লতিফকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছার ব্যবস্থা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী by আবু সালেহ আকন
আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার পরও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার না করায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তাকে গ্রেফতার না করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই লতিফ সিদ্দিকীকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা আটকে রাখার পর গ্রিন সিগন্যাল না পেয়ে তাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়া হয়। এ দিকে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার হরতাল কর্মসূচি দিয়েছে এনডিএফ। বৃহস্পতিবার হরতাল ডেকেছে বৃহৎ ইসলামি দলগুলো।
এ দিকে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে হরতালসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চাইলেই লতিফ সিদ্দিকী গ্রেফতার হতেন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন করেছেন অনেকে। তারা বলেছেন, একজন মানুষের বিরুদ্ধে একাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার পরও কিভাবে সে গোয়েন্দা পরিবেষ্টিত একটি এলাকা থেকে বের হয়ে চলে গেলেন তা কারো বোধগম্য নয়। নিশ্চয়ই যাদের গ্রেফতারের দায়িত্ব ছিল তারাই লতিফকে নিরাপদে যেতে সহায়তা করেছেন বলে দাবি করেন তারা।
লতিফ সিদ্দিকী গ্রেফতার না হওয়ার পেছনে প্রভাবশালীদের ইশারা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এ দিকে লতিফ সিদ্দিকীকে কেন গ্রেফতার করা হলো না সে সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সংসদ সদস্য পদ বহাল এবং একই সাথে সংসদ অধিবেশন চলাকালীন তাকে গ্রেফতারে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। অপর দিকে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারে অনুমতি লাগবে না বলে জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্পিকারের এই বক্তব্যের পরও লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারে কোনোই উদ্যোগ নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর। তিনি কোথায় আছেন সে বিষয়টিও এড়িয়ে যাচ্ছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এ ব্যাপারে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তারা সাফ জানিয়ে দেন এ বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের ব্যাপারে রমনা থানা পুলিশকে তাগাদা দিয়েছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে নিউ ইয়র্কস্থ টাঙ্গাইলবাসীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, তিনি জামায়াতে ইসলামীর বিরোধী। তবে তার চেয়েও বিরোধী হজ ও তাবলিগ জামাতের। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘কথায় কথায় আপনারা জয়কে টানেন কেন? জয় ভাই কে? জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নন। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ারও কেউ নন।’ বিভিন্ন টেলিভিশনে অনুষ্ঠিত টকশোরও সমালোচনা করেন লতিফ সিদ্দিকী। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী তখন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
ইসলাম ধর্মবিদ্বেষী মন্তব্যের কারণে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলনের ঝড় শুরু হয়। তাকে গ্রেফতারের দাবিতে ওই সময় ইসলামি দলগুলোসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে। আওয়ামী লীগ লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিষ্কার করে। ১২ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে মন্ত্রিপরিষদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়। এ দিকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ এনে। সারা দেশে ৩০টি মামলা দায়ের হয় তার বিরুদ্ধে। ঢাকার আদালতেই ছয়টি মামলা দায়ের হয়। প্রতিটি মামলায় লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে বলে জানা যায়।
এই গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েই গত রোববার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে ঢাকায় আসেন লতিফ সিদ্দিকী। এ সময় ওই বিমানের যাত্রীরা লতিফ সিদ্দিকীকে দেখে চিনে ফেলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ লতিফ সিদ্দিকীর দেশে ফেরার বিষয়ে জিজ্ঞাসাও করেন। এক সাংবাদিক বলেছেন, তিনি ওই বিমানেরই যাত্রী ছিলেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকীর দেশে ফেরার বিষয়ে। তিনি তখন আত্মবিশ্বাসের সুরেই বলেছেন, তিনি দেশে ফিরছেন দেশে অবস্থানের জন্যই। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লতিফ সিদ্দিকীকে বিমানবন্দরের ভেতরেই আটক করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থার সদস্যরা তাকে আটকে রাখেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা সেখানে তিনি অবস্থান করেন। কিন্তু এর মধ্যেও কোনো গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া যায়নি। এ কারণেই তাকে ওই রাতে আটক না করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। বিমানবন্দরে সার্বক্ষণিক অন্তত আটটি সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যেও কিভাবে লতিফ সিদ্দিকী বের হয়ে গেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যা বললেন : গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল বিমানবন্দরে কেন গ্রেফতার করা হয়নি সাবেক এ মন্ত্রীকে। এ সম্পর্ক ব্যাখ্যা দিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তাকে গ্রেফতারের জন্য স্পিকারের অনুমতি নিতে হবে। তবে কবে নাগাদ তাকে গ্রেফতার করা হবে এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান প্রতিমন্ত্রী।
