গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার আকুতি ‘আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করে না’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন শাবিতে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা হুসাইন আহমদ সাগর। গতকাল সংবাদপত্রে দেয়া এক খোলা চিঠিতে সাগর জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ হলাম আমরা। এক সহযোদ্ধাকে সারাজীবনের জন্য হারালাম। আমরা আবার গ্রেপ্তার। তাতেও দুঃখ নেই। এর চেয়ে বড় দুঃখ হচ্ছে আমাদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সত্যিকার ঘটনা না জেনে তথ্যবিভ্রাটে প্ররোচিত হয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিহত সুমন চন্দ্র দাস ছাত্রলীগের কেউ নয়। তখন আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করে না প্রাণপ্রিয় নেত্রী। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খোলা চিঠিতে সাগর জানায়, ‘বংশপরম্পরায় আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি যখন বুঝতে শিখিনি তখনই বাবা-ভাইদের সঙ্গে গ্রামের মেঠো পথ ধরে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ছোট বাজারে যাই। আমার বড় ভাই বর্তমান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি মূলত শিবিরের আস্তানা হিসেবে সিলেটে পরিচিত ছিল। এর প্রতিটি সেমিস্টারে ছিল শিবিরের সাংগঠনিক কমিটি। আজ এই ক্যাম্পাসটি শিবিরমুক্ত। আমি, নিহত সুমন চন্দ্র দাসও ছাত্রলীগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা ক্যাম্পাসটি শিবিরমুক্ত করি। যা তখন বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় এসেছে। সিলেটের আওয়ামী রাজনীতির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।’ সাগর জানায়, ‘গত কয়েকদিন আগে শাবিপ্রবিতে হামলার ঘটনা সম্পর্কে আপনি কিছুটা অবগত আছেন। সেদিন সকাল ৯ টার দিকে আমার কাছে খবর আসে, শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অঞ্জন দাসের ওপর হামলা হয়েছে। নিজের একজন সহকর্মী ভাইয়ের ওপর হামলার কথা শুনে আমি, সুমন চন্দ্র দাস সহ ১০-১৫ জন তাৎক্ষণিক ছুটে যাই। গিয়ে সেখানে হতবিহ্বল হই। সেখানে আগে থেকে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা বৃষ্টির মতো গুলি চালায়। ওদের গুলি আমার সামনে থাকা সুমন চন্দ্র দাসের ওপর লাগে। সে তৎক্ষণাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাকে আনতে গিয়ে একটি গুলি আমার পেটে আঘাত করে। আরও কয়েকজন বন্ধু গুলিবিদ্ধ হয়। সুমন চন্দ্র দাসকে হাসপাতালে আনার সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। আমি সহ আরও কয়েকজন বন্ধু শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অঞ্জন দাস আজও গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনও হাসপাতালের বেডে শুয়ে নিহত সুমনের যাত্রী হওয়ার প্রহর গুনছি। সুমন যেন আমাদেরই ডাকছে। বলছে, বাড়ি থেকে মায়ের হাতের নাড়ু এনেছি। আমি কি একা খাবো, তোরা খাবি না? এই অবস্থায় পুলিশ আমাদের গ্রেপ্তার করে নজরবন্দি করে রাখে।’ হুসাইন আহমদ সাগর জানায়, সুমন ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধা পিতার সন্তান এবং তিন বোনের একমাত্র আদরের ভাই। সে আমাদের প্রায়ই বলতো- সে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে তার মুক্তিযোদ্ধা পিতার ইচ্ছা ও অনুপ্রেরণাতে। সে জন্য সবসময় মিছিলের অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিতো। তার মৃত্যু হয়েছে সামনে থাকার জন্য।’ খোলা চিঠিতে সাগর জানায়, ‘আপনার কাছে প্রশ্ন ছাত্রলীগের কমিটিতে কয়জন কর্মীর স্থান আছে? প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হাজার হাজার, লাখো লাখো কর্মী রয়েছে। আপনি জানেন বেশির ভাগ কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে দশ বছর পর্যন্ত পার হয়ে যায়। তাই সুমন চন্দ্র দাসের মতো ত্যাগী কর্মীরা নেতা হতে পারে না। এরা কর্মী হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখে। আর সুমন ও আমাদের মতো কর্মী দিয়ে সোহাগ ভাইরা নেতা। এজন্য সুমন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে, সন্ত্রাসীদের গুলিতে জীবন দিয়েও ছাত্রলীগের কর্মী হতে পারলো না। আমার মনে হয় তার নামের সঙ্গে দাস না থাকলে হয়তো তাকে শিবির বলে চালিয়ে দেয়া হতো। নেত্রী আপনার কাছে আকুল আবেদন হাসপাতালের বেডে শুয়ে, বাঁচবো কিনা মরবো জানি না। বাঁচলে পুলিশি নির্যাতন কবে বন্ধ হবে জানি না। কিন্তু আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই- কমিটি গঠনের দীর্ঘসূত্রতায় যে লাখ লাখ কর্মী কমিটিতে স্থান পায় না, তারাও ছাত্রলীগের কর্মী। আমার বন্ধু মারা গেছে, আমরা গুলিবিদ্ধ হয়েছি, পুলিশ নির্যাতন চালাচ্ছে, তাতে কষ্ট নেই। আপনি শুধু সোহাগ ভাইকে একবার বলুন আমরা ছাত্রলীগের কর্মী, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। আমাদের সেই অধিকারটুকু যাতে উনি কেড়ে না নেন।’
No comments