সুন্দরবনের ৩০ হাজার জেলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশংকার মধ্যে রয়েছেন
সুন্দরবনের ৩০ হাজার জেলে। পেশা নিয়ে এখন চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটছে
তাদের। কবে নাগাদ ফের বনে যেতে পারবেন তা জানা নেই বননির্ভর এসব জেলের। ৮
দিন ধরে অলস সময় পার করছেন তারা। মাছ ও কাকড়া ধরতে না পারায় জেলে পরিবারে
দেখা দিয়েছে অভাব। এ দিকে সুন্দরবনে ভাসমান তেলের পরিমাণ কমে গেছে
অনেকাংশে। তবে বনের গাছপালা, লতাপাতা ও মাটিতে লেগে আছে তেলের দাগ। এতে
বন্যপ্রাণী রোগাক্রান্ত হওয়ার আশংকা করছেন পরিবেশবিদরা। বনের প্রাণিকুল নদী
ও খালের মিষ্টি খাবার পানি ও খাদ্যের সন্ধানে আসছে। আর এ সময় প্রাণীদের
শরীরে লাগছে তেলের আবরণ। তৈলাক্ত পানি ও লতাপাতা খাচ্ছে তারা। এর ফলে এসব
প্রাণী রোগাক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে। শুধু বনের প্রাণী নয়, বনের পেশাজীবী
জেলেও আক্রান্ত হতে পারেন চর্মসহ নানা রোগে। সুন্দরবনের চাঁদপাই স্টেশন
কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, সুন্দরবনে পাস-পারমিট নেই বললেই চলে।
জেলেরা এখন আগের মতো বনে মাছ ধরতে যেতে আগ্রহী নয়। এ অবস্থায় বনসংলগ্ন
এলাকার যেসব মানুষ এতদিন নদীর পানি পান করতেন তারাও এখন খাবার পানির সংকটে
রয়েছেন। মঙ্গলবার সুন্দরবনের শ্যালা ও চাঁদপাই এলাকা পরিদর্শন করেছে সেভ
দ্য সুন্দরবন ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের দুটি প্রতিনিধি দল। দুপুরে
জয়মনির গোল এলাকা বাপা এবং মংলা প্রেস ক্লাবে সেভ দ্য সুন্দরবনের উদ্যোগে
সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পরিবেশবিদরা অভিযোগ করেন, ট্যাংকার
দুর্ঘটনার পর তেল অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। জয়মনির সম্মেলনে
বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বনবিভাগের তেল
অপসারণ পদ্ধতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, সনাতন এ
পদ্ধতিতে তেল অপসারণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু বনবিভাগ অহেতুক কালক্ষেপণ ও অর্থ
নষ্ট করে সুন্দরবন বিধ্বংসী আলামত আড়াল করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, তেল
সংগ্রহের নামে বনের শ্বাসমূল, লতাপাতা ছোট ছোট গাছ উপড়ে ফেলা হচ্ছে। এতে
সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেকটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে বিকাল ৩টায়
মংলা প্রেস ক্লাবে সেভ দ্য সুন্দরবনের উদ্যোগে পৃথক সংবাদ সম্মেলন আনুষ্ঠিত
হয়। এতে সেভ দ্য সুন্দরবনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল আলম বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য
ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে নিয়ে গভীর চক্রান্ত চলছে। ট্যাংকার ডুবির তিন দিন
পর তেল অপসারণ পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, বনের লতাপাতায়
লেগে থাকা তেলে বন্যপ্রাণীরা নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে
ব্যারিস্টার জাকির হোসেন, ড. জিয়াউর রহমান ও অ্যাডভোকেট আজমল হোসেন উপস্থিত
ছিলেন।
No comments