দেশে ফিরছেন সেই শারমিন
দীর্ঘ ভোগান্তির পর লেবানন থেকে আজ দেশে ফিরছেন প্রতারিত শারমিন আক্তার। সকাল ১০টায় এয়ার অ্যারাবিয়ানের একটি ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন। বিমানবন্দর থেকেই তাকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হবে পঙ্গু হাসপাতালে। এর আগে গত ৬ মাস ধরে লেবাননের একটি হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন তিনি। এদিকে তাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে লেবানন পাঠালেও আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স বাংলাদেশ এক্সপোর্ট করপোরেশনের বিরুদ্ধে। এমন কি শারমিনকে ফেরত আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও কোন উদ্যোগ নেয়নি এজেন্সিটি। স্বামী পরিত্যক্তা শারমিন আক্তার ভাগ্য বদলের আশায় গত ৩০শে এপ্রিল রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স বাংলাদেশ এক্সপোর্ট করপোরেশনের মাধ্যমে পাড়ি জমিয়েছিলেন লেবাননে। এজেন্সি তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল গৃহকর্মীর কাজ দেয়ার। কিন্তু সে দেশে পা রেখেই শারমিন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছেন। লেবাননে বসবাসকারী এজেন্সির প্রতিনিধি নিপা নামে বাংলাদেশী এক মহিলা তাকে কাজে নিয়ে যান। কয়েকদিন কাজ করার পর তাকে আটকে রাখা হয়। তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। অমানুষিক নির্যাতন সইতে না পেরে শারমিন ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পালানোর সময় তিনি সে দেশের ফাইদা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ডা. মনজের আল হাজ্ব হাসপাতালে ভর্তি করেন। তখন থেকেই শারমিন সেখানে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। শাহিদা নামে এক বাংলাদেশী ওই হাসপাতালে চাকরি করেন। তিনি ফোনে শারমিনের স্বজনদের জানান, তাকে এতদিন হাসপাতালের মালিক নিজ খরচে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। কিন্তু এখন আর অতিরিক্ত খরচ বহন করতে তিনি রাজি নন। এমনকি বকেয়া বিল পরিশোধ না করলে পুলিশে হস্তান্তরেরও হুমকি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সব মিলে সেখানে বকেয়া হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। এব্যাপারে গত ২৯শে অক্টোবর মানবজমিন-এ একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ড আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন এনজিও ও দাতা সংস্থার কাছে চিঠি দেয়। কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন ও উন্নয়ন) উপ-সচিব ড. মো. জিয়াউদ্দিন জানান, আমরা আর্থিক সাহায্য চেয়ে বিভিন্ন এনজিও ও দাতা সংস্থার কাছে চিঠি দিই। কিন্তু বর্তমান শারমিনকে দেশে ফেরত পাঠাতে বিপুল পরিমাণ এই অর্থ কে বহন করেছে- এ ব্যাপারে তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেন নি। তবে তিনি বলেন- বিভিন্ন সংস্থা এবং স্থানীয় দাতারা ওই অর্থের যোগান দিয়েছেন। রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যাপারে তিনি বলেন, ইতিপূর্বে বিষয়টি অবহিত করে বিএমইটিকে চিঠি দেয়া হয়েছে কিন্তু সেখান থেকে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে তারা কিছু জানাননি। গত ১২ই নভেম্বর এজেন্সির দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করে একটি চিঠিও দেয় ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ড। এ ব্যাপারে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক যুগ্ম-সচিব মো. গোলাম মোস্তফা খান বলেন, এ ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক। কেউ কোন এজেন্সির দ্বারা প্রতারিত হলে ওই এজেন্সিকে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ওই এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া, গত ১৭ই নভেম্বর কর্মী ও নিয়োগ কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে শারমিনকে দেশে ফেরত পাঠাতে পরিচালকের (কর্মসংস্থান) পক্ষ থেকে অনারারি কনসাল জেনারেলকে একটি চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৭ই সেপ্টেম্বর কর্মী ও নিয়োগ কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে শারমিনকে দেশে ফেরত আনতে এজেন্সিকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলেও এ ব্যাপারে তারা অবহিত করেননি। শারমিনের ভগ্নিপতি কিসমত জানান, বোনটিকে ফেরত আনতে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। সরকারি লোকজনও তাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। তিনি আরও বলেন এজেন্সি প্রথমে তাদের নিজ খরচে শারমিনকে দেশে ফেরত আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও কথা রাখেনি। কিভাবে তার চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করবেন তা-ও জানেন না তিনি।
No comments