লতিফের সব ফাইল যাচ্ছে দুদকে
অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বস্ত্র ও পাট
মন্ত্রণালয়ে জোরেশোরে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এ
মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত
ক্ষমতার অপব্যবহার সংশ্লিষ্ট সব নথি দুদকে পাঠানো হচ্ছে। একই সঙ্গে
মন্ত্রণালয়সহ এর দফতর সংস্থায় রক্ষিত সন্দেহভাজন সব ধরনের নথির অনুসন্ধান ও
পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। যারা ইতিপূর্বে বেআইনিভাবে সরকারের বিভিন্ন
শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিক্রি করে হস্তান্তর কিংবা লিজ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের
বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে,
দুর্নীতি রোধে ও শক্তভাবে সরকারের স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে শিগগির
মন্ত্রণালয়ে আইন সেল ও আইটি শাখা খোলা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, যা শুনেছেন সঠিক। অনিয়ম-দুর্নীতির প্রশ্নে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। জিরো টলারেন্স জারি থাকবে। যেসব বিষয়ে নথিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে আপনাদের ভূমিকা কী হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী যা যা করার তাই করা হবে। লতিফ সিদ্দিকীর এ সংক্রান্ত কোনো ফাইল দুদকে পাঠানো হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অফিসিয়ালি প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তবে কাজ চলছে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, তিনি সম্প্রতি এ মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েছেন। সব ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও কাজে ফাঁকি দেয়ার মানসিকতা শক্তভাবে দূর করতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে তিনি কথার চেয়ে কাজে বিশ্বাসী। তাই এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চান না।
সূত্র জানায়, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সদ্যবিদায়ী মেয়াদে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। এ সময় তার মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিজেএমসি, বিটিএমসি, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড ও বিজেসির (বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশন) অধীনে থাকা ৪৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ/হস্তান্তর করার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে পিপিআর (সরকারি ক্রয় নীতিমালা) মানা হয়নি। টেন্ডার ছাড়া জমিসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠান হস্তান্তর, যথাযথ মূল্য নির্ধারণ না করা, মন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে বিনা মূল্যে স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া, বিক্রির পূর্বে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন না নেয়া, সরকারের অনুমোদন ছাড়া মন্ত্রীর নিজের অনুমোদিত নীতিমালায় হস্তান্তর করা, শর্তসাপেক্ষে হস্তান্তরিত প্রতিষ্ঠানসমূহ শর্তানুযায়ী পরিচালিত না হওয়া এবং ক্ষেত্র বিশেষে আইনগত জটিলতা নিরসন না করেই হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ঈগল স্টার টেক্সটাইল মিলের ঋণের সুদ মওকুফ করার ক্ষেত্রেও ক্ষমতা অপব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সুনির্দিষ্টভাবে এসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। রিপোর্টটি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জমা হয় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রিপোর্টের অনুলিপি বস্ত্র ও পাট সচিবের কাছে ১০ সেপ্টেম্বর পাঠানো হয়। সূত্র বলছে, গত আড়াই মাস ধরে রিপোর্টটি পর্যালোচনা করা হয়েছে। এখন ব্যবস্থা নেয়ার পালা। সে ক্ষেত্রে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীসহ সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা এসব অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছেন। তবে অভিযোগের তীর সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত সাবেক এ মন্ত্রীর দিকে। যিনি উসকানিমূলক বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে ইতিমধ্যে মন্ত্রিত্বসহ সব কূল হারিয়েছেন। ভারত থেকে রোববার তিনি ঢাকায় ফিরলেও এখন তার জন্য গ্রেফতারপর্ব অপেক্ষা করছে। মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, উল্লিখিত অনিয়ম ও ক্ষমতা অপব্যবহারের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করা হবে। লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা দায়ের করবে। এ জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে কয়েকজন কর্মকর্তা লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করেছেন। তবে অফিসিয়ালি চিঠি দিয়ে কোনো তথ্য চাওয়া হয়নি। দুদকের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত হয়েছে, অনিয়ম দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট ফাইলগুলো ফটোকপি করে পার্ট ফাইল খোলা হবে। এরপর মূল ফাইল দুদুকে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
