অভয় দিলে বলতে পারি- কতো সহিব নিত্য by মাকিদ হায়দার

মহাত্মা গান্ধীর জন্ম ১৮৬৯ সালে, ভারতে। তিনি তার কর্মক্ষেত্র শুরু করেছিলেন কালো মানুষের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায়। পেশায় ছিলেন ব্যারিস্টার। দক্ষিণ আফ্রিকায় সেই সময় ছিল ব্রিটিশদের শাসন, শোষণ এবং অমানবিক অত্যাচার। সেই একই অত্যাচারের শাসন-শোষণ ছিল তারই জন্মভূমি ভারতে। ইংরেজ শাসনের প্রতি বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল তার জন্মের ১২ বছর আগে; ১৮৫৭ সালে। সিপাহি বিদ্রোহের নায়কদের ইংরেজরা কাউকে কাউকে দিয়েছিল ফাঁসি এবং দ্বীপান্তর আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে। এমনকি দিলি্লর বাদশা বাহাদুর শাহ জাফরকে নির্বাসিত করেছিল ব্রহ্মদেশ বা বার্মাতে। সবকিছুই ঘটেছিল করমচাঁদ গান্ধীর জন্মের এক যুগ আগে।
করমচাঁদ গান্ধীর জন্মের ৭ বছর পর বোম্বে শহরে জন্মেছিলেন মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ, ১৮৭৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর। পরবর্তী সময়ে দু'জনই হয়েছিলেন ব্যারিস্টার। করমচাঁদ তার আইন ব্যবসা শুরুর আগে স্বচক্ষে অবলোকন করেছিলেন ব্রিটিশ শাসিত আফ্রিকান জনগণের ওপর ব্রিটিশদের অকথ্য নির্যাতন। অন্যদিকে ভারতবর্ষেও শুরু হয়েছিল এদেশীয় জমিদারদের সাহায্য-সহযোগিতায় নির্যাতন এবং ইংরেজদের পদলেহনকারী এক দল অভিজাত, সুবিধাবাদী ধনিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় লর্ড কর্নওয়ালিস এ দেশে সূত্রপাত করেছিলেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের।
কোনো শাসন ব্যবস্থা যে চিরস্থায়ী নয়_ ইংরেজ শাসকরা হয়তো সেটি জেনেও না জানার ভান করেছিল। কেননা তাদের শাসন ব্যবস্থাকে চিরস্থায়ী করার পেছনে যাদের সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল, তারা সবাই ছিলেন এ দেশেরই রাজা-মহারাজা, জমিদার, মুৎসুদ্দি শ্রেণীর মানুষ। সেই রাজা-মহারাজা এবং জমিদার শ্রেণীভুক্তদের ভেতরে ছিলেন যশোর নিবাসী দ্বারকানাথ ঠাকুর। অতি অল্প সময়ের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য করে প্রভূত অর্থের মালিক হওয়ার সুবাদে শাসক ইংরেজদের সাহচর্য পেতে, এমনকি সুনজরে আসতে দ্বারকানাথের বেশি সময় ব্যয় করতে হয়নি। শাসক শ্রেণীর সঙ্গে হৃদ্য যখন তুঙ্গে, তখন দ্বারকানাথকে ইংরেজ শাসকরা সম্মানিত করেছিলেন 'প্রিন্স' উপাধি দিয়ে। অষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ, বিংশ শতাব্দীতে ইংরেজরা তাদের শাসন ক্ষমতাকে আরও দৃঢ় করার মানসে স্থানীয় সামন্ত প্রভুদের সম্মানিত করেছিল রায়বাহাদুর, রায়সাহেব, খানবাহাদুর, খানসাহেব উপাধি দিয়ে। ওই উপাধিপ্রাপ্তরা স্বদেশ উদ্ধারের চেষ্টা না করে করেছিলেন বিদেশি প্রভুদের গুণকীর্তন এবং সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর