দুদিন পর উদ্ধার হলো জাহাজ- ছড়িয়ে পড়া তেল ফোম দিয়ে তুলবে গ্রামবাসী
(সুন্দরবনের শ্যালা নদীর মৃগমারী এলাকা। পানিতে কালো তেলের স্তর। গতকাল দুপুর ১২টায় ছবিটি তুলেছেন এহসান উদ্দৌলা) সুন্দরবনের
শ্যালা নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেল ফোমের সাহায্যে সংগ্রহ করবে স্থানীয়
গ্রামবাসী। আগামী দুই থেকে তিন দিন সংগ্রহের এই কাজ চলবে। এ সময় পর্যন্ত
কোনো রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হবে না। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ
অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
সকাল ১০টার দিকে সাড়ে তিন লাখ লিটারের বেশি তেল নিয়ে ডুবে যাওয়া জাহাজটি
টেনে তীরে নিয়ে আসে মালিকপক্ষ। ডুবে যাওয়ার দুদিন পর জাহাজটিকে দেশীয়
পদ্ধতিতে তীরে টেনে আনা হয়। গত মঙ্গলবার ভোরে ফার্নেস তেলবাহী ওটি
সাউদার্ন স্টার-৭ অপর একটি মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায়। জাহাজ থেকে
ছড়িয়ে পড়া তেলে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে সুন্দরবন। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পরে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান
মো. শামসুদ্দোহা খন্দকার সাংবাদিকদের জানান, ‘আমাদের একটা অভিজ্ঞতা আছে।
দেড় বছর আগে বিষখালী নদীতে এ রকম একটি জাহাজডুবি হয়েছিল, যার মধ্যে
যথেষ্ট পরিমাণ তেল ছিল। সেই তেলও বের হয়ে এসেছিল। সেই তেল গ্রামের লোকজন
ফোম দিয়ে বের করে এনেছিল। আজকে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, গ্রামের
লোকজন তেল সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে পারবে। পদ্মা অয়েল দুটি পারচেজিং সেন্টার
খুলছে। তারাই এই তেল কিনে নেবে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে গ্রামবাসী তেল
সংগ্রহ করে নিতে পারবে।’
তেলের দূষণ নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম থেকে আসা জাহাজ কান্ডারি-১০ ব্যবহার করা হবে কি না, জানতে চাইলে শামসুদ্দোহা বলেন, তেল সংগ্রহের কাজ আগামী তিন দিন পর্যন্ত চলবে। এরপর স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। আলোচনা চলাকালে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, কান্ডারি কাজ করার আগে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া দরকার। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি রাসায়নিক ব্যবহারে বিরূপ প্রভাব পড়ে, তাহলে কী হবে? এ সময় শামসুদ্দোহা স্থানীয়ভাবে ফোমের মাধ্যমে তেল সংগ্রহ করার প্রস্তাব দেন। জাহাজটি যেখানে ডুবেছে সেই চ্যানেলের ছোট খালগুলো জাল দিয়ে প্রতিরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমীর হোসাইন চৌধুরী।
সকাল ১০টার দিকে ডুবে যাওয়া তেলবাহী জাহাজের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেসার্স হারুন অ্যান্ড কোং-এর ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন জানান, তিনটি কার্গো জাহাজ ও স্থানীয় ডুবুরিদের সহায়তায় দেশীয় পদ্ধতিতে ডুবন্ত জাহাজটিকে তাঁরা তীরের দিকে টেনে নেন।
গত মঙ্গলবার ভোরে ফার্নেস তেলবাহী ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ অপর একটি মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায়। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। এ ঘটনায় সুন্দরবনের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা অনুসন্ধানে জাতিসংঘের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল শিগগিরই বাংলাদেশে আসতে পারে। গতকাল পর্যন্ত জাহাজটি উদ্ধার বা দূষণ নিয়ন্ত্রণে তেল অপসারণের তৎপরতা শুরু হয়নি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা হয় কান্ডারি-১০ নামের একটি জাহাজ। সেটি পৌঁছানোর আগেই দেশীয় পদ্ধতিতে জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব হলো। তেল ছড়িয়ে পড়া এলাকাটি সরকার ঘোষিত ডলফিনের অভয়ারণ্য। এ ছাড়া সুন্দরবন ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য এবং জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। জাতিসংঘের ওই দুই সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী সুন্দরবনের ভেতর এই এলাকা দিয়ে নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ। বন বিভাগ থেকে একাধিকবার এবং জাতিসংঘের জলাভূমিবিষয়ক সংস্থা রামসার কর্তৃপক্ষ, বিজ্ঞান-শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো থেকে নৌপথটি নিয়ে আপত্তি তুলে তা বন্ধের আহ্বান জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর পলিন টেমেসিস গতকাল এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে সব ধরনের বাণিজ্যিক নৌযান চলাচল বন্ধে সরকারের কাছে আবার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। এ ধরনের বনের ভেতর দিয়ে নৌযান চললে তা দীর্ঘ মেয়াদে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে।
