ক্ষোভ ও অসন্তোষ সংসদীয় কমিটির
বারবার তাগাদার পরও ব্যাংক ঋণের সুদের হার
সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও
অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। সুদের হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে
তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে এই কমিটি।
বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন সদস্যরা। এছাড়া অর্থ পাচার রোধ এবং বীমা কোম্পানিগুলোর অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বৈঠকে। কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, কমিটির বেশির ভাগ সদস্য বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার অতিরিক্ত হওয়ায় দেশে বিনিয়োগ থমকে আছে। অনেকের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত সুদের কারণে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। এ মুহূর্তে ব্যাংক সুদের হার কমানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তারা।
কমিটির একজন সদস্য জানান, ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে না আনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক বৈঠকে বলেন, ব্যাংক ঋণ নিতে গেলেই ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ সুদ দিতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে দেশে বিনিয়োগ হবে না। শিল্প-কলকারখানা হবে না। কর্মসংস্থান হবে না। তিনি বলেন, একটি-দুটি শাখা নিয়ে একটি ব্যাংক চালু করতে না করতেই, ব্যাঙের ছাতার মতো আরও শাখা গজিয়ে যায়। বছর শেষে দেখা যায় তাদের কোটি কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, এসব টাকা আসে কোত্থেকে? ব্যাংকগুলোর হাতে কি আলাদিনের চেরাগ আছে?
বৈঠকে ড. আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে। কমিটির আগের বৈঠকেও এ বিষয়ে বলা হয়েছিল। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। বিষয়টি দুঃখজনক। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বৈঠকে উপস্থিত না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এমনকি গভর্নর পর্যন্ত উপস্থিত নেই। তাহলে কমিটির বৈঠক করে লাভ কি? ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি নিজেও মন্ত্রী ছিলাম। কিন্তু কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম না- এমন একটি নজিরও নেই।’
ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এই সফলতা ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা গড়ে তুলতে হবে। যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এজন্য প্রয়োজন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ। আগে রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিনিয়োগের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচিত ছিল। এখন ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার বিনিয়োগে প্রধান প্রতিবন্ধকতা বলে বিবেচিত হচ্ছে। এই প্রতিবন্ধকতা অবশ্যই দূর করতে হবে। কমিটির সদস্যরা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, যে কোনো মূল্যে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে।
বৈঠকে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা ছাড়াও অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং), বীমা কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম এবং সোনালী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক কেলেংকারি নিয়ে আলোচনা হয়। ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার উপায় খুঁজে বের করার পাশাপাশি অর্থ পাচার রোধ এবং বীমা কোম্পানিগুলোর অনিয়ম খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। টিপু মুন্শিকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির বাকি দু’জন হলেন- মো. শওকত চৌধুরী ও ফরহাদ হোসেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিটির সভাপতিসহ বাকি সদস্যরা। কমিটির সভাপতি বলেন, প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় পর এই বৈঠক। অর্থমন্ত্রী নিজে সময় দিয়েছেন। অথচ তিনি নেই। মন্ত্রী কেবিনেটের বৈঠক, একনেকের বৈঠকসহ অন্যসব বৈঠকে থাকেন। শুধু কমিটির বৈঠকে থাকেন না। দু’একটি বৈঠকে যাও ছিলেন তাও চলে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করেছেন। অথচ কমিটির বৈঠকে তার উপস্থিতি খুবই জরুরি। এতে জবাবদিহিতার পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি আরও বাড়ে।
কমিটির সদস্যরা এ বক্তব্য সমর্থন করেন। কমিটির সদস্য টিপু মুন্শি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রলালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকলে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। কমিটির সদস্য শওকত চৌধুরী তার এ বক্তব্য সমর্থন করে বলেন. তারা আগের বৈঠকে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার সুপারিশ করেন। এরপর প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় চলে গেল। এই সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। কেন নেই? তার জবাব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ দিতে পারবেন না। তারা বৈঠকে উপস্থিত থাকলে ভালো হতো।
