গল্প- গুম by অনুরূপ আইচ
প্রতিদিনের মতো জাহিদ অফিসে গিয়েছিল
সকালে। আর ফেরেনি। দুই দিন হয়ে গেল তার। কোনো খোঁজ মিলছে না। থানা পুলিশকে
খবর দেয়া হয়েছে। তারা এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা করতে পারেনি। সব হাসপাতালে
খবর নেয়া শেষ। জাহিদের সন্ধান মেলেনি। একমাত্র মেয়ে ঐশী সারা দিন ‘বাবা’,
‘বাবা’ বলে কান্নাকাটি করছে। স্ত্রী মৌসুমীর নাওয়া-খাওয়া বন্ধ, চোখের পানিই
বুঝি তার ভাগ্য লেখন। কেউ কোনো খবর দিতে পারছে না জাহিদের। বেঁচে আছে কী
নেই, তাও কেউ বলতে পারছে না। দিনের পর দিন গড়াচ্ছে। জাহিদের কোনো খোঁজ
নেই। প্রতিদিন থানায় যায় মৌসুমী। থানার ওসি রমজান সাহেব তেমন একটা গুরুত্ব
দেন না। গুরুত্ব না দেয়ার কারণ, জাহিদ খ্যাতিমান কেউ নন। সাধারণ একজন
চাকরীজীবী। একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ভালো মাইনে পেতেন।
জাহিদের অফিসের বস মোস্তাফিজ সাহেবকে ভালো মানুষ বলে জানে মৌসুমী। জাহিদের মুখেই শুনেছে। উপায়ান্তর না পেয়ে মোস্তাফিজ সাহেবের সঙ্গে একদিন দেখা করতে গিয়েছিল মৌসুমী। মোস্তাফিজ সাহেব সময় নিয়ে কথা বলেছেন। মৌসুমীকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। ভরসা দিয়ে বলেছেন, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমরা তো মরে যাইনি। জাহিদকে খুঁজে বের করবই। আমি কিন্তু শুধু বুঝতে পারছি না, কারা জাহিদকে কিডন্যাপ করতে পারে? আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়?
এ প্রশ্নের উত্তরে মৌসুমী বলেন, জানামতে আমার স্বামীর কোনো শত্র“ নেই। সে খুব শান্ত-শিষ্ট স্বভাবের। তাকে দিয়ে কারও কোনো ক্ষতি হতে পারে না। জাহিদ তেমন লোকই নয়।
মোস্তাফিজ সাহেব বলেন, সে কথা আমিও জানি। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তিনি আমার কোম্পানিতে চাকরি করছেন। তিনি আমার খুবই বিশ্বস্ত। জাহিদ সাহেবের কোনো শত্র“ থাকতে পারে না। এটা আমারও বিশ্বাস। তাহলে জাহিদ সাহেবকে কারা কিডন্যাপ করল?
আমার স্বামীকে কেউ কিডন্যাপ করবে কেন? আমাদের তো অঢেল ধনসম্পদ নেই। আমি আসলে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার মাথায় কিছু আর ঢুকছে না। এই বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে মৌসুমী। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেন মোস্তাফিজ সাহেব। তিনি কিছু টাকাও দেন মৌসুমীর হাতে। বলেন, আপনার যখন যা দরকার হয় আমাকে বলবেন।
আরও অনেক কথা বললেন মোস্তাফিজ সাহেব। তার কথার ভেতরে একটা রহস্যের গন্ধ পায় মৌসুমী।
লোকটাকে সন্দেহ হয় তার। কথাটা মৌসুমী তার বাবা মেজবাহ উদ্দীনকে বলেছে। সেটা আমলে নেননি মেজবাহ সাহেব। মেয়ের এখন মাথা ঠিক নেই। কী ভাবতে কী ভাবছে। জাহিদের বস মোস্তাফিজ সাহেবকে সন্দেহ করার কী আছে। উনি মন্দ লোক নন। মন্দ হলে কি তিনি মৌসুমীর হাতে জাহিদের বেতনের টাকা তুলে দিতেন? নিশ্চয় না।
জাহিদের অফিসের বস মোস্তাফিজ সাহেবকে ভালো মানুষ বলে জানে মৌসুমী। জাহিদের মুখেই শুনেছে। উপায়ান্তর না পেয়ে মোস্তাফিজ সাহেবের সঙ্গে একদিন দেখা করতে গিয়েছিল মৌসুমী। মোস্তাফিজ সাহেব সময় নিয়ে কথা বলেছেন। মৌসুমীকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। ভরসা দিয়ে বলেছেন, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমরা তো মরে যাইনি। জাহিদকে খুঁজে বের করবই। আমি কিন্তু শুধু বুঝতে পারছি না, কারা জাহিদকে কিডন্যাপ করতে পারে? আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়?
