পাকিস্তানে স্কুলে জঙ্গি হামলায় নিহত ১৪১- স্কুলশিশুর ওপর এ কোন বর্বরতা
(ফুটফুটে
সুন্দর শিশুটি গিয়েছিল স্কুলে। স্কুল থেকে তাকে নেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে।
কপাল বেয়ে ঝরছে রক্ত। পাকিস্তানের পেশোয়ারের একটি স্কুলে গতকাল তালেবানের
হামলায় নিহত হয়েছে তার সহপাঠীসহ শতাধিক শিক্ষার্থী l ছবি: এএফপি) কী বর্বরতা! কী নৃশংসতা! এ কেমন প্রতিশোধ! সামরিক অভিযানের প্রতিশোধ নিতে এত স্কুলশিশুকে হত্যা! পাকিস্তানের
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পেশোয়ারের ওয়ারসাক রোডে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি
স্কুলে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে তালেবান অস্ত্রধারীরা। গতকাল
মঙ্গলবার সকালে যখন হামলা চালানো হয়, তখন ওই স্কুলে পরীক্ষা চলছিল। তাই
শ্রেণিকক্ষগুলো ছিল শিক্ষার্থীতে ঠাসা। হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১৪১
জন। তাদের মধ্যে শিশু ১৩২ জন। বাকি নয়জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী।
আহতের সংখ্যা ১২৫। খবর বিবিসি, এএফপি, ডন ও এনডিটিভির। পাকিস্তানি
কর্মকর্তারা জানান, হামলাকারীরা সংখ্যায় ছিল ছয়জন। নিরাপত্তা বাহিনীর
পোশাক পরে অতর্কিতে স্কুলে হামলা চালায় তারা। নিহত ১৪১ জনের অধিকাংশই মারা
যায় আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণে। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়
ছয় হামলাকারীর সবাই। কর্মকর্তারা দাবি করেন, গতকাল সন্ধ্যার কিছু পর
নিরাপত্তা বাহিনী স্কুলটির পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে।
স্কুলভবনের ভেতর বোমা পেতে রাখায় সেখানে ঢুকতে বেশ বেগ পেতে হয় তাদের।
প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ উদ্ধার অভিযান তদারক করেন।
যেভাবে হামলা: স্কুলের কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী মুদাসসির আওয়ান বলেন, ‘আমরা দেখলাম, ছয়জন লোক স্কুলের দেয়াল বেয়ে উঠছে। ভাবলাম শিশুরা খেলছে। কিছুক্ষণ পরই দেখা গেল, তাদের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ গোলা ও অস্ত্রশস্ত্র। দেয়াল টপকে স্কুলে ঢুকেই তারা গুলি ছোড়া শুরু করে। আমরা দৌড়ে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়ি। এরপর তারা এক একটা শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিশুদের হত্যা শুরু করে।’
স্কুলের আরেক কর্মী বলেন, হামলাকারীরা আর্মি পাবলিক স্কুলের মিলনায়তনে ঢুকে উপস্থিত সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। সেখানে সেনা-সদস্যদের একটি দল শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসার ওপর প্রশিক্ষণ ক্লাস নিচ্ছিল। হামলায় বেঁচে যাওয়া এক শিক্ষার্থীর কথা, ‘আমরা যখন ক্লাসরুম থেকে দৌড়ে বের হচ্ছিলাম, তখন দেখি আমাদের অনেক বন্ধুই করিডরে মরে পড়ে আছে। তাদের শরীর থেকে তখনো রক্ত ঝরছে। কারও গায়ে তিন থেকে চারটি গুলি লেগেছে।’
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, হামলাকারীদের গুলি করতে দেখে তারা ক্লাসরুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু হামলাকারীরা দরজা ভেঙে রুমে ঢুকে গুলি চালাতে থাকে। প্রাণে বাঁচতে তারা বেঞ্চের নিচে লুকিয়ে পড়ে। কিন্তু যারাই নড়াচড়া করছিল, তাদেরই মাথা ও পায়ে গুলি করে হামলাকারীরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হামলার পর স্কুল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলেন তাঁরা। শুনছিলেন গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ। স্কুলের দিকে অ্যাম্বুলেন্সগুলো ছুটছিল আর আহত ব্যক্তিদের নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিল। আকাশে চক্কর দিচ্ছিল হেলিকপ্টার। হামলার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় নগরের প্রধান সড়কগুলো। স্কুলটি ঘিরে ফেলেন ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশ ও সেনাসদস্যরা। বন্ধ করে দেওয়া হয় এলাকার অন্য সব স্কুলও।
সেনাবাহিনীর একটি সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের দি ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকা জানায়, এক শিক্ষকের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধিরয়ে দেয় এক হামলাকারী। ওই শিক্ষক পুড়ে মারা যান। সেই দৃশ্য দেখতে বাধ্য করা হয় তাঁর ছাত্রদের।
সেনাবাহিনী বলেছে, হামলার সময় স্কুলে ৫০০ শিক্ষার্থী ছিল। অভিযানে অধিকাংশকেই বের করে আনা সম্ভব হয়। তবে আহত হয় শতাধিক। তাদের নিকটবর্তী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অধিকাংশেরই মাথা ও পেটে গুলি লেগেছে। রক্তের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় স্বেচ্ছা রক্তদানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের সেনা সদর দপ্তর বলেছে, জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযান শুরুর পর থেকে কয়েক ঘণ্টা ধরে হামলাকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবিনিময় চলে। সন্ধ্যার পর হামলাকারীদের কাছ থেকে স্কুলের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয় তারা। হামলায় এত শিশুর প্রাণহানিতে দেশজুড়ে এক নজিরবিহীন শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলটি পেশোয়ার সেনানিবাসের এক প্রান্তে অবস্থিত। পাকিস্তানের ইতিহাসে এ রকম হামলার নজির আর নেই। বিশ্বেও এ ধরনের হামলা বিরল। স্কুলটির অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই সেনাসদস্যদের সন্তান।
