রাবি শিক্ষক খুন- কে এই পিন্টু ও মানিক
পিন্টু ও মানিক |
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ‘মূল বাস্তবায়নকারী’ আরিফুল ইসলাম মানিক কাঁটাখালি পৌরসভা ও আশপাশের এলাকার ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা আব্বাসের ভাই। সে এক সময় যুবদল করলেও বর্তমানে তার ভাই আব্বাসের ডান হাত হিসেবে তার সব অপকর্মের বাস্তবায়নকারী। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি ও চাঁদাবাজিসহ বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অধ্যাপক শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে এই মানিকই ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় তারই সহকারীরা।
কে এই মানিক?
এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কাঁটাখালি বাজারসংলগ্ন বাখরাবাজ গ্রামে মানিকের বাড়ি। তার বাবা আশরাফ আলী কাঁটাখালি বাজারে একটি চায়ের স্টল চালিয়ে কোনোরকমে দিনাতিপাত করতেন। অবশ্য তিনি পরবর্তীকালে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন। তার দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর পক্ষে তিন ছেলে আসের, আব্বাস ও মানিক। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারটি দৈন্যদশায় পড়লে এই তিন ভাই ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িয়ে পড়ে। তারা অনেকবার গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছে। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ এমপি মেরাজ মোল্লা কাঁটাখালি এলাকায় তার প্রতিপত্তি গড়ে তোলার জন্য আব্বাসকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন। মূলত তারই প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আব্বাস দ্রুত কাঁটাখালি এলাকার ‘ডন’ হিসেবে আবির্ভূত হয়। মানিক তার ভাইয়ের প্রধান সহকারী হয়ে দাঁড়ায়। সে সময় বিএনপি ও যুবদলের সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে ও তাকে কেন দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না এই মর্মে শোকজ করা হয় বলে জানান তৎকালীন জেলা ছাত্রদল নেতা ও বর্তমান জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন। এমপি মেরাজ মোল্লা ও তৎকালীন রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে আব্বাস ও মানিক মিলে কাঁটাখালি এলাকায় প্রাধান্য বিস্তার করে। কাঁটাখালি বাজারে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাসকাটাদীঘি হাইস্কুলের সভাপতি বানানো হয় আব্বাসকে। তখন সে মানিক ও তার বাহিনীর সহযোগিতায় স্কুলের জমি ও ভবনের ওপর অনুনোমোদিতভাবে মার্কেট নির্মাণ করে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করে। তারা স্কুলের দালানে নিজেদের বাবার নামে স্কুল চালু করে এবং নিজেদের অফিস স্থাপন করে। এ নিয়ে পরিচালিত সরকারি তদন্তে তাদের বেআইনি কার্যকলাপ প্রমাণিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তারা এখনো স্কুলের জায়গা ও ঘর জবরদখল করে রেখেছে। তবে বিষয়টি এখন দুদকের তদন্তাধীন বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।
তার প্রতিবেশীদের কাছে থেকে জানা যায়, যুবলীগ নেতা আব্বাস আলীর পৃষ্ঠপোষকতায় বিশেষ করে কাঁটাখালি-কাপাশিয়া-হরিয়ান এলাকায় নিয়মিত চুরি ছিনতাই করত। হোন্ডা চুরির অভিযোগে তাকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া মানিকের একটি ডাকাতি চক্র আছে বলে জানান স্থানীয়রা। মানিক ও আব্বাস রাজনৈতিকভাবে টেন্ডার বাগাতো। আর তাদের বড় ভাই আশের আলী এলাকায় টেন্ডার নিয়ে কাজ করত।
পারিবারিক জীবনে মানিকের সংসারে সর্বদা অশান্তি লেগেই থাকত। কয়েক দিন আগে তার স্ত্রী আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে হারপিক খায়। এতে সে অসুস্থ হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে আছে বলে জানা গেছে।
মানিক ও তার বড় দুই ভাই আশের ও আব্বাস শাহাপুরের আবু বকর সিদ্দিক হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার হয়ে জেলে ছিলেন অনেক দিন। বর্তমানে তারা জামিনে আছেন।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক কাঁটাখালি বাজারের ব্যবসায়ী ও অধিবাসীরা জানান, আব্বাস ও মানিকের নেতৃত্বে কাঁটাখালি এলাকায় একটি সন্ত্রাসীচক্র গড়ে উঠেছে। এই চক্রে আরো রয়েছে বাখরাবাজের রুবেল, রানা, সাগর, শফি, মনি, লিটন, মিলন, শরিফ, দেওয়ানপাড়ার সাগর, আরিফ প্রমুখ। মাসকাটাদীঘি হাইস্কুলের জবরদখলকৃত ভবনে স্থাপিত আব্বাসের অফিস এবং কাঁটাখালি বাজারের রহমতের চায়ের দোকানে (পূবালী ব্যাংকের সামনে) এরা নিয়মিত আড্ডা দেয় বলে স্থানীয়রা জানান। এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হলেও ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খলতে সাহস পায় না।
কে এই পিন্টু?
