ছবিই সান্ত্বনা by কাজী সুমন
দুই বছরের শিশু মিসবাহ। কচি কণ্ঠে বাবা ডাক ফুটতে শুরু করেছে। আধো আধো উচ্চারণে ‘বাবা বাবা’ ডাকছে। কিন্তু অবুঝ শিশুটি জানে না-তার বাবা বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন। অসহায় মায়ের চোখ থেকে গাল গড়িয়ে ঝরে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু। চাপা কষ্ট বুকে নিয়ে বাবার ছবি দেখিয়ে ছেলেকে সান্ত্বনা দেন মা। গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে গুম হওয়া মাহবুব হাসান সুজনের পরিবার গত এক বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন এমন যন্ত্রণা। গত বছরের ৭ই ডিসেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার নয়াকান্দি গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যায় বন্ধু ফরহাদসহ সুজনকে। এরপর র্যাব সদর দপ্তর, মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জের র্যাব কার্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেন তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু কোথাও তার সন্ধান মেলেনি। এরপর থেকে ভয়ে মামলা করারও সাহস পাননি সুজনের পিতা আবদুল জলিল খান। সবুজবাগের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট ফুটফুটে মিসবাহ ঘরময় ছুটোছুটি করছে। কখনও মায়ের কোলে, কখনও দাদার কোলে লুটিয়ে পড়ছে। আবার কখনও পাঁচবছর বয়সী বোন মাইমুনা তাসনিম জেবার সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠছে। আপন মনে ‘বাবা, বাবা’ বলে ডাকছে। গুম হওয়া সুজনের মেয়ে জেবা বলে, ৭ই ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় বাবা যখন মাকে ফোন করেছিল তখন আমি ফোন রিসিভ করেছিলাম। ভাত খেয়েছেন কিনা বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। এটাই ছিল বাবার সঙ্গে শেষ কথা। তবে এখনও স্বামীর আশা ছাড়েননি সুজনের স্ত্রী তানজিনা আক্তার। তিনি বলেন, কান্না ছাড়া আমার আর কিছু নেই। এখনও স্বামীর অপেক্ষায় আছি। গত একটি বছর কেটেছে দুঃসহ যন্ত্রণায়। তানজিনার মতোই স্বামীর ফিরে আসার আশায় বুক বেঁধে আছেন সুজনের সঙ্গে গুম হওয়া সবুজবাগ থানার ২৮ নং ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি কাজী ফরহাদের স্ত্রী ফারিয়া আক্তার রিয়া। তিনি বলেন, আমার স্বামী যেদিন গুম হন তখন একমাত্র কন্যা ফারহিমা আক্তারের বয়স দুই মাস ১০ দিন। এখন তার বয়স প্রায় ১৪ মাস। কিন্তু ১০ মাস বয়স থেকেই সে বাবা ডাক শুরু করেছে। তিনি বলেন, মেয়েকে মিথ্যা সান্ত্বনা দিলেও নিজের মনকে আর সান্ত্বনা দিতে পারি না। তবে এখনও আশায় আছি। আল্লাহ যদি তাকে বাঁচিয়ে রাখে তাহলে একদিন ফিরে আসবে। স্বামীকে হারিয়ে অথৈ সাগরে পড়েছেন বংশাল থানার ৭১ নং ওয়ার্ড ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ হোসেনের স্ত্রী ফারজানা। স্বামী গুম হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় পরিবারের অর্থ যোগানের উৎস। অবুঝ দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে ওঠেন বাবার বাড়িতে। চরম অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। ফারজানা আক্তার বলেন, গত বছরের ২রা ডিসেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায় পারভেজ হোসেনকে। এরপর র্যাব সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছি। কোথাও তার সন্ধান পাইনি। এরপর বংশাল থানায় জিডি করেছি। তিনি বলেন, স্বামী যখন গুম হন তখন ছেলে আরাব হোসেন ছিল গর্ভে। পিতা যেমন দেখে যেতে পারেননি সন্তানের মুখ তেমনি সন্তান দেখতে পারেনি জন্মদাতা পিতাকে। এখন আরাবের বয়স চার মাস। নিষ্পাপ শিশুটি বাবার শূন্যতা বুঝতে না পারলেও বুঝতে শিখেছে তিন বছর বয়সী কন্যা আদিবা ইসলাম। কেউ মোবাইলে ফোন করলেই সে বলে, বাবা ফোন করেছে। বাবা চাঁদে গেছে, চলে আসবে- এই বলে মেয়েকে সান্ত্বনা দেই। বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে ফারজানা বলেন, গত একটি বছরের প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে স্বামীর অপেক্ষায়। এখনও আশায় আছি, স্বামী ফিরে আসবে। আর্থিক দৈন্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজনীতি করার জন্য স্বামী গুম হলেও দলের কেউ আমার পরিবারের খোঁজ রাখেনি। পারভেজ যখন গুম হন তখন আমি ৮ মাসের গর্ভবতী। সিজারের সময় সাবেক মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা ২০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেন। এরপর আর কেউ খোঁজ নেননি। অর্থাভাবে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে উঠেছি। দুই সন্তানের ভরণ-পোষণ চালাতে চরম হিমশিম খাচ্ছি। ৪ঠা ডিসেম্বর আমেরিকান দূতাবাসের সামনে থেকে গুম হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা আসাদুজ্জামান রানা। বাসার কলিংবেল বাজলেই বুক কেঁপে ওঠে বড় বোন মিনারা বেগমের। তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের শোকে বাবা-মা পাগলপ্রায়। রংপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে প্রতিদিনই ফোন করে জিজ্ঞেস করে রানার কোন খোঁজ পেয়েছি কিনা। অনেক সময় বলি, চলে আসবে। আবার অনেক সময় কোন উত্তর দিতে পারি না। তিনি বলেন, রানা আমার বাসায় থাকতো। ওর নামে থানায় একটি জিডিও ছিল না। কি অপরাধে আমার ভাইকে গুম করা হলো? তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে উঠে সংবাদপত্রগুলোতে খুঁজি কোথাও আমার ভাইয়ের খবর আছে কিনা। টেলিভিশনের শিরোনামগুলো দেখি। আমার বাসায় কলিংবেল বাজলেই মনে হয়- এই বুঝি আমার ভাই এসেছে। এভাবেই দুঃসহ যন্ত্রণায় গত একটি বছর কেটেছে। এখনও আশায় আছি- আমার ভাই একদিন ফিরে আসবে।