এদিকে সূত্র জানায়, কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিক্রিসংক্রান্ত মামলায় সময়মতো আপিল করা হয়নি। বছরের পর বছর আপিল না করে ফাইল ফেলে রাখা হয়েছে। সংঘবদ্ধ চক্র সময়মতো আপিল না করে সরকারের বিপক্ষ গ্রুপকে মামলায় জিতে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এতে করে শেষ পর্যায়ে এসে সরকারের হেরে যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় এসব মামলা শক্তভাবে ফেস করতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সঙ্গে শিগগির মন্ত্রণালয়ে একটি আইন সেল খেলা হবে। যেখানে একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে একটি টিম কাজ করবে। যাদের কাজ হবে, সরকারের স্বার্থ ও সম্পদ রক্ষায় যথাযথভাবে প্রতিটি মামলা পরিচালনা করা। অপরদিকে মন্ত্রণালয়ে একটি আইটি শাখা খোলা হবে। যেখানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সব দফতর সংস্থার হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। কেননা হালনাগাদ তথ্য হাতের কাছে না থাকলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সঠিক পন্থায় নেয়া সম্ভব হয় না।
জানা গেছে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ দফতর সংস্থাগুলোতে দীর্ঘদিন থেকে একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। যারা পাট কেনা, পাটপণ্য উৎপাদন ও বিক্রি, মিলের যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় শুরু করে ঘাটে ঘাটে দুর্নীতির ফাঁদ তৈরি করে রেখেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের কেনাকাটা ও নিয়োগে দুর্নীতি চলে সারা বছর। এখানে সরকারি সম্পত্তি লুটেপুটে খাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে মাঠপর্যায়ে বিস্তীর্ণ একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে। যারা মিলেমিশে দুর্নীতি করে। এদের মধ্যে কোনো কোনো উচ্চপদস্থ সাবেক কর্মকর্তা এখন নিজেরাই গার্মেন্টসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক বনে গেছেন। এসব দুর্নীতিবাজসহ পুরো চক্রকে চিহ্নিত করতে বিভিন্ন স্থানে সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক মহলের হাতে অনেকের বিষয়ে বিস্তর তথ্য-প্রমাণ চলে এসেছে। যাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়সহ এর কয়েকটি দফতরে কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা ইচ্ছামতো অফিস করতেন। ইচ্ছা হলে অফিসে আসতেন, না হলে আসতেন না। বেশিরভাগ সময় দুপুর ১২টায় অফিসে আসতেন। এই শ্রেণীর ফাঁকিবাজ কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করে সতর্ক করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ফাঁকিবাজ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে একটি চৌকস, সৎ ও সাহসী কর্মকর্তার টিম আকস্মিক পরিদর্শনে যাবে। কাক্সিক্ষত সাফল্য আসা না পর্যন্ত এ ধরনের সারপ্রাইজ ভিজিট অব্যাহত থাকবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, যা শুনেছেন সঠিক। অনিয়ম-দুর্নীতির প্রশ্নে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। জিরো টলারেন্স জারি থাকবে। যেসব বিষয়ে নথিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে আপনাদের ভূমিকা কী হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী যা যা করার তাই করা হবে। লতিফ সিদ্দিকীর এ সংক্রান্ত কোনো ফাইল দুদকে পাঠানো হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অফিসিয়ালি প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তবে কাজ চলছে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, তিনি সম্প্রতি এ মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েছেন। সব ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও কাজে ফাঁকি দেয়ার মানসিকতা শক্তভাবে দূর করতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে তিনি কথার চেয়ে কাজে বিশ্বাসী। তাই এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চান না।
সূত্র জানায়, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সদ্যবিদায়ী মেয়াদে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। এ সময় তার মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিজেএমসি, বিটিএমসি, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড ও বিজেসির (বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশন) অধীনে থাকা ৪৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ/হস্তান্তর করার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে পিপিআর (সরকারি ক্রয় নীতিমালা) মানা হয়নি। টেন্ডার ছাড়া জমিসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠান হস্তান্তর, যথাযথ মূল্য নির্ধারণ না করা, মন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে বিনা মূল্যে স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া, বিক্রির পূর্বে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন না নেয়া, সরকারের