আব্দুস সামাদ পিন্টুর স্ত্রীর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করার জন্য পিন্টু ও মানিক গং অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে হত্যা করেছে মর্মে র্যাবের হাতে আটক হত্যাকারীরা স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এই পিন্টুর বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারের দক্ষিণে ডাশমারি গ্রামে। তিনি নব্বইয়ের দশকে একটা মেয়াদে রাবি ছাত্রদলের সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমানে ঠিকাদারি করেন। তার স্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, গত ১৫ নভেম্বর দুপুরে নগরীর চৌদ্দপাই বিহাস এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৪টায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় পর দিন রাতে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এন্তাজুল হক বাদি হয়ে মতিহার থানায় মামলা করেন। এই হত্যকাণ্ডের সূত্র ধরে শনিবার রাতে মানিক ও পিন্টুকে অন্য চারজনসহ ঢাকা ও রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করে র্যাব। আটককৃত অন্যরা হলেন- টোকাই বাবু, মামুন, কালু ও সবুজ।
আনসার আল ইসলাম-২ এর দুই সদস্য গ্রেফতার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত ছয়জনের দেয়া স্বীকারোক্তি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। একই সাথে আনসার আল ইসলাম-২ নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার রাতে বগুড়া থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গতকাল সোমবার বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মহানগর (আরএমপি) কমিশনার মো: শামসুদ্দিন একথা জানান।
পুলিশের দাবি, নগরীর বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজের অধ্য হুমায়ুন কবিরসহ গ্রেফতারকৃত ১১ জন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে তিনজন এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত বলে র্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে ওঠে এসেছে। তারা হলেন- নগরীর দেওয়ানপাড়া এলাকার জিন্নাত আলী (২০), একই এলাকার সাগর (২৩) ও শ্যামপুর এলাকার আরিফ (২৪)।
এতে আরো জানানো হয়, আনসার আল ইসলাম-২ নামে জঙ্গি সংগঠনটির গ্রেফতারকৃত দুই সদস্য হলেন- রায়হানুল ইসলাম ওরফে স্বাধীন ও শরিফুল ইসলাম। শনিবার রাতে বগুড়া থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ১১ জনের মধ্যে ৮ জন ফের রিমান্ডে
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেফতার ১১ জনের মধ্যে আটজনকে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শুনানি শেষে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৩ আদালতের বিচারক শারমিন আক্তার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন : নগরীর বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজের অধ্য হুমায়ুন কবির, একই কলেজের শিক ফজলুল হক, চৌদ্দপাই এলাকার পল্লী চিকিৎসক মোশারফ হোসেন, জিন্নাত আলী, সাইফুদ্দিন, রেজাউল করিম, সাগর ও আরিফ।
গত বুধবার একই আদালতের বিচারক প্রথম দফায় তাদের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে প্রথম দফায় ওই আটজনসহ মশিউর রহমান পিন্টু, হাসিবুর রহমান ও আবদুল্লাহ আল মাহমুদ নামের তিনজনকেও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আর দ্বিতীয় দফায় এই তিনজনকে রিমান্ড থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
এর আগে রোববার দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করা হলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৩ আদালত শুনানির জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন। মহানগর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক (সিআই) আবুল হাশেম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক আবুল হাশেম আরো জানান, প্রথম দফায় দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদের পর গত শুক্রবার দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। এ সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন তাদের দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরো সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান।
রাবি শিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আটক ৩৪ জনের মধ্যে ইসলামিয়া কলেজ অধ্যসহ ১১ জনকে গত ১৭ নভেম্বর বিকেলে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয় পুলিশ। একই সাথে প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। পরে প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
উল্লেখ্য, ১৫ নভেম্বর দুপুরে নগরীর চৌদ্দপাই বিহাস এলাকায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে বিকেল ৪টার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনার পরদিন রাতে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এন্তাজুল হক বাদি হয়ে মতিহার থানায় মামলা করেন।
কে এই মানিক?
এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কাঁটাখালি বাজারসংলগ্ন বাখরাবাজ গ্রামে মানিকের বাড়ি। তার বাবা আশরাফ আলী কাঁটাখালি বাজারে একটি চায়ের স্টল চালিয়ে কোনোরকমে দিনাতিপাত করতেন। অবশ্য তিনি পরবর্তীকালে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন। তার দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর পক্ষে তিন ছেলে আসের, আব্বাস ও মানিক। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারটি দৈন্যদশায় পড়লে এই তিন ভাই ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িয়ে পড়ে। তারা অনেকবার গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছে। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ এমপি মেরাজ মোল্লা কাঁটাখালি এলাকায় তার প্রতিপত্তি গড়ে তোলার জন্য আব্বাসকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন। মূলত তারই প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আব্বাস দ্রুত কাঁটাখালি এলাকার ‘ডন’ হিসেবে আবির্ভূত হয়। মানিক তার ভাইয়ের প্রধান সহকারী হয়ে দাঁড়ায়। সে সময় বিএনপি ও যুবদলের সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে ও তাকে কেন দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না এই মর্মে শোকজ করা হয় বলে জানান তৎকালীন জেলা ছাত্রদল নেতা ও বর্তমান জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন। এমপি মেরাজ মোল্লা ও তৎকালীন রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে আব্বাস ও মানিক মিলে কাঁটাখালি এলাকায় প্রাধান্য বিস্তার করে। কাঁটাখালি বাজারে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাসকাটাদীঘি হাইস্কুলের সভাপতি বানানো হয় আব্বাসকে। তখন সে মানিক ও তার বাহিনীর সহযোগিতায় স্কুলের জমি ও ভবনের ওপর অনুনোমোদিতভাবে মার্কেট নির্মাণ করে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করে। তারা স্কুলের দালানে নিজেদের বাবার নামে স্কুল চালু করে এবং নিজেদের অফিস স্থাপন করে। এ নিয়ে পরিচালিত সরকারি তদন্তে তাদের বেআইনি কার্যকলাপ প্রমাণিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তারা এখনো স্কুলের জায়গা ও ঘর জবরদখল করে রেখেছে। তবে বিষয়টি এখন দুদকের তদন্তাধীন বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।
তার প্রতিবেশীদের কাছে থেকে জানা যায়, যুবলীগ নেতা আব্বাস আলীর পৃষ্ঠপোষকতায় বিশেষ করে কাঁটাখালি-কাপাশিয়া-হরিয়ান এলাকায় নিয়মিত চুরি ছিনতাই করত। হোন্ডা চুরির অভিযোগে তাকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া মানিকের একটি ডাকাতি চক্র আছে বলে জানান স্থানীয়রা। মানিক ও আব্বাস রাজনৈতিকভাবে টেন্ডার বাগাতো। আর তাদের বড় ভাই আশের আলী এলাকায় টেন্ডার নিয়ে কাজ করত।
পারিবারিক জীবনে মানিকের সংসারে সর্বদা অশান্তি লেগেই থাকত। কয়েক দিন আগে তার স্ত্রী আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে হারপিক খায়। এতে সে অসুস্থ হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে আছে বলে জানা গেছে।
মানিক ও তার বড় দুই ভাই আশের ও আব্বাস শাহাপুরের আবু বকর সিদ্দিক হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার হয়ে জেলে ছিলেন অনেক দিন। বর্তমানে তারা জামিনে আছেন।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক কাঁটাখালি বাজারের ব্যবসায়ী ও অধিবাসীরা জানান, আব্বাস ও মানিকের নেতৃত্বে কাঁটাখালি এলাকায় একটি সন্ত্রাসীচক্র গড়ে উঠেছে। এই চক্রে আরো রয়েছে বাখরাবাজের রুবেল, রানা, সাগর, শফি, মনি, লিটন, মিলন, শরিফ, দেওয়ানপাড়ার সাগর, আরিফ প্রমুখ। মাসকাটাদীঘি হাইস্কুলের জবরদখলকৃত ভবনে স্থাপিত আব্বাসের অফিস এবং কাঁটাখালি বাজারের রহমতের চায়ের দোকানে (পূবালী ব্যাংকের সামনে) এরা নিয়মিত আড্ডা দেয় বলে স্থানীয়রা জানান। এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হলেও ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খলতে সাহস পায় না।
কে এই পিন্টু?