চালিয়ে যেতেন অত্যাচার, নিপীড়ন। বিশেষত কৃষক শ্রেণীই ছিল তাদের লক্ষ্যবস্তু। বার্ষিক খাজনার বিনিময়ে রাজা-মহারাজা, জমিদার শ্রেণীর বেতনভুকরা শুধু জমিদার বা সামন্তশ্রেণীর লোকদেরই উপকার করেনি; কৃষকের খাজনার টাকা দিয়ে যেমন কলকাতার প্রাণকেন্দ্র, আশপাশে যেসব এলিট শ্রেণীর বসবাস ছিল, তাদেরই পাশাপাশি কিংবা খালি জায়গায় পূর্ববঙ্গের কৃষকদের শোষিত অর্থে নির্মাণ করে দিয়েছিল দোতলা, তিনতলা বাড়ি, পুকুর, বাগান। এবং কলকাতার উপকণ্ঠেই সেই সময়ে অনেক জমিদারের ছিল নিজস্ব বাগানবাড়ি। নাচঘর।
সেই দোতলা, তিনতলা বাড়ি নির্মাণের সময়ই নায়েব, তালুকদার, মুৎসুদ্দিরাও গোপনে বানিয়ে নিয়েছিল তাদের বাসস্থান। পূর্ববঙ্গের শ্রমলব্ধ কৃষকের টাকায় কলকাতার ভবানীপুর কিংবা জোড়াসাঁকোতে যেসব পুরনো বাড়িঘর এখনও দুই-একটি দাঁড়িয়ে আছে, সেই বাড়িগুলো দেখলেই বোঝা যায় তা ভগ্নদশায় জীর্ণশীর্ণ। এই জীর্ণশীর্ণ ভগ্নদশার বাড়িগুলোর একাধিক শরিক, ভাগীদার, যার ফলে ভবনগুলোর ওই মরণদশা। সেদিক থেকে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি, জমিদার বাড়িটি অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একান্ত প্রচেষ্টায়। ভবনটির পেছনের অংশের কিছু জায়গা, পুকুর নাকি ডেভেলপার কোম্পানির কাছে ঠাকুর পরিবারের কারও কারও বিক্রি করার পাঁয়তারার খবরটি যখন প্রচারিত হয়েছিল, তখনই পশ্চিমবঙ্গ সরকার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে ভবনটি রক্ষা পেয়েছিল ডেভেলপারদের হাত থেকে। কিন্তু ঠাকুর পরিবারের আরও একটি বাড়ি নিউমার্কেটের কাছে সদর স্ট্রিটে, সেটি বেহাত হয়ে গেছে অনেক আগে। সে ভবনটিতে বসে কবি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন তার বিখ্যাত কবিতা 'আজি এ প্রভাতে রবির কর...'।
সেই রবির কর মাথায় নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকায় আইন পেশার সঙ্গে সঙ্গে করমচাঁদ ভেবেছিলেন তার স্বদেশের মুক্তির কথা। ইংরেজ শাসনের পরাজয়। অন্যদিকে বোম্বে নিবাসী মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ হয়তো ভাবেননি স্বদেশের মুক্তির কথা। যেহেতু জিন্নাহ ছিলেন মনেপ্রাণে ইংরেজ কালচারের একজন নবীন ব্যারিস্টার। কথাবার্তা, চলনে-বলনে কেউ জানতেই পারেননি এই জিন্নাহ নামক লোকটির অঙ্গুলি হেলনে এবং করমচাঁদের শত চেষ্টাতেও ভারতবর্ষ যেন দ্বিখণ্ডিত না হয়, কিন্তু অঙ্গুলি যিনি হেলালেন, তারই অদূরদর্শিতার কারণে হিন্দু-মুসলিমদের হাজার বছরের ঐক্যে ছেদ পড়ল ১৯৪০-এর পর থেকে। একদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ; অন্যদিকে, ব্রিটিশদের ভারত ছাড়ার তাগিদ_ সবকিছু মিলিয়ে ১৯৪৭-এ ভারতবর্ষকে দ্বিখণ্ডিত করতে গিয়ে বিহার, পাঞ্জাব, নোয়াখালী, জব্বলপুর, আহমেদাবাদসহ বিভিন্ন জায়গায় নিরীহ মানুষ নিহত হলো দুই সম্প্রদায়ের। এত হাঙ্গামা, খুন হওয়ার পরও মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ হয়ে গেলেন পাকিস্তান নামক দেশটির জাতির পিতা। অন্যদিকে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী হলেন ভারতীয়দের জাতির জনক। সেই মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী একদিন বলেছিলেন, 'চোখের বদলে চোখ_ এমন নীতি পুরো জগৎটাকে অন্ধকার করে দেবে।'
