যুক্তরাষ্ট্রের বিচার দাবি জাতিসংঘের
বন্দীদের
ওপর অমানবিক ও বর্বর নির্যাতর চালানোর দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার দাবি
করেছে জাতিসংঘ। দেশটির গোয়েন্দাবিষয়ক সিনেট কমিটি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা
সংস্থা (সিআইএ) নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে সংস্থাটির
কর্মকর্তাদের নির্যাতনমূলক ‘বর্বরতা’র প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই বর্বরতার
সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় এনে তাদের কাঠগড়ায় তোলার দাবি
জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিশ্বের শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থাগুলো। বুধবার বিবিসি
অনলাইনের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ
দূত বেন এমারসন বলেছেন, সিনেটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিআইএ’র জিজ্ঞাবাদের
কৌশল সংস্থাটির উচ্চপর্যায় থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে, তা পরিষ্কার। ফলে
এজন্য তাদের বিচারিক প্রক্রিয়ার আওতায় আনা প্রয়োজন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর
সিআইএ’র শীর্ষ কর্মকর্তারা নিজেদের কৃতকর্মের পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। তাদের
দাবি, তারা যা করেছেন, তা মানুষের জীবন বাঁচাতেই করেছেন। ২০০১ সালের ১১
সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলা পরবর্তী সময়ে জঙ্গি সন্দেহে আটক ব্যক্তিদের
জেরা করতে গিয়ে সিআইএ’র ‘নিষ্ঠুর’ নির্যাতন চালানোর তথ্য সংবলিত ৪৮০ পাতার
প্রতিবেদন মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে সিনেট গোয়েন্দা কমিটি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের অনুমতিতেই আটক জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব অত্যাচার চলতো বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। সিআইএও জনগণকে মিথ্যা বলে তাদের অপকর্ম আড়াল করার চেষ্টা করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। এখন তা প্রকাশের পর ‘এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে’ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ওদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক এবং সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ দূত বেন এমারসন বলেছেন, জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলের ঊর্ধ্বতন যেসব কর্মকর্তারা ওই সব অপরাধ মঞ্জুর করেছিলেন তাদের বিচার হতেই হবে। সেইসঙ্গে বন্দিদের পানিতে চুবিয়ে নির্যাতনের মতো নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো সিআইএ ও সরকারি কর্মকমর্তাদেরও বিচার হতে হবে। জেনেভায় এক বিবৃতিতে এমারসন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র দায়ী ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে বাধ্য’।
সিআইএ’র নির্যাতন ‘নিষ্ঠুর’ বর্বর
সিআইএ’র নির্যাতনকে ‘নিষ্ঠুর, বর্বর ও ভুল পদ্ধতি’ বলে মন্তব্য করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। স্পেনিশ টেলিভিশন তেলেমেন্ডুকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সিআইএ’র প্রতিবেদন থেকে অতীতে আমরা যে ভুল করেছি তা থেকে ফিরে আসতে পারবো বলে আশা করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘নাইন ইলেভেনের পর আমাদের জীবন নিরাপদ করতে অনেকেই কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তবে এটাও সত্য যে, আমরা এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি যেটা আমাদের মূল্যবোধের ভেতর পড়ে না।’