আব্দুস সামাদ পিন্টুর স্ত্রীর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করার জন্য পিন্টু ও মানিক গং অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে হত্যা করেছে মর্মে র্যাবের হাতে আটক হত্যাকারীরা স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এই পিন্টুর বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারের দক্ষিণে ডাশমারি গ্রামে। তিনি নব্বইয়ের দশকে একটা মেয়াদে রাবি ছাত্রদলের সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমানে ঠিকাদারি করেন। তার স্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, গত ১৫ নভেম্বর দুপুরে নগরীর চৌদ্দপাই বিহাস এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৪টায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় পর দিন রাতে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এন্তাজুল হক বাদি হয়ে মতিহার থানায় মামলা করেন। এই হত্যকাণ্ডের সূত্র ধরে শনিবার রাতে মানিক ও পিন্টুকে অন্য চারজনসহ ঢাকা ও রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করে র্যাব। আটককৃত অন্যরা হলেন- টোকাই বাবু, মামুন, কালু ও সবুজ।
আনসার আল ইসলাম-২ এর দুই সদস্য গ্রেফতার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত ছয়জনের দেয়া স্বীকারোক্তি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। একই সাথে আনসার আল ইসলাম-২ নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার রাতে বগুড়া থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গতকাল সোমবার বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মহানগর (আরএমপি) কমিশনার মো: শামসুদ্দিন একথা জানান।
পুলিশের দাবি, নগরীর বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজের অধ্য হুমায়ুন কবিরসহ গ্রেফতারকৃত ১১ জন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে তিনজন এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত বলে র্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে ওঠে এসেছে। তারা হলেন- নগরীর দেওয়ানপাড়া এলাকার জিন্নাত আলী (২০), একই এলাকার সাগর (২৩) ও শ্যামপুর এলাকার আরিফ (২৪)।
এতে আরো জানানো হয়, আনসার আল ইসলাম-২ নামে জঙ্গি সংগঠনটির গ্রেফতারকৃত দুই সদস্য হলেন- রায়হানুল ইসলাম ওরফে স্বাধীন ও শরিফুল ইসলাম। শনিবার রাতে বগুড়া থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ১১ জনের মধ্যে ৮ জন ফের রিমান্ডে
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেফতার ১১ জনের মধ্যে আটজনকে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শুনানি শেষে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৩ আদালতের বিচারক শারমিন আক্তার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন : নগরীর বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজের অধ্য হুমায়ুন কবির, একই কলেজের শিক ফজলুল হক, চৌদ্দপাই এলাকার পল্লী চিকিৎসক মোশারফ হোসেন, জিন্নাত আলী, সাইফুদ্দিন, রেজাউল করিম, সাগর ও আরিফ।
গত বুধবার একই আদালতের বিচারক প্রথম দফায় তাদের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে প্রথম দফায় ওই আটজনসহ মশিউর রহমান পিন্টু, হাসিবুর রহমান ও আবদুল্লাহ আল মাহমুদ নামের তিনজনকেও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আর দ্বিতীয় দফায় এই তিনজনকে রিমান্ড থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
এর আগে রোববার দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করা হলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৩ আদালত শুনানির জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন। মহানগর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক (সিআই) আবুল হাশেম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক আবুল হাশেম আরো জানান, প্রথম দফায় দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদের পর গত শুক্রবার দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। এ সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন তাদের দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরো সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান।
রাবি শিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আটক ৩৪ জনের মধ্যে ইসলামিয়া কলেজ অধ্যসহ ১১ জনকে গত ১৭ নভেম্বর বিকেলে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয় পুলিশ। একই সাথে প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। পরে প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
উল্লেখ্য, ১৫ নভেম্বর দুপুরে নগরীর চৌদ্দপাই বিহাস এলাকায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে বিকেল ৪টার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনার পরদিন রাতে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এন্তাজুল হক বাদি হয়ে মতিহার থানায় মামলা করেন।
No comments