গত বছরের প্রায় কাছাকাছি সময়ে রাজধানী থেকে গুম হন ১৯ জন। ২০১০ সালের ২৫শে জুন রাতে রাজধানীর ইন্দিরা রোড থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৬ নং ওয়ার্ড কমিশনার ও বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমকে সাদা পোশাকের কিছু লোক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছরেও তার সন্ধান মেলেনি। ২০১০ সালের ৮ই নভেম্বর গাজীপুর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বিএনপি নেতা ও চট্টগ্রামের করলডেঙ্গার ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাচাকে সাদা পোশাকে অপহরণ করা হয়। এরপর থেকে তারও সন্ধান মেলেনি। ২০১০ সালের ২৩শে নভেম্বর বরিশালের উজিরপুরের বিএনপি নেতা হুমায়ুন খান রাজধানীর মালিবাগ থেকে নিখোঁজ হন। এরপর ২০১২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্র আল-মোকাদ্দেস ও ওয়ালিউল্লাহকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে র্যাব পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ। ২০১২ সালের ১লা এপ্রিল রাজধানীর উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সিলেট জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমদ দিনার। ২০১২ সালের ১৭ই এপ্রিল গুমের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে। ওই দিন নিখোঁজ হয়ে যান সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ও তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক মো. আনসার আলী। ওই দিন রাত সোয়া ১২টার দিকে নিজের বাসায় ফেরার পথে বনানীর ২ নম্বর সড়ক থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যায়। ২০১৩ সালের ২৩শে জুন নিখোঁজ হন খুলনার নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বিবিএ’র দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র আল-আশিক নির্মাণ। গত বছরের শেষের দিকে বিরোধী জোটের আন্দোলন শুরু হলে গুমের ঘটনা বেড়ে যাওয়া হয়। ওই বছরের ২৭শে নভেম্বর কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু ও পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজ গুম হন। ওই দিন তারা দলের আহত নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিতে এম্বুলেন্সে করে কুমিল্লা হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। পথে আলীশ্বর এলাকা থেকে র্যাব পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৮শে নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজনৈতিক সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে গুম হন ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের ৫ কর্মী। তারা হলেন- সূত্রাপুর থানা ছাত্রদল সাংগঠনিক সম্পাদক সম্রাট মোল্লা, ৭৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি খালেদ হাসান সোহেল, ৭৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি আনিসুর রহমান খান, একই ওয়ার্ডের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব ও ৮০ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দল সম্পাদক মিঠু। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মুন্সীগঞ্জে নিয়ে আনিসুর রহমান, বিপ্লব ও মিঠুকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু এখনও খোঁজ মেলেনি সম্রাট ও খালেদের।
২রা ডিসেম্বর বংশাল থানা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো. সোহেল, বিএনপি নেতা মো. হোসেন চঞ্চল, বংশাল ৭১ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ, একই ওয়ার্ডের ছাত্রদল নেতা মো. জহির শাহবাগ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। ৪ঠা ডিসেম্বর বসুন্ধরা (আই ব্লক, রোড নং-৪, বাড়ি নং-৪১৪) এলাকা থেকে রাজধানীর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমন, একই ওয়ার্ডের নেতা তানভীর, ছাত্রদল নেতা আসাদুজ্জামান রানা, মাজহারুল ইসলাম রাসেল ও আল-আমিনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। একইদিন রাত আড়াইটার দিকে তেজগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কাউসার ও এসএম আদনান চৌধুরীকে শাহীনবাগের বাসা থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের খোঁজ মেলেনি। ৬ই ডিসেম্বর তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। ১১ই ডিসেম্বর সূত্রাপুর থানা ছাত্রদল সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টু পল্লবী এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। ১৯শে ডিসেম্বর ৫৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সোহেল ও রানা হাইকোর্ট এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। গত এক বছর ধরে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলো অপেক্ষায় আছে, কবে ফিরবে তার স্বজন। এ ঘটনায় কোন কোন ক্ষেত্রে থানায় মামলা বা জিডি হলেও এ সবের তদন্তেরও কোন অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
