মাথার চুল কদম ফুল কোথায় হল গণ্ডগোল? by মোকাম্মেল হোসেন
লবণ বেগমের কাছে আমার গোপন করার মতো কিছু নেই। আজ একটা জিনিস গোপন করতে চাচ্ছি। কলিংবেলে হাত রাখার আগে ব্যাগ হাতড়ে দেখে নিলাম। আছে। জায়গামতোই আছে।
দরজা খুলে গেল। রাজহংসীর ন্যায় ঘাড় উঁচু করে স্বয়ং লবণ বেগম সামনে দাঁড়ানো। তার চোখে চোখ রেখে মিষ্টি করে হাসলাম। এ ধরনের হাসি আমাদের ময়মনসিংহ অঞ্চলে গোয়ামুরি হাসি নামে সমাদৃত। গোয়ামুরি ছচজাতীয় মশলা। খুব সুঘ্রাণ। তরকারির স্বাদ ও ঘ্রাণ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহৃত হয়। গোয়ামুরির সুঘ্রাণ লবণ বেগমকে স্পর্শ করল না দেখে আশ্চর্য হলাম। ঘটনা কী? এরকম তো হওয়ার কথা না। কর্মক্ষেত্র থেকে বাসায় ফেরার পর স্বামী স্ত্রীর চোখে চোখ রেখে হাসবে- সেই হাসির প্রতিদানও হবে চোখে-চোখে, ঠোঁটে-ঠোঁটে। এটাই সংসারের নিয়ম। এখানে তো পুরো উল্টা সিনারি দেখা যাচ্ছে!
কোনো ওষুধ কাজ না করলে ডাক্তাররা সেটা পরিবর্তন করে রোগীকে অন্য ওষুধ খেতে দেন। মশলা-হাসিতে কাজ না হওয়ায় গোলাপ হাসি উপহার দিলাম। গোলাপ হাসির প্রতিক্রিয়া আরও মারাত্মক হল। লাস্যময়ীর বদলে কাঁটাময়ীর রূপ ধারণ করে লবণ বেগম বলল-
: তুমি বাসায় ঢুকবা না।
কোনো স্ত্রী স্বামীকে এ ধরনের কথা বললে বুঝতে হবে কোথাও সমস্যা হয়েছে। সমস্যাটা কোথায়- বুঝতে পারছি না। আমার সিএলআর (কনজ্যুগাল লাইফ রিপোর্ট- যুগলজীবনের প্রতিবেদন) ঝকঝকা। সেখানে কোনো লালকালির দাগ নেই। অনেক গৃহবধূ ওয়াশিং মেশিনে দেয়ার সময় স্বামীর কাপড়-চোপড়ে লম্বা কেশ আবিষ্কার করে। ঠোঁট আকারের রঙবেরঙ হলোস্টিকের ঝিলিক দেখে। আমার ক্ষেত্রে এরকম ইতিহাস আজ পর্যন্ত রচিত হয়নি।
শুনেছি ঘরজামাইদের নিয়ে স্ত্রীরা ছক্কা-পাঞ্জা খেলে। আমার সঙ্গে ছক্কা-পাঞ্জা খেলার কোনো অবকাশ নেই। আমি ঘরজামাই নই। ঘরে-বাইরে হেভি ডিউটি পালনকারী স্বামী। এ রকম একজন স্বামীর মুখের ঘাম শাড়ির আঁচল দিয়ে সকাল-বিকাল মুছে দেয়া উচিত। তা না করে কাঁটাঘাত। এটা মেনে নেয়া কঠিন। সিনা টান করে দাঁড়ালাম। গলায় শক্তি উৎপাদন করে বললাম-
: আমার বাসায় আমি ঢুকব না- কে ঢুকবে?
পা থেকে মাথা পর্যন্ত জরিপ করার পর ঠোঁট উল্টে লবণ বেগম বলল-
: তোমার বাসায় অবশ্যই তুমি ঢুকবা। তবে সঙ্গে আর কিছু ঢুকাইতে পারবা না।
: আর কিছু মানে? কী বলতে চাও তুমি?
