‘আমার আকাশটা ফিরিয়ে দাও’ by মানসুরা হোসাইন
(অসুস্থ হওয়ার আগে এমনই ফুটফুটে ছিল মাহীন। ছবি: সংগৃহীত) (ঢাকা
মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ক্যানসারে আক্রান্ত মাহীন। স্কুল, খেলা সবকিছুকে ছুটি
দিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এভাবেই সময় কাটে তার। ছবি: সংগৃহীত) (হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে লেখা মাহীনের চিঠি। ছবি: সংগৃহীত) ছোটদের
একটা আপন ভুবন থাকে। থাকে বিশাল এক আকাশ। সেই আকাশে নানা রঙের ঘুড়ির মতো
উড়ে বেড়ায় মজার যত কল্পনা। ফানুসের মতো ভেসে বেড়ায় দুরন্ত সব স্বপ্ন।
কিন্তু মাহীনের সেই আকাশ এখন কঠিন এক ফাঁদে বন্দী। এই ফাঁদের নাম ক্যানসার।
অথচ নিজেই জানে না ১৩ বছরের এই মেয়েটি। সে শুধু জানে, অন্য সবার মতো একটা
রোগ হয়েছে তার। একটু কঠিন—এই যা! তবে সেরে যাবে। সেরে উঠলেই সে ফিরে যাবে
নিজের ঠিকানায়। তার এই ভাবনার সঙ্গে চোখেমুখে খেলা করে নীরব এক আকুতি। সে
যেন সবার কাছে মিনতি করে বলছে, ‘আমার আকাশটাকে তোমরা ফিরিয়ে দাও!’
মাহীন বলে, ‘আমি তো আরও ভয় পাচ্ছিলাম, আমার বুঝি ক্যানসার হয়েছে!’
এ কথায় নিজেকে যেন সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে মাহীন। কিন্তু আপনজনেরা তা পারছেন না। ব্লাড ক্যানসার (অ্যাকিউট লিমফোব্লাস্ট লিউকেমিয়া) হলে কি আর শান্তিতে থাকা যায়?
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউনিট-২-এর ১১৯ নম্বর কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছে মাহীন।
মামার কাছে মাহীন জানতে চেয়েছিল, তার কী হয়েছে। তিনি বলেন অন্য কথা। আসল রোগটার নাম মুখেও আনেন না। অকপটে মামার কথা বিশ্বাস করে মাহীন। ভাবে, এই তো আর কয়েকটা দিন। তারপরই ফিরে যাবে আপনজনদের কাছে। জাহিন আপু, সামিন, জারা—প্রিয়মুখগুলো ঘোরাফেরা করে চোখের পাতায়। ডায়েরি নিয়ে লিখতে বসে যায় মনের ভেতর ঘোরাফেরা করা প্রিয়জনদের। লেখে আবার স্কুলে ফিরে যাওয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছার কথা।
১৩ নভেম্বর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মাহীন লিখেছে, ‘ডিয়ার জাহিন আপু, সামিন, জারা তোমাদেরকে আমি অনেক মিস করতেছি। আমার এখানে একটুও ভালো লাগে না তোমাদেরকে ছাড়া। আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরতে চাই। কালকে তোমাদের চিঠি পেয়ে আমার অনেক কান্না আসছে।’
চিঠির শেষ দিকে মাহীন লিখেছে, ‘তোমাদেরকে কত পছন্দ করি, এখন বুঝতে পারছি। আম্মুকে বলিও আমি ভালো আছি। আম্মু এখানে থাকলে আমার ভালো লাগত। কিন্তু না থাকলে সমস্যা নাই। দূর থেকে তোমরা সবাই দোয়া করলেও আমি ভাবব—তোমরা পাশেই আছো।’
কেমোথেরাপি দেওয়ার পর থেকে মাহীনের গলায় এখন আর স্বাভাবিক স্বর ফোটে না। শুধু ফ্যাসফ্যাস আওয়াজ হয়। তবে আপনজনদের উদ্দেশে ডায়েরি লেখায় তার ক্লান্তি নেই। এভাবেই কেটে গেছে পুরো এক মাস।