পরে কমিটির সদস্যরা আগের বৈঠকের সিদ্ধান্ত, এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতিসহ নির্ধারিত আলোচ্যসূচি নিয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠক ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার সুপারিশের বিষয়টি টেনে এনে কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা সুপারিশ করব। মন্ত্রণালয় আমলে নেবে না। তাহলে সুপারিশ করে লাভ কি’? তিনি এ সময় টেবিল চাপড়িয়ে বলেন, ‘বিনিয়োগ বাড়াতে হলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই’।
বৈঠকে অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং) নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি কে কোথায় কত টাকা পাচার করেছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এছাড়াও মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের নামে কারা অর্থ পাঠিয়েছে তারও একটি পৃথক তালিকা তৈরি করতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, কি পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তার সঠিক হিসাব সরকারের হাতে নেই। তার এ বক্তব্য নিয়ে কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। এ সময় কমিটির সভাপতি বলেন, ‘সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের এত তৎপরতার পরও মানি লন্ডারিং কেন রোধ করা যাচ্ছে না বুঝি না’। তিনি বলেন, ‘কে কোথায় কত টাকা পাচার করেছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে সংসদীয় কমিটিকে জানাতে হবে। সরকারের কাছে তালিকা থাকবে না, তা হতে পারে না। ড. আবদুর রাজ্জাক এ সময় মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের নামে কতজন অর্থ পাচার করেছেন তারও একটি পৃথক তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশ দেন। মানি লন্ডারিং বিষয়ে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া, দুবাই, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে কি পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে তার কোনো হিসাব দিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টেলিজেন্স সেল। এ নিয়ে কমিটিতে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে তারা ঘুমাচ্ছে।
বৈঠকে বীমা কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি বীমা খাতকে সব ধরনের নেতিবাচক ধারণা থেকে মুক্তি দিয়ে মানুষের আস্থার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দ্রুত ‘ক্লেইম সেটেলমেন্ট’ নিশ্চিত করার পরামর্শ দেয়। এছাড়াও বীমা খাতে বিদ্যমান বীমা এজেন্টদের কমিশনের হার কমানোর সুপারিশ করে কমিটি। এ প্রসঙ্গে ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোতে চলে কমিশন বাণিজ্য। এর সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ম্যানেজার, ইনস্যুরেন্স এজেন্টরা। এতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ গ্রাহক। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তাই আমরা বলেছি, ইনস্যুরেন্সের প্রিমিয়াম কমাতে হবে। এছাড়া কমিশন প্রথা তুলে দিতে হবে।
এছাড়াও বৈঠকে চলমান প্রকল্পগুলোতে সঠিকভাবে অর্থায়ন নিশ্চিত করে নতুন প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের জন্য বেসরকারি ও সরকারি ব্যাংকগুলোকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে কমিটি। বৈঠকে কমিটির সদস্য নাজমুল হাসান, টিপু মুন্শি, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, ফরহাদ হোসেন, মো. শওকত চৌধুরী এবং আখতার জাহান অংশ নেন।
বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন সদস্যরা। এছাড়া অর্থ পাচার রোধ এবং বীমা কোম্পানিগুলোর অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বৈঠকে। কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, কমিটির বেশির ভাগ সদস্য বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার অতিরিক্ত হওয়ায় দেশে বিনিয়োগ থমকে আছে। অনেকের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত সুদের কারণে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। এ মুহূর্তে ব্যাংক সুদের হার কমানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তারা।
কমিটির একজন সদস্য জানান, ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে না আনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক বৈঠকে বলেন, ব্যাংক ঋণ নিতে গেলেই ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ সুদ দিতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে দেশে বিনিয়োগ হবে না। শিল্প-কলকারখানা হবে না। কর্মসংস্থান হবে না। তিনি বলেন, একটি-দুটি শাখা নিয়ে একটি ব্যাংক চালু করতে না করতেই, ব্যাঙের ছাতার মতো আরও শাখা গজিয়ে যায়। বছর শেষে দেখা যায় তাদের কোটি কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, এসব টাকা আসে কোত্থেকে? ব্যাংকগুলোর হাতে কি আলাদিনের চেরাগ আছে?