- কী বলতে চাই, সেইটা তুমি ভালো কইরাই জান। আমাকে পোলাপান লইয়া ঘরে থাকতে হয়। তুমি ঘরটারে সাপ-ব্যাঙ, জোঁক-বিছার কারখানা বানাবা- এইটা আমি কিছুতেই এলাউ করব না।
হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছি। মিলছে না। দুইয়ে-দুইয়ে চার হচ্ছে না। আমার ব্যাগের মধ্যে জোঁক আছে- এটা আমি আর আমার অন্তর্যামী ছাড়া পরিচিত অন্য কারও জানার কথা না। লবণ বেগম এ তথ্য কোন গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে পেল? বাংলাদেশের গোয়েন্দারা শরীরের উপর রেলগাড়ি উঠে না পড়লে কোনোকিছু টের পায় না। এটা কি আন্তর্জাতিক কোনো গোয়েন্দা সংস্থার কাজ? বিদেশী গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে আকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপন করে তথ্য সংগ্রহ ও নজরদারির অভিযোগ রয়েছে। তাদের গোয়েন্দা জালে ধরা পড়ার চিত্র লবণ বেগম কি ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানতে পেরেছে? অসম্ভবের কিছু নেই। ইন্টারনেটের ভেল্কিবাজিতে এ যুগে ছাগলও আকাশে উড়ছে। এ অবস্থায় কারও গতিবিধি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা কোনো ব্যাপার নয়। উপায় না দেখে সারেন্ডার করলাম। ব্যাগ থেকে জোঁকভর্তি বয়াম বের করতেই লবণ বেগম লাফ দিয়ে কয়েক হাত পিছিয়ে গিয়ে বলল-
: কট্টা-মট্টা ঢুকাইয়া ব্যাগসহ ডাস্টবিনে ফেইল্যা আস।
ব্যাগের মায়া ত্যাগ করা কঠিন। দামি ব্যাগ। মাত্র কয়েক মাস আগে কিনেছি। লবণ বেগম কোনো ওজর-আপত্তি কানে তুলল না। নির্দেশ পালন করে বিরস মুখে বাসায় ফিরলাম। লবণ বেগম বলল-
: বাথরুমে গরম পানি দিছি। শরীর থেইক্যা জোঁকের গন্ধ দূর কইরা টেবিলে বস। পাকুড়া ভাজতেছি, ছেলেদের লইয়া গরম-গরম পাকুড়া খাও।
গোসল সেরে আমার ত্রিরত্নের সঙ্গে পাকুড়া খেতে বসলাম। মুড়ির সঙ্গে পাকুড়া অসাধারণ। আজ বিস্বাদ লাগছে। লবণ বেগম অবাক হয়ে বলল-
: পাকুড়া কি পচা হইছে?
- না।
: তাইলে মুখ কাঁকড়ার মতো কইরা রাখছ কেন? ভালো কইরা খাও।
- কামলার গোষ্ঠির পক্ষে এরচাইতে ভালো কইরা খাওয়া সম্ভব না।
: রাইগা যাইতেছ কেন?
কথায় কথা বাড়ে, ভোজনে বাড়ে পেট। নারীজাতির সঙ্গে যত কম কথা বলা যায়, ততই মঙ্গল। লবণ বেগমের কথার বিপরীতে কিছু না বলে চুপচাপ খাচ্ছি, পুনরায় সে বলল-
: তাসিনের আব্বু, ঘটনাটা পরিষ্কার কর তো! জোঁক দিয়া তোমার কী কাজ?
জোঁক প্রকল্পের উপদেষ্টা রশিদ সাহেব। সকালবেলা হুড়মুড় করে অফিসে যাচ্ছি, ফুটপাতে রশিদ সাহেবের সঙ্গে দেখা। তিনি আমার বেলমাথা দেখে বললেন-
: মাথা ন্যাড়া করছেন কী জন্য? মানত ছিল নাকি?
- না।
: তাইলে?
- কোনো তাইলে-মাইলে নাই। শখ করলাম- তাই বেল হইলাম। ধনবান ব্যক্তিরা শখ কইরা গাড়ি কেনে। বাড়ি বানায়। বাগানবাড়ি সাজায়। আমাদের পক্ষে তো এইসব করা সম্ভব না। আমরা শখ কইরা বড়জোর নাক ফুটা করতে পারি। কান ছিদ্র করতে পারি। বারান্দায় দ্ইু-একটা ফুলের গাছ আর কাচের বয়ামে একটা-দুইটা রঙিন মাছ রাখতে পারি। এরই ধারাবাহিকতায় আমি কানের একটু উপরে উইঠ্যা মাথায় ক্ষুর চালাইছি।
: ভালো করছেন। ন্যাড়া যখন হইছেনই- আমি একটা টোটকা দিতেছি, মাত্র এক মাস মাথায় ব্যবহার করেন; চুলের টেনশন থেইক্যা আসান পাবেন।
মাথার চুল নিয়ে সমস্যায় আছি। রশিদ সাহেবের মুখের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকালাম। বললাম-
: কী টোটকা?