তিন দিনের শোক: হামলার পর দুপুরের দিকেই পেশোয়ারে যান প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তিনি এ হামলাকে ‘জাতীয় ট্র্যাজেডি’ আখ্যায়িত করে দেশব্যাপী তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের ঘোষণা দিয়ে বলেন, হামলার জন্য দায়ী দুষ্কৃতকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না। অন্যতম বিরোধী নেতা ইমরান খান ১৮ ডিসেম্বর তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি বাতিল করেন।
হামলার দায় স্বীকার: হামলার দুই ঘণ্টা পরই দায় স্বীকার করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। সংগঠনটির মুখপাত্র মোহাম্মদ খোরাসানি বলেন, ‘উত্তর ওয়াজিরিস্তান ও খাইবার এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযান “জারব-ই-আজাব”-এ তালেবানদের হত্যা ও তাঁদের পরিবারকে হয়রানি করার জবাবে এই হামলা। আমাদের স্বজন হারানোর বেদনা তারাও (সেনারা) বুঝতে পারবে।’
মুখপাত্র আরও বলেন, হামলায় অংশ নিয়েছেন ছয়জন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আছেন, যাঁরা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। অন্যরা আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী। তাঁদের স্কুলের বড় শিক্ষার্থীদের গুলি করতে বলা হয়েছিল, ছোট বাচ্চাদের ওপর নয়। তালেবান-অধ্যুষিত পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকা উত্তর ওয়াজিরিস্তান ও নিকটবর্তী খাইবারে অনেক দিন ধরেই অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে সেখানে কয়েক শ তালেবান নিহত হয়। হামলার শিকার হয় অনেক নিরীহ নারী-শিশুও।
বিশ্বনেতাদের নিন্দা: ভয়াবহ এ হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও শোক জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। দিনটিকে মানবতার জন্য এক অন্ধকার দিন বলে উল্লেখ করেন কেউ কেউ। নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রমুখ। নরেন্দ্র মোদি গত রাতে এক টুইটার বার্তায় বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি নওয়াজকে জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের পাশে থাকবে ভারত।
শেখ হাসিনা বলেন, এ বর্বর ও ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ড সারা বিশ্বের মানুষকে শোকাহত ও স্তম্ভিত করেছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলের মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার আহ্বান জানান তিনি। প্রেসিডেন্ট ওবামা স্কুলে জঙ্গি হামলার ঘটনাটিকে একটি ‘ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, পাকিস্তানের পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, স্কুলে পড়াশোনারত শিশুশিক্ষার্থীদের ওপর হামলা একটি কাপুরুষোচিত কাজ। এ বছর শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই বলেছে, ‘এ ঘটনায় আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের মতো আমিও এই শিশু, ভাই ও বোনদের জন্য শোকাহত। তবে আমরা কখনোই হারব না।’
যেভাবে হামলা: স্কুলের কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী মুদাসসির আওয়ান বলেন, ‘আমরা দেখলাম, ছয়জন লোক স্কুলের দেয়াল বেয়ে উঠছে। ভাবলাম শিশুরা খেলছে। কিছুক্ষণ পরই দেখা গেল, তাদের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ গোলা ও অস্ত্রশস্ত্র। দেয়াল টপকে স্কুলে ঢুকেই তারা গুলি ছোড়া শুরু করে। আমরা দৌড়ে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়ি। এরপর তারা এক একটা শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিশুদের হত্যা শুরু করে।’
স্কুলের আরেক কর্মী বলেন, হামলাকারীরা আর্মি পাবলিক স্কুলের মিলনায়তনে ঢুকে উপস্থিত সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। সেখানে সেনা-সদস্যদের একটি দল শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসার ওপর প্রশিক্ষণ ক্লাস নিচ্ছিল। হামলায় বেঁচে যাওয়া এক শিক্ষার্থীর কথা, ‘আমরা যখন ক্লাসরুম থেকে দৌড়ে বের হচ্ছিলাম, তখন দেখি আমাদের অনেক বন্ধুই করিডরে মরে পড়ে আছে। তাদের শরীর থেকে তখনো রক্ত ঝরছে। কারও গায়ে তিন থেকে চারটি গুলি লেগেছে।’