নির্যাতন সবসময়ই অন্যায়
‘নির্যাতন অন্যায়। নির্যাতন সব সময়ই অন্যায়।’ এটা আমি স্পষ্টভাবেই বলতে চাই। সিআইএ’র নির্যাতন প্রতিবেদন প্রকাশের পর মঙ্গলবার তুরস্কের আঙ্কারায় এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্যামেরন বলেন, অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে নির্যাতন ও মানবাধিকার লংঘনের ফল উল্টো হচ্ছে। ক্যামেরন উল্লেখ করেন, ‘আমাদের মধ্যে যারা একটি নিরাপদ, অধিক নিশ্চিন্ত বিশ্ব দেখতে চান, তারা সন্ত্রাসীদের পরাজয় দেখতে চান। কিন্তু নৈতিকতা হারালে আমরা সফল হব না।’
আমি অনুতপ্ত নই
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র তৎকালীন প্রধান ডিরেক্টর মাইকেল হেইডেন বলেছেন বন্দিদের নির্যাতনের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার জন্য তিনি অনুতপ্ত নন। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে কথিত উন্নত জিজ্ঞাসাবাদ প্রোগ্রামের নামে বন্দি নির্যাতন কর্মসূচির প্রধান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মঙ্গলবার পলিটিকো ম্যাগাজিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
মাইকেল হেইডেন বলেন, ‘বন্দিদের পানিতে চুবিয়ে নির্যাতন করে তথ্য আদায়ের কৌশল প্রেসিডেন্ট অনুমোদন করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট বুশ ব্যক্তিগতভাবে আবু জোবাইদাকে পানিতে চুবাতে বলেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের লাভ হয়েছে
সিআইএ’র কথিত ‘উন্নত জিজ্ঞাসাবাদ প্রোগ্রামের’ নামে বন্দি নির্যাতন কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রের লাভ হয়েছে বলে মনে করছেন সিনেট গোয়েন্দা কমিটির রিপাবলিকান নেতা সেন স্যাক্সবি চাম্বলিস। মঙ্গলবার তিনি বলেন, সিআইএ’র নির্যাতনের বিষয়টা শুধু সামনে আনা হচ্ছে। কিন্তু এর মাধ্যমে য্ক্তুরাষ্ট্র অনেক সম্ভাব্য হামলা মোকাবেলা ও সন্ত্রাসী হুমকি থেকে রক্ষা পেয়েছে। তিনি বলেন, এই বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মার্কিন সরকার ও তার মিত্ররা সিআইএ’র এই কর্মসূচির কারণে অনেক সন্ত্রাসী হামলা থেকে বেঁচে গেছে। তার মতে, ৫৭.৫ শতাংশ নির্যাতন ফলপ্রসূ হয়েছে।
ওসামার খোঁজ দিতে পারেনি
সিআইএ সবসময় বলে এসেছে ‘দমনমূলক জিজ্ঞাসাবাদের’ মাধ্যমে ওসামা বিন লাদেনের খোঁজ পাওয়া যাবে। তার সম্পর্কে তথ্য জানতে হলে বন্দিদের ওপর সামান্য ‘হিংস্রতা’ প্রয়োজনীয়। নির্যাতনের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য সিআইএ’র পূর্ব হিসাব-নিকাশকে পাল্টে বাস্তবতার সন্ধান দেয়। কিন্তু সিনেটের রিপোর্ট বলছে এত এত নির্যাতন চালিয়ে ওসামা সম্পর্কে কোনো তথ্য পায়নি সিআইএ। বিন লাদেনের তথ্য যার কাছে পাওয়া গেছে, সে নির্যাতনের আগেই ফাঁস করে দিয়েছে। ওসামা সম্পর্কে ‘সবচেয়ে সঠিক’ তথ্য দিয়েছিল হাসান গুল। ২০০৪ সালে ইরাক থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। হাসান গুল নির্যাতনের আগেই শুধু জিজ্ঞাসাবাদেই সব তথ্য বলে দিয়েছে। তারপরও তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে সিআইএ।
নির্যাতন ব্যয় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার
সিআইএ’র নির্যাতনমূলক জিজ্ঞাসাবাদ প্রোগ্রামের খরচ চলাতে দু’জন মনোচিকিৎসক একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। ২০০৫ সালে ওই কোম্পানি গঠিত হয়। নির্যাতনের পৃষ্ঠপোষক এই কোম্পানি ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার গ্রহণ করেছে। রিপোর্টে বলা হয়, এই দু’জন মনোচিকিৎসক আগে বিমান বাহিনীর যুদ্ধাহতদের সেবা দিত। আল কায়দা সম্পর্কে এদের কোনো জ্ঞান বা সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা ছিল না।
