সরকারি দলে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে খুনোখুনি
আধিপত্য বিস্তার, চাঁদা ও লুটপাটের ভাগ-বাটোয়ারা এবং দলীয় পদ কব্জা করা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণেই ক্ষমতাসীন দলের রধ্যে খুনখারাবি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। সম্প্রতি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র কতৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত নয় মাসে ১৭১টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৭৮ জন। বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ৭৪ জন। ৫৪ জন নিহত হয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। আজকের প্রকাশিত একটি খবর থেকে জানা যায়, এবছর প্রথম নয় মাসে আওয়ামী লীগের আন্তঃকোন্দলে নিহত হয়েছেন ২৪ জন। প্রকাশিত খবর থেকে আরো জানা যায়, গত ছয় বছরের আওয়ামী লীগ শাসনামলে ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গসংগঠনের ৪৬ জনেরও বেশি খুন হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১০, যুবলীগের ১৫, ছাত্রলীগের ৬, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগের ৭, শ্রমিক লীগের ২ এবং বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের একজন রয়েছেন। আর গত ছয় বছরে ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে বা অন্য সংগঠনের সঙ্গে অন্তত ৪৩২টি সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৪ জন। নিজ সংগঠনের ৩৯ জনের বাইরে বাকি ১৫ জনের মধ্যে দুটি শিশু এবং অন্যরা প্রতিপক্ষ সংগঠনের কর্মী বা সাধারণ মানুষ খুন হয়েছেন। এসব সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি। অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত কেবল বগুড়া জেলাতেই দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছে ৪৬ জন। একই কারণে যশোরে বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী খুন হয়েছে ১৭ জন। এ ছাড়া অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তি-বাণিজ্য, শিক্ষক লাঞ্ছনা, সাংবাদিক-পুলিশের ওপর হামলাসহ নানা ঘটনায় হরহামেশাই পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে ছাত্রলীগ। সবশেষ, গত বৃহস্পতিবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছাত্রলীগের কর্মী ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন দাস নিহত হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে গত এক বছরে এ নিয়ে চারবার এ ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। এদিকে, গত ছয় বছরে ছাত্রলীগের সংঘাত-সংঘর্ষের কারণে অধর্শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়েছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। একাধিকবার বন্ধের ঘটনা ঘটেছে অন্তত পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চারবার এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় তিনবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়েছে। বারবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে গেছে। এর খেসারত আওয়ামী লীগকে দিতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সিলেটে ছাত্রলীগ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে কর্মী নিহতের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলায় বর্তমান ও সাবেক এমপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায়ও তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সূত্র: আইআরআইবি
No comments