করমচাঁদের সেই বাণীরই প্রতিফলন ঘটেছিল তারই জন্মভূমি ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ অবধি 'চোখের বদলে চোখ' নীতিটি পুরো জগৎটিকে তো বটেই মানবজাতির ভেতরে যে বিভাজনের সৃষ্টি, সেটি আরও প্রত্যক্ষ করেছিল সমগ্র পৃথিবীর মানবজাতি। ধ্বংস, হত্যা, গুম, দেশ দখল, কমিউনিজমের যাত্রা শুরু। ইউরোপের অনেক দেশকে বাঁধা হয়েছিল কমিউনিজমের শিকলে। উদ্যোগটা প্রথমেই নিয়েছিলেন তৎকালের সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহানায়ক সেই অ্যাডল্ফ হিটলার এবং তার সাঙ্গাতদের পরাজিত করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল নিয়েছিল জার্মানির অর্ধেক, ইতালি, হাঙ্গেরি। অপরদিকে বিজয়ী আমেরিকা দখলে নিয়েছিল জাপান ও কোরিয়া। যেহেতু ব্রিটিশদের অধীনে আফ্রিকা মহাদেশের অনেক দেশ বিশেষত দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ফরাসিদের কলোনি আফ্রিকা মহাদেশেরই আলজেরিয়াসহ অনেক দেশেই বিস্তার করেছিল তাদের সাম্রাজ্য। সেদিক থেকে অষ্টাদশ, ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতেই ব্রিটিশদের দখলকৃত দেশ শুধু ভারতবর্ষেই সীমাবদ্ধ ছিল না; পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই তারা উড়িয়েছিল ব্রিটিশদের জাতীয় পতাকা। গত শতকের শেষদিকে সর্বশেষ পতাকাটি নামাতে হয়েছিল হংকং থেকে, যা ১০০ বছরের জন্য ব্রিটিশরা লিজ নিয়েছিল চীনের কাছ থেকে। অথচ ভারতবর্ষকে কেউ লিজ না দিলেও কূটবুদ্ধিসম্পন্ন ব্রিটিশ বণিক এবং এদেশীয় সুবিধাবাদী জমিদার, মুৎসুদ্দি, রাজা-মহারাজাদের কূটচালে বাংলাকে চলে যেতে হয়েছিল ব্রিটিশদের পদতলে, যেখানে বণিকের মানদণ্ড দেখা দিয়েছিল রাজদণ্ডরূপে।
সেই রাজদণ্ডকে উচ্ছেদের প্রত্যক্ষ সূচনা সম্ভবত ১৮৫৭ সালে এবং সর্বশেষ উচ্ছেদ সম্ভব হলো ১৯৪৭ সালে। ১৭৫৭ সালে যেদিনটিতে নবাব সিরাজউদ্দৌলা রাজ্যহারা হলেন তারই নিকটাত্মীয়ের বিশ্বাসঘাতকতায়, সেদিনটি ছিল বুধবার, ২৩ জুন। কূটবুদ্ধিসম্পন্ন ইংরেজদের হটাতে এ দেশের তরুণ সম্প্রদায়কে যেতে হয়েছে জেলে, দ্বীপান্তরে এবং ঝুলতে হয়েছে ফাঁসিকাষ্ঠে। ১৯০ বছর পর ভারতবর্ষকে দুই ভাগ করলেও অসম্পূর্ণ করে রেখেছিল পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের অনেক ছিটমহল। ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের অনেক অঞ্চলসহ কাশ্মীর নামক দেশটিকে ভাগ সম্পূর্ণ না করেই ব্রিটিশরা পাড়ি জমাল তাদের পৈতৃক দেশে, ভিটেমাটির সন্ধানে। সেই ভিটেমাটির সন্ধানে যাওয়ার আগে হিন্দু-মুসলমানদের ভেতরে যে সংঘাতের সৃষ্টি করে দিয়ে গেল, সেই সংঘাতের ক্ষত বিগত ৬৭ বছরেও প্রশমিত হওয়ার কোনো লক্ষ্যই প্রতীয়মান নয়।