রশিদ সাহেব হাতের ইশারায় রাস্তার পাশে একটা জায়গা দেখিয়ে বললেন-
: বিকালবেলা ওইখানে ক্যানভাসাররা জোঁক লইয়া বসে। অফিস থেইক্যা ফেরার সময় কয়েকটা জোঁক কিইন্যা বাসায় লইয়া যাবেন। তিলের তেলে সেইগুলা ভালো কইরা আগুনে জ্বাল দিবেন। তেলে-জোঁকে মিইশ্যা এক হওয়ার পর উত্তমরূপে ছাইক্যা শিশিতে ভইরা রাখবেন। এক মাস সেই তেল ব্যবহার করলে পুরাতন চুলের পাশাপাশি মাথায় নতুন চুল পয়দা হবে। মাথা কদম ফুলের আকার ধারণ করবে।
: কদম ফুল তো সাদা!
-আমি কদম ফুলের চেহারা বলি নাই, আকার বলছি; কথাটা আপনাকে বুঝতে হবে।
লবণ বেগম পুনরায় তাড়া দিতেই বললাম-
: তার আগে বল- তুমি জোঁকের খবর কীভাবে পাইলা? জিনের কাছ থেইক্যা?
লবণ বেগম মুচকি হেসে বলল-
: তুমি ব্যাগে জোঁক ভরার সময় পাশ দিয়া রিকশায় চইড়া কুমকুম ভাবি যাইতেছিল। সেই আমারে ফোন কইরা বিষয়টা জানাইছে।
মোবাইল ফোন আসলেই একটা চিজ। চোখের নিমিষে এক জায়গায় খবর আরেক জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছে। এর তেলেসমাসির কাছে জিন-পরীর কেরামতি হালকা হয়ে যাচ্ছে কিনা ভাবছি, লবণ বেগম তাড়া দিল-
: বললা না, জোঁক দিয়া তোমার কী কাজ?
- জোঁকের সঙ্গে তিলের তেল মিকশ্চার কইরা মাথায় মাখলে নতুন চুল পয়দা হয়।
: এই বয়সে তোমার নতুন চুল পয়দা করার প্রয়োজন কী?
- প্রয়োজন আছে বইল্যাই তো উদ্যোগ নিছি।
: প্রয়োজন আছে- ভালো কথা। জোঁক-ফোঁক এইসব কী? এইজন্য আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আছে। তুমি তাদের কাছে যাও।
- জোঁক পদ্ধতি হানড্রেড পার্সেন্ট ন্যাচারাল। এর কোনো সাইড-অ্যাফেক্ট নাই।
: সাইড-অ্যাফেক্ট তোমার উপর না হইলেও আমাদের উপর হয়- এইটা তোমার বোঝা উচিত। পাশের ফ্লাটের শরিফুলের আব্বার মাথা পাতিলের তলা হইয়া গেছিল। লেজার ট্রিটমেন্ট কইরা তার এখন কী সুন্দর মাথাভর্তি চুল...
নিকট-প্রতিবেশী হলেও শরিফুলের আব্বার চেহারা শেষ কবে দেখেছি, মনে পড়ছে না। কল্পনায় তার মাথাভর্তি চুলের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে লবণ বেগমের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম।
লেজার ট্রিটমেন্ট সেন্টারে গিয়ে দেখলাম, একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর মালিক। তার লেজের আগাগোড়া দেশি-বিদেশী ডিগ্রিতে মোড়ানো। বিশেষজ্ঞের কথায় আমার দুজন মুগ্ধ। এক পর্যায়ে তিনি বললেন-
: হেয়ার থেরাপি শেষ করে আপনি আমাদের স্লিম প্যাকেজ গ্রহণ করবেন। ভাবি, আপনিও তো মুটিয়ে যাচ্ছেন। এত সুন্দর চেহারা নিয়ে এভাবে মুটিয়ে গেলে সৃষ্টিকর্তার মনে আঘাত দেয়া হয়।
- আপনারা এইসবও করেন নাকি?
: হা-হা-হা! আমরা কী করি না, সেইটা বলেন। শরীরের লুজ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ টাইট করার পাশাপাশি মোটাকে চিকন, চিকনকে মোটা, বৃদ্ধকে যুবক, যুবককে কিশোর- সবই করি। স্লিম প্যাকেজ গ্রহণ করলে আপনাদের দুজনের ফিগার এমন অবস্থায় নিয়ে যাব- সিনেমা-নাটকে অভিনয়ের অফার পাবেন, এটা নিশ্চিত। যদি না পান, তাহলে আমি চিকিৎসা পেশা ত্যাগ করে মাছের ব্যবসা করব।
লেজার ট্রিটমেন্ট সম্পন্ন হওয়ার পর বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। একদিন শরিফুল সাহেবের বাসার কলিংবেল টিপলাম। তিনি বাসায়ই ছিলেন। যত্ন করে ড্রয়িং রুমে বসালেন। চা পানের ফাঁকে তাকে জিজ্ঞেস করলাম-
: আপনি কি মাথায় পরচুলা ব্যবহার করেন?