প্রশাসনিক মানদণ্ড হারিয়েছে ওয়াশিংটন : দিয়ানে ফেইনস্টেন
মার্কিন সিনিট সিআইএ’র বন্দি নিপীড়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিনেট একটি সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করেন সিনেটর দিয়ানে ফেইনস্টেন। তিনি বলেন, বুশ প্রশাসনের আমলে সিআইএ এবং অপরাপর সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশাসনিক মানদণ্ড হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষতি হয়েছে। তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি যে, ওয়াশিংটন তার নিজের ভুলভ্রান্তি স্বীকার করবে।
একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে আইনের শাসন বিরাজ করছে, সেখানে শারীরিক অত্যাচার কিংবা নিপীড়নের কোনো স্থান নেই। কাজেই সিনেট যে এই নিপীড়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেটা একটা লক্ষণীয় পদক্ষেপ।
‘তোকে জীবন্ত বের হতে দেব না পৃথিবী কোনোদিন জানবে না তোর সঙ্গে কী করেছি’
পায়ে গুলি করে এক বন্দির দুই পা খোঁড়া করে দিলেন একজন সিআইএ সদস্য। বুলেটবিদ্ধ পায়ের চিকিৎসা দূরে থাক, তাকে নির্দেশ দিলেন দাঁড়িয়ে থাকতে। উলঙ্গ করে দুই হাত বেঁধে ভাঙা পায়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন। ১৮০ ঘণ্টা ঘুমহীন রেখে পালাক্রমে চালালো নিষ্ঠুর অমানবিক নির্যাতন। অট্টহাসিতে বন্দিকে দম্ভ ভরে বললেন, ?‘তোকে জীবন্ত বের হতে দেব না। কিন্তু শিগগির মেরেও ফেলব না। পৃথিবী কোনোদিন জানবে না, তোর সঙ্গে আমি কী করেছি।’ এভাবেই বন্দিদের নির্যাতন চালিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। বুধবার ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা বিশ্ব থেকে সন্ত্রাসী সন্দেহে অন্তত ১০০ ইসলামী ব্যক্তির ওপর এই ভয়ানক নির্যাতন চালানো হয়েছে।
সম্প্রতি সিআইএ’র বন্দি নির্যাতন নিয়ে প্রকাশিত সিনেট গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একজনকে ২৬৬ ঘণ্টা ছোট কফিন বক্সে হাত-পা মুড়ে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। কাউকে কাউকে মলমূত্র খেতে বাধ্য করা হয়েছে। কারো পায়ুপথে ঢোকানা হয়েছে পানি। এসময় চিৎকার করে বন্দির মাকে ধরে এনে যৌন নির্যাতনের হুমকি দেয়া হতো। রিপোর্টে বলা হয়েছে কোনো রকম তদন্ত ছাড়াই কাউকে কাউকে অকারণে ধরে এনে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ধরনের বন্দির সংখ্যা অন্তত ২৬ জন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের অনুমতিতেই আটক জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব অত্যাচার চলতো বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। সিআইএও জনগণকে মিথ্যা বলে তাদের অপকর্ম আড়াল করার চেষ্টা করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। এখন তা প্রকাশের পর ‘এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে’ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ওদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক এবং সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ দূত বেন এমারসন বলেছেন, জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলের ঊর্ধ্বতন যেসব কর্মকর্তারা ওই সব অপরাধ মঞ্জুর করেছিলেন তাদের বিচার হতেই হবে। সেইসঙ্গে বন্দিদের পানিতে চুবিয়ে নির্যাতনের মতো নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো সিআইএ ও সরকারি কর্মকমর্তাদেরও বিচার হতে হবে। জেনেভায় এক বিবৃতিতে এমারসন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র দায়ী ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে বাধ্য’।
