বৃটিশ পার্লামেন্টে ড. মুহাম্মদ ইউনূস
সামাজিক উদ্যোগে সমর্থন দেয়ার জন্য বৃটেনের হাউজ অব পার্লামেন্টের প্রতি অভিনন্দন জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ২০শে নভেম্বর সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ডে উপলক্ষে বৃটিশ পার্লামেন্ট ভবনে যুক্তরাজ্যে সামাজিক উদ্যোগের ৪র্থ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। যৌথভাবে এর আয়োজন করেন হাউজ অব কমন্সের স্পিকার জন বারকাউ এমপি ও হাউজ অব লর্ডসের স্পিকার ব্যারোনেস ডি’সুজা। তারা এতে সহ-সভাপতি ছিলেন। এতে অংশ নেন চীন, কানাডা, ভারত, হংকং, নাইজেরিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশের ১৫০ জন প্রতিনিধি ও বৃটিশ সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তারা। এতে যোগ দেয় বৃটিশ সামাজিক বাণিজ্য উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানও। বক্তব্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যুক্তরাজ্যে ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ মানুষ অনাকাঙিক্ষত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ক্রমবর্ধমান সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশে স্থিতিশীল অলাভজনক সামাজিক বাণিজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা। তিনি আরও বলেন, সামাজিক উদ্যোগ থেকে উৎপাদিত পণ্য কিনতে নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করছে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট। পার্লামেন্ট হাউজ এ কাজ করে অন্যদের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করছে। সামাজিক প্রতিশ্রুতি আছে এমন খাত থেকে তারা পণ্য কিনে ও সেবা গ্রহণ করে এ কাজ করে যাচ্ছে। এ ধরনের শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠান অগ্রগামী চিন্তাধারার মধ্য দিয়ে তাদের আচরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। আমি আশা করবো আরও অধিক সংখ্যক সরকার, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য সংস্থার এ ধারা অনুসরণ করা উচিত। এরপর বৃটিশ পার্লামেন্টে আলাদা একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি কনফারেন্স অন গ্রোথ ফর ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক এই অনুষ্ঠান হয় ওয়েস্টমিনস্টারে। এতে যোগ দেন ৪০টিরও বেশি কমনওয়েলথভুক্ত দেশের পার্লামেন্টারিয়ানরা। এর শিরোনাম হলো- দ্য রোল অব পার্লামেন্টারিয়ানস ইন ম্যানেজিং ইকোনমিক গ্রোথ ফর ইকুট্যাবল ডেভেলপমেন্ট। যৌথভাবে এর আয়োজক ছিল কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশন ইউকে ও ইউএনডিপি। এতে ড. ইউনূস দারিদ্র্য নিরসনে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। এর আগের দিন লন্ডনে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন আয়োজিত ২০১৪ ট্রাস্ট ওমেন কনফারেন্সে মূল বক্তা হিসেবে তার বক্তব্য তুলে ধরেন ড. ইউনূস। এ বছর এ সম্মেলনের মূল থিম ছিল নারীদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়ন করা, মানব পাচার ও শিশু দাসত্ব বন্ধ করা। ৫৫টিরও বেশি দেশের ২৬০টি প্রতিষ্ঠানের ৫৫০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি এতে যোগ দেন। এছাড়া, ড. ইউনূস যোগ দেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সদস্যদের সামনে বক্তব্য দিতে। সেখানে তিনি বলেন, বর্তমানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিশ্বের সামাজিক সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। এ ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। ঘণ্টাব্যাপী প্রশ্নোত্তরপর্বে মডারেটর ছিলেন ইউনিয়নের সভাপতি। এরপর ড. ইউনূস অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ সোসাইটির সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হন। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স ও পলিটিক্যাল সায়েন্স অন সোশ্যাল বিজনেসে জনাকীর্ণ হলরুমে বক্তব্য রাখেন তিনি। তাকে আমন্ত্রণ জানান ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর। ব্যাংকের প্রধানদের সঙ্গে একটি বৈঠকে বক্তব্য দিতে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে যোগ দেন ব্যাংকের ২৫০ কর্মকর্তা। সেখানে তিনি অর্থনৈতিক পরিকাঠামো নিয়ে আলোচনা করেন।
No comments