শরিফুল সাহেব ভীষণ অবাক হলেন। বললেন-
: হ্যাঁ। কেন বলুন তো!
আমি আমার মাথার পরচুলা খুলে হাতে নিলাম। বললাম-
: আমিও পরচুলা ব্যবহার করতেছি।
ভিক্ষুক তার পাশে আরেকজন ভিক্ষুক দেখলে ভাগে কম পড়বে ভেবে রেগে যায়। দুঃখীর ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য নয়। দুঃখীর পাশে আরেকজন দুঃখী দাঁড়ালে মনোবল বাড়ে। বেঁচে থাকার শক্তি ও সাহস পাওয়া যায়। শরিফুল সাহেব আমার তালুর পোড়া অংশ ভালোভাবে দেখে জিজ্ঞেস করলেন-
: আপনি কি লেজার ট্রিটমেন্ট নিতে গেছিলেন?
- হ। তারা চিকিৎসা করতে যাইয়া আমার মাথার চামড়া এমনভাবে পুইড়া ফেলছিল- প্রায় একমাস ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলাম। এতে জীবনরক্ষা হইছে, কিন্তু মাথা জাপানের হিরোশিমা নগরীর আকার ধারণ করছে। আইচ্ছা, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির নামে পকেট থেইক্যা পয়সাকড়ি খসাইয়া যারা আমাদের বিপদে ফেলছে- চলেন, তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন লই।
শরিফুল সাহেব স্থিরদৃষ্টিতে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন-
: প্রতারণার শিকার হওয়ার পর আমারও অ্যাকশন নেওয়ার কথা মনে হইছিল। কিছুদূর অগ্রসরও হইছিলাম। পরে দেখলাম, কাজটা খুবই কঠিন।
- কঠিন কেন?
: প্রতারকের দল কয়েক স্তরের সুরক্ষা দেওয়ালের মধ্যে সুরক্ষিত থাকে। প্রথম স্তরে আছে স্থানীয় মাস্তান বাহিনী। এই বাহিনীতে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাহীন- উভয় রাজনৈতিক দলের লোকজনই আছে। আপনি যদি কোনোভাবে এই স্তর ভেদ করতে সক্ষম হন, পরের স্তরে যাইয়া দেখবেন- আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী খাড়াইয়া রইছে। তারা নানাভাবে আপনাকে নাস্তানাবুদ করার ক্ষমতা রাখে। ধইরা নিলাম, এই স্তরটাও আপনি অতিক্রম করলেন। তখন দেখবেন-ঠিক পরের স্তরটাতেই আছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা। তর্কের খাতিরে মাইন্যা নিলাম, রাজনৈতিক নেতাদেরও আপনি বাইপাস করতে সক্ষম হইলেন। এরপর কী দেখবেন, জানেন? দেখবেন- পরের স্তরে আছেন মন্ত্রী-মিনিস্টাররা। এইবার বলেন, আপনার-আমার পক্ষে প্রতারকদের চুল স্পর্শ করা কি সম্ভব?
: যদি আদালতের শরণাপন্ন হই? বিদেশে তো চিকিৎসায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ মামলা কইরা ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারে। প্রতারকদের জেল-জরিমানাও হয়।
- বিদেশ আর স্বদেশ তো এক নিয়মে চলতেছে না। আইনের আশ্রয় নিলে প্রতিকার হয়তো পাওয়া যাবে। কিন্তু উকিল-মোক্তার, থানা-পুলিশের পেছনে টাকা ঢালতে-ঢালতে আর দৌড়াইতে-দৌড়াইতে জান কবজ হওয়ার সাইরেন বাইজ্যা উঠবে। অনেক জ্ঞানী-গুণী-বিদগ্ধজন মরহুম হওয়ার পর মরণোত্তর পুরস্কার বা সম্মানে ভূষিত হয়। বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে দেখা যাবে, আপনের ভাগ্যে মরণোত্তর রায় জুটছে।
রশিদ সাহেবের সঙ্গে আবার একদিন রাস্তায় দেখা হল। আমার চেহারা দেখে খুব খুশি হলেন। মাথায় চুলের বাহার আনন্দিত গলায় বললেন-
: বলেছিলাম না, মাথা কদম ফুলের আকার ধারণ করবে।
মাথা থেকে পরচুলা খুলে হাতে নিতেই তার আলাজিভ দেখা গেল। ঢোক গিলে তিনি বললেন-
: এইসব কী?
আমি সঠিক উত্তর না দিয়ে বললাম-
: কদম ফুলের পাপড়ি ঝইরা গেলে কী থাকে, জানেন তো? ছোলামোলা বিচি থাকে। আমার এখন ছোলামোলা বিচিপর্ব চলতেছে...