সিআইএ’র নির্যাতন ‘নিষ্ঠুর’ বর্বর
সিআইএ’র নির্যাতনকে ‘নিষ্ঠুর, বর্বর ও ভুল পদ্ধতি’ বলে মন্তব্য করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। স্পেনিশ টেলিভিশন তেলেমেন্ডুকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সিআইএ’র প্রতিবেদন থেকে অতীতে আমরা যে ভুল করেছি তা থেকে ফিরে আসতে পারবো বলে আশা করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘নাইন ইলেভেনের পর আমাদের জীবন নিরাপদ করতে অনেকেই কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তবে এটাও সত্য যে, আমরা এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি যেটা আমাদের মূল্যবোধের ভেতর পড়ে না।’
নির্যাতন সবসময়ই অন্যায়
‘নির্যাতন অন্যায়। নির্যাতন সব সময়ই অন্যায়।’ এটা আমি স্পষ্টভাবেই বলতে চাই। সিআইএ’র নির্যাতন প্রতিবেদন প্রকাশের পর মঙ্গলবার তুরস্কের আঙ্কারায় এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্যামেরন বলেন, অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে নির্যাতন ও মানবাধিকার লংঘনের ফল উল্টো হচ্ছে। ক্যামেরন উল্লেখ করেন, ‘আমাদের মধ্যে যারা একটি নিরাপদ, অধিক নিশ্চিন্ত বিশ্ব দেখতে চান, তারা সন্ত্রাসীদের পরাজয় দেখতে চান। কিন্তু নৈতিকতা হারালে আমরা সফল হব না।’
আমি অনুতপ্ত নই
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র তৎকালীন প্রধান ডিরেক্টর মাইকেল হেইডেন বলেছেন বন্দিদের নির্যাতনের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার জন্য তিনি অনুতপ্ত নন। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে কথিত উন্নত জিজ্ঞাসাবাদ প্রোগ্রামের নামে বন্দি নির্যাতন কর্মসূচির প্রধান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মঙ্গলবার পলিটিকো ম্যাগাজিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
মাইকেল হেইডেন বলেন, ‘বন্দিদের পানিতে চুবিয়ে নির্যাতন করে তথ্য আদায়ের কৌশল প্রেসিডেন্ট অনুমোদন করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট বুশ ব্যক্তিগতভাবে আবু জোবাইদাকে পানিতে চুবাতে বলেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের লাভ হয়েছে
সিআইএ’র কথিত ‘উন্নত জিজ্ঞাসাবাদ প্রোগ্রামের’ নামে বন্দি নির্যাতন কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রের লাভ হয়েছে বলে মনে করছেন সিনেট গোয়েন্দা কমিটির রিপাবলিকান নেতা সেন স্যাক্সবি চাম্বলিস। মঙ্গলবার তিনি বলেন, সিআইএ’র নির্যাতনের বিষয়টা শুধু সামনে আনা হচ্ছে। কিন্তু এর মাধ্যমে য্ক্তুরাষ্ট্র অনেক সম্ভাব্য হামলা মোকাবেলা ও সন্ত্রাসী হুমকি থেকে রক্ষা পেয়েছে। তিনি বলেন, এই বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মার্কিন সরকার ও তার মিত্ররা সিআইএ’র এই কর্মসূচির কারণে অনেক সন্ত্রাসী হামলা থেকে বেঁচে গেছে। তার মতে, ৫৭.৫ শতাংশ নির্যাতন ফলপ্রসূ হয়েছে।
ওসামার খোঁজ দিতে পারেনি
