্ভবত বিএনপির নেতা খালেদা জিয়া এবং তাঁর দলের নেতাদের একাংশ মনে করে যে এই মুহূর্তে কোনো রকম অর্জন ছাড়া পিছিয়ে এলে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে, যা শিগগিরই পুষিয়ে তোলা সম্ভব হবে না। তা ছাড়া, ক্ষমতাসীন দলের সাফল্যের পরিণতিতে ভিন্নমত এবং বিরোধী রাজনীতির জায়গা আর থাকবে না। তারা ধারণা করে যে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখলে তারাই বিজয়ী হবে। দুই পক্ষের বিবেচনাতেই রয়েছে ‘পরাজয়ের মূল্য’; আর সেই মূল্য এত বেশি যে তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই বলেই তাদের ধারণা।
তাদের আচরণে স্পষ্ট যে উভয় পক্ষই দল, নেতা ও কর্মী—এই তিন বিবেচনার বাইরে আর কিছু বিবেচনায় নিচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে স্পষ্ট যে দেশের সাধারণ নাগরিকদের স্বার্থ, জীবনের নিরাপত্তা, দেশের ভবিষ্যৎ—এগুলো বিবেচনার বাইরে চলে গেছে। সাম্প্রতিক কালে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের কথাবার্তা লক্ষ করলেই দেখা যায় যে সাধারণ মানুষের কাছে তা কীভাবে প্রতিভাত হবে, সেটা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত নন। এসএসসি পরীক্ষার সময় বিএনপির হরতাল-অবরোধ বিষয়ে বিএনপির নেতা মেজর হাফিজউদ্দিন আহম্মদ যখন বলেন যে ‘কিসের পরীক্ষা, কিসের কী?’—তখন তিনি এই নিয়ে চিন্তিত নন যে তাঁর এই বক্তব্য দেশের পৌনে ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ওপরে কি প্রতিক্রিয়া ফেলবে। খালেদা জিয়ার সদ্যপ্রয়াত পুত্র আরাফাত রহমানের পরিবারের মালয়েশিয়ায় ফিরে যাওয়ার কারণ হিসেবে তাঁর শিশুকন্যাদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখার কথা যখন বিএনপি বলে, তখন তারা বিবেচনায় নেয় না যে একই সময়ে দেশের শিশুদের শিক্ষাজীবন কীভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
কিন্তু এই বিষয়ে কথা বলার সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা, সমর্থক বা কর্মীরা ১৯৯৬ সালে পরীক্ষা পেছানোর ঘটনা, ২০০৫ সালে হরতালের ঘটনা বিস্মৃত হন এবং তার জন্য কোনো দায়িত্ব নেওয়ার তাগিদ অনুভব করেন না। প্রধানমন্ত্রী যখন আইন রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যত দায়মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন, তা সাধারণ মানুষ কীভাবে গ্রহণ করবে, তার পরিণতি সাধারণ মানুষকে কীভাবে বইতে হবে, সে বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে বলে মনে হয় না। এ ধরনের কথাবার্তা, আচরণ ও নির্দেশনা আইনের শাসনের অনুপস্থিতির স্মারক ছাড়া আর কিছু নয়। সরকারি জোটের একজন সাংসদ যখন সংসদে দেওয়া বক্তৃতায় বিএনপি নেতাকে গ্যাংগ্রিন বর্ণনা করে ‘কেটে ফেলার’ আহ্বান জানান, তখন তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগের লক্ষণ দেখি না।
এগুলো শুধু কথার বিষয় নয়। এক মাস ধরে চলমান সহিংসতার একটি প্রধান দিক হচ্ছে ‘পেট্রলবোমা’ নিক্ষেপ করে মানুষকে হত্যা করা—এগুলোর নিন্দায়, প্রতিরোধের প্রশ্নে বিএনপির নেতাদের কণ্ঠস্বরে যে দৃঢ়তার অভাব, সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব, তা সহজেই লক্ষণীয়। এই বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনোভাব দলের নেতারা বুঝতে চান বলে মনে হয় না। নিহত ব্যক্তিদের পরিজনদের আহাজারি, আহত ব্যক্তিদের আর্তনাদ তাঁদের এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহী করে না। তাঁদের কাছ থেকে আমরা এমন কিছু শুনি না, যা আমাদের আশাবাদী করতে পারে।
অন্য পক্ষে এসব আক্রমণকারীকে চিহ্নিত করা, আটক করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতার দায় কী করে সরকার এড়িয়ে চলে? তাতে এই সন্দেহ ঘনীভূত হয় যে এই থেকে সরকারি দল রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণে পিছপা নয়। প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণার বাইরে দলগতভাবে আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতাসীন জোটের অন্য দলগুলো এই নিয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রদান করেছে, যাতে সাধারণ মানুষ যুক্ত হতে পারবে? তারা কি সম্মিলিতভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে? এসব প্রশ্ন অপ্রীতিকর, কিন্তু এই প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যাওয়ার আর সুযোগ নেই। এগুলো থেকে এই উপসংহারে পৌঁছানো কি ভুল যে দলের জন্য যা লাভজনক বলে বিবেচিত হচ্ছে, দলের কট্টর সমর্থকদের যা উদ্দীপিত করছে, তার বাইরে সাধারণ মানুষ নিয়ে ভাবনার সময় দলগুলোর নেই?