রশিদ সাহেব বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি তার এ অবাক ভাবটা নষ্ট হতে দিলাম না। মাঝেমধ্যে অবাক হওয়া ভালো। অবাক হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন।
মোকাম্মেল হোসেন : সাংবাদিক
দরজা খুলে গেল। রাজহংসীর ন্যায় ঘাড় উঁচু করে স্বয়ং লবণ বেগম সামনে দাঁড়ানো। তার চোখে চোখ রেখে মিষ্টি করে হাসলাম। এ ধরনের হাসি আমাদের ময়মনসিংহ অঞ্চলে গোয়ামুরি হাসি নামে সমাদৃত। গোয়ামুরি ছচজাতীয় মশলা। খুব সুঘ্রাণ। তরকারির স্বাদ ও ঘ্রাণ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহৃত হয়। গোয়ামুরির সুঘ্রাণ লবণ বেগমকে স্পর্শ করল না দেখে আশ্চর্য হলাম। ঘটনা কী? এরকম তো হওয়ার কথা না। কর্মক্ষেত্র থেকে বাসায় ফেরার পর স্বামী স্ত্রীর চোখে চোখ রেখে হাসবে- সেই হাসির প্রতিদানও হবে চোখে-চোখে, ঠোঁটে-ঠোঁটে। এটাই সংসারের নিয়ম। এখানে তো পুরো উল্টা সিনারি দেখা যাচ্ছে!
কোনো ওষুধ কাজ না করলে ডাক্তাররা সেটা পরিবর্তন করে রোগীকে অন্য ওষুধ খেতে দেন। মশলা-হাসিতে কাজ না হওয়ায় গোলাপ হাসি উপহার দিলাম। গোলাপ হাসির প্রতিক্রিয়া আরও মারাত্মক হল। লাস্যময়ীর বদলে কাঁটাময়ীর রূপ ধারণ করে লবণ বেগম বলল-
: তুমি বাসায় ঢুকবা না।
কোনো স্ত্রী স্বামীকে এ ধরনের কথা বললে বুঝতে হবে কোথাও সমস্যা হয়েছে। সমস্যাটা কোথায়- বুঝতে পারছি না। আমার সিএলআর (কনজ্যুগাল লাইফ রিপোর্ট- যুগলজীবনের প্রতিবেদন) ঝকঝকা। সেখানে কোনো লালকালির দাগ নেই। অনেক গৃহবধূ ওয়াশিং মেশিনে দেয়ার সময় স্বামীর কাপড়-চোপড়ে লম্বা কেশ আবিষ্কার করে। ঠোঁট আকারের রঙবেরঙ হলোস্টিকের ঝিলিক দেখে। আমার ক্ষেত্রে এরকম ইতিহাস আজ পর্যন্ত রচিত হয়নি।
শুনেছি ঘরজামাইদের নিয়ে স্ত্রীরা ছক্কা-পাঞ্জা খেলে। আমার সঙ্গে ছক্কা-পাঞ্জা খেলার কোনো অবকাশ নেই। আমি ঘরজামাই নই। ঘরে-বাইরে হেভি ডিউটি পালনকারী স্বামী। এ রকম একজন স্বামীর মুখের ঘাম শাড়ির আঁচল দিয়ে সকাল-বিকাল মুছে দেয়া উচিত। তা না করে কাঁটাঘাত। এটা মেনে নেয়া কঠিন। সিনা টান করে দাঁড়ালাম। গলায় শক্তি উৎপাদন করে বললাম-
: আমার বাসায় আমি ঢুকব না- কে ঢুকবে?
পা থেকে মাথা পর্যন্ত জরিপ করার পর ঠোঁট উল্টে লবণ বেগম বলল-
: তোমার বাসায় অবশ্যই তুমি ঢুকবা। তবে সঙ্গে আর কিছু ঢুকাইতে পারবা না।
: আর কিছু মানে? কী বলতে চাও তুমি?