অনুমোদন ছাড়া মন্ত্রীর নিজের অনুমোদিত নীতিমালায় হস্তান্তর করা, শর্তসাপেক্ষে হস্তান্তরিত প্রতিষ্ঠানসমূহ শর্তানুযায়ী পরিচালিত না হওয়া এবং ক্ষেত্র বিশেষে আইনগত জটিলতা নিরসন না করেই হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ঈগল স্টার টেক্সটাইল মিলের ঋণের সুদ মওকুফ করার ক্ষেত্রেও ক্ষমতা অপব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সুনির্দিষ্টভাবে এসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। রিপোর্টটি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জমা হয় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রিপোর্টের অনুলিপি বস্ত্র ও পাট সচিবের কাছে ১০ সেপ্টেম্বর পাঠানো হয়। সূত্র বলছে, গত আড়াই মাস ধরে রিপোর্টটি পর্যালোচনা করা হয়েছে। এখন ব্যবস্থা নেয়ার পালা। সে ক্ষেত্রে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীসহ সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা এসব অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছেন। তবে অভিযোগের তীর সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত সাবেক এ মন্ত্রীর দিকে। যিনি উসকানিমূলক বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে ইতিমধ্যে মন্ত্রিত্বসহ সব কূল হারিয়েছেন। ভারত থেকে রোববার তিনি ঢাকায় ফিরলেও এখন তার জন্য গ্রেফতারপর্ব অপেক্ষা করছে। মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, উল্লিখিত অনিয়ম ও ক্ষমতা অপব্যবহারের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করা হবে। লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা দায়ের করবে। এ জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে কয়েকজন কর্মকর্তা লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করেছেন। তবে অফিসিয়ালি চিঠি দিয়ে কোনো তথ্য চাওয়া হয়নি। দুদকের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত হয়েছে, অনিয়ম দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট ফাইলগুলো ফটোকপি করে পার্ট ফাইল খোলা হবে। এরপর মূল ফাইল দুদুকে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
এদিকে সূত্র জানায়, কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিক্রিসংক্রান্ত মামলায় সময়মতো আপিল করা হয়নি। বছরের পর বছর আপিল না করে ফাইল ফেলে রাখা হয়েছে। সংঘবদ্ধ চক্র সময়মতো আপিল না করে সরকারের বিপক্ষ গ্রুপকে মামলায় জিতে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এতে করে শেষ পর্যায়ে এসে সরকারের হেরে যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় এসব মামলা শক্তভাবে ফেস করতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সঙ্গে শিগগির মন্ত্রণালয়ে একটি আইন সেল খেলা হবে। যেখানে একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে একটি টিম কাজ করবে। যাদের কাজ হবে, সরকারের স্বার্থ ও সম্পদ রক্ষায় যথাযথভাবে প্রতিটি মামলা পরিচালনা করা। অপরদিকে মন্ত্রণালয়ে একটি আইটি শাখা খোলা হবে। যেখানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সব দফতর সংস্থার হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। কেননা হালনাগাদ তথ্য হাতের কাছে না থাকলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সঠিক পন্থায় নেয়া সম্ভব হয় না।
জানা গেছে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ দফতর সংস্থাগুলোতে দীর্ঘদিন থেকে একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। যারা পাট কেনা, পাটপণ্য উৎপাদন ও বিক্রি, মিলের যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় শুরু করে ঘাটে ঘাটে দুর্নীতির ফাঁদ তৈরি করে রেখেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের কেনাকাটা ও নিয়োগে দুর্নীতি চলে সারা বছর। এখানে সরকারি সম্পত্তি লুটেপুটে খাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে মাঠপর্যায়ে বিস্তীর্ণ একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে। যারা মিলেমিশে দুর্নীতি করে। এদের মধ্যে কোনো কোনো উচ্চপদস্থ সাবেক কর্মকর্তা এখন নিজেরাই গার্মেন্টসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক বনে গেছেন। এসব দুর্নীতিবাজসহ পুরো চক্রকে চিহ্নিত করতে বিভিন্ন স্থানে সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক মহলের হাতে অনেকের বিষয়ে বিস্তর তথ্য-প্রমাণ চলে এসেছে। যাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়সহ এর কয়েকটি দফতরে কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা ইচ্ছামতো অফিস করতেন। ইচ্ছা হলে অফিসে আসতেন, না হলে আসতেন না। বেশিরভাগ সময় দুপুর ১২টায় অফিসে আসতেন। এই শ্রেণীর ফাঁকিবাজ কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করে সতর্ক করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ফাঁকিবাজ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে একটি চৌকস, সৎ ও সাহসী কর্মকর্তার টিম আকস্মিক পরিদর্শনে যাবে। কাক্সিক্ষত সাফল্য আসা না পর্যন্ত এ ধরনের সারপ্রাইজ ভিজিট অব্যাহত থাকবে।
No comments