এমআরপি বন্ধ মালয়েশিয়ায় by দীন ইসলাম
মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) প্রদান কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ওই দেশে নিয়োগকৃত আউটসোর্সিং কোম্পানি ডাটাএজ-আইপিপল কনসোর্টিয়াম তাদের কাজটি সাব-কন্ট্রাক্ট দেয়ার কারণেই এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে। এই কন্ট্রাক্ট বাতিল করে মূল কোম্পানি। এরই মধ্যে বিষয়টি সমাধানে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর মালয়েশিয়ায় নিয়োগকৃত আউটসোর্সিং কোম্পানি ডাটাএজ-আইপিপল কনসোর্টিয়ামকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। গত ৩রা নভেম্বর অতিরিক্ত সচিব (বহিরাগমন ও নিরাপত্তা)-এর সভাপতিত্বে এমআরপি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এরপরও বিষয়টির সুরাহা হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে উপস্থিত এক সদস্য জানান, মালয়েশিয়াতে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে এমআরপি প্রদান গত ২৬শে অক্টোবর পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। এ তারিখের পর কোন ধরনের ডাটা এনরোলমেন্ট অনলাইন সফটওয়্যার-এ আসেনি। ফলে আউটসোর্সিং সংক্রান্ত সব ধরনের কাজ স্থবির হয়ে যায়। মালয়েশিয়াতে পাসপোর্ট বিতরণ না হওয়ায় সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ বিষয়ে ওই দিনের বৈঠকে উপস্থিত বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুল মাবুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এমআরপি নিয়ে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা সাময়িক। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিষয়টি সমাধান হবে। আউটসোর্সিং কার্যক্রম আগের মতো চালু হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। এরপরও মালয়েশিয়াতে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে এমআরপি কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি সমাধানের পথে রয়েছে। আমরা আউটসোর্সিং কোম্পানিকে সাব-কন্ট্রাক্ট কোম্পানির ‘কন্ট্রাক্ট বাতিল আদেশ’ প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছি। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়াতে বসবাসরত ৬ লাখ বাংলাদেশীকে এমআরপি দিতে ডাটাএজ-আইপিপল কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। গত ১২ই ফেব্রুয়ারি সই করা চুক্তিতে বলা হয়, তারা মালয়েশিয়ার আটটি প্রদেশে পাসপোর্ট দেয়ার জন্য আবেদন ও বিতরণ কেন্দ্র খুলবে। সেখান থেকেই এমআরপি দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের সুবিধার জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়। পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যৌথ কোম্পানিটি এমআরপি’র কাজ পাওয়ার পর তারা মালয়েশিয়ার আটটি রাজ্যে আধুনিক তালিকাভুক্তকরণ কেন্দ্র স্থাপন করে। এ কেন্দ্রগুলোতে ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন খোলা থাকলেও সেখান থেকে কোন সেবা দেয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে আবেদন জমা নেয়ার পর ওই সব আবেদনের একটি কপি অনলাইনের মাধ্যমে ঢাকার বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু ঢাকায় এমআরপি দেয়ার কাজটি করছে ডি লা রুই ইন্টারন্যাশনাল নামে পোল্যান্ড ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। আর সফটওয়্যার তৈরির কাজটি করছে আইরিশ নামের একটি কোম্পানি। কিন্তু তারা ঠিক সময়ে সফটওয়্যার তৈরি করে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে দিচ্ছে না। তাই এমআরপি তৈরিতে সফটওয়্যার সংক্রান্ত সহায়তা দেয়ার প্রতিষ্ঠান মালয়েশীয় আইরিশ করপোরেশনের গাফিলতির কারণে শুরুর দিকে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এ কারণে ঢাকায় মালয়েশিয়ার আউটসোর্সিং কোম্পানির ডাটা ট্রান্সফার করে ঢাকায় প্রিন্ট দেয়া অনেক দিন বন্ধ ছিল। এদিকে মালয়েশিয়াতে দূতাবাস কর্মকর্তারা প্রায় ৬০ হাজার এমআরপি এ পর্যন্ত নিজেরা ইস্যু করতে পেরেছে। দূতাবাসের এমআরপি কার্যক্রম সরকার নির্ধারিত ফি ১১৬ রিঙ্গিতেই চালু রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি আউট সোর্সিং হিসেবে তথ্য সংগ্রহ ও পাসপোর্ট বিতরণের কাজ করবে সারা মালয়েশিয়ার বাংলাদেশী অধ্যুষিত ৮টি স্থানে। বাকি কাজ করবে কুয়ালালামপুর দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তর। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে অনেকটা তালগোল পাকিয়ে ফেলা হয়েছে। এদিকে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত অনেক বাংলাদেশীর পাসপোর্টের মেয়াদ গত ২৪শে নভেম্বর থেকে অকার্যকর হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এমআরপি না পাওয়ায় নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা রয়েছেন অনিশ্চয়তায়। এদিকে ২০১২ সালে এমআরপি প্রস্তুতের দায়িত্ব পায় একটি যৌথ অংশীদার প্রতিষ্ঠান। আইরিশ করপোরেশন এ কাজটি না পাওয়ায় তারা নানাভাবে এমআরপি’র কাজে অসহযোগিতা করে আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আইরিশের সফটওয়্যার ও সিস্টেমের সঙ্গে যৌথ অংশীদার প্রতিষ্ঠানটির সফটওয়্যার ও সিস্টেম সমন্বয় করা দরকার হলেও, নানা অজুহাত দেখিয়ে সব কাজেই দেরি করছে আইরিশ। সমন্বয় কার্যক্রম এখনও অসম্পূর্ণ থাকায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলো থেকে এমআরপি ইস্যু করা এখনও সম্ভব হচ্ছে না। এমআরপি না পাওয়া ওই ৩৩ জেলার জনসাধারণকে এখন অন্য জেলা কার্যালয়ের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে তাদের ভোগান্তি বাড়ছে। এ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ও চিন্তার মধ্যে রয়েছে।
No comments