- কী বলতে চাই, সেইটা তুমি ভালো কইরাই জান। আমাকে পোলাপান লইয়া ঘরে থাকতে হয়। তুমি ঘরটারে সাপ-ব্যাঙ, জোঁক-বিছার কারখানা বানাবা- এইটা আমি কিছুতেই এলাউ করব না।
হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছি। মিলছে না। দুইয়ে-দুইয়ে চার হচ্ছে না। আমার ব্যাগের মধ্যে জোঁক আছে- এটা আমি আর আমার অন্তর্যামী ছাড়া পরিচিত অন্য কারও জানার কথা না। লবণ বেগম এ তথ্য কোন গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে পেল? বাংলাদেশের গোয়েন্দারা শরীরের উপর রেলগাড়ি উঠে না পড়লে কোনোকিছু টের পায় না। এটা কি আন্তর্জাতিক কোনো গোয়েন্দা সংস্থার কাজ? বিদেশী গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে আকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপন করে তথ্য সংগ্রহ ও নজরদারির অভিযোগ রয়েছে। তাদের গোয়েন্দা জালে ধরা পড়ার চিত্র লবণ বেগম কি ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানতে পেরেছে? অসম্ভবের কিছু নেই। ইন্টারনেটের ভেল্কিবাজিতে এ যুগে ছাগলও আকাশে উড়ছে। এ অবস্থায় কারও গতিবিধি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা কোনো ব্যাপার নয়। উপায় না দেখে সারেন্ডার করলাম। ব্যাগ থেকে জোঁকভর্তি বয়াম বের করতেই লবণ বেগম লাফ দিয়ে কয়েক হাত পিছিয়ে গিয়ে বলল-
: কট্টা-মট্টা ঢুকাইয়া ব্যাগসহ ডাস্টবিনে ফেইল্যা আস।
ব্যাগের মায়া ত্যাগ করা কঠিন। দামি ব্যাগ। মাত্র কয়েক মাস আগে কিনেছি। লবণ বেগম কোনো ওজর-আপত্তি কানে তুলল না। নির্দেশ পালন করে বিরস মুখে বাসায় ফিরলাম। লবণ বেগম বলল-
: বাথরুমে গরম পানি দিছি। শরীর থেইক্যা জোঁকের গন্ধ দূর কইরা টেবিলে বস। পাকুড়া ভাজতেছি, ছেলেদের লইয়া গরম-গরম পাকুড়া খাও।
গোসল সেরে আমার ত্রিরত্নের সঙ্গে পাকুড়া খেতে বসলাম। মুড়ির সঙ্গে পাকুড়া অসাধারণ। আজ বিস্বাদ লাগছে। লবণ বেগম অবাক হয়ে বলল-
: পাকুড়া কি পচা হইছে?
- না।
: তাইলে মুখ কাঁকড়ার মতো কইরা রাখছ কেন? ভালো কইরা খাও।
- কামলার গোষ্ঠির পক্ষে এরচাইতে ভালো কইরা খাওয়া সম্ভব না।
: রাইগা যাইতেছ কেন?
কথায় কথা বাড়ে, ভোজনে বাড়ে পেট। নারীজাতির সঙ্গে যত কম কথা বলা যায়, ততই মঙ্গল। লবণ বেগমের কথার বিপরীতে কিছু না বলে চুপচাপ খাচ্ছি, পুনরায় সে বলল-
: তাসিনের আব্বু, ঘটনাটা পরিষ্কার কর তো! জোঁক দিয়া তোমার কী কাজ?
জোঁক প্রকল্পের উপদেষ্টা রশিদ সাহেব। সকালবেলা হুড়মুড় করে অফিসে যাচ্ছি, ফুটপাতে রশিদ সাহেবের সঙ্গে দেখা। তিনি আমার বেলমাথা দেখে বললেন-
: মাথা ন্যাড়া করছেন কী জন্য? মানত ছিল নাকি?
- না।
: তাইলে?
- কোনো তাইলে-মাইলে নাই। শখ করলাম- তাই বেল হইলাম। ধনবান ব্যক্তিরা শখ কইরা গাড়ি কেনে। বাড়ি বানায়। বাগানবাড়ি সাজায়। আমাদের পক্ষে তো এইসব করা সম্ভব না। আমরা শখ কইরা বড়জোর নাক ফুটা করতে পারি। কান ছিদ্র করতে পারি। বারান্দায় দ্ইু-একটা ফুলের গাছ আর কাচের বয়ামে একটা-দুইটা রঙিন মাছ রাখতে পারি। এরই ধারাবাহিকতায় আমি কানের একটু উপরে উইঠ্যা মাথায় ক্ষুর চালাইছি।
: ভালো করছেন। ন্যাড়া যখন হইছেনই- আমি একটা টোটকা দিতেছি, মাত্র এক মাস মাথায় ব্যবহার করেন; চুলের টেনশন থেইক্যা আসান পাবেন।
মাথার চুল নিয়ে সমস্যায় আছি। রশিদ সাহেবের মুখের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকালাম। বললাম-
: কী টোটকা?
রশিদ সাহেব হাতের ইশারায় রাস্তার পাশে একটা জায়গা দেখিয়ে বললেন-
: বিকালবেলা ওইখানে ক্যানভাসাররা জোঁক লইয়া বসে। অফিস থেইক্যা ফেরার সময় কয়েকটা জোঁক কিইন্যা বাসায় লইয়া যাবেন। তিলের তেলে সেইগুলা ভালো কইরা আগুনে জ্বাল দিবেন। তেলে-জোঁকে মিইশ্যা এক হওয়ার পর উত্তমরূপে ছাইক্যা শিশিতে ভইরা রাখবেন। এক মাস সেই তেল ব্যবহার করলে পুরাতন চুলের পাশাপাশি মাথায় নতুন চুল পয়দা হবে। মাথা কদম ফুলের আকার ধারণ করবে।
: কদম ফুল তো সাদা!