মাহীনের পরিবারেরও এখন একমাত্র ভরসা সবার দোয়া ও সহায়তা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটলজি বিভাগের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সালমা আফরোজ বলে দিয়েছেন, মাহীনকে বিদেশে নিতে হবে। উন্নত চিকিৎসা দিতে পারলেই হয়তো মাহীন আবার প্রজাপতির মতো ঘুরে বেড়াতে পারবে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত বাবার পক্ষে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা জোগাড় করা অসম্ভব। আত্মীয়, বন্ধুদের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত ১০ লাখ টাকাও হয়নি। পরিবারের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘সাপোর্ট মাহীন টু ফাইট ক্যানসার’ নামে একটি পেজ খুলেছেন। এতে অনেকেই এগিয়ে আসছেন।
ভালো গান গাওয়া, সারাক্ষণ মুখে হাসি ধরে রাখা মাহীনের পুরো নাম মালিহা তাবাসসুম। সে মিরপুরের মনিপুর হাইস্কুলের (মূল ক্যাম্পাস) প্রভাতি শাখার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে নিতেই ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে। কেমোথেরাপি দেওয়ার পর তার চুল পড়ে গেছে। তাই ভীষণ মন খারাপ। এ ছাড়া স্কুলে যেতে না পারা, চটপটি খেতে না পারা, পরীক্ষা দিতে না পারার আশঙ্কা ইত্যাদি নিয়ে মাহীনের কষ্ট তো আছেই।
চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রতিদিনই চলছে নানা পরীক্ষা। দুই হাতে সুচের খোঁচায় সে ক্লান্ত। রক্ত দিতে দিতে হয়রান।
মাহীনের মা সিদ্দীকা আক্তার বলেন, ‘আমার মেজো মেয়েটার (মাহীন) খুব ধৈর্য। তার কষ্টের সময়ও আমি বা অন্যরা কষ্ট পাবে চিন্তা করে কষ্ট প্রকাশ করে না। আমি তার সামনে খুব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু ওর সামনে থেকে বাসায় এলেই আর নিজেকে সামলাতে পারি না। চারপাশে আমার মেয়েটার কত যে স্মৃতি।’
গত কয়েক মাসে মাহীনকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা এক চিকিৎসক থেকে আরেক চিকিৎসকের কাছে ঘুরেছেন। যে যা বলেছেন, তাই করেছেন। কিন্তু তেতালা বাসায় উঠেই মেয়ে বলত, ‘মনে হয় হিমালয়ে উঠলাম।’ তারপর যখন ক্যানসার ধরা পড়ল, তত দিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
এখন সবার সম্মিলিত সহযোগিতাই কেবল মাহীনকে মুক্ত করতে পারে এই বন্দিদশা থেকে। ফিরিয়ে দিতে পারে তার আপন আকাশটাকে।
মাহীনকে সহযোগিতা করতে চাইলে তা পাঠাতে পারেন: বিকাশ অ্যাকাউন্ট, ০১৮১৮২০০৯২১ এই নম্বরে।
আরেকটি ঠিকানা: কানিজ শারমীন, হিসাব নম্বর: ১৬৪২১০৯০০২৪৩৩২, প্রাইম ব্যাংক, পল্লবী শাখা, ঢাকা।
মাহীন বলে, ‘আমি তো আরও ভয় পাচ্ছিলাম, আমার বুঝি ক্যানসার হয়েছে!’
এ কথায় নিজেকে যেন সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে মাহীন। কিন্তু আপনজনেরা তা পারছেন না। ব্লাড ক্যানসার (অ্যাকিউট লিমফোব্লাস্ট লিউকেমিয়া) হলে কি আর শান্তিতে থাকা যায়?