গত বছরের প্রায় কাছাকাছি সময়ে রাজধানী থেকে গুম হন ১৯ জন। ২০১০ সালের ২৫শে জুন রাতে রাজধানীর ইন্দিরা রোড থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৬ নং ওয়ার্ড কমিশনার ও বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমকে সাদা পোশাকের কিছু লোক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছরেও তার সন্ধান মেলেনি। ২০১০ সালের ৮ই নভেম্বর গাজীপুর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বিএনপি নেতা ও চট্টগ্রামের করলডেঙ্গার ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাচাকে সাদা পোশাকে অপহরণ করা হয়। এরপর থেকে তারও সন্ধান মেলেনি। ২০১০ সালের ২৩শে নভেম্বর বরিশালের উজিরপুরের বিএনপি নেতা হুমায়ুন খান রাজধানীর মালিবাগ থেকে নিখোঁজ হন। এরপর ২০১২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্র আল-মোকাদ্দেস ও ওয়ালিউল্লাহকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে র্যাব পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ। ২০১২ সালের ১লা এপ্রিল রাজধানীর উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সিলেট জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমদ দিনার। ২০১২ সালের ১৭ই এপ্রিল গুমের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে। ওই দিন নিখোঁজ হয়ে যান সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ও তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক মো. আনসার আলী। ওই দিন রাত সোয়া ১২টার দিকে নিজের বাসায় ফেরার পথে বনানীর ২ নম্বর সড়ক থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যায়। ২০১৩ সালের ২৩শে জুন নিখোঁজ হন খুলনার নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বিবিএ’র দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র আল-আশিক নির্মাণ। গত বছরের শেষের দিকে বিরোধী জোটের আন্দোলন শুরু হলে গুমের ঘটনা বেড়ে যাওয়া হয়। ওই বছরের ২৭শে নভেম্বর কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু ও পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজ গুম হন। ওই দিন তারা দলের আহত নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিতে এম্বুলেন্সে করে কুমিল্লা হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। পথে আলীশ্বর এলাকা থেকে র্যাব পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৮শে নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজনৈতিক সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে গুম হন ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের ৫ কর্মী। তারা হলেন- সূত্রাপুর থানা ছাত্রদল সাংগঠনিক সম্পাদক সম্রাট মোল্লা, ৭৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি খালেদ হাসান সোহেল, ৭৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি আনিসুর রহমান খান, একই ওয়ার্ডের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব ও ৮০ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দল সম্পাদক মিঠু। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মুন্সীগঞ্জে নিয়ে আনিসুর রহমান, বিপ্লব ও মিঠুকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু এখনও খোঁজ মেলেনি সম্রাট ও খালেদের।
২রা ডিসেম্বর বংশাল থানা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো. সোহেল, বিএনপি নেতা মো. হোসেন চঞ্চল, বংশাল ৭১ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ, একই ওয়ার্ডের ছাত্রদল নেতা মো. জহির শাহবাগ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। ৪ঠা ডিসেম্বর বসুন্ধরা (আই ব্লক, রোড নং-৪, বাড়ি নং-৪১৪) এলাকা থেকে রাজধানীর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমন, একই ওয়ার্ডের নেতা তানভীর, ছাত্রদল নেতা আসাদুজ্জামান রানা, মাজহারুল ইসলাম রাসেল ও আল-আমিনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। একইদিন রাত আড়াইটার দিকে তেজগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কাউসার ও এসএম আদনান চৌধুরীকে শাহীনবাগের বাসা থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের খোঁজ মেলেনি। ৬ই ডিসেম্বর তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। ১১ই ডিসেম্বর সূত্রাপুর থানা ছাত্রদল সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টু পল্লবী এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। ১৯শে ডিসেম্বর ৫৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সোহেল ও রানা হাইকোর্ট এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। গত এক বছর ধরে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলো অপেক্ষায় আছে, কবে ফিরবে তার স্বজন। এ ঘটনায় কোন কোন ক্ষেত্রে থানায় মামলা বা জিডি হলেও এ সবের তদন্তেরও কোন অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
No comments