এ প্রশ্নের উত্তরে মৌসুমী বলেন, জানামতে আমার স্বামীর কোনো শত্র“ নেই। সে খুব শান্ত-শিষ্ট স্বভাবের। তাকে দিয়ে কারও কোনো ক্ষতি হতে পারে না। জাহিদ তেমন লোকই নয়।
মোস্তাফিজ সাহেব বলেন, সে কথা আমিও জানি। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তিনি আমার কোম্পানিতে চাকরি করছেন। তিনি আমার খুবই বিশ্বস্ত। জাহিদ সাহেবের কোনো শত্র“ থাকতে পারে না। এটা আমারও বিশ্বাস। তাহলে জাহিদ সাহেবকে কারা কিডন্যাপ করল?
আমার স্বামীকে কেউ কিডন্যাপ করবে কেন? আমাদের তো অঢেল ধনসম্পদ নেই। আমি আসলে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার মাথায় কিছু আর ঢুকছে না। এই বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে মৌসুমী। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেন মোস্তাফিজ সাহেব। তিনি কিছু টাকাও দেন মৌসুমীর হাতে। বলেন, আপনার যখন যা দরকার হয় আমাকে বলবেন।
আরও অনেক কথা বললেন মোস্তাফিজ সাহেব। তার কথার ভেতরে একটা রহস্যের গন্ধ পায় মৌসুমী।
লোকটাকে সন্দেহ হয় তার। কথাটা মৌসুমী তার বাবা মেজবাহ উদ্দীনকে বলেছে। সেটা আমলে নেননি মেজবাহ সাহেব। মেয়ের এখন মাথা ঠিক নেই। কী ভাবতে কী ভাবছে। জাহিদের বস মোস্তাফিজ সাহেবকে সন্দেহ করার কী আছে। উনি মন্দ লোক নন। মন্দ হলে কি তিনি মৌসুমীর হাতে জাহিদের বেতনের টাকা তুলে দিতেন? নিশ্চয় না।
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। নিখোঁজ জাহিদের খোঁজ মিলল না। রহস্যের জট খুলল না। সবকিছুই ধোঁয়াশা রয়ে গেল। অবশেষে মেজবাহ উদ্দীন শরণাপন্ন হলেন তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর। বন্ধুটির নাম সোলায়মান খান। কজন খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ। এর আগে সোলায়মান খান তিনবার মন্ত্রী হয়েছিলেন। এখন আছেন বিরোধী দলে। বিরোধী দলে থাকলেও সোলায়মান খানের প্রভাব প্রতিপত্তির কমতি নেই। তিনি মেজবাহ সাহেব ও তার মেয়ে মৌসুমীর মুখে ঘটনার সব বিবরণ শুনলেন। শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। কী যেন ভাবলেন। কয়েক মিনিট পর তিনি মুখ খুললেন। বন্ধু মেজবাহ’র উদ্দেশে বললেন, তোরা বিষয়টা আমাকে আরও আগে জানাতে পারতি। দেরি করে ফেলেছিস। তারপরও আমি দেখছি। তোর মেয়ের জামাই মানে তো আমারও জামাই। আমি আজকেই কথা বলব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। আইজি সাহেবকেও ফোন দেব। দেখি, কি করা যায়।
মৌসুমীর উদ্দেশে সোলায়মান সাহেব বলেন, চিন্তা করো না মা। বিষয়টার একটা সুরাহা করে ছাড়ব। বাসায় ফিরে যাও। আমি দেখছি, কীভাবে জাহিদের সন্ধান পাওয়া যায়।
সেদিন সন্ধ্যাবেলায় আরেক কাণ্ড ঘটল। তখন সাড়ে সাতটার মতো বাজে। মেজবাহ উদ্দীন টিভিতে খবর দেখতে বসলেন। যদি জাহিদের কোনো খবর পাওয়া যায়। জাহিদের খোঁজ পাওয়া না গেলেও জাহিদকে নিয়ে খবর হয়ে গেল সব টিভি চ্যানেলে।
