তালেবান: জন্ম ও উত্থান
জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবান পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই করছে। |
যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় উৎখাত হয়েছিল কট্টরপন্থী তালেবান সরকার। কিন্তু কিছুদিন পরই তারা বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিরোধ শুরু করে। সেই থেকে বিভিন্ন সময়ে তাদের শক্তি ও প্রতিরোধের মাত্রা কমেছে বা বেড়েছে। কিন্তু মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্যের লাখো সেনা আর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর বছরের পর বছরের চেষ্টায়ও তাদের নির্মূল করা যায়নি। আর বিদেশি সেনাদের বিদায়ের ক্ষণ ঘনিয়ে আসায় আবার তাদের হামলার মাত্রা বেড়ে গেছে। জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবান পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই করছে। তারা ধর্ষক ও খুনিদের প্রকাশ্য জনসমাবেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাসহ শরিয়া আইনে শাস্তি দেওয়ার পক্ষে। আফগানিস্তানে তালেবান শাসনে মুসলিম পুরুষদের দাড়ি রাখা এবং নারীদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক ছিল। টেলিভিশন দেখা, গান শোনা ও সিনেমা দেখা নিষিদ্ধ করেছিল তারা। এ ছাড়া ১০ বছরের বেশি বয়েসের মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেয় না তালেবান। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রসহ কয়েকটি স্থানে ২০০১ সালের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আফগান তালেবান বিশ্ববাসীর নজরে আসে।
কারণ, দেশটির ক্ষমতা দখলকারী তালেবান গোষ্ঠী তখন আল-কায়েদার তখনকার প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছিল। আল-কায়েদার নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল আফগানিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলা আল-কায়েদাই চালিয়েছিল বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের। এর জেরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ধারণা করা হয়, আফগান তালেবানের শীর্ষ নেতা মোল্লা ওমরসহ অনেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেন। সেখানে পাকিস্তান তালেবানের সহযোগিতায় হারানো ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই অব্যাহত রাখে তালেবান। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, মোল্লা ওমরই এখনো আফগান তালেবানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তালেবানের পাকিস্তান শাখার নাম তেহরিক-ই-তালেবান, পাকিস্তান (টিটিপি)। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত টিটিপির নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন গোষ্ঠীটির নেতা হাকিমুল্লাহ মেহসুদ। টিটিপি পাকিস্তানে আত্মঘাতীসহ অসংখ্য হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন আফগান মুজাহিদ বাহিনী দখলদার সোভিয়েত বাহিনীকে পরাস্ত করার পর চরম গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে তালেবান বাহিনীর উত্থান ঘটেছিল। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল এ বাহিনী। ‘তালেব’ কথাটির অর্থ শিক্ষার্থী। আর ‘তালেবান’ এর বহুবচন। যুদ্ধবিগ্রহ আর অস্থিতিশীলতায় ক্লান্ত জনগণ তখন শান্তির আশায় তালেবানকে স্বাগত জানিয়েছিল।
দক্ষিণ-পশ্চিম আফগানিস্তান থেকে তাদের প্রভাব ক্রমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯৯৬ সালে প্রেসিডেন্ট বুরহানুদ্দিন রব্বানির সরকারকে উৎখাত করে রাজধানী কাবুল দখল করে তালেবান। ‘টুইন টাওয়ার’ হামলার পর ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে হামলা শুরু করে। ওই বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হয়। তালেবানের সঙ্গে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সরকারের শান্তির প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা চলে আসছে। সর্বশেষ, গত বছরের জুনে কাতারে কার্যালয় খুলেছিল আফগান তালেবান। তখন সরকারের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনায় ওই কার্যালয় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে চরম অবিশ্বাসের কারণে সে আশা আর পূরণ হয়নি। পাকিস্তানেও তালেবান বেশ শক্তিশালী ও ব্যাপক সক্রিয়। তারা উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তোলার হুমকি দিয়ে আসছে তারা। পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় নানা সময় বহু আত্মঘাতী ও অন্যান্য হামলা চালিয়েছে বলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। দুই দেশের তালেবানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকের ধারণা। সূত্র: বিবিসি
No comments