সিআইএ সবসময় বলে এসেছে ‘দমনমূলক জিজ্ঞাসাবাদের’ মাধ্যমে ওসামা বিন লাদেনের খোঁজ পাওয়া যাবে। তার সম্পর্কে তথ্য জানতে হলে বন্দিদের ওপর সামান্য ‘হিংস্রতা’ প্রয়োজনীয়। নির্যাতনের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য সিআইএ’র পূর্ব হিসাব-নিকাশকে পাল্টে বাস্তবতার সন্ধান দেয়। কিন্তু সিনেটের রিপোর্ট বলছে এত এত নির্যাতন চালিয়ে ওসামা সম্পর্কে কোনো তথ্য পায়নি সিআইএ। বিন লাদেনের তথ্য যার কাছে পাওয়া গেছে, সে নির্যাতনের আগেই ফাঁস করে দিয়েছে। ওসামা সম্পর্কে ‘সবচেয়ে সঠিক’ তথ্য দিয়েছিল হাসান গুল। ২০০৪ সালে ইরাক থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। হাসান গুল নির্যাতনের আগেই শুধু জিজ্ঞাসাবাদেই সব তথ্য বলে দিয়েছে। তারপরও তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে সিআইএ।
নির্যাতন ব্যয় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার
সিআইএ’র নির্যাতনমূলক জিজ্ঞাসাবাদ প্রোগ্রামের খরচ চলাতে দু’জন মনোচিকিৎসক একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। ২০০৫ সালে ওই কোম্পানি গঠিত হয়। নির্যাতনের পৃষ্ঠপোষক এই কোম্পানি ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার গ্রহণ করেছে। রিপোর্টে বলা হয়, এই দু’জন মনোচিকিৎসক আগে বিমান বাহিনীর যুদ্ধাহতদের সেবা দিত। আল কায়দা সম্পর্কে এদের কোনো জ্ঞান বা সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা ছিল না।
প্রশাসনিক মানদণ্ড হারিয়েছে ওয়াশিংটন : দিয়ানে ফেইনস্টেন
মার্কিন সিনিট সিআইএ’র বন্দি নিপীড়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিনেট একটি সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করেন সিনেটর দিয়ানে ফেইনস্টেন। তিনি বলেন, বুশ প্রশাসনের আমলে সিআইএ এবং অপরাপর সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশাসনিক মানদণ্ড হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষতি হয়েছে। তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি যে, ওয়াশিংটন তার নিজের ভুলভ্রান্তি স্বীকার করবে।
একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে আইনের শাসন বিরাজ করছে, সেখানে শারীরিক অত্যাচার কিংবা নিপীড়নের কোনো স্থান নেই। কাজেই সিনেট যে এই নিপীড়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেটা একটা লক্ষণীয় পদক্ষেপ।
‘তোকে জীবন্ত বের হতে দেব না পৃথিবী কোনোদিন জানবে না তোর সঙ্গে কী করেছি’
পায়ে গুলি করে এক বন্দির দুই পা খোঁড়া করে দিলেন একজন সিআইএ সদস্য। বুলেটবিদ্ধ পায়ের চিকিৎসা দূরে থাক, তাকে নির্দেশ দিলেন দাঁড়িয়ে থাকতে। উলঙ্গ করে দুই হাত বেঁধে ভাঙা পায়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন। ১৮০ ঘণ্টা ঘুমহীন রেখে পালাক্রমে চালালো নিষ্ঠুর অমানবিক নির্যাতন। অট্টহাসিতে বন্দিকে দম্ভ ভরে বললেন, ?‘তোকে জীবন্ত বের হতে দেব না। কিন্তু শিগগির মেরেও ফেলব না। পৃথিবী কোনোদিন জানবে না, তোর সঙ্গে আমি কী করেছি।’ এভাবেই বন্দিদের নির্যাতন চালিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। বুধবার ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা বিশ্ব থেকে সন্ত্রাসী সন্দেহে অন্তত ১০০ ইসলামী ব্যক্তির ওপর এই ভয়ানক নির্যাতন চালানো হয়েছে।
সম্প্রতি সিআইএ’র বন্দি নির্যাতন নিয়ে প্রকাশিত সিনেট গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একজনকে ২৬৬ ঘণ্টা ছোট কফিন বক্সে হাত-পা মুড়ে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। কাউকে কাউকে মলমূত্র খেতে বাধ্য করা হয়েছে। কারো পায়ুপথে ঢোকানা হয়েছে পানি। এসময় চিৎকার করে বন্দির মাকে ধরে এনে যৌন নির্যাতনের হুমকি দেয়া হতো। রিপোর্টে বলা হয়েছে কোনো রকম তদন্ত ছাড়াই কাউকে কাউকে অকারণে ধরে এনে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ধরনের বন্দির সংখ্যা অন্তত ২৬ জন।
No comments