ওই দিন বিকালে সোলায়মান খান পার্টি অফিসে একটা প্রেস কনফারেন্স ডাকলেন। তারপর থেকেই সারা দেশে তুলকালাম। সংবাদ সম্মেলনে সোলায়মান খান সরকারকে দোষারোপ করলেন। তিনি বললেন, আমার নিকট আত্মীয় জাহিদ হোসেনকে সরকার গুম করেছে। জাহিদ আমার দলের অন্যতম নেতা। সরকার আগামী নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ভয়ে বিরোধীদলীয় নেতা জাহিদ হোসেনকে গুম করে পথের কাঁটা সরিয়েছে।
সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল তার ওই সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে। সোলায়মান খান বিরোধীদলীয় সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে যদি জাহিদ হোসেনকে ফেরত না দেয় সরকার, তবে দেশ অচল করে দেয়া হবে।
মৌসুমী বুঝতে পারছেন না, কোথা থেকে কী হয়ে যাচ্ছে। তার স্বামী জাহিদ তো কখনও রাজনীতি করেনি। এমনকি সে কখনও কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থকও ছিল না। তাহলে কেন হুট করে জাহিদকে বিরোধী দলের নেতা বানিয়ে ফেললেন সোলায়মান খান। এ নিয়ে মেজবাহ উদ্দীনেরও আপত্তির শেষ নেই। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তিনি সোলায়মান খানের সঙ্গে দেখা করে তার আপত্তির কথা জানালেন। তাতে হিতে বিপরীত হল। সোলায়মান খান মহাক্ষিপ্ত হলেন। তিনি বললেন, যদি জাহিদকে রাজনীতির আওতায় এনে হইচই না করি তবে কোনোদিনও তার খোঁজ তোরা পাবি না। জীবিত তো দূরের কথা, মৃত কিংবা কংকালও পাবি না তোরা। এবার ভেবে দেখ, আমি ভুল করেছি নাকি ভালো করেছি?
প্রতিউত্তরে কিছুই বলতে পারলেন না মেজবাহ উদ্দীন। এ মুহূর্তে যে কোনো কিছুর বিনিময়ে তার একমাত্র মেয়ের জামাইয়ের সন্ধান পাওয়া দরকার- জীবিত অথবা মৃত, যাই হোক না কেন। জাহিদকে ফিরে পেতে চায় তার পরিবার।
সন্ধ্যার পর থেকেই মৌসুমীর কাছে হাজারও ফোন আসছে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাক্সক্ষীরা ফোন করছে। কারণ তারা এতদিন জাহিদের রাজনৈতিক পরিচয় জানত না। মৌসুমী ভেবে পায় না, সবার প্রশ্নের কী উত্তর দেবে। সে কোনো রকমে পাশ কাটিয়ে যায়। মৌসুমীও বুঝে উঠতে পারছে না, হচ্ছেটা কী। তার বাবা মেজবাহ উদ্দীন বাসায় ফিরেছেন রাত করে। ঐশী বাবার জন্য কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে। বিষণ্ন বাবা তার পাশে এসে বসলেন। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলেন। তারপর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে গেলেন।
পরদিন থেকে পত্রপত্রিকার গরম খবর হয়ে উঠল জাহিদ। থানার ওসি রমজান সাহেব এখন নিজেই ধরণা দিচ্ছেন মৌসুমীর কাছে। প্রত্যহ সংবাদপত্রে মৌসুমীর সাক্ষাৎকার ছাপা হচ্ছে। টিভির খবরে তার কমেন্টস প্রচার করা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে মৌসুমী এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। মৌসুমী বুঝতে পারছে না, এসব হচ্ছেটা কী। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে সে স্বামীকে ফেরত পেতে চায়। জানে না, তার ভাগ্যে কী আছে?