বৈঠকে ড. আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে। কমিটির আগের বৈঠকেও এ বিষয়ে বলা হয়েছিল। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। বিষয়টি দুঃখজনক। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বৈঠকে উপস্থিত না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এমনকি গভর্নর পর্যন্ত উপস্থিত নেই। তাহলে কমিটির বৈঠক করে লাভ কি? ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি নিজেও মন্ত্রী ছিলাম। কিন্তু কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম না- এমন একটি নজিরও নেই।’
ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এই সফলতা ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা গড়ে তুলতে হবে। যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এজন্য প্রয়োজন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ। আগে রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিনিয়োগের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচিত ছিল। এখন ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার বিনিয়োগে প্রধান প্রতিবন্ধকতা বলে বিবেচিত হচ্ছে। এই প্রতিবন্ধকতা অবশ্যই দূর করতে হবে। কমিটির সদস্যরা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, যে কোনো মূল্যে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে।
বৈঠকে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা ছাড়াও অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং), বীমা কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম এবং সোনালী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক কেলেংকারি নিয়ে আলোচনা হয়। ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার উপায় খুঁজে বের করার পাশাপাশি অর্থ পাচার রোধ এবং বীমা কোম্পানিগুলোর অনিয়ম খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। টিপু মুন্শিকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির বাকি দু’জন হলেন- মো. শওকত চৌধুরী ও ফরহাদ হোসেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিটির সভাপতিসহ বাকি সদস্যরা। কমিটির সভাপতি বলেন, প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় পর এই বৈঠক। অর্থমন্ত্রী নিজে সময় দিয়েছেন। অথচ তিনি নেই। মন্ত্রী কেবিনেটের বৈঠক, একনেকের বৈঠকসহ অন্যসব বৈঠকে থাকেন। শুধু কমিটির বৈঠকে থাকেন না। দু’একটি বৈঠকে যাও ছিলেন তাও চলে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করেছেন। অথচ কমিটির বৈঠকে তার উপস্থিতি খুবই জরুরি। এতে জবাবদিহিতার পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি আরও বাড়ে।
কমিটির সদস্যরা এ বক্তব্য সমর্থন করেন। কমিটির সদস্য টিপু মুন্শি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রলালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকলে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। কমিটির সদস্য শওকত চৌধুরী তার এ বক্তব্য সমর্থন করে বলেন. তারা আগের বৈঠকে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার সুপারিশ করেন। এরপর প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় চলে গেল। এই সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। কেন নেই? তার জবাব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ দিতে পারবেন না। তারা বৈঠকে উপস্থিত থাকলে ভালো হতো।
পরে কমিটির সদস্যরা আগের বৈঠকের সিদ্ধান্ত, এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতিসহ নির্ধারিত আলোচ্যসূচি নিয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠক ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার সুপারিশের বিষয়টি টেনে এনে কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা সুপারিশ করব। মন্ত্রণালয় আমলে নেবে না। তাহলে সুপারিশ করে লাভ কি’? তিনি এ সময় টেবিল চাপড়িয়ে বলেন, ‘বিনিয়োগ বাড়াতে হলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই’।
বৈঠকে অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং) নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি কে কোথায় কত টাকা পাচার করেছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এছাড়াও মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের নামে কারা অর্থ পাঠিয়েছে তারও একটি পৃথক তালিকা তৈরি করতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, কি পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তার সঠিক হিসাব সরকারের হাতে নেই। তার এ বক্তব্য নিয়ে কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। এ সময় কমিটির সভাপতি বলেন, ‘সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের এত তৎপরতার পরও মানি লন্ডারিং কেন রোধ করা যাচ্ছে না বুঝি না’। তিনি বলেন, ‘কে কোথায় কত টাকা পাচার করেছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে সংসদীয় কমিটিকে জানাতে হবে। সরকারের কাছে তালিকা থাকবে না, তা হতে পারে না। ড. আবদুর রাজ্জাক এ সময় মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের নামে কতজন অর্থ পাচার করেছেন তারও একটি পৃথক তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশ দেন। মানি লন্ডারিং বিষয়ে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া, দুবাই, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে কি পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে তার কোনো হিসাব দিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টেলিজেন্স সেল। এ নিয়ে কমিটিতে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে তারা ঘুমাচ্ছে।
বৈঠকে বীমা কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি বীমা খাতকে সব ধরনের নেতিবাচক ধারণা থেকে মুক্তি দিয়ে মানুষের আস্থার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দ্রুত ‘ক্লেইম সেটেলমেন্ট’ নিশ্চিত করার পরামর্শ দেয়। এছাড়াও বীমা খাতে বিদ্যমান বীমা এজেন্টদের কমিশনের হার কমানোর সুপারিশ করে কমিটি। এ প্রসঙ্গে ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোতে চলে কমিশন বাণিজ্য। এর সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ম্যানেজার, ইনস্যুরেন্স এজেন্টরা। এতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ গ্রাহক। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তাই আমরা বলেছি, ইনস্যুরেন্সের প্রিমিয়াম কমাতে হবে। এছাড়া কমিশন প্রথা তুলে দিতে হবে।
এছাড়াও বৈঠকে চলমান প্রকল্পগুলোতে সঠিকভাবে অর্থায়ন নিশ্চিত করে নতুন প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের জন্য বেসরকারি ও সরকারি ব্যাংকগুলোকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে কমিটি। বৈঠকে কমিটির সদস্য নাজমুল হাসান, টিপু মুন্শি, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, ফরহাদ হোসেন, মো. শওকত চৌধুরী এবং আখতার জাহান অংশ নেন।
No comments