তবে সংঘাত ও দেশভাগের এমনি করুণ চিত্র আমরা দেখতে পাই 'ট্রেন টু পাকিস্তান' নামক গ্রন্থে। গ্রন্থটির লেখক প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক খুশবন্ত সিং (জন্ম ১৯১৫, মৃত্যু ২০১৪)। ট্রেন টু পাকিস্তান গ্রন্থে মোট ৪টি গল্প আছে_ ১. ভাগাতি; ২. কলিযুগ; ৩. মানো মাজরা; ৪. কর্ম। সহৃদয় পাঠকরা যখন বইটি পড়বেন, তখন যেন স্পষ্ট দেখতে পাবেন পাকিস্তান-ভারতের ভাগাভাগি, খুন, ধর্ষণ, রক্তাক্ত প্রান্তর। সেখানে দেশান্তরী হওয়ার এক করুণ বিবরণ দিয়েছেন খুশবন্ত সিং। যেহেতু তার স্বদেশ পাঞ্জাবের পশ্চিম প্রান্তে। তাদের একদিন সবকিছু ফেলে রেখে উদ্বাস্তু হয়ে চলে যেতে হলো পূর্ব পাঞ্জাবে, ভারতে। অনুরূপভাবে বোম্বে থেকে একদিন চলে যেতে হলো জিন্নাহ পরিবারকে পাকিস্তানে এবং পূর্ব বাংলার শান্তিপ্রিয় হিন্দু সম্প্রদায় এবং ভারতের বিহার, মুর্শিদাবাদ, কলকাতা থেকে যারা এ দেশে উদ্বাস্তু হয়ে এলেন, তারা শান্তিপ্রিয় থাকতে পারলেন না বিহারের বিহারিদের যন্ত্রণায়।
ট্রেন টু পাকিস্তান একটি অসাধারণ দলিল, যে দলিলে দেশ ভাগ, যে দলিলে গন্ধক, নাইট্রিক এসিড ও রক্তের সংমিশ্রণে যেন একটি কামানের তপ্তগোলা, যেটি মি. সিং ১৯৪৭ সালে প্রত্যক্ষ করেছিলেন ভারতের উত্তর-পশ্চিমের নারকীয় বিভীষিকা; সেই বিভীষিকার প্রচণ্ড ঝড় বইয়ে দিয়ে গেছেন জনগণের জীবনের ওপর দিয়ে করমচাঁদ গান্ধী ও মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ। মাঝখানে ছিল শ্বেত বর্ণের একদল মানুষরূপী জানোয়ার। এবং ১৯৪৮ সালে সেই গান্ধীর প্রাণসংহার করেছিল নাথুরাম গডসে নামক এক তরুণ। নাথুরাম হয়তোবা রক্তারক্তি, ভাগাভাগি চায়নি। আমার মনে হয়, যে হত্যাকাণ্ডটি সে গান্ধীর ওপর দিয়ে চালিয়েছিল, সেটি হয়তো হতে পারত মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর ওপরও। জিন্নাহ ভাগ্যবান; যক্ষ্মা রোগে ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে পাড়ি জমিয়েছিলেন পরপারে। নয়তো তাকেও একদিন গান্ধীর ভাগ্য বরণ করতে হতো বলে আমার বিশ্বাস। যেহেতু দু'জনের অপরাধই ক্ষমার অযোগ্য। বিশেষত, জিন্নাহর 'চোখের বদলে চোখ'_ এ নীতির শুরুতেই ১৯৫১ সালে লিয়াকত আলি খান নিহত হয়েছিলেন অক্টোবরের ১৬ তারিখে। ত্রিপুরা, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এমনকি আসাম_ সবারই যুক্ত হওয়ার কথা ছিল পূর্ববঙ্গে; হতে দেননি ঢাকার নবাব এবং লিয়াকত আলি খান। তিনিও একদিন গুলিতে নিহত হলেন, হয়তোবা নাথুরাম গডসের মতো কোনো তরুণের ক্ষোভে।
