চুক্তি পেতে তিন মন্ত্রীর জন্য ১১ কোটি ৬০ লাখ টাকার গাড়ি
তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে আজ। তৃতীয় দফা চুক্তি পেতে যারপরনাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বিতর্কিত প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান। এ কারণে নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি (টয়োটা প্রাডো) কিনেছেন। এখন ওই সব গাড়ি ব্যবহার করছেন মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীরা। ঊর্ধ্বতনদের খুশি রাখতে এলজিইডি এ খাতে ব্যয় করেছে ১১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। একেকটি গাড়ির দাম পড়েছে পৌনে চার কোটি টাকা। যদিও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১০ মাস পর প্রকল্প তদারকের নামে এ তিনটি গাড়ি কিনেছে এলজিইডি। এসব গাড়ি কেনা হয়েছে ২০১২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প থেকে নেয়া পেশাদারি ফি’র টাকা অপব্যবহার করে। শুধু গাড়ি কেনা নয়, প্রভাবশালী তিন মন্ত্রীর গাড়ির জ্বালানি খরচ দেয়া হয়েছে এক কোটি টাকার বেশি পেশাদারি ফি অপচয়ের মাধ্যমে। এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অনেক বছর নির্দিষ্ট হারে ‘সার্ভিস চার্জ’ নিচ্ছে এলজিইডি। এটাকে ওই প্রতিষ্ঠানের ভাষায় বলা হয় পেশাদারি ফি। ১৯৯৮ সালের ২০শে জুলাই অনুষ্ঠিত একনেকের সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে এলজিইডি নিজেদের বাস্তবায়ন করা প্রকল্প থেকে ২ শতাংশ হারে পেশাদারি ফি নিচ্ছে। একনেকের সভায় সিদ্ধান্ত ছিল, প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ও তদারকের জন্য কনটিনজেন্সির (আপৎকালীন) প্রয়োজনে পেশাদারি ফি’র অর্থ খরচ করা যাবে। যন্ত্রপাতি কেনা বা বেতন ভাতায় এ অর্থ খরচ করতে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। ওই বিষয়টি ডিপিপিতে উল্লেখ থাকতে হবে। কিন্তু এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোন অনুমোদন না নিয়ে মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীদের তুষ্ট করার নামে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পেতে সরকারি অর্থ খরচ করেছেন। সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প (পিইডিপি-২ ও ৩) বাস্তবায়নের জন্য জন্য ২০০৫ থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত এলজিইডি প্রায় ৮৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা পেশাদারি ফি নিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২২ কোটি টাকা গাড়ি কেনার নামে ভোগ বিলাসে ব্যয় করা হয়েছে। গত মে থেকে জুলাই পর্যন্ত এ নিরীক্ষা করে সিএজি’র বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অডিট অধিদপ্তর (ফাপাড) এ সব দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। কেনার পর থেকে একটি গাড়ি সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ব্যবহার করতেন। বর্তমানে ওই গাড়িটি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা ব্যবহার করছেন। বাকি গাড়ি দু’টি ব্যবহার করছেন এইচ টি ইমাম ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এদিকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত আইনে বলা আছে, তারা সরকারি খরচে একটি গাড়ি পাবেন। আর জরুরি দাপ্তরিক কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে একটি অতিরিক্ত জিপ পাবেন, বিশেষ করে ঢাকার বাইরে যাওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারাও মন্ত্রীর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। কিন্তু নিজেদের সরকারি এবং দাপ্তরিক গাড়ি থাকার পরও তারা এলজিইডি’র গাড়ি ব্যবহার করছেন। এদিকে এসব অভিযোগের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধার সনদ জালিয়াতি করায় দুদক কর্তৃক অভিযুক্ত হয়েছেন এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রায় ১১ জন মন্ত্রী ওয়াহিদুর রহমানের চুক্তির পক্ষে তদবির করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। মন্ত্রীর সংখ্যা ও প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া গেছে জানিয়ে ওয়াহিদুর রহমান ও তার লোকেরা এলজিইডিতে গুজব ছড়িয়েছেন। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের তলব অনুযায়ী গত ২৩শে অক্টোবর প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান তথাকথিত ছাত্রলীগের প্রটেকশনে দুদকে হাজির হন। দুদক থেকে বের হওয়ার সময় ওই বহরের লোকেরা ওয়াহিদুর রহমানকে কর্তব্যরত সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলতে দেয়নি। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণ করে তারা। এরপর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে গেছেন ওয়াহিদুর রহমান। ঘনিষ্ঠজনদের কাছে বলেছেন, তৃতীয় দফা চুক্তি কেউ ঠেকাতে পারবে না।
No comments