ছাত্রলীগের দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ৫ দিন- ভিসি বিদেশে সঙ্কটে শাবি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। কবে নাগাদ কাজ শুরু করতে পারবে তা-ও জানেন না কমিটির প্রধান। এদিকে হঠাৎ করে তদন্ত কমিটির এক সদস্যকে নিয়ে বিদেশ গমন করেছেন ভিসি আমিনুল হক ভূঁইয়া। ভাঙন ধরেছে প্রক্টরিয়াল বডিতেও। ফলে গভীর সঙ্কটে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। দিন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। গত ২০শে নভেম্বর শাবি ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধ ও দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও গণিত বিভাগের প্রফেসর ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের চার দিন পেরিয়ে গেলেও তদন্তের কাজ শুরু করতে সদস্যরা এখনও কোন মিটিংয়ে বসেননি। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি ভিসির সফরসঙ্গী হিসেবে ভারতে রয়েছেন। সফরসঙ্গী হিসেবে আরও আছেন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোসাদ্দেক আলী ও রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, ভিসি শনিবার রাতে প্রক্টর ড. হিমাদ্রি শেখর রায় ও ভারপ্রাপ্ত ভিসি প্রফেসর ড. নায়ায়ণ সাহা’র সঙ্গে মিটিং করে কোন সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা ছাড়াই ৫ দিনের সফরে ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। গতকাল সকালে বের হওয়ার কথা থাকলেও মিডিয়ার কর্মীরা বাসার সামনে জড়ো থাকায় তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ৯টা ২০ মিনিটে তিনি চলে যান। এদিকে সংঘর্ষের জের ধরে প্রক্টরিয়াল বডিতেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। পদত্যাগ করেছেন তিন সহকারী প্রক্টর। তারা হলেন সহকারী অধ্যাপক নিলয় চন্দ্র সরকার, মো. আবদুল্লাহ আল শোয়েব ও মো. গোলাম কিবরিয়া। এদের মধ্যে নিলয় চন্দ্র সরকার শিক্ষক পরিষদের কার্যকরী সদস্য পদ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। সহকারী প্রক্টর পদে বহাল থাকা কয়েকজন শিক্ষক জানান, যারা পদত্যাগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতাকর্মীদের ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। নিজে দায় এড়ানোর জন্যই তারা তড়িঘড়ি করে প্রক্টররিয়াল বডি থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে নিলয় চন্দ্র সরকার বলেন ব্যক্তিগত কারণেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। এদিকে ছাত্রলীগের উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা হলে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও ক্যাম্পাস খোলার ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেই। ফলে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি অচলাবস্থায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ফলে আবারও বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস জানান, আমি তো গতকাল থেকে কাজ শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কমিটির একজন সদস্য হঠাৎ করে বিদেশ সফরে গেছেন। সোমবার আমি একটি মিটিং ডেকেছিলাম, উনার অনুপস্থিতিতে আমাকে তা স্থগিত করতে হয়েছে। তদন্ত কমিটির ওই সদস্যের বিদেশ যাত্রা সম্পর্কে আপনি আগে জানতেন কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক ইলিয়াস বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। ওই সদস্য কবে ফিরবেন তা-ও জানেন না বলে জানান অধ্যাপক ইলিয়াস। তিনি বলেন, একজন সদস্যের অনুপস্থিতিতে তো আর আমি কাজ শুরু করতে পারবো না। তাই আমি কমিটির অপর সদস্যের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি উনি দেশে ফিরলে কাজ শুরু করব। তবে কোনদিন থেকে কাজ শুরু করতে পারবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা আমি জানি না।
No comments