প্রাসঙ্গিকভাবে মনে রাখা দরকার যে এই সময়ে যারা মারা গেছে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে কিংবা আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর হাতে; আইনবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে যারা, তাদের সিংহভাগই সাধারণ মানুষ। তাদের জন্য গত কয়েক দশকের রাজনীতি কোনো প্রত্যক্ষ ইতিবাচক পরিবর্তন আনেনি। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাই তাঁদের জীবনহানির কারণ হয়েছে। সরকার ও বিরোধীদের অনমনীয় মনোভাবের ফলে নাগরিকদের দুর্ভোগ বাড়ছে প্রতিদিন, তাদের রুটি-রুজি উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তারা জিম্মি হয়ে পড়েছে।
সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের, নাগরিকদের ভূমিকা কী? খুব সহজ করে এই কথাটি কমবেশি সবাই বলেন যে যা ঘটছে তা হচ্ছে এক দলের ক্ষমতায় থাকার এবং এক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াই। কথাটি অংশত সত্য। ১৯৯১ সাল থেকে আমরা তা-ই দেখে আসছি। কিন্তু একে নিয়তি-নির্ধারিত বলে মেনে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। এই পরিস্থিতি কেউ চাপিয়ে দেয়নি। বাংলাদেশের মানুষ ২০০৮ সাল পর্যন্ত তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেই এই চক্র তৈরি করেছে। ফলে আজ যারা এই চক্রের কুফল দেখতে পাচ্ছে, সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা উপলব্ধি করতে পারছে, মানুষের মৌলিক মানবাধিকার লুণ্ঠিত হচ্ছে বলে মনে করছে, তাদের ওপরেই দায়িত্ব বর্তায় এই চক্র ভাঙার পথ তৈরি করা। তা করতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই। সে জন্যই তাদের এগিয়ে আসতে হবে এই পরিস্থিতির অবসানে। একই সঙ্গে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য তাদের সক্রিয়তা ছাড়া এই বৃত্তচক্র ভাঙা সম্ভব হবে না।
আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।
অন্যদিকে, সম্ভবত বিএনপির নেতা খালেদা জিয়া এবং তাঁর দলের নেতাদের একাংশ মনে করে যে এই মুহূর্তে কোনো রকম অর্জন ছাড়া পিছিয়ে এলে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে, যা শিগগিরই পুষিয়ে তোলা সম্ভব হবে না। তা ছাড়া, ক্ষমতাসীন দলের সাফল্যের পরিণতিতে ভিন্নমত এবং বিরোধী রাজনীতির জায়গা আর থাকবে না। তারা ধারণা করে যে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখলে তারাই বিজয়ী হবে। দুই পক্ষের বিবেচনাতেই রয়েছে ‘পরাজয়ের মূল্য’; আর সেই মূল্য এত বেশি যে তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই বলেই তাদের ধারণা।
তাদের আচরণে স্পষ্ট যে উভয় পক্ষই দল, নেতা ও কর্মী—এই তিন বিবেচনার বাইরে আর কিছু বিবেচনায় নিচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে স্পষ্ট যে দেশের সাধারণ নাগরিকদের স্বার্থ, জীবনের নিরাপত্তা, দেশের ভবিষ্যৎ—এগুলো বিবেচনার বাইরে চলে গেছে। সাম্প্রতিক কালে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের কথাবার্তা লক্ষ করলেই দেখা যায় যে সাধারণ মানুষের কাছে তা কীভাবে প্রতিভাত হবে, সেটা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত নন। এসএসসি পরীক্ষার সময় বিএনপির হরতাল-অবরোধ বিষয়ে বিএনপির নেতা মেজর হাফিজউদ্দিন আহম্মদ যখন বলেন যে ‘কিসের পরীক্ষা, কিসের কী?’—তখন তিনি এই নিয়ে চিন্তিত নন যে তাঁর এই বক্তব্য দেশের পৌনে ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ওপরে কি প্রতিক্রিয়া ফেলবে। খালেদা জিয়ার সদ্যপ্রয়াত পুত্র আরাফাত রহমানের পরিবারের মালয়েশিয়ায় ফিরে যাওয়ার কারণ হিসেবে তাঁর শিশুকন্যাদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখার কথা যখন বিএনপি বলে, তখন তারা বিবেচনায় নেয় না যে একই সময়ে দেশের শিশুদের শিক্ষাজীবন কীভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