খবরের পেছনের খবর তুলে আনতে সাংবাদিকরা সচেষ্ট। সে প্রচেষ্টার খাতিরে জাহিদের বস মোস্তাফিজুর রহমানও এখন বেশ আলোচিত ব্যক্তি। ইদানীং পত্রপত্রিকায় তার ছবিও ছাপা হচ্ছে। টিভি সংবাদে তার কমেন্টসও দেখানো হচ্ছে মৌসুমীর পাশাপাশি। এসবে বেজায় বিরক্ত মৌসুমী। কিন্তু প্রকাশ করছে না। এ মুহূর্তে তার একমাত্র লক্ষ্য, স্বামীকে ফিরে পাওয়া। তাই সে চুপচাপ।
সময় গড়িয়ে যায়। মৌসুমী এখন আর আগের মতো কাঁদে না। পাথর হৃদয়ে সময়োপযোগী অনেক সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছে। ইদানীং জাহিদের বস মোস্তাফিজুর রহমান ঘনঘন ফোন করেন মৌসুমীকে। অহেতুক নানা পরামর্শ দেন। কারণ ছাড়াই বাসায় আসতে চান। টাকা দিতে চান। এসব যেন অসহ্য লাগে মৌসুমীর। লোকটার আচরণ এমনিতেই সন্দেহজনক- অন্তত মৌসুমীর চোখে। প্রমাণ ছাড়া কাউকে কিছু বলাও যাচ্ছে না। তবে মৌসুমী এটুকু বুঝতে পারছে, জাহিদ গুম হওয়ার কারণে মোস্তাফিজ সাহেব এখন বেশ আলোচিত ব্যক্তি। সাংবাদিকদেরও যেন আর কোনো কাজ নেই। হয় তারা মৌসুমীর বাসায় পড়ে থাকে। নয়তো মোস্তাফিজ সাহেবের কাছে । মোস্তাফিজ সাহেবও সে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। বানোয়াট, উদ্ভট সব কথা বলছেন জাহিদ সম্পর্কে। তার ওপর সোলায়মান খানের রাজনৈতিক ইস্যু জর্জরিত করে রেখেছে মৌসুমীকে।
দেশজুড়ে এখন একটাই ইস্যু- জাহিদকে গুম করল কারা। এ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের বিবৃতির শেষ নেই। দেশ তোলপাড়। জনগণ দ্বিধাবিভক্ত। শুধু জাহিদ ফেরে না মৌসুমীর কাছে। এদিকে আরেক কাণ্ড বাধিয়েছেন মোস্তাফিজ সাহেব। তিনি হুট করে সাংবাদিকদের কাছে বলে বসলেন, তার ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীর আলম গুম করেছেন জাহিদকে। এ নিয়ে প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। জাহাঙ্গীর আলমকে আইনের মুখোমুখি হতে হয়। তিনি কিছুদিন হাজত খাটেন। তারপর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।
মাস পেরিয়ে যায়। জাহিদের সন্ধান মেলে না। জাহিদের পরিবারে অর্থকষ্ট দেখা দেয়। মোস্তাফিজ সাহেবকে অপছন্দের কারণে তার কাছ থেকে টাকা নেয় না মৌসুমী। ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্টে যা ছিল তাও শেষের দিকে। জাহিদের অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা রয়েছে এখনও। যার নমিনি মৌসুমী। তাই সে ব্যাংকে যায় জাহিদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে। তখন ব্যাংক কর্মকর্তা জানালেন আরেক কথা। মৌসুমী এখন দেশের পরিচিত মুখ। কোথাও গেলে তাকে ভালোই সমাদর করে সবাই। ব্যাংকের কর্মকর্তারাও তাকে বেশ সমাদর করেছে। বেশ বিনয়ের সঙ্গে বলেছে, অ্যাকাউন্ট হোল্ডার নিখোঁজ রয়েছেন ঠিকই। মারা তো যাননি। অ্যাকাউন্ট হোল্ডার মারা না গেলে নমিনি টাকা তুলতে পারবেন না। মৌসুমীর হৃদয়ের ক্ষতে যেন নুনের ছিটা পড়ে। ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ে সে ব্যাংক ত্যাগ করে।
