বাংলাদেশে মৌলিক মানবাধিকার অনিশ্চিত
বাংলাদেশে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা নেই। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকারের লঙ্ঘন হচ্ছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিপজ্জনকভাবে খর্ব হচ্ছে। রাষ্ট্রের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করলে মানুষকে কারাগারে অবরুদ্ধ হতে হচ্ছে। প্রায়ই মানুষের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকারকে অস্বীকার করে নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক করা হচ্ছে। গতকাল এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে মানবাধিকার বিষয়ক এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। ‘বাংলাদেশ: রাইটস ডিজঅ্যাপেয়ারড’ শীর্ষক ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কারাগারে আটক ব্যক্তি ও কয়েদিদের উপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের মাধ্যমে নির্বিচারে জীবনহানির ঘটনা এখনও চলছে। বর্তমানের সরকারের সমালোচনা করার জন্য শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার নেই। এই হিমশীতল নিপীড়নের মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষা করা আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়ছে। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য বিচারিক প্রতিষ্ঠানের অভাবে বিচারিক প্রতিকার প্রভাবিত হয়েছে এবং তা কেবল বাছাই করা ব্যক্তিদের জন্য। বেশির ভাগ মানুষের জন্য বিচার অবারিত নয়, সামর্থ্যের মধ্যেও নেই। বরং, সব কিছুর ওপর দায়মুক্তির সংস্কৃতি রাজত্ব করছে। রাজনৈতিক ও বিচারিক কর্তৃপক্ষ এরই নিশ্চয়তা দেয়। দুর্নীতি দমন কমিশন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সরকারের দুর্নীতির কেলেঙ্কারি ধামাচাপা ও বৈধতা দেয়ার একটি অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। মানুষের অর্থনৈতিক জীবন বিকল হয়ে গেছে। আন্ডারগ্রাউন্ডের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী কাঠামো। প্রতি বছর নির্বিচারে গ্রেপ্তার, আটক, সাজানো মামলা, নির্যাতন এবং গরিব মানুষের কাছ থেকে অকল্পনীয় পরিমাণ অর্থ চাঁদাবাজি করা হচ্ছে কাঠামোর মধ্যে থেকে, বিনা বিচারে হত্যার হুমকি দিয়ে। দুর্নীতির এক ধরনের শৃঙ্খল প্রতিস্থাপন করেছে আইন প্রয়োগকারী কাঠামোর নেতৃত্বের শৃঙ্খল এবং বিচার বিভাগসহ বিচারিক প্রতিষ্ঠানকে। স্বৈরতান্ত্রিক একটি রাজনৈতিক কাঠামোর করুণায় নামে মাত্র টিকে আছে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব। শাসকদলের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার ইচ্ছার কাছে বশীভূত হয়েছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতা দখল খুলে দিয়েছে অকল্পনীয় অবৈধ অর্থ অর্জনের দরজা। নিজেদের রাজনৈতিক নেতা পরিচয় দেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সমপদ ও ক্ষমতার লোভ ধ্বংস করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সৃষ্টি করেছে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা। রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক উন্মাদনার মূল্য দিতে হচ্ছে নাগরিকদের। ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের দলীয় স্বার্থ-সুবিধার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে মেধা ও পেশাদারিত্বের স্থান দখল করেছে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও আধা সামরিক বাহিনী যেভাবে মানুষকে গুম করেছে, সে হিসেবে এ ভূখণ্ডে মানবাধিকার বিলীন হয়েছে বলে মনে হয়। বৈরী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক বিরোধীতায় এবং দায়িত্বশীল সুশীল সমাজের অনুপস্থিতিতে জনগণের ভোগান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে অসহনীয়ভাবে। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস মানুষকে উৎসাহিত করবে সামনে এগোতে, বিচার কাঠামোর সংস্কারে ও দেশকে আরও গণতন্ত্রায়িত করতে। মানুষের উচিত শ্বাসরোধী অবস্থার বিরুদ্ধে জেগে ওঠা ও ঐক্যবদ্ধ হওয়া। নিজেদের রাষ্ট্রকে পুনর্গঠিত করতে বিবেকতাড়িত সাধারণ মানুষের রুখে দাঁড়ানো উচিত। তাদের অবশ্যই উপলব্ধি করা উচিত, তাদের নিজেদের অধিকার এ পৃথিবীর যে কোন কিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
No comments