পলিন টেমেসিস বলেন, সুন্দরবনের যে এলাকাটিতে তেল ছড়িয়ে পড়েছে, এটি বিশ্বের বিপদাপন্ন দুই প্রজাতি গাঙ্গেয় ও ইরাবতি ডলফিনের বিচরণক্ষেত্র। এ ছাড়া অনেক সমৃদ্ধ জলজ প্রাণী রয়েছে সেখানে। সুন্দরবন ইউনেসকো ঘোষিত একটি বিশ্ব ঐতিহ্য। তাই সুন্দরবনের ভেতরে এই দুর্ঘটনায় জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) সুন্দরবনের ভেতরে জাহাজডুবিতে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক বিবৃতিতে বলেন, সরকার সুন্দরবনের গুরুত্ব সম্পর্কে নির্লিপ্ত থেকে তার সুরক্ষার পরিবর্তে বনটির ভেতর দিয়ে বড় নৌযান চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। এই দুর্ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর জন্য যথেষ্ট যে, সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ হলেও তা কতটা অরক্ষিত এবং এর নিকটবর্তী নদী দিয়ে তেল, কয়লা বা বিষাক্ত বর্জ্য পরিবহন কতটা বিপৎজনক হতে পারে।
এ ব্যাপারে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌপথ এবং এর পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তার কিছুটা লক্ষণ এই দুর্ঘটনা থেকে দেখা গেল। সরকার এখনই যদি নৌপথ বন্ধ না করে এবং রামপাল প্রকল্প সুন্দরবনের পাশ থেকে সরিয়ে না নেয়, তাহলে আমরা সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান হারাব তো বটেই, একসময় বনটিই ধ্বংস হয়ে যাবে।’
তেলের দূষণ নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম থেকে আসা জাহাজ কান্ডারি-১০ ব্যবহার করা হবে কি না, জানতে চাইলে শামসুদ্দোহা বলেন, তেল সংগ্রহের কাজ আগামী তিন দিন পর্যন্ত চলবে। এরপর স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। আলোচনা চলাকালে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, কান্ডারি কাজ করার আগে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া দরকার। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি রাসায়নিক ব্যবহারে বিরূপ প্রভাব পড়ে, তাহলে কী হবে? এ সময় শামসুদ্দোহা স্থানীয়ভাবে ফোমের মাধ্যমে তেল সংগ্রহ করার প্রস্তাব দেন। জাহাজটি যেখানে ডুবেছে সেই চ্যানেলের ছোট খালগুলো জাল দিয়ে প্রতিরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমীর হোসাইন চৌধুরী।
সকাল ১০টার দিকে ডুবে যাওয়া তেলবাহী জাহাজের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেসার্স হারুন অ্যান্ড কোং-এর ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন জানান, তিনটি কার্গো জাহাজ ও স্থানীয় ডুবুরিদের সহায়তায় দেশীয় পদ্ধতিতে ডুবন্ত জাহাজটিকে তাঁরা তীরের দিকে টেনে নেন।
গত মঙ্গলবার ভোরে ফার্নেস তেলবাহী ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ অপর একটি মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায়। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। এ ঘটনায় সুন্দরবনের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা অনুসন্ধানে জাতিসংঘের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল শিগগিরই বাংলাদেশে আসতে পারে। গতকাল পর্যন্ত জাহাজটি উদ্ধার বা দূষণ নিয়ন্ত্রণে তেল অপসারণের তৎপরতা শুরু হয়নি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা হয় কান্ডারি-১০ নামের একটি জাহাজ। সেটি পৌঁছানোর আগেই দেশীয় পদ্ধতিতে জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব হলো। তেল ছড়িয়ে পড়া এলাকাটি সরকার ঘোষিত ডলফিনের অভয়ারণ্য। এ ছাড়া সুন্দরবন ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য এবং জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। জাতিসংঘের ওই দুই সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী সুন্দরবনের ভেতর এই এলাকা দিয়ে নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ। বন বিভাগ থেকে একাধিকবার এবং জাতিসংঘের জলাভূমিবিষয়ক সংস্থা রামসার কর্তৃপক্ষ, বিজ্ঞান-শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো থেকে নৌপথটি নিয়ে আপত্তি তুলে তা বন্ধের আহ্বান জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর পলিন টেমেসিস গতকাল এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে সব ধরনের বাণিজ্যিক নৌযান চলাচল বন্ধে সরকারের কাছে আবার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। এ ধরনের বনের ভেতর দিয়ে নৌযান চললে তা দীর্ঘ মেয়াদে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে।
পলিন টেমেসিস বলেন, সুন্দরবনের যে এলাকাটিতে তেল ছড়িয়ে পড়েছে, এটি বিশ্বের বিপদাপন্ন দুই প্রজাতি গাঙ্গেয় ও ইরাবতি ডলফিনের বিচরণক্ষেত্র। এ ছাড়া অনেক সমৃদ্ধ জলজ প্রাণী রয়েছে সেখানে। সুন্দরবন ইউনেসকো ঘোষিত একটি বিশ্ব ঐতিহ্য। তাই সুন্দরবনের ভেতরে এই দুর্ঘটনায় জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) সুন্দরবনের ভেতরে জাহাজডুবিতে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক বিবৃতিতে বলেন, সরকার সুন্দরবনের গুরুত্ব সম্পর্কে নির্লিপ্ত থেকে তার সুরক্ষার পরিবর্তে বনটির ভেতর দিয়ে বড় নৌযান চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। এই দুর্ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর জন্য যথেষ্ট যে, সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ হলেও তা কতটা অরক্ষিত এবং এর নিকটবর্তী নদী দিয়ে তেল, কয়লা বা বিষাক্ত বর্জ্য পরিবহন কতটা বিপৎজনক হতে পারে।
এ ব্যাপারে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌপথ এবং এর পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তার কিছুটা লক্ষণ এই দুর্ঘটনা থেকে দেখা গেল। সরকার এখনই যদি নৌপথ বন্ধ না করে এবং রামপাল প্রকল্প সুন্দরবনের পাশ থেকে সরিয়ে না নেয়, তাহলে আমরা সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান হারাব তো বটেই, একসময় বনটিই ধ্বংস হয়ে যাবে।’
No comments