সোলায়মান খানের আন্দোলন বেশ জমে উঠেছে। জাহিদ গুম হওয়ার ইস্যুতে রাজনৈতিক ময়দান বেশ গরম হয়ে উঠেছে। সরকারবিরোধী দলগুলো একাট্টা হয়েছে। তারা সবাই মিলে সরকার পতনের ডাক দিয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশিল হয়ে পড়ছে। জাহিদ গুম হওয়ার ইস্যুতে বিরোধী দল ফায়দা লুটলেও কোনো ফায়দা হচ্ছে না মৌসুমীর। এখন মৌসুমীর একটাই চাওয়া, তার স্বামীকে জীবিত কিংবা মৃত ফিরে পাওয়া।
সরকার ও বিরোধী দল মৌসুমী কিংবা মোস্তাফিজ সাহেবকে দিয়ে তাদের মনগড়া একটা স্টেটমেন্ট দেয়াতে চায়। মৌসুমীকে দিয়ে কেউ কোনো মনগড়া কথা বলাতে পারেনি। বলেছেন মোস্তাফিজ সাহেব, জাহিদ সাহেব কোনো পরকীয়ার বলি হয়েছেন। এ কথায় ঘটনা আবার নতুন মোড় নিতে শুরু করে। বিরোধী দল মোস্তাফিজ সাহেবের বেফাঁস মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছে। তার শাস্তি দাবি করেছে। পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে ওঠে। মোস্তাফিজ সাহেব তার মন্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। চারদিক থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে। জাহিদ নিখোঁজের ব্যাপারটা আর রাজনৈতিক বিষয় থাকল না। সামাজিক ব্যাপার হয়ে উঠল। তাতেও মৌসুমীর কিছু যায় আসে না। তার পোড়া কপালের পোড়া দাগ রয়েই গেল।
জাহিদ গুম হওয়ার বিষয়টা এখন চাপা পড়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগে গাজীপুরে বিশতলা একটা বিল্ডিং ধসে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক হাজার লোক মারা গেছে। এরই মধ্যে ২৪৭ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। ভবন ধসের ঘটনাটি এখন বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচিত বিষয়। প্রেস ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় এখনকার তাজা খবর মানে- গাজীপুরের ভবন ধসের সর্বশেষ সংবাদ। গুম হওয়া জাহিদকে নিয়ে সবার সব মাথাব্যথা স্তিমিত হয়ে গেছে।
এভাবে আরও এক মাস পার হয়ে গেল। গাজীপুরের উদ্ধার কাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হল। যদিওবা নিখোঁজদের স্বজনরা আহাজারি করে এখনও। এরই মধ্যে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে দিল যুক্তরাষ্ট্র। এটাই এখন মিডিয়ার টাটকা খবর। জাহিদ গুম হওয়ার ব্যাপারটা বেমালুম ভুলে গেছে সবাই।
এমনই একটা দিনে রীতিমতো নাটকীয়ভাবে বাসায় ফিরলেন জাহিদ। তাকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরল মৌসুমী। কান্নায় ভেঙে পড়ল। এতদিন পর বাবাকে কাছে পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারল না ঐশী। বারবার সে বাবাকে জিজ্ঞেস করছে, এতদিন কোথায় ছিলে বাবা? কেন তুমি এতদিন বাসায় ফেরোনি?
