ইসরায়েল মানলেও হামাসের প্রত্যাখ্যান
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গুঁড়িয়ে যাওয়া ভবনের পাশ দিয়ে গাধার গাড়িতে চড়ে যাচ্ছে একটি পরিবার। গতকাল তোলা ছবি। রয়টার্স |
গাজায় রক্তপাত বন্ধের জন্য মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েল গ্রহণ করলেও হামাস সম্মত হয়নি। তারা একে ‘আত্মসমর্পণের’ সমতুল্য আখ্যা দিয়ে রকেট হামলা অব্যাহত রাখে।ফলে কাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতির উদ্যোগের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ছয় ঘণ্টা। গতকাল দুপুরের পর গাজা উপত্যকায় আবারও বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল, যা চলমান সংঘাত নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেওয়া যুদ্ধবিরতির উদ্যোগে একটি বড় আঘাত।খবর বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপির। হামাস-শাসিত গাজা উপত্যকায় টানা আট দিন ইসরায়েলের প্রায় একতরফা সামরিক অভিযানের পর মিসর যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করে। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল নয়টা থেকে এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। বেঁধে দেওয়া সময়ের সামান্য আগে প্রস্তাবটি অনুমোদন করে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। তারা হামলা বন্ধও করে। পাশাপাশি এও জানানো হয়, হামাস যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ না করলে তার জবাব হবে কঠিন। প্রয়োজনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সামরিক অভিযানের সম্প্রসারণ করা হবে।
কিন্তু হামাস এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ করে জানায়, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এ প্রস্তাব আনা হয়েছে। এটি ‘আত্মসমর্পণের’ সমতুল্য। হামাস পূর্ণাঙ্গ কোনো চুক্তি ছাড়া রকেট হামলা বন্ধ করবে না। এই অবস্থায় গতকাল বেলা তিনটার দিকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান থেকে ফের হামলা চালানো শুরু হয়। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব টুইটার অ্যাকাউন্টে বলেছে, ‘আমরা সকাল নয়টায় গাজায় হামলা চালানো বন্ধ করার পর থেকে হামাস ৪৭টি রকেট ছুড়েছে। তাই আমরাও হামাসের বিরুদ্ধে আবার অভিযান শুরু করেছি।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা বলেন, সেনাবাহিনীকে ‘শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অভিযান চালানোর’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে শুরু করা হামলায় গাজার অন্তত দুটি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তবে এই হামলায় ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানা যায়নি। গাজায় আট দিনের ইসরায়েলি হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯২ জনে। আহত হয়েছে হাজারের বেশি, যাদের বেশির ভাগই নিরীহ নারী-পুরুষ ও শিশু। অন্যদিকে ইসরায়েলের পক্ষে মাত্র চারজন নাগরিক আহত হয়েছে। সংঘাত নিরসনে গত সোমবার কায়রোতে জরুরি বৈঠকে বসেন আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বৈঠক শেষে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিন ধাপের একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের কথা ঘোষণা করেন। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, ১২ ঘণ্টার মধ্যে উভয় পক্ষ শর্তহীনভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করবে। খুলে দেওয়া হবে গাজার সীমান্ত। এ ছাড়া কায়রোতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসবেন। কিন্তু হামাস গোড়া থেকেই এ প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। আর ইসরায়েলও মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাদে তাদের অবস্থান থেকে সরে যায়। তবে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ভেঙে যাওয়ার পরও হতাশ হয়নি মিসর।
হামাসের প্রত্যাখ্যানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ হতে দিতে চান না কায়রোর কর্মকর্তারা। যদিও ইসরায়েলের নতুন সামরিক অভিযান এই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে যে, তারা ভবিষ্যতে আলোচনার টেবিলে আসবে কি না; এলেও সবার জন্য গ্রহণযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয় কি না। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল তাঁর মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর তেলআবিব সফররত জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টারের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘হামাস যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ না করলে প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতা অর্জনে ইসরায়েল তার সামরিক অভিযানের বিস্তৃতির ব্যাপারে সব আন্তর্জাতিক বৈধতা পাবে।’ নেতানিয়াহু বলেন, তিনি গাজাকে ‘যুদ্ধমুক্ত’ দেখতে চান। তিনি বলেন, ‘আমরা মিসরের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছি যাতে গাজা ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেটমুক্ত হতে পারে।’ হামাসের সামরিক শাখা আল-কাশেম ব্রিগেড যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ‘যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবসংক্রান্ত আলোচনায় আমাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই আমরাও এই উদ্যোগ মানছি না। আমরা এ প্রস্তাব মানতে বাধ্য নই।’ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার সামরিক অভিযানের নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপতাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি গতকাল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের’ অভিযোগ এনে বলেছেন, ‘ইসরায়েল অব্যাহতভাবে এই অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আমরা ছাড়া আর কেউই এ সন্ত্রাস বন্ধের কথা বলছে না...। বিশ্ব আর কবে এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে?’
No comments