গলতে পারে ভারত–পাকিস্তান সম্পর্কের বরফ!
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্কের ১৮তম শীর্ষ সম্মেলন কাল বুধবার শুরু হচ্ছে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে। দুই দিনের এই সম্মেলনে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বরফ গলার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের সম্ভাবনা ভারত নাকচ না করায় এই সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের সম্পর্কে বেশ টানাপোড়েন চলছে। আট জাতির সার্ক সম্মেলনে মোদি ও নওয়াজ মুখোমুখি হবেন। তবে সেখানে এই দুই নেতার মধ্যে কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দুই দেশের কেউই দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী মোদি আজ মঙ্গলবার ওই সম্মেলনে যোগ দিতে নেপালে যাচ্ছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন এই সফর সম্পর্কে গত রোববার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যত বেশি সম্ভব দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে কার্যকর আলোচনা করতে আগ্রহী।’ ভারত ও পাকিস্তানের দুই নেতা যদি অনানুষ্ঠানিকভাবে হলেও খানিকটা সময় বসে একটু কথা বলেন, তাহলেও সেটা বরফ গলার একটি চিহ্ন হয়ে দেখা যেতে পারে। মোদির আমন্ত্রণে তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন নওয়াজ। তবে সেই উষ্ণতা বেশি দিন টেকেনি। একাধিক ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্ক তেতো হয়ে ওঠে। জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে সংঘর্ষে গত মাসে ১৯ জন সাধারণ মানুষ মারা যায়। গত এক দশকে দুই দেশের মধ্যে সংঘটিত সবচেয়ে বড় সংঘর্ষের ঘটনা ছিল এটি। গত আগস্ট মাসে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক ভারত বাতিল করে দেয়।
পাকিস্তানি হাইকমিশনার কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে বৈঠক করায় ওই সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। ওই বৈঠকে নাখোশ হয় ভারত। আকবরউদ্দিন বলেন, মোদির এই সফর সার্কে যোগ দেওয়ার জন্য। তবে সেখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বিষয়ও জড়িত আছে। তবে উভয় দেশের মধ্যে যেকোনো আলোচনা সিমলা চুক্তি ও লাহোর ঘোষণার আলোকেই হতে হবে—এই জায়গায় ভারত একেবারে কঠোর অবস্থানে। ওই চুক্তি ও ঘোষণার কথা, কাশ্মীর থেকে শুরু করে উভয় দেশের সমস্যা দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান হবে। কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়াত কনফারেন্সের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনার পক্ষপাতী নয় ভারত। আকবরউদ্দিন বলেন, দুই দেশের সম্পর্কে ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। সম্প্রতি নওয়াজ শরিফ বলেছেন, ভারতের সঙ্গে আলোচনার আগে তিনি হুরিয়াতের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। দুই দেশের মধ্যে চলমান এই টানাটানিতে তবে কি উভয় দেশের আলোচনা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আকবরউদ্দিন বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাসী ভারত। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুব পরিষ্কার। দুই দেশের মধ্যে একেবারে সহজ রাস্তা আছে, সেটি হলো দুটি দেশের মধ্যে যুক্তিপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা। এই পথ থেকে বিচ্যুত হলে আমরা কেউই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব না।’ আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্য হলে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে পরিবহন, জ্বালানি বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে চুক্তিতে আগ্রহী ভারত।
No comments