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউনিট-২-এর ১১৯ নম্বর কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছে মাহীন।
মামার কাছে মাহীন জানতে চেয়েছিল, তার কী হয়েছে। তিনি বলেন অন্য কথা। আসল রোগটার নাম মুখেও আনেন না। অকপটে মামার কথা বিশ্বাস করে মাহীন। ভাবে, এই তো আর কয়েকটা দিন। তারপরই ফিরে যাবে আপনজনদের কাছে। জাহিন আপু, সামিন, জারা—প্রিয়মুখগুলো ঘোরাফেরা করে চোখের পাতায়। ডায়েরি নিয়ে লিখতে বসে যায় মনের ভেতর ঘোরাফেরা করা প্রিয়জনদের। লেখে আবার স্কুলে ফিরে যাওয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছার কথা।
১৩ নভেম্বর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মাহীন লিখেছে, ‘ডিয়ার জাহিন আপু, সামিন, জারা তোমাদেরকে আমি অনেক মিস করতেছি। আমার এখানে একটুও ভালো লাগে না তোমাদেরকে ছাড়া। আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরতে চাই। কালকে তোমাদের চিঠি পেয়ে আমার অনেক কান্না আসছে।’
চিঠির শেষ দিকে মাহীন লিখেছে, ‘তোমাদেরকে কত পছন্দ করি, এখন বুঝতে পারছি। আম্মুকে বলিও আমি ভালো আছি। আম্মু এখানে থাকলে আমার ভালো লাগত। কিন্তু না থাকলে সমস্যা নাই। দূর থেকে তোমরা সবাই দোয়া করলেও আমি ভাবব—তোমরা পাশেই আছো।’
কেমোথেরাপি দেওয়ার পর থেকে মাহীনের গলায় এখন আর স্বাভাবিক স্বর ফোটে না। শুধু ফ্যাসফ্যাস আওয়াজ হয়। তবে আপনজনদের উদ্দেশে ডায়েরি লেখায় তার ক্লান্তি নেই। এভাবেই কেটে গেছে পুরো এক মাস।
মাহীনের পরিবারেরও এখন একমাত্র ভরসা সবার দোয়া ও সহায়তা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটলজি বিভাগের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সালমা আফরোজ বলে দিয়েছেন, মাহীনকে বিদেশে নিতে হবে। উন্নত চিকিৎসা দিতে পারলেই হয়তো মাহীন আবার প্রজাপতির মতো ঘুরে বেড়াতে পারবে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত বাবার পক্ষে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা জোগাড় করা অসম্ভব। আত্মীয়, বন্ধুদের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত ১০ লাখ টাকাও হয়নি। পরিবারের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘সাপোর্ট মাহীন টু ফাইট ক্যানসার’ নামে একটি পেজ খুলেছেন। এতে অনেকেই এগিয়ে আসছেন।
ভালো গান গাওয়া, সারাক্ষণ মুখে হাসি ধরে রাখা মাহীনের পুরো নাম মালিহা তাবাসসুম। সে মিরপুরের মনিপুর হাইস্কুলের (মূল ক্যাম্পাস) প্রভাতি শাখার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে নিতেই ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে। কেমোথেরাপি দেওয়ার পর তার চুল পড়ে গেছে। তাই ভীষণ মন খারাপ। এ ছাড়া স্কুলে যেতে না পারা, চটপটি খেতে না পারা, পরীক্ষা দিতে না পারার আশঙ্কা ইত্যাদি নিয়ে মাহীনের কষ্ট তো আছেই।
চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রতিদিনই চলছে নানা পরীক্ষা। দুই হাতে সুচের খোঁচায় সে ক্লান্ত। রক্ত দিতে দিতে হয়রান।
মাহীনের মা সিদ্দীকা আক্তার বলেন, ‘আমার মেজো মেয়েটার (মাহীন) খুব ধৈর্য। তার কষ্টের সময়ও আমি বা অন্যরা কষ্ট পাবে চিন্তা করে কষ্ট প্রকাশ করে না। আমি তার সামনে খুব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু ওর সামনে থেকে বাসায় এলেই আর নিজেকে সামলাতে পারি না। চারপাশে আমার মেয়েটার কত যে স্মৃতি।’
গত কয়েক মাসে মাহীনকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা এক চিকিৎসক থেকে আরেক চিকিৎসকের কাছে ঘুরেছেন। যে যা বলেছেন, তাই করেছেন। কিন্তু তেতালা বাসায় উঠেই মেয়ে বলত, ‘মনে হয় হিমালয়ে উঠলাম।’ তারপর যখন ক্যানসার ধরা পড়ল, তত দিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
এখন সবার সম্মিলিত সহযোগিতাই কেবল মাহীনকে মুক্ত করতে পারে এই বন্দিদশা থেকে। ফিরিয়ে দিতে পারে তার আপন আকাশটাকে।
মাহীনকে সহযোগিতা করতে চাইলে তা পাঠাতে পারেন: বিকাশ অ্যাকাউন্ট, ০১৮১৮২০০৯২১ এই নম্বরে।
আরেকটি ঠিকানা: কানিজ শারমীন, হিসাব নম্বর: ১৬৪২১০৯০০২৪৩৩২, প্রাইম ব্যাংক, পল্লবী শাখা, ঢাকা।
No comments