স্পিকার বললেন, অনুমতি লাগবে না : স্পিকার বলেন, ‘কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী শুধুমাত্র সংসদ লবি, গ্যালারি ও চেম্বার থেকে কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া কোনো অনুমতির প্রয়োজন হয় না।’
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্পিকার বলেন, ‘তিনি যেটা বলেছেন সেটা ভুল। এটা স্পিকারের কোনো বিষয় না। তবে প্রচলিত আইনে সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার ১৪ দিন আগে ও সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার ১৪ দিন পর্যন্ত কোনো সিটিং এমপিকে গ্রেফতার করা যাবে না বলা আছে।’ তবে কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করতে হলে স্পিকারকে অবহিত করার বিধান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আদালতের তাগাদা : ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বাদি অ্যাডভোকেট আবেদ রাজার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারে তাগাদা দিয়েছেন। আবেদ রাজা আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের জন্য আবেদন করেন। গত ১ অক্টোবর ঢাকার সিএমএম আদালতে তিনি এই মামলাটি দায়ের করেন। বিচারক ২৮ অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকীকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন এবং ২৯ নভেম্বর পরোয়ানা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেন।
গ্রেফতার চেয়ে রিট : ইসলাম ধর্ম ও মহানবী সা: সম্পর্কে কটূক্তি করায় মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত লতিফ সিদ্দিকীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করেছেন আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দ। গতকাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদন করেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার এনডিএফের হরতাল : সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট এনডিএফ আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী হরতালের ডাক দিয়েছে। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস কাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফ্রন্টের আহবায়ক শেখ শওকত হোসেন নিলু এই হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
আইনজীবীদের বিক্ষোভ : লতিফ সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টে আগাম জামিন নিতে যাবেন- এ কথা শুনে সেখানে বিক্ষোভ করেন আইনজীবীরা। গতকাল দুপুরে এই মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আইনজীবীরা লতিফ সিদ্দিকীর গ্রেফতার দাবি করেন।
এ দিকে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে হরতালসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চাইলেই লতিফ সিদ্দিকী গ্রেফতার হতেন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন করেছেন অনেকে। তারা বলেছেন, একজন মানুষের বিরুদ্ধে একাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার পরও কিভাবে সে গোয়েন্দা পরিবেষ্টিত একটি এলাকা থেকে বের হয়ে চলে গেলেন তা কারো বোধগম্য নয়। নিশ্চয়ই যাদের গ্রেফতারের দায়িত্ব ছিল তারাই লতিফকে নিরাপদে যেতে সহায়তা করেছেন বলে দাবি করেন তারা।
লতিফ সিদ্দিকী গ্রেফতার না হওয়ার পেছনে প্রভাবশালীদের ইশারা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এ দিকে লতিফ সিদ্দিকীকে কেন গ্রেফতার করা হলো না সে সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সংসদ সদস্য পদ বহাল এবং একই সাথে সংসদ অধিবেশন চলাকালীন তাকে গ্রেফতারে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। অপর দিকে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারে অনুমতি লাগবে না বলে জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্পিকারের এই বক্তব্যের পরও লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারে কোনোই উদ্যোগ নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর। তিনি কোথায় আছেন সে বিষয়টিও এড়িয়ে যাচ্ছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এ ব্যাপারে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তারা সাফ জানিয়ে দেন এ বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের ব্যাপারে রমনা থানা পুলিশকে তাগাদা দিয়েছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে নিউ ইয়র্কস্থ টাঙ্গাইলবাসীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, তিনি জামায়াতে ইসলামীর বিরোধী। তবে তার চেয়েও বিরোধী হজ ও তাবলিগ জামাতের। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘কথায় কথায় আপনারা জয়কে টানেন কেন? জয় ভাই কে? জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নন। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ারও কেউ নন।’ বিভিন্ন টেলিভিশনে অনুষ্ঠিত টকশোরও সমালোচনা করেন লতিফ সিদ্দিকী। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী তখন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