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, হামলাকারীদের গুলি করতে দেখে তারা ক্লাসরুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু হামলাকারীরা দরজা ভেঙে রুমে ঢুকে গুলি চালাতে থাকে। প্রাণে বাঁচতে তারা বেঞ্চের নিচে লুকিয়ে পড়ে। কিন্তু যারাই নড়াচড়া করছিল, তাদেরই মাথা ও পায়ে গুলি করে হামলাকারীরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হামলার পর স্কুল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলেন তাঁরা। শুনছিলেন গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ। স্কুলের দিকে অ্যাম্বুলেন্সগুলো ছুটছিল আর আহত ব্যক্তিদের নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিল। আকাশে চক্কর দিচ্ছিল হেলিকপ্টার। হামলার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় নগরের প্রধান সড়কগুলো। স্কুলটি ঘিরে ফেলেন ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশ ও সেনাসদস্যরা। বন্ধ করে দেওয়া হয় এলাকার অন্য সব স্কুলও।
সেনাবাহিনীর একটি সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের দি ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকা জানায়, এক শিক্ষকের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধিরয়ে দেয় এক হামলাকারী। ওই শিক্ষক পুড়ে মারা যান। সেই দৃশ্য দেখতে বাধ্য করা হয় তাঁর ছাত্রদের।
সেনাবাহিনী বলেছে, হামলার সময় স্কুলে ৫০০ শিক্ষার্থী ছিল। অভিযানে অধিকাংশকেই বের করে আনা সম্ভব হয়। তবে আহত হয় শতাধিক। তাদের নিকটবর্তী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অধিকাংশেরই মাথা ও পেটে গুলি লেগেছে। রক্তের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় স্বেচ্ছা রক্তদানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের সেনা সদর দপ্তর বলেছে, জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযান শুরুর পর থেকে কয়েক ঘণ্টা ধরে হামলাকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবিনিময় চলে। সন্ধ্যার পর হামলাকারীদের কাছ থেকে স্কুলের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয় তারা। হামলায় এত শিশুর প্রাণহানিতে দেশজুড়ে এক নজিরবিহীন শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলটি পেশোয়ার সেনানিবাসের এক প্রান্তে অবস্থিত। পাকিস্তানের ইতিহাসে এ রকম হামলার নজির আর নেই। বিশ্বেও এ ধরনের হামলা বিরল। স্কুলটির অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই সেনাসদস্যদের সন্তান।
তিন দিনের শোক: হামলার পর দুপুরের দিকেই পেশোয়ারে যান প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তিনি এ হামলাকে ‘জাতীয় ট্র্যাজেডি’ আখ্যায়িত করে দেশব্যাপী তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের ঘোষণা দিয়ে বলেন, হামলার জন্য দায়ী দুষ্কৃতকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না। অন্যতম বিরোধী নেতা ইমরান খান ১৮ ডিসেম্বর তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি বাতিল করেন।
হামলার দায় স্বীকার: হামলার দুই ঘণ্টা পরই দায় স্বীকার করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। সংগঠনটির মুখপাত্র মোহাম্মদ খোরাসানি বলেন, ‘উত্তর ওয়াজিরিস্তান ও খাইবার এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযান “জারব-ই-আজাব”-এ তালেবানদের হত্যা ও তাঁদের পরিবারকে হয়রানি করার জবাবে এই হামলা। আমাদের স্বজন হারানোর বেদনা তারাও (সেনারা) বুঝতে পারবে।’
মুখপাত্র আরও বলেন, হামলায় অংশ নিয়েছেন ছয়জন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আছেন, যাঁরা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। অন্যরা আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী। তাঁদের স্কুলের বড় শিক্ষার্থীদের গুলি করতে বলা হয়েছিল, ছোট বাচ্চাদের ওপর নয়। তালেবান-অধ্যুষিত পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকা উত্তর ওয়াজিরিস্তান ও নিকটবর্তী খাইবারে অনেক দিন ধরেই অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে সেখানে কয়েক শ তালেবান নিহত হয়। হামলার শিকার হয় অনেক নিরীহ নারী-শিশুও।
বিশ্বনেতাদের নিন্দা: ভয়াবহ এ হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও শোক জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। দিনটিকে মানবতার জন্য এক অন্ধকার দিন বলে উল্লেখ করেন কেউ কেউ। নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রমুখ। নরেন্দ্র মোদি গত রাতে এক টুইটার বার্তায় বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি নওয়াজকে জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের পাশে থাকবে ভারত।
শেখ হাসিনা বলেন, এ বর্বর ও ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ড সারা বিশ্বের মানুষকে শোকাহত ও স্তম্ভিত করেছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলের মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার আহ্বান জানান তিনি। প্রেসিডেন্ট ওবামা স্কুলে জঙ্গি হামলার ঘটনাটিকে একটি ‘ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, পাকিস্তানের পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, স্কুলে পড়াশোনারত শিশুশিক্ষার্থীদের ওপর হামলা একটি কাপুরুষোচিত কাজ। এ বছর শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই বলেছে, ‘এ ঘটনায় আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের মতো আমিও এই শিশু, ভাই ও বোনদের জন্য শোকাহত। তবে আমরা কখনোই হারব না।’
No comments