জাহিদ কোনোভাবে সন্তানকে বুঝ দিয়েছে। পরে সব কথা খুলে বলেছে স্ত্রীকে। ফিরে আসার খবর এখনই মিডিয়াকে জানাতে চায় না জাহিদ। তাই মৌসুমী আত্মীয়-স্বজনদের কিছু জানায়নি। শুধু বাবাকে জানিয়েছে।
সব শুনে মেজবাহ উদ্দীন সাহেব আরও দুশ্চিন্তায় পড়লেন। এখন তো আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছে সামনে। অনেক ভেবে-চিন্তে কোনো উপায় বের করতে পারলেন না। বন্ধু সোলায়মান খানের শরণাপন্ন হলেন মেজবাহ উদ্দীন।
সোলায়মান খানের মতো প্রভাবশালী রাজনীতিবিদরা পারেন না এমন কাজ খুব কম আছে। এবারও সোলায়মান খান রাজনৈতিক চাল চাললেন। থানা পুলিশকে গোপন সংবাদটা জানালেন। পরদিন তিনি জাহিদকে সঙ্গে নিয়ে মিডিয়ার মুখোমুখি হলেন। রাজনৈতিক নেতারা দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মুক্তি পেলে যেমন হইচই পড়ে যায়, তেমন হইচইয়ের ব্যবস্থাও হল। মিডিয়া আবারও সরব হল। রাতারাতি অনেক বড় রাজনৈতিক নেতা বনে গেল জাহিদ। আর খারাপ কাজের পরিণতি ভোগ করতেই হল মোস্তাফিজ রহমানকে, যিনি ছিলেন জাহিদের বস।
ভাবতে অবাক লাগারই কথা। মোস্তাফিজ সাহেবের মতো লোক এমন কাজ করতে পারে! অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, মোস্তাফিজ সাহেব তা-ই করেছেন। ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীর আলমকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য জাহিদ গুমের নাটক বানিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। মোস্তাফিজ সাহেব জানতেন, জাহিদ গোবেচারা মানুষ। জাহিদ গুম হলে যে সোলায়মান খানের মতো বাঘা রাজনীতিবিদের হস্তক্ষেপে পুরো বিষয়টি জাতীয় ইস্যু হয়ে যাবে তা ভাবতেও পারেননি মোস্তাফিজ।
কেউ ভাবুক আর না ভাবুক। এটাই সত্য- পাপ কখনও চাপা থাকে না। আর পাপের পরিণতি অবশ্যই ভোগ করতে হয়। মোস্তাফিজ রহমান এখন কারাগারে। জাহিদ এখন বিরোধী দলের আলোচিত নেতা। রাজনৈতিক নেতারা দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মুক্তি পেলে যেমন হইচই পড়ে যায়, তেমন হইচইয়ের ব্যবস্থাও হল। মিডিয়া আবারও সরব হল। রাতারাতি অনেক বড় রাজনৈতিক নেতা বনে গেল জাহিদ। আর খারাপ কাজের পরিণতি ভোগ করতেই হল মোস্তাফিজ রহমানকে, যিনি ছিলেন জাহিদের বস।
ভাবতে অবাক লাগারই কথা। মোস্তাফিজ সাহেবের মতো লোক এমন কাজ করতে পারে! অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, মোস্তাফিজ সাহেব তা-ই করেছেন। ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীর আলমকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য জাহিদ গুমের নাটক বানিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। মোস্তাফিজ সাহেব জানতেন, জাহিদ গোবেচারা মানুষ। জাহিদ গুম হলে যে সোলায়মান খানের মতো বাঘা রাজনীতিবিদের হস্তক্ষেপে পুরো বিষয়টি জাতীয় ইস্যু হয়ে যাবে তা ভাবতেও পারেননি মোস্তাফিজ।
কেউ ভাবুক আর না ভাবুক। এটাই সত্য- পাপ কখনও চাপা থাকে না। আর পাপের পরিণতি অবশ্যই ভোগ করতে হয়। মোস্তাফিজ রহমান এখন কারাগারে। জাহিদ এখন বিরোধী দলের আলোচিত নেতা।
No comments