-আমি কদম ফুলের চেহারা বলি নাই, আকার বলছি; কথাটা আপনাকে বুঝতে হবে।
লবণ বেগম পুনরায় তাড়া দিতেই বললাম-
: তার আগে বল- তুমি জোঁকের খবর কীভাবে পাইলা? জিনের কাছ থেইক্যা?
লবণ বেগম মুচকি হেসে বলল-
: তুমি ব্যাগে জোঁক ভরার সময় পাশ দিয়া রিকশায় চইড়া কুমকুম ভাবি যাইতেছিল। সেই আমারে ফোন কইরা বিষয়টা জানাইছে।
মোবাইল ফোন আসলেই একটা চিজ। চোখের নিমিষে এক জায়গায় খবর আরেক জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছে। এর তেলেসমাসির কাছে জিন-পরীর কেরামতি হালকা হয়ে যাচ্ছে কিনা ভাবছি, লবণ বেগম তাড়া দিল-
: বললা না, জোঁক দিয়া তোমার কী কাজ?
- জোঁকের সঙ্গে তিলের তেল মিকশ্চার কইরা মাথায় মাখলে নতুন চুল পয়দা হয়।
: এই বয়সে তোমার নতুন চুল পয়দা করার প্রয়োজন কী?
- প্রয়োজন আছে বইল্যাই তো উদ্যোগ নিছি।
: প্রয়োজন আছে- ভালো কথা। জোঁক-ফোঁক এইসব কী? এইজন্য আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আছে। তুমি তাদের কাছে যাও।
- জোঁক পদ্ধতি হানড্রেড পার্সেন্ট ন্যাচারাল। এর কোনো সাইড-অ্যাফেক্ট নাই।
: সাইড-অ্যাফেক্ট তোমার উপর না হইলেও আমাদের উপর হয়- এইটা তোমার বোঝা উচিত। পাশের ফ্লাটের শরিফুলের আব্বার মাথা পাতিলের তলা হইয়া গেছিল। লেজার ট্রিটমেন্ট কইরা তার এখন কী সুন্দর মাথাভর্তি চুল...
নিকট-প্রতিবেশী হলেও শরিফুলের আব্বার চেহারা শেষ কবে দেখেছি, মনে পড়ছে না। কল্পনায় তার মাথাভর্তি চুলের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে লবণ বেগমের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম।
লেজার ট্রিটমেন্ট সেন্টারে গিয়ে দেখলাম, একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর মালিক। তার লেজের আগাগোড়া দেশি-বিদেশী ডিগ্রিতে মোড়ানো। বিশেষজ্ঞের কথায় আমার দুজন মুগ্ধ। এক পর্যায়ে তিনি বললেন-
: হেয়ার থেরাপি শেষ করে আপনি আমাদের স্লিম প্যাকেজ গ্রহণ করবেন। ভাবি, আপনিও তো মুটিয়ে যাচ্ছেন। এত সুন্দর চেহারা নিয়ে এভাবে মুটিয়ে গেলে সৃষ্টিকর্তার মনে আঘাত দেয়া হয়।
- আপনারা এইসবও করেন নাকি?
: হা-হা-হা! আমরা কী করি না, সেইটা বলেন। শরীরের লুজ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ টাইট করার পাশাপাশি মোটাকে চিকন, চিকনকে মোটা, বৃদ্ধকে যুবক, যুবককে কিশোর- সবই করি। স্লিম প্যাকেজ গ্রহণ করলে আপনাদের দুজনের ফিগার এমন অবস্থায় নিয়ে যাব- সিনেমা-নাটকে অভিনয়ের অফার পাবেন, এটা নিশ্চিত। যদি না পান, তাহলে আমি চিকিৎসা পেশা ত্যাগ করে মাছের ব্যবসা করব।
লেজার ট্রিটমেন্ট সম্পন্ন হওয়ার পর বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। একদিন শরিফুল সাহেবের বাসার কলিংবেল টিপলাম। তিনি বাসায়ই ছিলেন। যত্ন করে ড্রয়িং রুমে বসালেন। চা পানের ফাঁকে তাকে জিজ্ঞেস করলাম-
: আপনি কি মাথায় পরচুলা ব্যবহার করেন?
শরিফুল সাহেব ভীষণ অবাক হলেন। বললেন-
: হ্যাঁ। কেন বলুন তো!