ইসলাম ধর্মবিদ্বেষী মন্তব্যের কারণে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলনের ঝড় শুরু হয়। তাকে গ্রেফতারের দাবিতে ওই সময় ইসলামি দলগুলোসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে। আওয়ামী লীগ লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিষ্কার করে। ১২ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে মন্ত্রিপরিষদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়। এ দিকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ এনে। সারা দেশে ৩০টি মামলা দায়ের হয় তার বিরুদ্ধে। ঢাকার আদালতেই ছয়টি মামলা দায়ের হয়। প্রতিটি মামলায় লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে বলে জানা যায়।
এই গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েই গত রোববার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে ঢাকায় আসেন লতিফ সিদ্দিকী। এ সময় ওই বিমানের যাত্রীরা লতিফ সিদ্দিকীকে দেখে চিনে ফেলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ লতিফ সিদ্দিকীর দেশে ফেরার বিষয়ে জিজ্ঞাসাও করেন। এক সাংবাদিক বলেছেন, তিনি ওই বিমানেরই যাত্রী ছিলেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকীর দেশে ফেরার বিষয়ে। তিনি তখন আত্মবিশ্বাসের সুরেই বলেছেন, তিনি দেশে ফিরছেন দেশে অবস্থানের জন্যই। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লতিফ সিদ্দিকীকে বিমানবন্দরের ভেতরেই আটক করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থার সদস্যরা তাকে আটকে রাখেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা সেখানে তিনি অবস্থান করেন। কিন্তু এর মধ্যেও কোনো গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া যায়নি। এ কারণেই তাকে ওই রাতে আটক না করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। বিমানবন্দরে সার্বক্ষণিক অন্তত আটটি সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যেও কিভাবে লতিফ সিদ্দিকী বের হয়ে গেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যা বললেন : গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল বিমানবন্দরে কেন গ্রেফতার করা হয়নি সাবেক এ মন্ত্রীকে। এ সম্পর্ক ব্যাখ্যা দিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তাকে গ্রেফতারের জন্য স্পিকারের অনুমতি নিতে হবে। তবে কবে নাগাদ তাকে গ্রেফতার করা হবে এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান প্রতিমন্ত্রী।
স্পিকার বললেন, অনুমতি লাগবে না : স্পিকার বলেন, ‘কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী শুধুমাত্র সংসদ লবি, গ্যালারি ও চেম্বার থেকে কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া কোনো অনুমতির প্রয়োজন হয় না।’
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্পিকার বলেন, ‘তিনি যেটা বলেছেন সেটা ভুল। এটা স্পিকারের কোনো বিষয় না। তবে প্রচলিত আইনে সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার ১৪ দিন আগে ও সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার ১৪ দিন পর্যন্ত কোনো সিটিং এমপিকে গ্রেফতার করা যাবে না বলা আছে।’ তবে কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করতে হলে স্পিকারকে অবহিত করার বিধান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আদালতের তাগাদা : ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বাদি অ্যাডভোকেট আবেদ রাজার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারে তাগাদা দিয়েছেন। আবেদ রাজা আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের জন্য আবেদন করেন। গত ১ অক্টোবর ঢাকার সিএমএম আদালতে তিনি এই মামলাটি দায়ের করেন। বিচারক ২৮ অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকীকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন এবং ২৯ নভেম্বর পরোয়ানা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেন।
গ্রেফতার চেয়ে রিট : ইসলাম ধর্ম ও মহানবী সা: সম্পর্কে কটূক্তি করায় মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত লতিফ সিদ্দিকীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করেছেন আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দ। গতকাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদন করেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার এনডিএফের হরতাল : সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট এনডিএফ আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী হরতালের ডাক দিয়েছে। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস কাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফ্রন্টের আহবায়ক শেখ শওকত হোসেন নিলু এই হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
আইনজীবীদের বিক্ষোভ : লতিফ সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টে আগাম জামিন নিতে যাবেন- এ কথা শুনে সেখানে বিক্ষোভ করেন আইনজীবীরা। গতকাল দুপুরে এই মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আইনজীবীরা লতিফ সিদ্দিকীর গ্রেফতার দাবি করেন।
No comments