কারও দিকে না তাকিয়ে ব্যবস্থা নিন -প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারও মুখের দিকে না তাকিয়ে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে ভিডিও কনফারেন্সে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাদুল হাসান ও পুলিশ কমিশনার মো. কামরুল আহসানের সঙ্গে কথা বলার পর প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সিনিয়র সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু দিন আগে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বোধ হয় এক সমস্যা দেখা দিয়েছে, এ সম্পর্কে পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে জানতে চাই। এখানে একটা নির্দেশ আমি দিতে চাই, যারাই এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করবে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস করবে, যে দলের হোক, কে কোন দলের সেটা দেখার কথা না, যারা এ ধরনের কর্মকা- করবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে হবে। এরপর সিলেটের পুলিশ কমিশনার প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, গত ২০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। মারামারিতে একজন ছেলে নিহত হয়। ঘটনার সময় নিয়ন্ত্রণ করেছি। তা না হলে হয়তো আর ক্ষয়ক্ষতি হতে পারতো। তিনি বলেন, সংঘর্ষে তিনটি মামলা হয়েছে; বিশেষ অভিযানে ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করছি যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারবো। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় প্রতিপক্ষ নেতা-কর্মীদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের কোপে প্রাণ হারান সুমন চন্দ্র দাস (২২) নামের ছাত্রলীগের এক কর্মী। ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে বলেন কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, আমি জানি যে বা যারাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ-গোল করুক, একটা পর্যায়ে দেখা গেছে সেখানে ছাত্রের চেয়ে অছাত্র বেশি, কিছু বহিরাগত, তারাও এর সঙ্গে জড়িত থাকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দোষীদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার ও উপযুক্ত শাস্তি দিলে তাৎক্ষণিকভাবে এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ কমিশনারকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে কোন দিকে না তাকিয়ে, কারও মুখের দিকে না তাকিয়ে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নেবেন এটাই আমরা চাই। সিলেটের সঙ্গে আরেকদিন ভিডিও কনফারেন্স করবেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি চলমান থাকবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এদিনের ভিডিও কনফারেন্সে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী এখন থেকে প্রত্যেক জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করবেন। আজ (গতকাল) প্রথমবারের মতো ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ ধরনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর অংশ হিসেবে গতকাল প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের কর্মকর্তা এবং পাবনা ও মৌলভীবাজার জেলার প্রশাসন, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রতিনিধি ও প্রশাসনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকার ভাল কাজের বিবরণ ও বিভিন্ন চাহিদার কথা তুলে ধরেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কিছু বিষয় তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের নির্দেশ দেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে মনু নদীর ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ ভাল থাকুক, সুখে থাকুক, উন্নত জীবন পাক- এটাই আমরা চাই। মৌলভীবাজার জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুরু করলাম, এরপর অন্যান্য বিষয় নিয়ে সবাই সব সময় তৈরি থাকবেন। আপনারা কে কি কাজ করছেন, সমস্ত ডাটা নিয়ে রেডি থাকবেন। যে কোন সময় বসবো, কথা বলবো এবং জিজ্ঞাসা করবো- কার কার এলাকায় কি কি কাজ হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ২০০৮ সালে বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে। এই হলো দৃষ্টান্ত। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, এখানে বসে তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যার কথা জানতে পারছে সরকার। এদিকে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, এখন থেকে মাসে দুই দিন জেলা উন্নয়ন কমিটির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। এর লক্ষ্য স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকা-, সমস্যা, সঙ্কট ও সম্ভাবনার বিষয়গুলো জানা এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বসবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ টু আই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্প থেকে এ বিষয়ে সহায়তা দেয়া হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রত্যেক জেলায় জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি রয়েছে। তাতে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন। এটা একটা ভাল ফোরাম, এখানে জেলার উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রী যদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের সমস্যাগুলো তিনি জেনে যাবেন। প্রধানমন্ত্রী চাইলে তাৎক্ষণিক নির্দেশনাও দিতে পারেন। এদিকে ভিডিও কনফারেন্সের আগে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে মালয়েশিয়ার সঙ্গে দু’টি সমঝোতা স্মারকের অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ কোরিয়া সফর ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের সফর সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে জানান।
No comments