আমি আমার মাথার পরচুলা খুলে হাতে নিলাম। বললাম-
: আমিও পরচুলা ব্যবহার করতেছি।
ভিক্ষুক তার পাশে আরেকজন ভিক্ষুক দেখলে ভাগে কম পড়বে ভেবে রেগে যায়। দুঃখীর ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য নয়। দুঃখীর পাশে আরেকজন দুঃখী দাঁড়ালে মনোবল বাড়ে। বেঁচে থাকার শক্তি ও সাহস পাওয়া যায়। শরিফুল সাহেব আমার তালুর পোড়া অংশ ভালোভাবে দেখে জিজ্ঞেস করলেন-
: আপনি কি লেজার ট্রিটমেন্ট নিতে গেছিলেন?
- হ। তারা চিকিৎসা করতে যাইয়া আমার মাথার চামড়া এমনভাবে পুইড়া ফেলছিল- প্রায় একমাস ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলাম। এতে জীবনরক্ষা হইছে, কিন্তু মাথা জাপানের হিরোশিমা নগরীর আকার ধারণ করছে। আইচ্ছা, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির নামে পকেট থেইক্যা পয়সাকড়ি খসাইয়া যারা আমাদের বিপদে ফেলছে- চলেন, তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন লই।
শরিফুল সাহেব স্থিরদৃষ্টিতে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন-
: প্রতারণার শিকার হওয়ার পর আমারও অ্যাকশন নেওয়ার কথা মনে হইছিল। কিছুদূর অগ্রসরও হইছিলাম। পরে দেখলাম, কাজটা খুবই কঠিন।
- কঠিন কেন?
: প্রতারকের দল কয়েক স্তরের সুরক্ষা দেওয়ালের মধ্যে সুরক্ষিত থাকে। প্রথম স্তরে আছে স্থানীয় মাস্তান বাহিনী। এই বাহিনীতে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাহীন- উভয় রাজনৈতিক দলের লোকজনই আছে। আপনি যদি কোনোভাবে এই স্তর ভেদ করতে সক্ষম হন, পরের স্তরে যাইয়া দেখবেন- আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী খাড়াইয়া রইছে। তারা নানাভাবে আপনাকে নাস্তানাবুদ করার ক্ষমতা রাখে। ধইরা নিলাম, এই স্তরটাও আপনি অতিক্রম করলেন। তখন দেখবেন-ঠিক পরের স্তরটাতেই আছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা। তর্কের খাতিরে মাইন্যা নিলাম, রাজনৈতিক নেতাদেরও আপনি বাইপাস করতে সক্ষম হইলেন। এরপর কী দেখবেন, জানেন? দেখবেন- পরের স্তরে আছেন মন্ত্রী-মিনিস্টাররা। এইবার বলেন, আপনার-আমার পক্ষে প্রতারকদের চুল স্পর্শ করা কি সম্ভব?
: যদি আদালতের শরণাপন্ন হই? বিদেশে তো চিকিৎসায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ মামলা কইরা ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারে। প্রতারকদের জেল-জরিমানাও হয়।
- বিদেশ আর স্বদেশ তো এক নিয়মে চলতেছে না। আইনের আশ্রয় নিলে প্রতিকার হয়তো পাওয়া যাবে। কিন্তু উকিল-মোক্তার, থানা-পুলিশের পেছনে টাকা ঢালতে-ঢালতে আর দৌড়াইতে-দৌড়াইতে জান কবজ হওয়ার সাইরেন বাইজ্যা উঠবে। অনেক জ্ঞানী-গুণী-বিদগ্ধজন মরহুম হওয়ার পর মরণোত্তর পুরস্কার বা সম্মানে ভূষিত হয়। বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে দেখা যাবে, আপনের ভাগ্যে মরণোত্তর রায় জুটছে।
রশিদ সাহেবের সঙ্গে আবার একদিন রাস্তায় দেখা হল। আমার চেহারা দেখে খুব খুশি হলেন। মাথায় চুলের বাহার আনন্দিত গলায় বললেন-
: বলেছিলাম না, মাথা কদম ফুলের আকার ধারণ করবে।
মাথা থেকে পরচুলা খুলে হাতে নিতেই তার আলাজিভ দেখা গেল। ঢোক গিলে তিনি বললেন-
: এইসব কী?
আমি সঠিক উত্তর না দিয়ে বললাম-
: কদম ফুলের পাপড়ি ঝইরা গেলে কী থাকে, জানেন তো? ছোলামোলা বিচি থাকে। আমার এখন ছোলামোলা বিচিপর্ব চলতেছে...
রশিদ সাহেব বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি তার এ অবাক ভাবটা নষ্ট হতে দিলাম না। মাঝেমধ্যে অবাক হওয়া ভালো। অবাক হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন।
মোকাম্মেল হোসেন : সাংবাদিক
No comments