গান্ধীর জন্মের ৭ বছর পর যেমন জন্মেছিলেন জিন্নাহ সাহেব, সেই জিন্নাহর জন্মের ৪৪ বছর পর শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৯২০ সালে, ফরিদপুর জেলায়। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ১৭ মার্চে। কৈশোরকাল থেকেই তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা। তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী যারা পাঠ করেছেন তারা নিশ্চয় জেনেছেন শেখ মুজিবের আত্মপ্রত্যয়ের কথা। তিনি শত বাধা শত ঝড়ঝঞ্ঝা পাড়ি দিয়ে একাকী দেশকে স্বাধীনতা এনে দিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। সেই বাঙালি জাতির পিতাকে একদিন সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে এলো সামরিক শাসন। ১৯৭৫-এর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করলেন একজন মেজর জেনারেল, নাম জিয়াউর রহমান। জন্ম বগুড়ার গাবতলীতে ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি।
জেনারেল জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের জন্ম সম্ভবত ষাটের দশকের শেষদিকে, যিনি জাতির পিতার চেয়ে কমপক্ষে ৪৫-৪৮ বছর পরে জন্মেছিলেন সম্ভবত পাকিস্তানের করাচি শহরে। সেই তারেক রহমান ২০০৭ সালের এক-এগারোর পর বাস্তুচ্যুত হয়ে পাড়ি জমালেন লন্ডন শহরে। তার নৈতিক স্খলনের দায়ে। অথচ গান্ধী কিংবা জিন্নাহ, তারা বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন দেশ বিভাগের মাধ্যমে। আমাদের জাতির জনক বাস্তুচ্যুত হননি, বরং তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ফিরে এসেছিলেন পাকিস্তানিদের কারাগার থেকে। অন্য অর্থে বলা যায়, তারেক রহমান স্বদেশ ছেড়ে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন অন্য কারাগারে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের এই তরুণ নেতা যদি গান্ধী কিংবা জিন্নাহর মতো ব্যারিস্টার হতেন, লেখাপড়া জানতেন এবং রাজনীতিতে পরিপকস্ফ হতেন, তাহলে অর্বাচীন বালকের মতো কখনোই, কোনোদিনই বলতে পারতেন না 'পাকবন্ধু শেখ মুজিব'। এবং অর্বাচীন কোনোদিন বলতে পারতেন না 'রাজাকার শেখ মুজিব'। ধৃষ্টতার একটি সীমা থাকে! সেই সীমাকে যারা লঙ্ঘন করেন, স্বয়ং আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না।
জিয়াউর রহমান তার জীবিত অবস্থায় জাতির জনক শেখ মুজিবকে নিয়ে কোনো কটূক্তি করেননি। জিয়া জানতেন শ্রদ্ধেয়দের শ্রদ্ধা করতে হয়, অথচ তদীয় পুত্র যে কথা বলছেন সেটি মূর্খ এবং অশিক্ষিতদের মুখেই শোভা পায়। যেহেতু তিনি অশিক্ষিত, তাই কথা বলতে দ্বিধাবোধ করেন না।
প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, রোমান দার্শনিক গিসেরো (খ্রিস্টপূর্ব ১০৬-৪৩) বলেছেন, যে ঘরে বিদ্যা (বই) নেই, সে ঘর আত্মাহীন দেহের মতো। মনে পড়ল রবীন্দ্রনাথের 'পুরাতন ভৃত্য' কবিতার একটি চরণের সামান্য উদৃব্দতি_ কতো সহিব নিত্য। বাংলা প্রবাদে আছে_ গাছ বেশি বাড় বেড়ো না ঝড়ে ভাংবে, বেশি ছোট হয়ো না ছাগলে মুড়বে।
কবি

No comments

Powered by Blogger.