সংসদ থেকে সরে দাঁড়ালো ইউএনডিপি by কাজী সোহাগ
৫ বছর মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম,
দুর্নীতি আর অসন্তুষ্টির কারণে সংসদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন
সংস্থা ইউএনডিপি। আপাতত নতুন কোন প্রকল্পে তারা অর্থায়ন করবেন না বলে সাফ
জানিয়ে দিয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের দাতা প্রতিষ্ঠান
ইউএনডিপি। ১০ বছর ধরে তারা সংসদের বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত।
ইমপ্রুভিং ডেমোক্রেসি থ্রু পার্লামেন্টারি ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) প্রকল্পের
মেয়াদ শেষ হয় গত ৩০শে জুন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ডোনার প্রতিষ্ঠানটি আভাস
দিয়েছিল সরে আসার। কারণ প্রকল্পের টাকা অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। সমপ্রতি
তারা মৌখিকভাবে তাদের অনাগ্রহের কথা জানিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৩
কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয় কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা। এর মধ্যে ছিল ১০
পৃষ্ঠার ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্ট সেক্রেটারিয়েট স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান
২০১২-২০১৪’ এবং ২৫ পৃষ্ঠার ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্ট সেক্রেটারিয়েট অ্যানুয়াল
অ্যাকশন প্যান ২০১২-২০১৩’ নামে দু’টি বই। এ ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক
ও দেশীয় পরামর্শকদের সম্মানী, সংসদের কর্মকর্তাদের নিয়ে দেশে-বিদেশে
একাধিক বার বিদেশ ভ্রমণ। সময় খরচ হয় প্রায় ৩ বছর। প্রকল্প শুরুর প্রথম তিন
বছরেই ফান্ড প্রায় শূন্য হয়। প্রকল্পে ন্যাশনাল প্রজেক্ট ডাইরেক্টর হিসেবে
দায়িত্ব পালন করেন সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রণব চক্রবর্তী। গতকাল
তিনি মানবজমিনকে বলেন, ‘৩০শে জুন পর্যন্ত প্রকল্পের স্বাভাবিক মেয়াদ ছিল।
এরপর তারা আর এক্সটেনশন করেনি। তবে শিগগিরই নতুন প্রকল্পে অর্থায়ন করবেন
বলে তারা স্পিকারকে জানিয়েছে।’ এর আগে গত মাসে তিনি মানবজমিনকে এক
সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ইউএনডিপি মেয়াদ
এক্সটেনশন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এদিকে ওই প্রকল্পের আওতায় মন্ত্রী
হোস্টেলে বরাদ্দ দেয়া ৫টি কক্ষ এখন গোছানোর কাজ চলছে। প্রকল্পের সঙ্গে
সংশ্লিষ্টরা এরই মধ্যে অফিস করা বন্ধ করেছেন। ইউএনডিপির কোন কর্মকর্তা এ
প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। ২০১০ সালে শুরু করা ওই
প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৮৬ কোটি টাকা। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে
আগেই সরে পড়ে কোরিয়ান ডোনার প্রতিষ্ঠান কোয়েকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে
প্রতিষ্ঠানটি ২০ কোটি টাকা দেয়ার অঙ্গীকার করেছিল। শেষ পর্যন্ত ৫ বছর
মেয়াদি প্রকল্পর অঙ্ক দাঁড়াই ৫৯ কোটি টাকায়। গত মাসে ইউএনডিপির পক্ষ থেকে
প্রকল্পর অগ্রগতি জানতে প্রায় ৭ দিনের সফরে আসেন রবার্ট নাকামুরা ও কার্ল
ডি ফারিয়া। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তারা হতাশা প্রকাশ করেন।
একই ভাবে ১৩ থেকে ২৭শে মে কাজের মূল্যায়ন করতে ইউএনডিপির পক্ষ থেকে
বাংলাদেশে আসেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ পিটার লিনিয়েনফেন্ড। তিনি স্পিকার,
ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপসহ প্রায় ১৫ জনের সঙ্গে বৈঠক করেন। শেষ পর্যন্ত
তিনিও সংশ্লিষ্টদের কাছে হতাশা প্রকাশ করেন। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই
মূলত ইউএনডিপি সংসদ সচিবালয়ের নতুন প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়। সংশ্লিষ্টরা
জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তাবয়ন হয়েছে মাত্র ১৩ ভাগ। যদিও কাগজে কলমে দেখানো
হয়েছে ৬৮ ভাগ। অভিযোগ রয়েছে, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের বারবার স্টাডি
ট্যুর বা শিক্ষা সফরের নামে বিদেশ ভ্রমণেই ব্যয় হয় প্রকল্পর বেশির ভাগ
টাকা। দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ভারত, নিউজিল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত,
মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেছেন ৪০ কর্মকর্তা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে
সংসদীয় গণতন্ত্র না থাকলেও সংসদীয় গণতন্ত্রের অভিজ্ঞতার জন্য দুবাইতে
দু’দফায় প্রশিক্ষণে গেছেন সংসদের ১৫ কর্মকর্তা। বিদেশে স্টাডি ট্যুরে যাওয়া
কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশির ভাগই সংসদ সচিবালয়ের প্রেষণে নিয়োজিত হওয়ায়
তাদের অভিজ্ঞতাও তেমন কোন কাজে লাগেনি। কারণ তাদের বেশির ভাগই অন্যত্র বদলি
হয়ে চলে গেছেন। এ প্রসঙ্গে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গত জুনে
মানবজমিনকে বলেছিলেন, প্রকল্পে যদি কোন অনিয়ম হয় তা তদন্ত করে দেখা হবে।
No comments