কিন্তু এই বিষয়ে কথা বলার সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা, সমর্থক বা কর্মীরা ১৯৯৬ সালে পরীক্ষা পেছানোর ঘটনা, ২০০৫ সালে হরতালের ঘটনা বিস্মৃত হন এবং তার জন্য কোনো দায়িত্ব নেওয়ার তাগিদ অনুভব করেন না। প্রধানমন্ত্রী যখন আইন রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যত দায়মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন, তা সাধারণ মানুষ কীভাবে গ্রহণ করবে, তার পরিণতি সাধারণ মানুষকে কীভাবে বইতে হবে, সে বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে বলে মনে হয় না। এ ধরনের কথাবার্তা, আচরণ ও নির্দেশনা আইনের শাসনের অনুপস্থিতির স্মারক ছাড়া আর কিছু নয়। সরকারি জোটের একজন সাংসদ যখন সংসদে দেওয়া বক্তৃতায় বিএনপি নেতাকে গ্যাংগ্রিন বর্ণনা করে ‘কেটে ফেলার’ আহ্বান জানান, তখন তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগের লক্ষণ দেখি না।
এগুলো শুধু কথার বিষয় নয়। এক মাস ধরে চলমান সহিংসতার একটি প্রধান দিক হচ্ছে ‘পেট্রলবোমা’ নিক্ষেপ করে মানুষকে হত্যা করা—এগুলোর নিন্দায়, প্রতিরোধের প্রশ্নে বিএনপির নেতাদের কণ্ঠস্বরে যে দৃঢ়তার অভাব, সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব, তা সহজেই লক্ষণীয়। এই বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনোভাব দলের নেতারা বুঝতে চান বলে মনে হয় না। নিহত ব্যক্তিদের পরিজনদের আহাজারি, আহত ব্যক্তিদের আর্তনাদ তাঁদের এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহী করে না। তাঁদের কাছ থেকে আমরা এমন কিছু শুনি না, যা আমাদের আশাবাদী করতে পারে।
অন্য পক্ষে এসব আক্রমণকারীকে চিহ্নিত করা, আটক করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতার দায় কী করে সরকার এড়িয়ে চলে? তাতে এই সন্দেহ ঘনীভূত হয় যে এই থেকে সরকারি দল রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণে পিছপা নয়। প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণার বাইরে দলগতভাবে আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতাসীন জোটের অন্য দলগুলো এই নিয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রদান করেছে, যাতে সাধারণ মানুষ যুক্ত হতে পারবে? তারা কি সম্মিলিতভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে? এসব প্রশ্ন অপ্রীতিকর, কিন্তু এই প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যাওয়ার আর সুযোগ নেই। এগুলো থেকে এই উপসংহারে পৌঁছানো কি ভুল যে দলের জন্য যা লাভজনক বলে বিবেচিত হচ্ছে, দলের কট্টর সমর্থকদের যা উদ্দীপিত করছে, তার বাইরে সাধারণ মানুষ নিয়ে ভাবনার সময় দলগুলোর নেই?
প্রাসঙ্গিকভাবে মনে রাখা দরকার যে এই সময়ে যারা মারা গেছে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে কিংবা আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর হাতে; আইনবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে যারা, তাদের সিংহভাগই সাধারণ মানুষ। তাদের জন্য গত কয়েক দশকের রাজনীতি কোনো প্রত্যক্ষ ইতিবাচক পরিবর্তন আনেনি। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাই তাঁদের জীবনহানির কারণ হয়েছে। সরকার ও বিরোধীদের অনমনীয় মনোভাবের ফলে নাগরিকদের দুর্ভোগ বাড়ছে প্রতিদিন, তাদের রুটি-রুজি উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তারা জিম্মি হয়ে পড়েছে।
সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের, নাগরিকদের ভূমিকা কী? খুব সহজ করে এই কথাটি কমবেশি সবাই বলেন যে যা ঘটছে তা হচ্ছে এক দলের ক্ষমতায় থাকার এবং এক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াই। কথাটি অংশত সত্য। ১৯৯১ সাল থেকে আমরা তা-ই দেখে আসছি। কিন্তু একে নিয়তি-নির্ধারিত বলে মেনে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। এই পরিস্থিতি কেউ চাপিয়ে দেয়নি। বাংলাদেশের মানুষ ২০০৮ সাল পর্যন্ত তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেই এই চক্র তৈরি করেছে। ফলে আজ যারা এই চক্রের কুফল দেখতে পাচ্ছে, সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা উপলব্ধি করতে পারছে, মানুষের মৌলিক মানবাধিকার লুণ্ঠিত হচ্ছে বলে মনে করছে, তাদের ওপরেই দায়িত্ব বর্তায় এই চক্র ভাঙার পথ তৈরি করা। তা করতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই। সে জন্যই তাদের এগিয়ে আসতে হবে এই পরিস্থিতির অবসানে। একই সঙ্গে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য তাদের সক্রিয়তা ছাড়া এই বৃত্তচক্র ভাঙা সম্ভব হবে না।
আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।
No comments